Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রতিহিংসা || Sankar Brahma

প্রতিহিংসা || Sankar Brahma

তপসিয়ার একটা প্রাথমিক স্কুলে তখন আমি পড়াই। হতদরিদ্র ঘরের বাচ্চারা সব এখানে পড়তে আসত। বেশির ভাগই তপসিয়ার খালপাড় বস্তির ছেলেমেয়ে। সালাউদ্দিন নামে একটি ডাক সাইটে ষন্ডামার্কা ছেলে আসত পড়তে। বয়স তার অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই হবে। পড়াশুনায় তার একদম মন নেই, অন্যদের মারধরা করা ছিল তার কাজ। প্রায়ই একে তাকে ধরে মারধর করত। তার নামে নালিশ শুনতে শুনতে আমরা শিক্ষকরা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম।
ফতেমা নামে একটি বাচ্চা মেয়ে একই ক্লাসে তার সাথে পড়ত। শান্তশিষ্ঠ, করুণ চোখ দু’টি, বড় মায়াময় মুখখানি।
একদিনের একটা ঘটনা বলি শুনুন। আমি ক্লাসে পড়াতে ঢুকতেই ফতেমা নামে সেই মেয়েটি এসে আমার কাছে নালিশ করল, স্যার সালাউদ্দিন আমাকে কামড়েছে, বলে তার ডান হাতখানা তুলে ধরল আমার চোখের সামনে। আমি দেখি তার হাতে দাঁতের দাগ, রক্ত বের হচ্ছে মেখান থেকে। আমি ছাত্রদের মারধর করা আমার খুবই অপছন্দের কাজ। কোনদিনই আমি ছাত্র-ছাত্রূদের মার-ধর করি না। কখনও কেউ খুব বড় ধরণের অপরাধ কিছু করলে, তার কান ধরে উঠবস করাই, অথবা নীল ডাউন হয়ে থাকতে বলি কিছুক্ষণ। সেদিন ফতেমার রক্তপাত দেখে মাথাটা আমার হঠাত গরম হয়ে গেল। ফতেমাকে অফিসঘর থেকে বেত নিয়ে তে বললাম। আর সালাউদ্দিনকে আমার কাছে এসে দাঁড়াতে বললাম। ফতেমা তো নাচতে নাচতে হাসিমুখে বেত আনতে চলে গেল। বেত নিয়ে এসে হাজির হল।
সালাউদ্দিন কাছে এসে আমায় বলল, আমি কামড়াইনি স্যার।

  • তবে কে কামড়েছে, ভূতে?
  • না স্যার, ও নিজেই কামড়েছে।
  • নিজের হাতে নিজে কামড়েছে, ফাজলামির আর জায়গা পাওনি তুমি? অনেক বেয়াদপি সহ্য করেছি তোমার। আর নয়। দিনদিন তুমি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছো। বলেই, আমি ওকে মারার জন্য বেত তুলি।
  • স্যার ওদের সবাইকে একবার জিজ্ঞাসা করে দেখুন? সালাউদ্দিন করুণভাবে আবেদন জানাল আমাকে।

আমি তাকে বেত তুলে মারতে গিয়েও, থেমে গিয়ে একবার অনদের কাছে জানতে চাইলাম, কিরে সালাউদ্দিন কামড়ায়নি? সকলে সমস্বরে বলে ওঠে, না স্যার। ফতেমা নিজেই নিজের হাতে কামড়েছে।
শুনে তো আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই।

ভাগ্যিস মারিনি, মারলে কি অবিচারটাই না করা হতো সালাদ্দিনের উপর। আমি তখন ফতেমাকে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে সত্যি বলছে ওরা?
ফতেমার মুখ কালো হয়ে গেল। মাথা নীচু করে রইল সে। আমি তাকে কাছে টেনে নিয়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম, সত্যি কথা বল, আমি কিছু বলব না তোকে। তুই কি নিজেই নিজের হাত কামড়েছিস?
ফতেমা সন্মতিসূচক মাথা নাড়ল।

আমি বললাম, কেন এমন করেছিস?
অস্ফূটে তখন সে বলল, রোজই সালাউদ্দীন আমাকে মারে, ওর সাথে আমি জোরে পারি না। আজও মেরেছে।
তাই আমি নিজের হাত কামড়ে আপনাকে দেখাতে এসেছি, যাতে আপনি ওকে মারেন। ওর মার খাওয়া দেখলে আমি মনে খুব শান্তি পাবো। আমার খুব আনন্দ হবে, তাই ।
শুনে আমি তো তাজ্জব বনে যাই। এতটুকু মেয়ের মাথায় যে এত সাংঘাতিক বুদ্ধি । আমি ভাবতে পারিনি। এরই মধ্যে ফতেমার মনটা এতখানি প্রতিহিংসা পরায়ণ? বড় হয়ে ও যে কি হবে জানি না আমি !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *