Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বয়সের সীমানার বাইরে প্রেম || Pallav Sanyal

বয়সের সীমানার বাইরে প্রেম || Pallav Sanyal

গুয়াহাটি শহরের প্রমোদ তালুকদার মেমোরিয়াল ওল্ড এজ হোম-এর বাগানে সকালবেলার নরম রোদ পড়েছিল। ৬৫ বছরের জয়প্রভা বোরা গোলাপের গাছে জল দিচ্ছিলেন, কিন্তু তাঁর মন অন্য কোথাও হারিয়ে ছিল। জীবনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তিনি এখানে এসে পৌঁছেছেন, কিন্তু হৃদয়ের এক কোণে আজও এক অপূর্ণ শূন্যতা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যু হয়েছিল, সংসারের সমস্ত দায়িত্ব তাঁর কাঁধে এসে পড়েছিল। মা ও ছোট ভাই-বোনদের বড় করতে গিয়ে তিনি নিজেকে ভুলে গিয়েছিলেন। বিয়ের কথা তাঁর জীবনে কখনো স্থায়ীভাবে আসেনি। যখন পরিবারের সবাই নিজ নিজ পথে চলে গেল, তখন তিনি একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে পড়লেন।

অন্যদিকে, ৭১ বছরের পদ্যেশ্বর গোয়ালা-র গল্পও কিছুটা একইরকম। যৌবনে তিনি গভীরভাবে ভালোবেসেছিলেন, কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে সেই সম্পর্ক পূর্ণতা পায়নি। তারপর থেকে তিনি একাই রয়ে গিয়েছিলেন, একাকীত্বকে সঙ্গী করে জীবন কাটিয়েছিলেন। যখন বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা অসহনীয় হয়ে উঠল, তখন তিনিও এই বৃদ্ধাশ্রমে চলে এলেন।

একদিন, জয়প্রভা যখন বাগানে জল দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ পেছন থেকে এক কণ্ঠ শোনা গেল—

“ফুলের প্রতি এত ভালোবাসা, তাহলে নিজের জীবনেরও একটু যত্ন নিন না!”

তিনি ঘুরে দেখলেন, পদ্যেশ্বর দাঁড়িয়ে আছেন, হালকা হাসি মুখে। জয়প্রভা মৃদু হেসে বললেন—

“ফুল তো ক’দিনই থাকে, তারপর শুকিয়ে যায়।”

পদ্যেশ্বর চোখে এক উজ্জ্বল দীপ্তি নিয়ে বললেন—

“কিন্তু সঠিক যত্ন নিলে আবারও ফুটতে পারে, তাই না?”

এই ছোট্ট কথোপকথনের পর থেকে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠল। দু’জনে একসঙ্গে বাগানে সময় কাটাতেন, পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করতেন, কবিতা নিয়ে কথা বলতেন। পদ্যেশ্বর পুরনো অসমিয়া কবিতার ভক্ত ছিলেন, আর জয়প্রভা ভালোবাসতেন গাছপালা আর প্রকৃতিকে। ধীরে ধীরে তাঁদের বন্ধুত্ব গভীর হতে থাকল, আর একাকীত্ব দু’জনকে আরো কাছে আনতে লাগল।

একদিন বিকেলে বাগানের বেঞ্চে বসে পদ্যেশ্বর বললেন—

“আমরা এখনো অবধি শুধু অন্যদের জন্য বেঁচে এসেছি। এবার কি নিজের জন্য বাঁচার সময় আসেনি? এটা জীবনের শেষ নয়, বরং নতুন এক শুরু হতে পারে!”

জয়প্রভার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেল। তিনি আস্তে বললেন—

“জীবন যদি আমাদের এই দ্বিতীয় সুযোগ দিয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করাই উচিত।”

২৪ জানুয়ারি ২০২৫—এই দিনটি তাঁদের জীবনের এক নতুন মোড় নিয়ে এল। বৃদ্ধাশ্রমের উঠোনে ছোট্ট এক মণ্ডপ তৈরি করা হলো, চারপাশ সাজানো হলো ফুল আর আলো দিয়ে। জয়প্রভা হালকা গোলাপি মেখলা চাদরে ছিলেন, আর পদ্যেশ্বর পরেছিলেন সাদা কুর্তা-পায়জামা। বৃদ্ধাশ্রমের সকল সদস্য তাঁদের আশীর্বাদ জানালেন।

সবাই অবাক ছিলেন, খুশিও ছিলেন—কারণ আজ প্রমাণ হলো যে

বিয়ের পর বৃদ্ধাশ্রমে ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান হলো। গান, হাসি-আনন্দ আর আশীর্বাদের মধ্যে সেই মুহূর্তটি স্বপ্নের মতো লেগেছিল।

রাতের বেলা, পদ্যেশ্বর হাসিমুখে বললেন—

“এখন আমরা একসঙ্গে আছি, তবু কি একাকীত্ব অনুভব হবে?”

জয়প্রভা মৃদু হেসে উত্তর দিলেন—

“যতদিন তুমি পাশে থাকবে, একাকীত্ব শুধুই অতীতের গল্প হয়ে থাকবে।”

এইভাবেই তাঁদের নতুন জীবন শুরু হলো—এক নতুন আশার সঙ্গে, যেখানে বয়স কোনো সীমা নয়, বরং ভালোবাসাই আসল সত্য।

এই গল্পটি প্রমাণ করে যে ভালোবাসা কখনো সময় বা পরিস্থিতির বাঁধা মানে না। এটি যেকোনো সময়, যেকোনো বয়সে, যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনে আসতে পারে—শুধু সেটাকে গ্রহণ করার সাহস থাকতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *