Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিশুতি রাতের ডাক || Syed Mustafa Siraj » Page 7

নিশুতি রাতের ডাক || Syed Mustafa Siraj

ইলেভেন টাইগার্স ক্লাবের কর্মকর্তাদের মিটিং ছিল বেলা দুটোয়। সেই সঙ্গে লাঞ্চ। সচরাচর মিটিং করা হয় কোনো বড় হোটেলেই। ক্লাবের বহু গোপন আলোচ্য থাকে, যেমন আসন্ন কোনো বড় খেলায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কিংবা অন্য দলের কোনো ভাল খেলোয়াড়কে ভাগিয়ে আনার স্ট্রাটেজি এমন সব বিস্তর বিষয়, যা ক্লাবের টেন্টে বসে আলোচনা করা চলে না। টেন্টে সব সময় নানা ধরনের লোকের আনাগোনা। পৃষ্ঠপোষক, সমর্থক, লাইফ মেম্বার, এমন কি খেলোয়াড়দের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব। এক্ষেত্রে কোনো গোপনতা রক্ষা করা কঠিন।

মূল টেন্টটা অবশ্য বেশ বড়। কাঠের স্ট্রাকচার, মাথায় কাঠের চালের ওপর ঢালু ঘন সবুজ তেরপলের ছাউনি। দূর থেকে দেখায় প্রকাণ্ড সবুজ হাতির মতো। ভেতরে কাঠের পার্টিসান। বড় অংশটায় বার কাম-রেস্তোরাঁ। একজন কন্ট্রাকটার সেটা চালান। বাকি অংশ দুটো ভাগে ভাগ করা। একটা কোচ অমর্ত্য রায়ের জন্য নির্দিষ্ট। অন্যটা কর্মকর্তাদের মিটিং-কাম-ডিসকাসান রুম।

মধ্য রাতে হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি গেছে। দরমাবাতার পেন্টেড সিলিং ছুঁইয়ে জল পড়েছে। গত দু বছর যত্ন করে মেরামত না হওয়ার ফল। লাঞ্চ মিটিংয়ে তাই নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি বেধেছিল। শেষে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত করা হল, আগাগোড়া রিপেয়ার হবে। আগামী জুনের মাঝামাঝি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাদিবস। ওইদিন কোনো বড় দলের সঙ্গে ফ্রেন্ডলি ম্যাচ হবে। একটা ফাংশান হবে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ করা হবে। এই ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে সিনেমা জগতের বিগ গানরাও ছিলেন। যেমন পরিচালক বালক দাশগুপ্ত। বোম্বের হিন্দি ফিল্মেরও কোনো-কোনো উল্লেখযোগ্য বাঙালি।

বর্তমান কোচ অমর্ত্য রায়ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাসদস্য। কর্মকর্তাদের একজন। মিটিংয়ে অমর্ত্য চিরদিন নীরব মানুষ। কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তার নিজের বক্তব্য থাকে না। মিটিংয়ে ঠাট্টা করে তাকে বলা হল, টেন্টের দুরবস্থা সম্পর্কে তার মনোযোগের অভাবের কারণ কি এই যে তিনি পশ্চিম জার্মানিতে অফার পেয়েছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে চলে যাবেন সেখানে? অমর্ত্য তো এখানেই বাস করেন একরকম। সুতরাং তার ঔদাসীন্যের একটা কারণ থাকা সম্ভব।

একথায় অমর্ত্য খাপ্পা হয়ে ইংরেজিতে বললেন, আমি মিস্তিরি নই, কোচ। আমার চোখ খেলোয়াড়দের জন্য।

বালক দাশগুপ্ত হাসতে হাসতে বললেন–ওকে ঘাঁটিও না ব্রাদার! মাথাটি ইহলোকের গোলের ওপর দিয়ে ওভারশট করে একেবারে স্বর্গে পাঠিয়ে দেবে।

ঠাট্টা করছিলেন শিল্পপতি জগন্ময়কুমার। বললেন–উঁহু, নরকে। স্বর্গে যাবার মতো পুণ্য আমরা করিনি।

দৈনিক সত্যসেবক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এবং মালিক প্রণবেশ মজুমদার চোখ টিপে অমর্ত্যকে কটাক্ষ করে বললেন–অমর্ত্য, তুমি কোথায় যাবে? কতটা পুণ্য করেছ?

অমর্ত্য বাঁকা হেসে বললেন-নরকে। পুণ্য সঞ্চয় করতে দিল কই বাস্টার্ডরা?

বালকবাবু বললেন–তারা আবার কারা?

অর্মত্য জবাব দিলেন না। হুইস্কিতে চুমুক দিয়ে সিগারেট ধরালেন। লাঞ্চ খেতে খেতে মিটিং চলেছে। আঠারোজন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র তোরাজন হাজির। কোরাম দুই-তৃতীয়াংশ এলেই। হোটেলে হলে উপস্থিতি পুরো হয়। একটু পরে ব্যাপারটা খেয়াল হল বালকবাবুর। মাই গড! উই আর আনলাকি থার্টিন।

প্রাক্তন খেলোয়াড় সুদীপ্ত বসাক মুর্গির ঠ্যাং কামড়ে ধরে বললেন–বোগাস যত্তোসব কুসংস্কার!

কলোনিয়াল লিগ্যাসি। মন্তব্য করলেন নচিকেতা বসু-প্রখ্যাত বাঙালি মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী। –ব্রিটিশরা ছিল খ্রিস্টান। আমাদেরও অনেকটা খ্রিস্টান করে গেছে।

সবাই হেসে উঠলেন। অমর্ত্য বাদে। অমর্ত্যর লাঞ্চে মনোযোগ কম। ক্রমাগত হুইস্কি পান করে যাচ্ছেন। আবার প্রসঙ্গ বদলাল। মূল বিষয়ে ফিরে এলেন সদস্যরা। শিগগির টেন্ট মেরামত, স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নতিসাধন, ব্যায়ামাগারের কিছু নতুন সরঞ্জাম কেনা, বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের জন্য তিনটে সাবকমিটি গঠন-সবেতেই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মত হল।

টেন্ট মেরামতের দায়িত্ব দেওয়া হল বালকবাবুকে। বরাবর তাকেই দেওয়া হয়। কন্ট্রাক্টার তার কাছের লোক। সিনেমা স্টুডিওর সঙ্গে জড়িত। বালকবাবু সিলিং দেখতে দেখতে বললেন ইলেকট্রিক ওয়ারিংয়ের অবস্থাও দেখছি খারাপ। শর্ট সার্কিট হয়ে আগুন ধরে গেলে কেলেঙ্কারি হবে।

সভাপতি প্রাক্তন বিচারপতি নগেন্দ্রনাথ কুণ্ডু বললেন–একই সঙ্গে করে ফেল। এতে আর কথা কী? থরো রিপেয়ার করা হবে। আলাদা রেজিলিউশানের দরকার নেই। একই হেডে অ্যাকাউন্ট সাবমিট করতে বলবে কন্ট্রাক্টারকে।

সর্বক্ষেত্রে কিছু লোক থাকেই, যারা উল্টো কথা তোলে। পৃষ্ঠপোষক সদস্য জ্ঞানরঞ্জন ভাদুড়ী বললে-টেন্ডার ডাকা উচিত ছিল। টেন্ডার কল করে লোয়েস্ট রেটে–

নগেন্দ্রনাথ বাঁকা হেসে বললেন–ওয়েট। তুমি তো রাইটার্সে হেডক্লার্ক না কী ছিলে যেন?

ভাদুড়ী গম্ভীর হয়ে বললেন–ডেপুটি ডাইরেক্টার অফ স্টেট প্ল্যানিং!

-সে তো হেডক্লার্ক থেকে প্রমোশন পেয়ে। অরিজিন্যালি তুমি ছিলে মাছিমারা কেরানি।

হাসির রোল পড়ে গেল। ভাদুড়ী রাগ করে দ্রুত চিবুতে থাকলেন। রোগা মানুষ কিন্তু ব্লাডপ্রেসার হাই। তাঁকে বরাবর কেউ পাত্তা দেয় না। মনে অভিমান আছে।

প্রাক্তন বিচারপতি বাঙালির কেরানি মনোবৃত্তি এবং লালফিতের উদ্ভব যে বাঙালির হাতে, এ সম্পর্কে দীর্ঘ ভাষণ দিতে দিতে খাওয়া দাওয়া হয়ে গেল। বালকবাবু টুথপিক তুলে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বললেন–সরলদা ইজ এ রেপুটেড কন্ট্রাক্টার। সিনেমা লাইনের সব কাজ তার প্রায় একচেটিয়া। সেট তৈরিতেও তার সাহায্য চাইতে হয়। এক্সট্রার দরকার হলে তিনিই ভরসা। লাইটিং পর্যন্ত। কারণ তার হতে প্রচুর স্কিলড ইলেকট্রিসিয়ান আছে তা ছাড়া মনে প্রাণে ভীষণ বাঙালি। আমাদের চেয়েও। এই ইলেভেন টাইগার্সের কত বড় সমর্থক সরলদা, আমরা আশাকরি, তা জানি!…

অমর্ত্য বেরিয়ে গিয়ে অমলতাস গাছটার ছায়ায় দাঁড়ালেন। ক্লাবের সারাক্ষণের ভৃত্য জগাই একটা বেতের চেয়ার দিয়ে গেল। অমর্ত্য বসলেন। হাতে হুইস্কির গ্লাস। তারপর মুখ ঘুরিয়ে রাইট ব্যাক প্রদীপ মৈত্রকে দেখতে পেয়ে বললেন– প্রদীপ, এখানে এস তো!

প্রদীপ স্বাস্থ্যবান তরুণ। তার হাঁটা চলার ভঙ্গিতে খেলোয়াড়ি ছন্দ আছে। কাছে এসে বলল–অমর্ত্যদা, মিটিং শেষ হল?

-হ্যাঁ। কিন্তু তুমি কী করছ এখন?

–আমি তো সারাদিনই থাকি প্রায়।

অমর্ত্য মুখ তুলে ওর চোখে চোখ রেখে বললেনকাল থেকে লক্ষ্য করছি, যতক্ষণ আমি ক্লাবে আছি, সব সময় তুমি আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে। আমার নজর সবখানে–মাইন্ড দ্যাট!

প্রদীপ আমতা হাসল।–না, না! ও কী বলছেন অমত্যর্দা?

–দিস ইজ ব্যাড! অমর্ত্য রাগ করে বললেন। কাল সন্ধ্যায় আমি টয়লেটে ঢুকেছি। জানলা দিয়ে দেখি, তুমি এদিকে তাকিয়ে আছ। তারপর আমি সুইমিং পুলের কাছে গেলুম। দেখি, তুমিও হাজির। আমি এ সব পছন্দ করি না।

প্রদীপ ব্যস্ত হয়ে বলল–না, না। জাস্ট–এমনি–মানে–

অমর্ত্য আরও খাপ্পা হয়ে বললেন–হোয়াই আর ইউ শ্যাডোয়িং মি? যখনই তাকাচ্ছি, তোমাকে দেখতে পাচ্ছি।

–প্লিজ অমর্ত্যদা, ব্যাপারটা এভাবে নেবেন না।

–খবরদার, তুমি আমার পেছনে ঘুরঘুর করবে না। কোচিংয়ের সময় আমি কিছু মনে করি না। বরং আমার দিকে চোখ রাখলে আমি খুশি হই। কিন্তু কোচিং পিরিয়ডের বাইরে আমি আলাদা লোক। নাও, গো!

প্রদীপ নার্ভাস হয়ে চলে যাচ্ছিল ব্যায়ামাগারের দিকে। অমর্ত্য তাকে হঠাৎ ডাকলেন। কাছে এলে আস্তে বললেন–আই লাইক ইউ প্রদীপ। তুমি–তুমি আমার স্বপ্ন। কিন্তু দিস ইজ ব্যাড-ভেরি ব্যাড।

প্রদীপ চলে গেল। টেন্ট থেকে কর্মকর্তারা বেরিয়েছেন। অনেকে গেটের দিকে চলেছেন। বালকবাবু অম্যের কাছে এসে বললেন–তোমার কী হয়েছে বল তো অমর্ত্য?

–কী হবে?

বালকবাবু হাসলেন। হয়তো অনেকদিন পরে তোমাকে দেখছি বলে একটা চেঞ্জ ধরা পড়ছে।

জগাই চেয়ার নিয়ে দৌড়ে এল। অমর্ত্য বললেন–নো চেঞ্জ, বালক। তোমার চোখে কিছু গণ্ডগোল হয়েছে। সিট ডাউন।

বালকবাবু বসে বললেন–ওই তো! আগের মতো নাবালক না বলে বালক বললে!

অমর্ত্য দুর্লভ হাসি হাসলেন।– কী ছবি করছ?

করছি একখানা। না করলে নয় বলেই।

–কেন? উদ্দীপনা কমার কারণ কী?

বাংলা ছবির বাজার। তার ওপর হিরোর আকাল! হিরোইনও তেমন কোথায় আর? সেই বোম্বে ছোটো। অত টাকা ইনভেস্ট করবে কোন প্রডিউসার?

–মণিদীপার সঙ্গে গণ্ডগোল নেই তো তোমার? তাকে নিয়ে এস। কম টাকায় রাজি হবে।

বালকবাবু চোখে ঝিলিক তুলে বললেন–তোমারই প্রেমিকা। বলে দাও ওকে।

ধুস! অমর্ত্য মুখ বিকৃত করলেন। শি ইজ এ প্রফেশনাল হোর!

–যাঃ! সব্বাইকে হোর বলা অভ্যাস তোমার।

–অমিয় আর উজ্জ্বল বেঁচে থাকলে প্রমাণ দিতুম।

বালকবাবুর গম্ভীর হলেন।– পরপর দুজনের খুন হওয়াটা ভারি অদ্ভুত ব্যাপার! বাচ্চু বলছিল, উজ্জ্বলের ছেলে স্বপনই নাকি খুন করেছে। পুলিস তাকে খুঁজে হন্যে হচ্ছে। কিন্তু ছেলে বাবাকে খুন করেছে, এ আমি বিশ্বাস করি নে ভাই! এখনও দেশটা অতখানি নরক হয়ে যায়নি।

অমর্ত্য গেলাস শেষ করে বললেন–স্বপন ইজ এ রয়্যাল বাস্টার্ড। আমার হাতের তৈরি সেন্টার ফরোয়ার্ড ছিল শুওরের বাচ্চা। নিজের দোষে ভাগাড়ে যাচ্ছে।

–স্বপনকে কিন্তু খুব সরল ছেলে মনে হত আমার। একটু জেদী বা গোঁয়ার ছিল, এই যা।

অমর্ত্য উঠে দাঁড়ালেন। –একটু রেস্ট নেব। তুমি এখন থাকছ, না চলে যাচ্ছ?

–কিছুক্ষণ আছি। ফোন করেছি সরলদাকে। ও আসছে। টেন্টের অবস্থাটা দেখে যাক।

অমর্ত্য টেন্টে ঢুকলেন। নিজের ঘরে ঢুকে ফ্যানের সুইচ অন করে দিলেন। শুয়ে পড়লেন ক্যাম্পখাটে। একটু পরে কাত হয়ে জানালার দিকে তাকাতেই দেখলেন, পেছনে ফুলগাছের ভেতর টেন্টের ছায়ায় প্রদীপ দাঁড়িয়ে আছে। চোখে পড়তেই সে আড়ালে সরে গেল। অমর্ত্য রাগী চোখে তাকিয়ে রইলেন।…

দিনে ঘুমোন না অমর্ত্য। কিন্তু আজ কেমন ক্লান্তিতে ঘুমঘুম একটা আচ্ছন্নতা এসে চোখের পাতা টেনে ধরছে! অথচ প্রদীপ–

প্রদীপ এমন করছে কেন? আজই প্রচণ্ড চার্জ করে জেনে নেবেন। ছেলেটা খেলোয়াড় হিসেবে বুদ্ধিমান। কিন্তু অন্যান্য ব্যাপারে যেন নির্বোধ। তার আচরণে অনেক সময় বাচ্চা ছেলের আদল বেরিয়ে আসে।

ঘণ্টা দুই চোখ বুজে থাকার পর অমর্ত্য উঠে পড়লেন। আজ বিশ্রামের দিন। এদিনে কোচিং বন্ধ। তবু অত্যুৎসাহী কোনও খেলোয়াড় আসে। একটা বল এদিকে-ওদিকে ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছে। অমর্ত্য পেছনের টয়লেটে গিয়ে ঢুকলেন। ছোট্ট ঘুলঘুলি দিয়ে তাকিয়ে প্রদীপকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তি হল।

কিন্তু বেরিয়ে এসেই দেখলেন, প্রদীপ বল নিয়ে টেন্টের কাছাকাছি ঘুরছে। পোশাক বদলে এলেন অমর্ত্য। বারের ভেতর কন্ট্রাক্টার আর তার দুজন লোক ফিতে নিয়ে মাপজোক করছেন। বালকবাবু এখনও যাননি।

অমর্ত্যকে দেখে প্রদীপ বল নিয়ে দৌড়ে এল। অমর্ত্যদা কি চলে যাচ্ছেন?

অমর্ত্য রুক্ষ স্বরে বললেন–কেন?

প্রদীপ হাসল–না। এমনি-মানে–

অমর্ত্য গেটের কাছে গিয়ে স্বগতোক্তি করলেন–বাস্টার্ড! তারপর হঠাৎ ঘুরে ডাকলেন জগইকে। বললেন–তোমার ম্যানেজারবাবুকে বল, রাত্রে থাকছি। ফিরব নটা নাগাদ। একটা লাইট ডিনার রেডি রাখে যেন। বুঝতে পেরেছ?

জাগাই মাথা দোলাল। বুঝেছে।

কর্নেল ছাদের কোনায় সরু তারের জাল দিয়ে ঘেরা চার ফুট বাই তিন ফুট এবং পাঁচ ফুট উঁচু খাঁচাটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ওপরে টিনের ছাদ। ছাদটার ওপরে ও তলায় সবুজ রঙ করেছেন নিজের হাতে। জালও সবুজ করে দিয়েছেন। মেঝেয় কাঠের পাটাতনে ইঞ্চি চারেক পুরু ঘাসের চাবড়া বসিয়েছেন। চাবড়াগুলো টেম্পো বোঝাই করে এনে দিয়েছে মেহের আলি–যার বসবাস পেছনের বস্তিতে। ধাপার দিক থেকে এনেছে কষ্ট করে। দামও নিয়েছে ভাল রকমের।

ঘাসের ভিতর বালি ছড়াচ্ছিলেন এতক্ষণ। মরুপ্রজাপতি দম্পতির স্থায়ী ডেরা এটা! বর্ষার ব্রিডিং গ্রাউন্ড। যতটা পারা যায়, মরু এলাকার স্বাভাবিক ব্রিডিং গ্রাউন্ডের নকল করা। করেক টুকরো কাঠ আর পাথর ছড়িয়ে রাখা হয়েছে। প্রজাপতি দুটো পাথরে বসে আছে। কখনও শুড় দিয়ে এ ওকে স্পর্শ করছে। এই কি ওদের প্রেমের প্রকাশ?

জলের সরু রবার পাইপ আনতে পা বাড়িয়ে দেখতে পেলেন সীমন্ত ও রাখী কখন এসে একটা প্রকাণ্ড ক্যাকটাসের কাছে দাঁড়িয়ে আছে। হেসে ফেললেন।–শটি চিলড্রেন! কি দুষ্টুমির মতলব ভাঁজছ চুপিচুপি এসে?

সীমন্ত কী বলতে যাচ্ছিল, রাখী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল–সীমন্ত বলছিল ডিটেকটিভদের নাকি পেছনেও চোখ থাকে। তাই

কী দেখলে?

—নেই।

কর্নেল জলের পাইপটা নিয়ে গিয়ে প্রজাপতির ঘরের মেঝে ভেজাতে ভেজাতে বললেন। কে কাকে ধরে নিয়ে এসেছ, বল! সীমন্ত তোমাকে, না তুমি সীমন্তকে?

রাখী মুখ টিপে হেসে বলল–আপনিই বলুন!

–তুমি কি আমার বুদ্ধির দৌড় পরীক্ষা করতে এসেছ রাখী?

ধরুন, তাই।

কর্নেল চাপা গলায় চোখে হেসে বললেন–সীমন্ত তোমাকে নিয়ে এসেছ।

–কোত্থেকে?

–হুঁ, মেট্রোর সামনে থেকে।

–এই! রাখী অস্ফুট চিৎকার করে সীমন্তের দিকে তাকাল। সীমন্ত একটু হাসল। তারপর রাখী আব্দারের গলায় বলল কর্নেল! বলুন না কেমন করে জানলেন? আঃ, বলুন না! না বললে আপনার সঙ্গে এই শেষ।

কর্নেল জলের পাইপের মুখ এঁটে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। শেষ হলে তো তুমি যা বলতে এসেছ, তা বলা হবে না। রাজা মিদাসের সেই গল্পটা জান তো? নাপিত আর রাজ মিদাস! কিং হ্যাজ অ্যাসেস ইয়ার্স!

রাখী অবাক হয়ে চোখ বড় করে তাকাল। আপনি ম্যাজিসিয়ান কর্নেল!

না ডার্লিং! একটু চেষ্টা করলে তুমিও বলতে পারতে যে আমি যখন ওই প্রজাপতি দুটোকে দেখছিলুম, তখন আসলে কাদের দেখছিলুম।….কর্নেল নিজের রসিকতায় নিজেই হেসে উঠলেন হো-হো করে।

রাখী লজ্জায় রাঙা হয়ে অস্ফুট স্বরে বলল–ভ্যাট। খালি বাজে কথা।

কর্নেল বললেন–সীমন্ত তোমাকে, না তুমি সীমন্তকে নিয়ে এসেছ–একথা যখন জিজ্ঞেস করলুম, তুমি আমার কথার উদ্দেশ্য বুঝতে পারনি। কিন্তু সীমন্তই যে তোমাকে নিয়ে এসেছে তা বলতে বুদ্ধির বিশেষ দরকার হয় না। কারণ সীমন্তর গাড়ি আছে। কাজেই সীমন্ত তোমাকে নিয়ে এসেছে।

–কিন্তু মেট্রোর সামনে থেকে জানলেন কীভাবে?

–তোমার জুতোয় কালো বালি কাদা লেগে আছে। কিন্তু সীমন্তর জুতো পরিষ্কার। তার মানে সীমন্ত গাড়িতে বসে ছিল। তুমি তার জন্য অপেক্ষা করছিলে। গাড়ি আসতেই দৌড়ে গেছ। এবার দেখ, সীমন্ত থাকে দক্ষিণে, তুমি উত্তরে। তাহলে এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে তুমি অপেক্ষা করছিলে, যেখান থেকে গাড়িতে উঠতে হলে তোমার জুতোয় কালো বালি কাদা লাগবে। সেটা মেট্রো সিনেমা ছাড়া আর কোথায় হবে? তুমি মেট্রোয় বারান্দার তলায় দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ রোদ্দুর ছিল। সীমন্তর গাড়ি দক্ষিণ থেকে আসছে। কাজেই রাস্তার বাঁ দিকে পাতাল রেলের জন্য খোঁড়া মাটির পাশেই তাকে গাড়ি রাখতে হবে। তোমাকে যেতে হবে রাস্তা পেরিয়ে এবং দাঁড় করানো গাড়িতে উঠতে হবে। বাঁ দিকের দরজা খুলে। ওই দিকটায় পাতাল রেলের কালো বালি কাদা উঁই হয়ে আছে। এ বালি কাদা কলকাতার পাতালের।

জায়গাটা অন্য কোথাও হতে পারত। মেট্রো কেন?

–মেট্রো চিরদিন একটা রেদেঁভ্যু। সাক্ষাতের জায়গা হিসাবে ওর একটা ঐতিহ্য আছে, ডার্লিং! উত্তরের মেয়ের জন্য দক্ষিণের ছেলে এলে তাকে ওখানেই অপেক্ষা করতে হবে এবং ওর উল্টোটাও সত্য। সীমন্ত তো তোমার জন্য বেলগাছিয়ায় অপেক্ষা করতে যাবে না।

রাখী হাততালি দিয়ে হেসে উঠল। তারপর বলল–আমি কিছু বলতে এসেছি কী করে জানলেন?

কর্নেল মিটিমিটি হেসে বললেন–আমাকে বলার মতো কথা সীমন্তের চেয়ে তোমারই থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তুমি আমাকে ডিটেকটিভ হিসেবে জান। কাজেই সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত কথা ছাড়া তোমার আর কী বলার থাকতে পারে আমার কাছে? তা ছাড়া এই কেসের সন্দেহভাজন লোকটি তোমার দাদা। তোমার তাগিদটাই তীব্রতর হওয়া উচিত।

রাখী একটু গম্ভীর হল এবার। –এমনি বুঝি আসতে পারি না আপনার কাছে?

কর্নেল খুরপি নিয়ে একটা ক্যাকটাসের টবের গোড়ার মাটিতে আঁচড় কাটতে কাটতে বললেন–হয়তো পার। কিন্তু সীমন্তের মুখ দেখে বুঝতে পেরেছি, সে উদ্বিগ্ন। সে এতক্ষণ চুপচাপ এবং অন্যমনস্ক। কাজেই গোড়ায় যে প্রশ্নটা। করেছিলুমকে কাকে নিয়ে এসেছ, তার লক্ষ্য ছিল ভিন্ন। হুঁ, সীমন্ত তোমাকে গাড়ি করে নিয়ে এসেছে। এটা আক্ষরিকভাবে সত্য। কিন্তু সীমন্তের হাবভাব বলে দিচ্ছে, তুমিই তাকে আমার শরণাপন্ন হতে প্ররোচিত করেছ। তোমার হাবভাবে ড্যামকেয়ার থাকার লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। এতএব এই সব তথ্য থেকে আমার ডিডাকশান হল : তোমার বড়দা স্বপনের সঙ্গে সীমন্তের সাক্ষাৎ ঘটেছে এবং তাকে সে শাসিয়ে গেছে।

রাখী আরও গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে রইল। সীমন্ত আস্তে বলল কাল সন্ধ্যায় আমার স্টুডিওতে গিয়েছিল। হঠাৎ ঢুকে বলল, রাখীকে তোর যদি বিয়ে করার সাহস এবং উদারতা না থাকে, তুই ওর সঙ্গে মিশিস না। আর একটা কথা। রাখীকে বলিস, ফুটবল কোচ অমর্ত্য রায়ের ত্রিসীমানায় গেলে বোন বলে ক্ষমা করব না। জানি তো আমি নিজের বাবাকেও ছেড়ে কথা কইনি? কথাগুলো বলেই তক্ষুণি বেরিয়ে গেল।

রাখী বলল–এবার আমার কথা বলি, বড়দাকে আমি আর ভয় করি নে। আমি যা খুশি করব। আর

কর্নেল তার মুখের দিকে তাকালেন। রাখীর মুখে নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার রেখা দেখে অবাক লাগল না। সামাজিক ঘেরাটোপের বাইরে যে মেয়ে হাঁটতে পেরেছে, সে খুব সহজে তথাকথিত আনসোস্যাল এলিমেন্টদের মতোই প্রতিহিংসাপরায়ণা হতেই পারে। এক যদি সীমন্ত ওকে ভালবাসা ও যত্নে টেনে নেয়, ও বাঁচবে। মূল্যবোধের খানিকটা এখনও হয়তো ওর মধ্যে টিকে আছে। নইলে অমর্তের কাছ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসত না। সহোদর দাদা স্বপনকে ঘৃণা করত না। ডায়মন্ডহারবার থেকে ফেরার সময় ওর সারাপথ নিঃশব্দ কান্না গভীর অনুশোচনারই ফল। কর্নেল দেখছিলেন, ও আর বলে চুপ করে আছে। বললেন–আর তুমি স্বপনকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। তাই তো?

–হু। আমি জানি, বড়দা কোথায় লুকিয়ে থাকে।

–কোথায়?

–এয়ারপোর্টে যেতে ভি আই পি রোডের ডাইনে যে কলোনিটা আছে, সেখানে।

কর্নেল মাথা দুলিয়ে বললেন–হ্যাঁ। বুঝেছি। প্রফুল্ল কলোনির কথা বলছ। এখন তো ঘনবসতি হয়ে গেছে।

–আমার পিসতুতো দাদা মনোরঞ্জন থাকে ওখানে। মনোদা পুলিস অফিসার। কোন্ থানায় আছে এখন, জানি না।

কর্নেল হেসে উঠলেন। সর্ষের মধ্যে ভূত থাকে। তাই স্বপনকে পুলিস ধরতে পারছে না! সুরক্ষিত দুর্গ।

রাখী হিসহিস করে বলল–মনোদা মাকে বলে গেছে। মা আমাকে চুপিচুপি বলেছে। কিন্ত আর নাবড়দাটা খুব বাড়াবাড়ি শুরু করেছে।

কর্নেল উঠে দাঁড়ালেন।–শোন। সীমন্ত, তুমিও শোন। একথাটা আর কাকেও যেন ভুলে বল না। স্বপনের ব্যাপারে আমিই যা করার করছি। কাছে এস। তোমরা দুজনেই আমাকে ছুঁয়ে প্রমিস কর।

ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ী ফোন তুলে বললেন লাহিড়ী।

মহিলা অপারেটারের গলা ভেসে এল। কথা বলুন স্যার! মিঃ পরিতোষ মজুমদার।

অরিজিৎ বললেনবলুন মিঃ মজুমদার।

-স্যার, অমর্ত্য রায় বেলা সাড়ে চারটে নাগাদ ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে গিয়েছিলেন।

–সো হোয়াট?

–শুনুন স্যার! জেভিয়ার বুড়োকে তো চেনেন। সেই যে মিসেস মিশেলের ইয়ে।

অরিজিৎ হাসলেন। –হু, কেপ্ট। ইস্টান রেলে চাকরি করত একসময়। বলুন।

–অমত্যবাবুর সঙ্গে বুড়োর কী নিয়ে ঝগড়া হচ্ছিল। আমাদের লোক ছিল বাড়ির সামনে। অমত্যবাবু বুড়োকে মেরেই ফেলতেন। রাস্তার লোকেরা এবং আমাদের লোক মিলে ছাড়িয়ে দেয়। বুড়ো শাসাচ্ছিল ওঁকে গুণ্ডা লেলিয়ে দেবে বলে। জেভিয়ারের হাতে গুণ্ডা অবশ্য আছে। কিছু অ্যাংলো ছোকরা যেভাবে মুখিয়ে ছিল, অমর্ত্যবাবুর ভাগ্যেও কিছু ঘটে যেত। আমরা ঠেকাতে পারতুম কি না বলা যায় না।

–কেন? কনফারেন্সে আপনাকে এবং মিঃ বোসকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। ওঁর সেফটির ওপর নজর দিতে।

–আসলে রোজি স্মিথের জন্য বাড়ির সামনে দুজন লোক রেখেছিলুম। অমর্ত্যবাবু ওখানে হাজির হবেন চিন্তা করিনি। ওঁকে ফলো করে এসে মিঃ বোস একটু তফাতে গাড়ি রেখেছিলেন। লোক দুটোর কাছে আর্মস ছিল না। মিঃ বোস ঘটনাস্থলে পৌঁছুবার আগেই কিছু ঘটে যেত।

যাক গে, বলুন।

–রোজি বেরিয়ে এসে অমর্ত্যবাবুকে টানতে টানতে ওঁর গাড়িতে ঢুকিয়ে দিল। তারপর নিজেও ঢুকল। দুজনে পার্ক স্ট্রিটের পার্ল হোটেলে গেল। পার্লের কারবার তো জানেন স্যার! রোজির ওখানে বিভিন্ন নামে রুম বুক করা থাকে। ওরা বেরুল একেবারে সাড়ে আটটা নাগাদ। তারপর রোজিকে মিসেস মিশেলের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে অমত্যবাবু ময়দানের টেন্টে গেলেন। পরিমল এই মাত্র খবর দিল, আজ রাতেও টেন্টে থাকবেন।

কাছাকাছি পুলিস-ভ্যান রাখুন, অ্যাজ এ রুটিন আফেয়ার। ওয়াচ করতে বলুন।

–আছে স্যার। সাঁতরা আছে। পাকা লোক।

–ওকে। জেভিয়ারের সঙ্গে ঝগড়ার ব্যাপারটা খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।

–নিয়েছি স্যার। নিচের তলায় আমাদের ইনফর্মার আছে। মিস কেটি।

–কী বলল সে?

–অমর্ত্যবাবু কী সব জিনিস ফেরত চাইছিলেন। জেভিয়ার কিছুতেই দেবে না। তার কথা হল, অন্যের জিনিস তাঁকে সে দেবে কেন? কী জিনিস কেটি বলতে পারল না।

অরিজিৎ কথাগুলো দ্রুত সংক্ষেপে নোট করছিলেন ফোন করতে করতে। বললেন–ওক্কে। এনি মোর?

নাথিং স্যার! তবে কেটিকে বলেছি ব্যাপারটা যেন জেনে নেয় কৌশলে।

–ভেরি গুড! ওয়েলকাম মিঃ মজুমদার! ছাড়ি?

থ্যাংক ইউ স্যার!..

অরিজিৎ ফোন রেখে নোটগুলো মন দিয়ে পড়লেন। তারপর হাই তুলে সিগারেট ধরালেন। রাত নটা বাজে। বালিগঞ্জ প্লেসের অটোমোবাইল ক্লাবে এক বন্ধুর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। তার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু কার কী জিনিস হঠাৎ এতদিন পরে জরুরি মনে হল অমর্তের যে তার জন্য জেভিয়ারের সঙ্গে ঝগড়া বাধাতে গেলেন? অমর্ত্যকে যতটা ক্লিন ম্যান মনে হয়েছিল, ততটা নন যেন। অবশ্য এই মার্ডার কেসের সঙ্গে এ সব ঘটনার সম্পর্ক নাও থাকতে পারে। তবু ব্যাপারটা তলিয়ে জানা দরকার। কেঁচো খুঁড়তে অনেক সময় সাপ বেরিয়ে পড়ে।

হাত বাড়িয়ে স্বপন সংক্রান্ত রিপোর্টের ফাইল টানতে গিয়ে নিবৃত্ত হলেন। ব্যর্থতার ক্ষোভ! একটু পুঁচকে মস্তানকে এখনও পাকড়াও করা যাচ্ছে না। রোজই কাগজে ব্যঙ্গাত্মক উল্লেখ থাকছে। তার ওপর চণ্ডী লাহিড়ীর কার্টুন! লাহিডী লাহিড়ীকে চিমটি কাটছে। ওঃ! বারেন্দ্র বামুনরা তো এমন হয় না। এ যে বিভীষণী কীর্তি!

অমর্ত্য আস্তে-সুস্থে লাইট ডিনার খেয়ে বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন। ফুলবাগিচার কাছে। তারপর চমকে উঠলেন। স্টেডিয়ামের দিকটায় খানিকটা হলুদ আলো তেরচা হয়ে পড়েছে। সেই আলোয় আবছা কালো একটা মূর্তি নাচছে। তারপর বুঝলেন, নাচছে না। বল নিয়ে খেলছে।

এত রাতে ভূতের মতো কার প্র্যাকটিশের নেশা চড়ল মাথায়? আজ ছিল বিশ্রামের দিন। তা ছাড়া কোনো খেলোয়াড়ের এত রাত অব্দি মাঠে থাকা বারণ। থাকেও না কেউ। সাতটার মধ্যে যে-যার বাড়ি চলে যায়।

অমর্ত্যর শরীরে কয়েকটা শিরা ফুটে উঠল। চোয়াল আঁটো হয়ে গেল। তারপর হনহন করে এগিয়ে গেলেন। খেলোয়াড় তাকে দেখেই থমকে দাঁড়াল। আবছা আলোয় তার দাঁত সাদা দেখাল। হাসছে।

অমর্ত্য গর্জন করলেন–ইউ ব্লাডি বাস্টার্ড!

প্রদীপ ফুঁসে উঠল সঙ্গে সঙ্গে। আঃ! কী বলছেন অমর্ত্যদা প্লিজ ওয়াচ হোয়াট ইউ আটার!

–আর একটা কথা বললে দাঁতগুলো খুলে নেব। গেট আউট!

প্রদীপ বলটা তুলে নিয়ে বলল–আপনাকে শ্রদ্ধা করি বলেই–

–আই সে গেট আউট! অমর্ত্য চিৎকার করে বললেন।

প্রদীপ আস্তে আস্তে টেন্টের দিকে এগোল। তার ক্ষোভ এবার ক্রোধে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সে হঠকারী স্বভাবের ছেলে নয়। অমর্ত্য রায়ের কিছু ক্ষমতা থাকতে পারে, কিন্তু তারও পৈতৃক ক্ষমতা কিছু কম নয়। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে। নালিশ করতে হলে তাকে ভেতরের কথাটা খুলে বলতে হয়। সেটা বলা যাবে না। পুলিসের দালাল সাব্যস্ত হবে সে এবং তাকে সবাই এড়িয়ে চলতে চাইবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *