Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পার্ক থেকে যাওয়া যায় || Shamsur Rahman

পার্ক থেকে যাওয়া যায় || Shamsur Rahman

পার্ক থেকে যাওয়া যায়। গেলে মার্ক পাওয়া যাবে
তার কাছে। যদি মোমগন্ধী ইকারুস হয়ে যাই ফুল-চন্দন দেবে সে
গোধূলিতে। কিন্তু ইকারুস বড় পতনপ্রবণ। আকাশের
সুনীল বন্ধন তাকে পারে না রাখতে ধরে। পার্কময় আমি
কিংবা আমাকেই পার্ক বলা যেতে পারে। রৌদ্রে জ্বলি, করি পান
আকণ্ঠ আরক শ্রাবণের,
কখনো-বা মগজকে নগ্ন তুলে ধরি কাঁচা দুধের জ্যোৎস্নায়।

পার্কের বাইরে দেখি আইসক্রিমের শূন্য বাক্স নিয়ে কেউ
প্রত্যহ দাঁড়িয়ে থাকে, কেউ কেউ বেশ ঘটা করে
দোকান সাজায় নিত্য, বেচে না কিছুই কোনো দিন।
কে এক রাজকুমার আসবেন বলে
আসবেন বলে
আসবেন বলে প্রতিদিন ওরা অভ্যাসবশত
যে যার দোকান নিয়ে অটল অপেক্ষমাণ, পণ্যহীন। এই পার্ক থেকে

যখন যেখানে খুশি যাওয়া যায় উজ্জ্বল সবুজ মেখে ট্রাউজারে, কানে
দখিন হাওয়ার গুলতানি পুরে, পাখিদের গান
শার্টের আস্তিনে গুঁজে এবং পকেটবন্দি রজনীগন্ধার শুভ্র ঘ্রাণ অকাতরে
বিলিয়ে সড়কে যাওয়া যায়, প্রভাতবেলার শান্ত প্রফুল্ল বন্দর ছেড়ে
দুপুরের মাঝ-দরিয়ায় ভেসে সূর্যের সোনালি সঙ্গ ছেড়ে
গোধূলির তটে যাওয়া যায়।

অতীতের শুকনো খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বহুদূরে যাওয়া যায়, আপাতত
আমার গন্তব্য গলি। রাবীন্দিক নয় মোটে, রবীন্দ্রনাথের
গলিঘুঁজি কাঁঠালের ভূমি, মরা বেড়ালের ছানা আর মাছের কানকা
সত্ত্বেও কেমন সুশ্রী। পার্কের পাথুরে বেঞ্চ ছেড়ে
আমি যে গলিতে যাব নাম তার অলীক অক্ষর দিয়ে শুধু।
কোনো কোনো দিন হাসে সে-ও, প্রায় প্রতিদিন সে-গলির গাল
বেয়ে পড়ে লোনা জল। থাকে একজন, চোখে যার যুগপৎ
শতকের ধূমায়িত বিভীষিকা যৌবনের নিটোল কুহক। মাঝে মাঝে
ফুলের তেলের মতো তার স্মৃতি আনে বিবমিষা।
তবু মনে হয়,
সত্বর সেখানে গেলে আমার অসুখ যাবে সেরে
নিবিড় স্বপ্নিল পথ্যে, একান্ত গহন কোনো নার্সময়তায়।
দেখব গলির মোড়ে প্রস্তুত ফিটন, মেঘলোক-ফেরা ঘোড়া
খুরে খুরে অস্থিরতা ঝরাচ্ছে কেবল।
দুলিয়ে পাদানি খুব উড়িয়ে স্মৃতির মতো স্বচ্ছ নীলাম্বরী
ফুরফুরে হাওয়া খাতে যাবে ভালোবাসা,
আমার মোহিনী ভালোবাসা।

রৌদ্রের মিছিল এলে রোঁয়া-ওঠা তোয়ালের মতো
আকাশের মোড়ে মোড়ে নক্ষত্র-বিপনি
বন্ধ করে ঝাঁপ।
আমরা এ ওর গায়ে ছায়া ফেলে পথ চলি; আমাদের হাতে
হলুদ ফেস্টুন কত অথচ বেজায় খাঁ খাঁ লালসালু। এ তল্লাটে কোনো
স্লোগানের স্পষ্টতাই নেই। অতঃপর বিস্ফোরণ, ছত্রভঙ্গ কিছু মুখ,
পরিচিত
দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দু’দল দু’দিকে যায় অভিমানে গরগরে ক্রোধে।

তাহলে কোথায় যাব? একা-একা সার্কাস দেখাতে পারব না
চৌরাস্তায়। অতএব পার্কে ফেরা ভালো সেই
পণ্যহীন ফিটফাট কতিপয় দোকানির কাছে গিয়ে সরাসরি বলা-
আমি তো রাজকুমার নই, আমার গালিচা নেই শূন্যচারী, তবু
তোমাদের কাছে ফিরে আসি খেলাচ্ছলে তোমাদের দোকানের শোভা
দেয় উস্কে কল্পনাকে। ভাবি, আজই পার্কের ভেতর
নিজস্ব সুহাস চারা করব রোপণ, জল দেব, নাম দেব স্বাধীনতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *