মনে হচ্ছে, আর কোনোদিনই দেখতে পাবো না তোমাকে—এই রাত্তিরবেলা, আজ
ঝড় উঠেছে ভীষণ—আমার সমস্ত শরীর ও আত্মা
আজ দুপুর পর্যন্ত আয়ত্তে ছিলো আমার—আজ দুপুরেও দেখেছি
গাছের ছায়া মাটির ওপর সুন্দর দোল খাচ্ছে হাওয়ায়, সরু পাঁচিলের
আড়ম্বরহীন ট্রেন; দৌড়ে যাচ্ছে—অন্ধকার দোকান থেকে
পাশ দিয়ে
এইমাত্র আমি ফিরে এলাম—অন্ধকার দোকান থেকে ফিরে এসে
পৃথিবীর জন্যে চমৎকার দুঃখের এক কবিতা আজ লিখে রাখছি আমি—আমি
মোজা খোলার বদলে এখন উপুড় হয়ে শুয়ে রয়েছি বিছানায়—
দূরে, শুকনো পাতা
একে একে ঝরে পড়ছে, আমি স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছি তার
আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমার মুখ তোমার গলা
আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, আমার সমস্ত কিছু, শব্দহীন আজ ঝরে পড়ছে
একে একে
ঐ একা তুমি বসে রয়েছো জানালায়— তোমার বন্ধু আজ তোমাকে ফেলে
থিয়েটার দেখতে চলে গ্যাছে—কলেজের খেলাধুলো থেকে
তুমি বরাবরই দূরে সরে গিয়েছিলে এইরকম—ধর্মসভা শোকসভা থেকে
তুমি এইরকমই আরও দূরে সরে গিয়েছিলে তোমার ঐ ব্যক্তিগত জানালায়—
তোমার জন্যে, পাথরের একটা হাতি কিনতে চেয়েছিলাম আমি
তোমার জন্যে কিছুই কেনা হয়নি আমার, আমি ভোরবেলা ছুটে গিয়েছি
বন্ধুর বাড়িতে—
সাদা জামা-প্যান্ট, কতো প্রিয় ছিলো আমার
কতো প্রিয় ছিলো তোমাদের কুয়াশা-ঢাকা বাগানবাড়ি আর নিথর বারান্দা
বৃষ্টির জল যেখান থেকে সশব্দে গড়িয়ে পড়তো নিচে
যেখানে একসময় চুপচাপ বসে থাকতাম আমরা বিকেলবেলা
পৃথিবীর সমস্ত পুকুরপাড়ের সরু রাস্তার পাশে একটা লম্বা গাছ, অকারণে
দাঁড়িয়ে থাকে—তোমার পাশে
আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি সেইরকম—দুপুর বারোটায়
আমি বাসন পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনেছি মেঝেতে—কলাপাতায় রোদ্দুর দেখে
আমি দৌড়ে, বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম একদিন—আমি কোনোদিন
কোথাও যাইনি, কোথাও যাওয়া হয়নি আমার, এক আধবুড়ো ডাক্তার এসে
আমার চামড়া পরীক্ষা করে গ্যাছে গতকাল-আজ সমস্ত দিন
আমার হারিয়ে-যাওয়া দিনগুলোর কথাই শুধু ভেবেছি আমি—আমি
জিভ দিয়ে ছুঁয়ে দেখেছি মৃত্যু, ছুঁয়ে দেখেছি জীবন—এবার গ্রীষ্মে
আমার অসুখ আরও ভয়ংকর ছড়িয়ে পড়বে মনে হচ্ছে
এবার গ্রীষ্মে, এক নতুন হাতপাখা আমি উপহার দিয়ে যাবো তোমাকে