Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীহারিকা || Pallav Sanyal

নীহারিকা || Pallav Sanyal

নীহারিকা সকাল থেকেই ব্যস্ত। আজ বিজয়া দশমী। চারদিকে কোলাহল, উলুধ্বনি, শাঁখ বাজছে। নারীরা একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন, আনন্দে মেতে উঠেছেন। লাল বেনারসী শাড়ি পরে, কপালে বড় টিপ, হাতে সোনার চুড়ি পরে নীহারিকা দাঁড়িয়ে ছিল বাড়ির উঠোনে। কোলে তার একমাত্র ছেলে, অয়ন। পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলেটি সবে কথা বলতে শিখেছে ভালো করে, কিন্তু অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা যেন জন্মগতভাবেই পেয়েছে।

আজকের দিনটা শুধুই উৎসবের নয়, বিদায়েরও। মা দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়া হবে, আর নীহারিকাকেও ফিরে যেতে হবে শ্বশুরবাড়ি। মা’কে ছেড়ে যাওয়া কতটা কঠিন, সেটা সে ছোটবেলা থেকেই বুঝতে শিখেছে। কিন্তু আজ অন্য এক দায়িত্ব তাকে নতুনভাবে তা অনুভব করাচ্ছে। এখন সে শুধু মেয়ে নয়, মা-ও বটে।

শৈশবে বিজয়া দশমীর দিন মা যখন তার মাথায় হাত রেখে বলতেন, “মেয়ে, সুখে থাকিস,” তখন নীহারিকা বুঝতে পারত না কেন মায়ের চোখ ছলছল করে ওঠে। কেন চোখের কোণে জল জমে, কেন বিদায়ের মুহূর্তে বাবা মুখ ঘুরিয়ে নেন। এখন সে নিজেই মা। আজ যখন শ্বশুরবাড়ি ফেরার পালা, তখন মায়ের আবেগের মানে বুঝতে তার আর কষ্ট হচ্ছে না।

নীহারিকা ধীর পায়ে উঠোন পেরিয়ে দরজার দিকে এগোতে লাগল। তার মা, গায়ে সাদা-লাল শাড়ি, দাঁড়িয়ে ছিলেন দরজার এক কোণে। চোখের জল লুকিয়ে রাখতে চাইছেন, কিন্তু পারছেন না। মায়ের কপালে হাত রেখে সিঁদুর পরিয়ে দিলেন, ঠিক যেমন তিনি প্রতি বছর করেন। কিন্তু আজ যেন সেই স্পর্শে আরও গভীর একটা মায়া ছিল।

ঠিক তখনই অয়ন হঠাৎ তার ছোট ছোট হাত বাড়িয়ে বলল, “মা, আমরা কি আর দিদার কাছে আসব না?”

নীহারিকার বুকটা হঠাৎ মোচড় দিয়ে উঠল। ছোট্ট অয়নও যেন মায়ের ব্যথা বুঝতে শিখে গেছে! সে ছেলেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “আসব রে বাবা, বারবার আসব। মাকে ছেড়ে থাকা কি এত সহজ?”

মা নীহারিকার মাথায় হাত রেখে বললেন, “তুই যেমন ছোটবেলায় আমার আঁচল ছেড়ে যেতে চাইতি না, আজ তোর ছেলেও তাই করছে। মা-মেয়ের সম্পর্ক কখনো বদলায় না রে মা, শুধু সময়ের সাথে ভূমিকাটা পাল্টায়।”

নীহারিকা মায়ের হাত ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। মনে পড়ছিল সেই দিনগুলোর কথা, যখন ছোটবেলায় সে মাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারত না। আজ অয়নের মধ্যেও যেন নিজের সেই শৈশব দেখতে পেল।

সামনের আকাশে তখন রক্তিম সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। নীহারিকা জানে, এই সূর্য যেমন প্রতিদিন অস্ত যায়, তেমনি আবার ভোরে ওঠে। বিদায় মানেই শেষ নয়, ফেরার অপেক্ষাও থাকে। ঠিক যেমন এক মেয়ে তার মায়ের কাছে বারবার ফিরে আসে, ঠিক যেমন ভালোবাসা কোনোদিনও ফুরিয়ে যায় না।

নীহারিকা ছেলের হাত শক্ত করে ধরে বলল, “চল অয়ন, আমরা দিদার জন্য কিছু ভালো কিছু নিয়ে আবার আসব।”

ছোট্ট ছেলেটি মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে হাসল, যেন বিশ্বাস করল—হ্যাঁ, সে আবার আসবে। পিছনে দাঁড়িয়ে মা চোখ মুছলেন, আর মনে মনে প্রার্থনা করলেন, যেন মেয়ের জীবনে সুখ আর ভালোবাসা কখনো কম না হয়।

নীহারিকা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল, কিন্তু মনে মনে জানল—এই পথ একদিন আবার তাকে মায়ের কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *