Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পাওনা || Sukanta Gangopadhyay

পাওনা || Sukanta Gangopadhyay

মুখস্থই আছে, তবু কাঁধব্যাগ থেকে কাগজপত্তর বার করে ক্রেডিটবুকে চোখ বুলিয়ে রতনলালকে বলি, ফাইন টাইন ধরে আট হাজার ছশো পঞ্চান্ন দিলেই আপনার লোনটা আপ টু ডেট হয়ে যাবে। গদিতে বসে একশো টাকার একতাড়া নোট গুনতে গুনতে রতনলাল বলল, বিজনেস কা অবস্থা বহুতই খারাপ, ব্যাঙ্কবাবু। লোন উন আমি আর শোধ দিতে পারব না।

বুকটা ধড়াস করে ওঠে। গত তিনমাস ধরে লোকটা ‘সামনের মাসে হয়ে যাবে, চিন্তা করবেন না’ বলে আসছিল, আজ বলছে পারবেই না!

গলায় ঝাঁজ আনতেই হয়, মানে! লোন রিকভার হতে আপনার এখনও ষাট হাজার টাকা বাকি। আপনি বলছেন…

না, পারব না। চাঁদা রিফিউজ করার ভঙ্গিতে কথাটা বলে রতনলাল কাঠের বড় ক্যাশবাক্সটায় নোটের তাড়া তুলে রাখল।

মফস্সল শহরে কাপড়জামার দোকান। রতনলাল সাজিয়েছে বড়বাজারের ধাঁচে। গদিতে বসে দোকানদারি করে। দেওয়াল জুড়ে শোকেস। স্টক যথেষ্ট ভালই। ব্যাবসা মন্দা যাওয়ার কোনও ছাপ নেই।

লক্ষণ ভাল ঠেকছে না। টাকা আদায়ের রাস্তা বেশ দুর্গম বলেই বোধ হচ্ছে। তাগাদা মারার স্টাইলে সামান্য বদল আনি, আপনি যা বলছেন, ভেবে চিন্তে বলছেন তো? আমাদের প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, যে করে হোক টাকা আমরা তুলে নেবই। আমাকে মাইনে দিয়ে রাখা হয়েছে সেই কারণে।

আপনার যা করার হয়, করে নিন। কথাটা রাস্তার দিকে মুখ করে বলল রতনলাল। বাইরে এখন ঝাঁ ঝাঁ রোদ। দোকানে কাস্টমার নেই। দু’জন কর্মচারী কৃষ্ণনগরের পুতুলের মতো বসে আছে।

আমার ভারী অবাক লাগছে, রতনলাল হঠাৎই এরকম অ্যাডামেন্ট হয়ে উঠল কী করে! আগে যখন এসেছি কোল্ড ড্রিঙ্কস, এটা সেটা দিয়ে কী খাতির। আজ এরকম বেসুরো গাইছে কেন? ভদ্রতার পোশাক খোলার আগে একবার শেষ চেষ্টা করি, তা হলে কি ধরেই নেব এটাই আপনার লাস্ট ডিসিশান?

হ্যাঁ। এটা বলল আমার মুখের ওপর। ফের ঘুরিয়ে নিল দৃষ্টি। এবার আমার গা থেকে খুলে ফেলতে হচ্ছে গ্রাজুয়েশনের ডিগ্রি, এখনও পেনশান না পাওয়া শিক্ষক পিতার পরিচয়, সংসার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া সরকারি অফিসার দাদার আদল। পাক্কা রকবাজের মতো

বলে উঠলাম, টাকা শালা আপনার বাবা দেবে।

ওষুধে কাজ হল। চিড়বিড়িয়ে উঠল রতনলাল, অ্যাই, দেখুন দাদা, এখানে বাবা, মা আসছে কুথা থেকে। আপনার ব্যাঙ্কের সঙ্গে আমার বিজনেস টার্ম, ফ্যামেলি তুলে কথা বলছেন কেন?

কোম্পানির নির্দেশ অনুযায়ী আরও গরম দেখিয়ে বলি, বেশ করব বাবা মা তুলব। টোটাল ফ্যামিলি টেনে নামাব রাস্তায়। আমাদের ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে ফুটানি মারবে, শুনতে হবে না বউ বাচ্চাকে খিস্তি!

মুখ সামলে কথা বলুন সুদীপবাবু। মনে রাখবেন আপনি এখন আমার এলাকায়।

যান যান। এলাকা দেখাতে আসবেন না। শালা চিটিংবাজ। আপনার হয়ে কে কথা বলতে আসবে? লোন নেওয়ার সময় খেয়াল ছিল না? তখন তো শালা ভিখারির বাচ্চার মতন ল্যাং ল্যাং… আমি এখন যেসব কথা বলছি, এ আমার কথা নয়। সব কোম্পানির শেখানো ডায়লগ। আমার বাড়ির লোক, পাড়া প্রতিবেশী কেউ বিশ্বাসই করবে না আমি এত খারাপ ভাষায় কথা বলতে পারি। আমি যে দুটো ছেলেকে টিউশান পড়াই, তারা তো অজ্ঞান হয়ে যাবে আমার এই মূর্তি দেখে। কিন্তু কিছু করার নেই, যে পুজোর যা মন্ত্র।

…ঝগড়ার মাঝে ঢুকে পড়েছে দুই কর্মচারী। স্বাভাবিক কারণেই মালিকের পক্ষ নিয়েছে তারা। আমি এক ইঞ্চি জমি ছাড়ছি না। আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছি ইতিমধ্যে। বলে যাচ্ছি, চার-পাঁচটা কাগজে সই করে লোন নিয়েছিলে খেয়াল আছে? তোমাকে শালা পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাব।

রতনলালও কম যায় না, ক্যাশবাক্সে চাপড় মেরে বলে, যান না মশাই, আপনার কত পুলিশ আছে নিয়ে আসুন। আইন আমিও কিছু কম জানি না।

তা হলে ওই কথা রইল তো? পুলিশের আগে আর একটা ডোজ আছে আমাদের। আমরা যেমন এক ফোনে টাকা দিই, তোলার জন্যও মাসলম্যান ফিট করা আছে। বাইক চেপে পাঁচ-ছ’জন আসবে, পুরো লাট করে দিয়ে যাবে দোকান।

ওসব ভয় আমাকে দেখাবেন না। গুন্ডা-বদমাশদের সাথে আমার জান-পহচান কুছু কম নেই। আপনি এখন ফুটুন তো। বলল রতনলাল।

তেড়েফুঁড়ে উঠে পড়লাম গদি থেকে। তুই-তোকারিতে চলে এলাম, ফুটুন মানে? আমি কি তোর কাছে পাইকিরি বেচতে এসেছি নাকি? বার কর শালা একটা ইনস্টলমেন্টের টাকা…

বলতে বলতেই ঘরে ঢুকল চারটে ইয়াং ছেলে। চকচকে বখাটে। নেতা গোছের ছেলেটা বলল, ক্যায়া বাত হ্যায় চাচা, ইতনা হাল্লা গুল্লা কিঁউ? উচ্চারণ শুনেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেটা বাঙালি। অবাঙালি রতনলাল ওর আপন কাকা নয়।

রতনলাল হাঁফ ছেড়ে বলে, লো পিন্টু, ব্যাঙ্কবাবু কো সমঝা দো তুমহারা হিসাব। পিন্টু আমার থেকে বয়সে অনেকটাই ছোট, কাঁধে টোকা মেরে বলে, কী হয়েছে দাদা, আপনি আমার সঙ্গে কথা বলুন।

কেন তোমার সঙ্গে কথা বলব, তুমি কে হরিদাস পাল?

আমিই মেন লোক। বুঝলাম না।

মাথা ঠান্ডা করুন, বুঝিয়ে বলছি।

একটু থমকাই। ছেলেটা যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলছে। এলাকার দাদা নাকি? পিন্টু ফের বলে, চাচার লোনের ব্যাপারটা আমি দেখছি। বাকি সিক্সটি থাউজেন্ড চাচা দিতে পারবে না। আপনি হয়তো এখনও খবর পাননি, উকিলের চিঠি দিয়ে সেকথা আপনার ব্যাঙ্ককে আমরা জানিয়েছি।

কেসটা আমার এক্তিয়ারের বাইরে নিয়ে যেতে চাইছে ছেলেটা। আমি ছাড়ব কেন? বলি, উকিলের চিঠি দেওয়া মানে কি টাকা শোধ দেওয়া হয়ে গেল? উকিল কোর্টকাছারি অবধি আমাদের কেস যায় না। তার আগেই টাকা উশুল করার কায়দা আমরা জানি।

পিন্টু বলে ছেলেটি একটুও টেম্পার লুজ করছে না। এই বয়সেই চোখে মুখে কী পরিণত ভাব। গলা খাদে রেখে বলে, সুদীপদা, আমি আপনাকে চিনি। মাস তিনেক হল এ লাইনে এসেছেন। আপনি একজন পাতি কালেক্টার। আপনার এজেন্সির সুপারভাইজারদের থেকে ম্যানেজার অবধি আমার চেনা। তাদের বাড়ির ঠিকানা পর্যন্ত আমি জানি। অফিস একটা ইমপর্টেন্ট পয়েন্ট আপনাদের চেপে গেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্কুলার আছে, লোন রিকভারের জন্য কোনও ব্যাঙ্কই পার্টির বাড়ি তো দূরে থাক, ফোনে পর্যন্ত তাগাদা দিতে পারবে না। যা কিছু হবে কাগজে কলমে। আর আপনি পুলিশ দেখাচ্ছেন, এই মুহূর্তে আমিই আপনাকে থানায় ভরে দিতে পারি। বলব, দোকান ভাঙচুর করতে এসেছেন। সাক্ষী দেবে আমাদের লোক।

ঢোঁক গিলতেই হয়। চোখের আগুন নিভতে দিই না। বেশ আটঘাট বেঁধেই কথা বলছে পিন্টু। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্কুলারের কথা অফিসে কানাঘুষো শুনেছি, চোখে দেখিনি। কিন্তু সেই অর্ডারকে গ্রাহ্য করলে আমাদের চলবে কী করে! উইদাউট মর্টগেজ আমরা লোন দিই। টাকা তোলার জন্য আমাদের গালাগালিই সম্বল।

আমি ধস খেয়ে গেছি দেখে পিন্টু সান্ত্বনার সুরে বলে, কেন এইসব কাজ নিয়ে পড়ে আছেন দাদা! কত স্যালারি দেয়? পাঁচ-সাত হাজার। তাও ছোটখাটো লোন আপডেট করতে নিজের পকেট থেকেই টাকা ভরেন। এই রোদের মধ্যে পার্টির দরজায় ঘুরে ঘুরে… এত খাটনি পোষায়?

তা হলে দাও না ভাই, একটা ভদ্রগোছের চাকরি জোগাড় করে। গলায় ব্যঙ্গের সুর এনে বললাম।

করবেন চাকরি? চলে আসুন আমার কোম্পানিতে। এখন যা পান তার থেকে অনেক বেশি মাইনে দেব।

ইয়ারকি মারছে কিনা বুঝতে পারছি না।

জিজ্ঞেস করি, তোমার কোম্পানির কী কাজ?

লোন ডিফল্টারদের হয়ে কেস লড়া। সবক’টা কেসেই আমি জিতি। কমিশন পাই। এতটাই অবাক হই, ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাই পিন্টু আমার প্রতিপক্ষ। বিস্ময়ের কণ্ঠে জানতে চাই, সব কেসে কী করে জেতো?

ভেরি সিম্পল। ধারে বিকিয়ে যাওয়া কোনও লোক যদি জজসাহেবের সামনে হাত তুলে দেয়, বলে, লোন শোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। পরিবারের খাওয়া-পরা জোগাড় করতে গিয়ে আমি হিমসিম খাচ্ছি… মানবিকতার খাতিরে জজসাহেব তাকে কোনও শাস্তি দেন না। আমার কোম্পানির কাজ হচ্ছে, পার্টিকে নিঃস্ব দেখানো।

পিন্টুর কথার পর নিজেকেই কেমন যেন নিঃস্ব, অসহায় লাগছে। আমার চাকরিটা কি তা হলে এতই ফোঁপরা? প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করি পিন্টুকে, তুমি কি ভেবেছ, আমাদের ব্যাঙ্ক এসব না বুঝে শুনে কারবারে নেমে পড়েছে?

আমি তা বলিনি। ব্যাঙ্ক ভালভাবেই জানে, সাধারণ মানুষ আইনের মারপ্যাঁচ এত বোঝে না। তাদের ধমকে চমকে টাকা তোলে।

পড়ন্ত আঁচের আস্ফালন নিয়ে বলি, এটাও জেনে রাখো তোমাদের মতো এজেন্টদের হিসাব প্রাইভেট ব্যঙ্ক রাখে, যে-কোনও সময় খালাস হয়ে যাবে।

তিন বন্ধুর সঙ্গে বিচ্ছিরিভাবে হাসি বিনিময় করে নিয়ে পিন্টু বলে, আপাতত আপনি রওনা দিন। আপনাদের মতো চারটে ব্যাঙ্কের ডিফল্ট কেস সামলাচ্ছি আমি। টোটাল অ্যামাউন্ট দশ লাখের ওপর। চাকরির অফারটা যদি পছন্দ হয় বলবেন। খুব তাড়াতাড়ি লোক লাগবে আমার।

কে বলে বাঙালি পিছিয়ে পড়ছে, এই তো পিন্টুই কেমন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বিদেশি ব্যাঙ্কগুলোকে। সত্যি বলতে কী, পিন্টুর জন্য আমার একটু গর্বই হচ্ছে।

আমার আশপাশে কে যেন কাশল। হয়তো হাসিটা ম্যানেজ করল কাশি দিয়ে। নিমন্ত্রণ বাড়ির অবাঞ্ছিত অতিথির মতো পায়ে পায়ে বেরিয়ে আসি দোকান থেকে।

অলস দুপুরে রুক্ষ আধা শহরটা যেন বেকার যুবকের মতো অপ্রসন্ন দিবানিদ্রা সারছে। রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকা। দু’-একটা রিকশা, সাইকেল ছুটে যাচ্ছে ধুলো উড়িয়ে। চাকরির তিনমাসে এই নিয়ে বেশ ক’টা কেস ফ্লো করে গেল আমার। পার্টিগুলো এখন সুপারভাইজারের আন্ডারে। অফিসের খাতায় আমার নামের পাশে দাগ বাড়ছে। মনে পড়ছে দেবাশিসের কথা। পাড়ায় দেবা আমার পরের ব্যাচ। ভীষণ ডাকাবুকো ছেলে। কালেক্টারের চাকরি নিয়ে পাড়ার বেকার সমস্যা প্রায় মিটিয়ে ফেলেছে। চারটে ছোটখাটো বিজনেসে ফেল মেরে দেবার কাছে গিয়েছিলাম চাকরি চাইতে। বলেছিল, তুমি পারবে না সুদীপদা। আমার লাইনে বহুত মুখ খারাপ করতে হবে। তোমাদের মতো ভদ্র ছেলেদের জন্য এসব লাইন নয়।

বলেছিলাম, পারব। এত ছেলে যখন পারছে। ভদ্রতা ধুয়ে তো পেট ভরবে না। আমার বাড়ির অবস্থা তো তুই জানিস।

কী একটু ভেবে নিয়ে রাজি হয়েছিল দেবা। বলেছিল, তোমার মতো শিক্ষিত ছেলে পাওয়া একদিক থেকে ভাল। আমার কালেক্টারগুলো বেশিরভাগই গাঁট। কথাবার্তার কোনও আড় নেই। একদম ট্যাক্টফুল নয়। কিছুদিন আগেও লুঙ্গি পরে মাচায় বসে আড্ডা মেরেছে, হঠাৎ ভাল প্যান্ট, শার্ট, গলায় মোবাইল ঝুলিয়ে কি স্মার্ট সাজা যায়! পুরো ধুর লাগে।

আমায় কিন্তু মানিয়ে গেল। যদিও চাকরির শুরুতেই বেশ কিছু কেস হড়কাতে লাগল

ওপর তলায়। দেবা বলল, সুদীপদা, আরও একটু রাফ হও। কাঁচা খিস্তি ফিস্তি মারো। দেখবে, সুড়সুড় করে টাকা বার করছে ক্লায়েন্ট।

দেবার পরামর্শে ফল পেয়েছি। রতনলালের কাছে এসে মুখ থুবড়ে পড়লাম।

বেশিরভাগ দোকানের ঝাঁপ পড়ে গেলেও, চায়ের দোকান খোলা পাওয়া গেল। মফস্সলের বাজার দুপুরে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। একটু যেন খিদে খিদে পাচ্ছে। বাড়ি থেকে দেওয়া টিফিনটা এবার খেয়ে নেওয়া যাক। তারপর দেবাকে একটা ফোন করব। রতনলালের টাকা মারার ষড়যন্ত্র জানিয়ে দিতে হবে।

চা-দোকানে আমি এখন একাই খদ্দের। বললাম, বড় করে চা দিতে। টিফিন বক্স খুলতেই রুটি, তরকারি, মিষ্টির ভেতর থেকে মা মা গন্ধটা বেরিয়ে এল।

আত্মীয়-স্বজনের কাছে মা বলে বেড়ায়, আমি ব্যাঙ্কে চাকরি করি। কোন ব্যাঙ্ক? না অমুক। কী কাজ? ফিল্ড ওয়ার্ক। দু’-তিনটে যে নামী প্রাইভেট ব্যাঙ্ক আছে, তাদের মধ্যে আমাদেরটা পড়ে না। ওয়াকিবহাল আত্মীয়রা নিশ্চয়ই আড়ালে হাসে।

মাকে বোঝাই, আমি ব্যাঙ্কে কাজ করি না। একটা এজেন্সির মাধ্যমে লোনের টাকা তোলে ব্যাঙ্ক, আমি সেই এজেন্সির স্টাফ। খামোকা কাককে কোকিল বলে লোকের কাছে চালিয়ো না।

মা আসলে সবই জানে! তাই হাসে। বলে, দুটোই তো কালো পাখি। কাজ তো করিস সেই ব্যাঙ্কেরই হয়ে। নিজেকে এত ছোট ভাবিস কেন?

আমার চাকরির ব্যাপারে বাবার কমেন্টটাই সবথেকে সেরা। মাকে বলেছে, ও হচ্ছে বাঙালি কাবুলিওলা। ওদের ঠেলায় কাবুলিওলারা দেশে পালিয়েছে।

বাবার ভুলটা শুধরে দিতে হবে। রতনলাল, পিন্টুদের মতো লোকেদের জন্যই কাবুলিওলারা এখন বিরল।

টিফিন, চা খেয়ে বেরিয়ে এসেছি দোকান থেকে। রোদের তেজ আরও বেড়েছে। ছাতা দিয়েছি মাথায়। এখন যেতে হবে লেভেল ক্রসিং-এর ওপারে। কলোনি এলাকা। রেলের লাইন যেন ভাগ করে দিয়ে গেছে। বড়লোক-গরিবের বসত সীমানা। বড়ই বিবর্ণ ওপারটা। এরই ফাঁকে মোবাইল থেকে ফোনটা করেছিলাম দেবাকে। রতনলালের ঘটনা শুনে একটুও টেনশান করল না। বলল, বুঝতে পেরেছি, লোকটা তোমার পক্ষে একটু হার্ড হয়ে গেছে। ঠিক আছে, ছেড়ে দাও। আমরা সালটে নেব। তুমি অন্য পার্টিগুলো অ্যাটেন্ড করো। সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিলাম, পারবি সালটাতে? তুই যা ভাবছিস, তার থেকে অনেকগুণ বেশি খচ্চর পার্টি। আমি তো চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি।

আমার আশঙ্কা ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দেবা বলেছে, ছাড়ো না বস, টাকা মারা অত সস্তা নয়। তা ছাড়া ধরো যদি মেরেই দেয়, কী এমন ক্ষতি হবে ব্যাঙ্কের! ওইসব ক্ষয় ক্ষতি ধরাই থাকে হিসেবে। সেই অনুযায়ী লোনের ওপর ইন্টারেস্ট চাপায় ব্যাঙ্ক।

দেবা সিজন্ড হয়ে গেছে এই লাইনে। আমি বোকার মতন ঝগড়াটা এমন জায়গায় নিয়ে

গিয়েছিলাম, একটু হলেই মার খেতে হত। দেবার কথার অর্থ করলে দাঁড়ায়, রতনলালের টাকা শোধ দেবে তুলনামূলক ভীরু, নিরীহ পার্টি। যারা আমাদের চমকানিতে ভয়ে ভয়ে টাকা বার করে দেবে। এত কিছু ভাবার জন্য আমায় মাইনে দিয়ে রাখা হয়নি। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম রতনলালের কেস। রেলগেট ডিঙিয়ে চলেছি কলোনির দিকে। এ পার্টির কাছে আসতে একদম ইচ্ছে করে না আমার। হাড়হাভাতে ক্লায়েন্ট। লোন নিয়েছিল পঞ্চাশ হাজার। দশ হাজার শোধ করেই কেলসে পড়েছে। ক্লায়েন্ট একজন বিধবা মহিলা। স্কুলে কাজ করেন। মাটির বাড়ি পাকা করার জন্য লোনটা নেওয়া। বাড়ির দেওয়াল পাকা হয়ে গেছে। চালা টিনের। লোনটা যে স্যাংশান করেছে, একবারও এনকোয়ারি করেনি, কী কাজ করেন স্কুলে। লোন শোধ করতে গিয়ে হোঁচট খেতে দেখে, আমি পার্সোনালি খোঁজ নিই, স্কুল ঝাড়পৌঁছ করেন, ঠিকে কাজ। আমাদের ব্যাঙ্ক তো লোন দিতে পারলেই বেঁচে যায়। বাঁশ হয় কালেক্টারদের। মহিলা বেশ কয়েক মাস ধরে ভুগছেন। বিছানায় শোওয়া। যখনই যাই, ছেলে বলে, মা সুস্থ হয়ে কাজে জয়েন করলেই লোন শোধ করতে শুরু করে দেব।

ছেলেটা কলেজে পড়ে। পড়াশোনায় নাকি খুব ভাল। সেটা ওর মা আমাকে বলেছে। যতই অসুস্থ হন, ছেলের প্রসঙ্গ এলে চোখমুখ চকচক করে ওঠে।

এরকম একটা দরকচা মার্কা বাড়িতে যেতে কার ভাল লাগে! সকাল থেকে তিনটে পার্টি অ্যাটেন্ড হয়ে গেল, একটাও আদায় হয়নি। পঞ্চায়েতের এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, উপচে পড়া নর্দমা, ভাঙা পুকুরঘাটের পাশ দিয়ে পৌঁছে গেলাম পার্টির বাড়ির সামনে। ব্যাঙ্কের টাকায় তৈরি নতুন দরজা এখনও চকচক করছে। কড়া নাড়তে, খুলল সেই ছেলেটাই। বলল, আসুন। আপনার কথাই ভাবছিলাম।

বুকে একটু বল পাই। মনে হচ্ছে একটা ইনস্টলমেন্ট পাব। ঘরে ঢুকতেই বিছানায় শোওয়া মহিলা নমস্কার করে একটু যেন উঠে বসতে যাচ্ছিলেন, হাত তুলে ইশারায় বলি, আপনি শুয়ে থাকুন।

অপর খাটটাতে একরাশ বইপত্তর, কিছু বইখাতা খোলা। ছেলেটা বোধহয় পড়তে পড়তে উঠে গিয়েছিল। ওই খাটটাতেই বসি। ঘরটায় আজ যেন একটু বেশি আলো। ছেলেটা আমার সামনে অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক সাবলীলভাবে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসা করি, কী কথা হচ্ছিল আমার সম্বন্ধে?

অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে ছেলেটি বলে, আমাদের পক্ষে ব্যাঙ্কের লোন শোধ করা সম্ভব নয়।

এ কী, এ তো দেখছি রতনলালের কথারই পুনরাবৃত্তি! এখানেও ঢুকে পড়েছে নাকি পিন্টু? ঝগড়াঝাঁটি শুরু হলেই উদয় হবে। পরক্ষণেই নিজেকে শুধরে নিই, পিন্টু এত গরিব পার্টির হয়ে কাজ করবে না। এরা তো লোনের টাকা খরচা করে ফেলেছে। পিন্টুকে কমিশন দেবে কোথা থেকে। ছেলেটাকে বলি, লোন শোধ না করলে কী হবে জানো?

জানি। আপনারা গুন্ডা পাঠাবেন, পুলিশ পাঠাবেন।

একই সুরে আর একটা পরিণতির কথা যোগ করি আমি, এই বাড়িটারও দখল নেবে ব্যাঙ্ক।

সে তো অনেক পরের কথা। গুন্ডা, পুলিশ সামলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তা ছাড়া সামাজিকভাবে এত অপমানিত হতে আমরা চাই না। পাড়ার লোক আমাদের একটু অন্য চোখে দেখে। দারিদ্র্যের সঙ্গে মায়ের প্রতিনিয়ত লড়াই আর আমার ভাল রেজাল্টের কারণে আলাদা মর্যাদা দেয়।

ছেলেটা যে ঠিক কী বলতে চাইছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। খুবই সংশয় থেকে জানতে চাইলাম, তা হলে লোনটার কী হবে?

মায়ের দিকে তাকিয়ে নিয়ে ছেলেটা বলে, বলছি। আপনি কি একটু চা খাবেন? চা আমি ভালই করতে পারি।

চা নয়, এক গ্লাস জল খাওয়াও।

ঘরের কোণে কুঁজো থেকে জল গড়িয়ে নিয়ে এসে আমার হাতে দেয়। বলে, একটা কথা আপনাকে আমরা লুকিয়ে গেছি।

কী কথা?

ছেলেটা ফের মায়ের দিকে তাকায়। চোখের ভাষায় কথা হয় দু’জনের। দৃষ্টি ফিরিয়ে আনে আমার মুখের ওপর। বলে, মায়ের আসলে ক্যান্সার হয়েছে। লাং ক্যান্সার।

গ্লাসটা মুখে তুলতে গিয়েও থেমে গেলাম। জানি ক্যান্সারের জীবাণু জলে ছড়ায় না, তবু… ছেলেটা বলে যাচ্ছে, মা আর কোনওদিনই ভাল হবে না। চিকিৎসা করে বেশিদিন বাঁচিয়ে রাখার টাকাও আমাদের নেই।

চুপ করে গেছে ছেলেটা। কিছুই বলছে না। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি ওর মুখের

দিকে। ক্ষীণ মহিলা কণ্ঠ ভেসে ওঠে ঘরের বাতাসে, কী হল, ওঁকে বল না আসল কথাটা। সংবিৎ ফেরে ছেলের। ঢোঁক টোক গিলে বলে, লোন শোধ করার একটা অদ্ভুত উপায় বলেছে মা। এ ব্যাপারে আপনার একটু সাহায্য চাই।

কীরকম!

মা বলছে, আমি তো বাঁচবই না, ফুসফুসের ক্যান্সার নিশ্চয়ই কিডনি অবধি ছড়ায়নি। ও দুটোর একটা বেচে দিতে চায় মা।

কথা শুনে পুরো ভ্যাবলা মেরে গেলাম। জলটা আর খাওয়া হল না। নামিয়ে রাখলাম মেঝেতে। অবাক বিস্ময়ে মহিলাকে একবার দেখি, এরকম একটা মারাত্মক রোগের কবলে পড়েও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই ছাড়েননি। মহিলা আমার দিকে করুণ আর্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন। যেন বলছেন, আমার জন্য এটুকু করে সসম্মানে মরতে দিন।

ঘোর কাটিয়ে বাস্তবে ফিরি। ছেলেটিকে বলি, ডাক্তার ক্যান্সার পেশেন্টের কিডনি নেবে কেন?

ডাক্তারকে তো জানানো হবে না মায়ের ক্যান্সার।

কিন্তু ওঁকে দেখেই তো বোঝা যাবে উনি অসুস্থ। সুস্থ মানুষ ছাড়া কিডনি নেবে না ডাক্তার।

ছেলেটি বলে, এখনও হাঁটা চলা করতে পারে। ক’দিন একটু ভাল খাওয়া-দাওয়া করে নেবে’খন। দু’নম্বরি ডাক্তারের তো অভাব নেই, আমরা পয়সাকড়ি একটু কম নিলে অত

কিছু লক্ষ করবে না। সেরকম একটা ডাক্তারের খোঁজ করে দেখুন না আপনি।

খুবই অবান্তর, অবাস্তব লাগে প্রস্তাবটা। আর কোনও কথা না বলে খাট থেকে নেমে দাঁড়াই। আমি চলে যাচ্ছি দেখে, কষ্টে সৃষ্টে উঠে বসলেন মহিলা। যতটুকু সম্ভব গলায় জোর এনে বললেন, আমি পারব বাবা, তুমি খালি একটু যোগাযোগ করিয়ে দাও। আমি এমনিতে বড় ঘরের বউ। অবস্থার ফেরে…

চলে এসেছি রাস্তায়। যত ভাবছি ভাবব না কলোনি বাড়ির কথা, মশার গুঞ্জনের মতো প্রসঙ্গটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। একটা সময় চলে গেলাম অলীক কল্পনায়, যেভাবে হোক রতনলালকে যদি অপহরণ করা যায়, অজ্ঞান করে দুটো কিডনিই খুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

রাত ন’টা-দশটা নাগাদ পাড়ার মাঠে দেবা রোজ আসে। ক্লাবঘরের পেছনে বসে মদ খায়। সঙ্গী সাথী থাকে কিছু। আমি পারতপক্ষে সেখানে যাই না। আজ চলে গেলাম। আবছা অন্ধকারে চার-পাঁচটা সিগারেটের আগুন ওঠানামা করছে। দেবার গলা ভেসে এল, একটু এলানো কণ্ঠস্বর, কিছু বলবে, সুদীপদা?

হ্যাঁ রে। তোর সঙ্গে একটু প্রাইভেট দরকার। অফিসের কোনও কথা নয় তো?

অফিসেরই কথা। আয় না একটু, ভীষণ দরকার।

বন্ধুদের ছেড়ে উঠে আসে দেবা, বলো কী বলবে?

ওকে নিয়ে আরও ঘন অন্ধকারে যাই। সবিস্তারে বলি কলোনি বাড়ির কথা। সব শেষে বিস্ময় মাখানো হাসি সহযোগে বললাম, কী অদ্ভুত প্রস্তাব না, তোর এরকম এক্সপেরিয়েন্স আছে?

উত্তর দেয় না দেবা, অন্যমনস্কভাবে সিগারেট টানতে থাকে। নেশায় ভারী হয়ে যাওয়া জিভের বাধা পেরিয়ে একসময় বলে ওঠে, খুব ভেবে দেখলে, ভদ্রমহিলা কিন্তু খারাপ ডিসিশান নেননি। মরেই যখন যাবেন, কিডনি নষ্ট করে লাভ কী! একটা বেচে দিয়ে, যে ক’টা দিন বাঁচবেন অন্যটা দিয়ে চালিয়ে নেবেন। এতে বরং কিডনির অসুখে মরতে যাওয়া একটা মানুষ বেঁচে যাবে। ওঁর প্রপোজালে বিরাট একটা পজিটিভ আউটলুক আছে। অন্ধকারে দেবার মুখটা পড়তে পারছি না। মনে তো হচ্ছে সিরিয়াসলি বলছে। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে দেবা ফের বলে, তুমি ভদ্রমহিলার ব্লাডগ্রুপ, বডি ওয়েট এসবগুলো আগে জানো। আমি নিচ্ছি ডাক্তারের খোঁজ। খানিকটা অনীহা ও সতর্কতার সঙ্গে বলে উঠি, এসব কাজে আমাদের জড়িয়ে পড়া কি ঠিক হবে রে দেবা?

আমরা জড়াব না। সিনে থাকবই না আমরা। বাইরে থেকে যতটুকু হেল্প করা যায় করব। বলে, একটু শ্বাস নেয় দেবা। তারপর যে কথাটা বলে, ঠিক দেবাসুলভ নয়, এটাও এক ধরনের সামাজিক কাজ সুদীপদা, খালি চাকরি, টাকা, কেরিয়ার এসব করলে চলবে? দেবা কি মাল খেয়ে এসব বকছে? যুক্তিতে কোনও ফাঁক নেই, এটা মানতে হবে। তবে

কিডনি তো আর হাতঘড়ি নয়, যে ইচ্ছে করলেই কাউকে খুলে দেওয়া যাবে। গোটা বিষয়টা সাকসেসফুলি ঘটানো বেশ কঠিন।

দু’দিন বাদ দিয়ে চলেছি কলোনি বাড়ির দিকে। আসার ইচ্ছে ছিল না, দেবা ফোনে তাগাদা মারছে। সেদিন নেশার ঘোরে কথাগুলো বলেনি দেবা, সজ্ঞানে বলেছে। অথচ রতনলালের বিষয়ে কোনও কথা তুলছিল না। আমি একবার জিজ্ঞেস করলাম, ফের যাব ওদের দোকানে? দেবা বলল, না না, ওখানে অন্য লোক যাবে। তুমি তোমার কাজটা করো। আমি আজ তাই করছি। স্টেশনে নেমে ডানপাশে শহর বাজারের দিকে তাকাইনি পর্যন্ত। ওদিকে খাপ খোলার ক্ষমতা আমার নেই। আমার ডিউটি তুলনামূলক গরিব এলাকায়, জানতে হবে ব্লাডগ্রুপ, বডি ওয়েট… বাড়িটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দরজাটা আজ পুরোপুরি ভেজানো নেই। একটা কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে বারান্দায়, আমি উঠে আসতে, কুকুরটা নেমে গেল।

সৌজন্য রক্ষার্থে টোকা মারি দরজায়, কোনও সাড়া নেই। ঢুকে আসি ঘরে। আলো আজ বেশ কম। চোখ সওয়াতে টাইম লাগে। কেমন একটা গুমসানো গন্ধ।

মায়ের মাথার কাছে দেওয়ালের দিকে পিঠ করে বসে আছে ছেলেটা। আমি ঘরে ঢুকতেই মুখ তুলে তাকিয়েছে। চোখে ভয় মাখানো আকুলতা। কাঁপা গলায় বলে ওঠে, দেখুন না, মা সকাল থেকেই ঘুমোচ্ছে। ডাকছি, উঠছে না। এখন তো একদম সাড় নেই।

বিছানার কাছে এগিয়ে যাই। কাঁধের ব্যাগ, ছাতা এমনভাবে নামিয়ে রাখি পাশে, যেন ডানা মুড়লাম। ঝুঁকে পড়ি ভদ্রমহিলার মুখের ওপর। ভাল করে লক্ষ করি বুকের ওঠা নামা। কবজি তুলে নিই হাতে, পাল্স বিট পাই না।

ছেলেটা বলে, মা কি মরে গেল?

গভীর মনঃসংযোগে আমি প্রাণ খুঁজি রুগ্ণ শরীরটায়। জানি, এক্ষুনি যদি তৃতীয় কোনও ব্যক্তি ঢোকে এই ঘরে, আমাদের দু’জনকে বিরল হয়ে যাওয়া পাখি বলেই ভুল করবে। শকুন। মাঝে পড়ে রয়েছে চিরদুঃখিনী এক মা।

সানন্দা পুষ্পাঞ্জলি ২০০৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *