Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নিশুতি রাতের ডাক || Syed Mustafa Siraj » Page 5

নিশুতি রাতের ডাক || Syed Mustafa Siraj

আজ স্বপনের ছবি বেরিয়েছে সব কাগজে ওয়ান্টেড শিরোনামে। বাংলায় সন্ধান চাই। ছবি অস্পষ্ট বলে বর্ণনাও দেওয়া আছে চেহারার। শ্যামবর্ণ, শক্ত পেশীবহুল গড়ন, উচ্চতা ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি, রুক্ষ চেহারা, খাড়া নাক। কপালে কাটা দাগ আছে। ডান বাহুর ওপর একটা জজুল আছে। কবজিতে স্টিলের বালা পরার অভ্যাস আছে। বিশেষ করে ফুটবলের দর্শকেরা চিনবেন। একসময় ইলেভেন টাইগার্সের ক্লাবের ব্যাকে খেলত। স্বপন অধিকারী। বাবার নাম একগাদা খবরের কাগজ ওল্টাচ্ছিলেন। মুড়ে ফেলে

উজ্জ্বলকুমার–প্রখ্যাত অভিনেতা। গ্রেফতারে সাহায্য করলে দশ হাজার টাকা পুরস্কার। কলকাটা পুলিস হেডকোয়ার্টারে ক্রাইম ব্রাঞ্চে খবর দিন।

কর্নেল ছাদে একটা অর্কিডের টবের পাশে মোড়ায় বসে কফি খেতে খেতে একগাদা খবরের কাগজ ওল্টাচ্ছিলেন। মুড়ে ফেলে দিলেন একধারে। ষষ্ঠী এসে নিয়ে যাবে। কফির পেয়ালা রেখে উঠে দাঁড়ালেন। সিঁদুর রঙের গোল পাতাওয়ালা অর্কিডটার দিকে তাকিয়ে রইলেন অন্যমনস্কভাবে। নেপালের দুর্গম জঙ্গল থেকে এনেছিলেন অর্কিডটা। হঠাৎ চোখ পড়লে চমকাতে হয়। যেন চাপ। চাপ টাটকা রক্ত।

একটু বোকামি করেছে পুলিস। এই ছবি স্বপনকে আরও সতর্ক করে দেবে। মায়াপুরী স্টুডিওর ক্যান্টিন বয় সুরেশ তাকে চিনতে না পারে–ও বেচারা ফুটবলের দর্শক হওয়ার সুযোগ পায়নি বলেই, কিন্তু অসংখ্য লোক তাকে চেনে। হু, অমিয় বকসী তাকে চিনতে পেরেছিলেন কি না কে জানে! না পারাই সম্ভব। অমিয় ছিলেন অন্য জগতের লোক। তবে উজ্জ্বলকুমারের ছেলে হিসেবে অবশ্য

না। তাহলে রথীন্দ্র কুশারীকে তার নামই বলতেন। শুধু একটা গণ্ডগোল থেকে যাচ্ছে, স্বপন স্টুডিওর ভেতর যদি নন্দিতার ছবির খোঁজে যাতায়াত করে থাকে, তাহলে কারুর না কারুর তাকে চেনার কথা। অন্তত প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবেই। ছবিটা যে তার পক্ষেই চুরি করার যুক্তি আছে, তাতে সন্দেহ নেই। সে স্টুডিওতে না গেলে ছবির খোঁজ পেত না। সীমন্ত অনেকের সামনে ছবিটার কথা বলেছিল। স্বপন সেই সময় শুনে থাকতে পারে। কিন্তু তাকে কেউ চিনল না, এটা কেমন করে সম্ভব? পুলিস প্রত্যেককে জেরা করেছে। কেউ বলেনি প্রাক্তন ফুটবলার এবং উজ্জ্বলকুমারের ছেলেকে তারা দেখেছে!

হুঁ, রাখীর কথা অনুসারে উজ্জ্বলকুমার নাকি তাকে স্টুডিওতে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন।

রাখীর ওই গল্পটা অমর্তের শেখানো নয় তো? অমর্ত্যই কি তাকে রথীন্দ্রের কাছে পাঠিয়েছিলেন স্বপনকে অপরাধী সাব্যস্ত করার জন্য? কাল সকালে ক্লাবের টেন্টে অমর্ত্যও বলেছেন, ৭ মে রাত এগারোটায় উজ্জ্বলবাবুর সঙ্গে স্বপনের ঝগড়া হচ্ছিল। রাখীর কথার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। এদিকে রাখী চাকরির জন্য নাকি অমর্তের কাছে ঘোরাঘুরি করছে। তাই অমর্ত্যের কথায় সে রাজি হয়ে ওই ঝগড়ার গল্পটা বানিয়ে বলতেও পারে। অমর্ত্য যে স্বপনকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে, তা বোঝা গেছে তার কথাবার্তায়।

নিঃসন্দেহ হওয়া যাচ্ছে না। নন্দিতার ছবি চুরিটা এখনও রহস্য থেকে যাচ্ছে। স্বপন কী করে ছবিটার খোঁজ পেল?

–গুড মর্নিং, কর্নেল!

কর্নেল ঘুরেই থমকে গেলেন। তারপর চেঁচিয়ে উঠলেন–হ্যাল্লো ডার্লিং! কী আশ্চর্য যোগাযোগ! ঠিক এই মুহূর্তেই তোমার কথা ভাবছিলুম।

সীমন্ত হাসল। থ্যাংকস! সোজা ছাদে আসতে ভয় পাচ্ছিলুম। আপনার লোকটা বলল, চলে যান।

কর্নেল হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপর তার কাঁধে হাত রেখে বললেন–এই মোড়াটায় বস। কাজ করতে করতে গল্প করি।

সীমন্তের কাধ থেকে ক্যামেরা ঝুলছিল। বলল–এক সেকেন্ড! এখানেই দাঁড়ান। একটা ছবি তুলি।

সে পিছিয়ে গেল। তারপর ক্যামেরা ঠিক করে নিয়ে গোটা তিনেক শট নিয়ে মোড়ায় গিয়ে বসল। দারুণ আসবে। বাই দা বাই, যেজন্য এলুম, বলি। আজ কাগজে একটা ছবি বেরিয়েছে দেখেছেন?

–স্বপন অধিকারীর।

-হ্যাঁ। দেখে তো আমি চমকে গেছি। আমি কল্পনাও করিনি যে স্বপনকে পুলিস খুঁজছে!

–স্বপনকে তুমি চেন বুঝি?

–চিনব না? ও ছিল প্রচণ্ড প্রতিশ্রুতিবান ফুটবলার এবং আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

কর্নেল উত্তেজনা দমন করে বললেন–স্বপন কি কখনও মায়াপুরীতে গেছে, সীমন্ত?

সীমন্ত একটু চুপ করে থাকার পর বলল–অমিয়দার মৃত্যুর দুদিন পরে গিয়েছিল আমার কাছে। হ্যাঁ আরও একদিন গিয়েছিল। কিন্তু ওর যাওয়াটা একটু অদ্ভুত লেগেছিল। কারণ গেট দিয়ে ওকে বাগানের দিক থেকে আসতে দেখেছিলুম। যাবার সময়ও গেল ওদিক দিয়ে। এখন বুঝতে পারছি, ও ফেরারী আসামী বলেই লুকিয়ে এসেছিল।

–হুঁ, অমিয় বকসীর কাছে আসার দিন তার অত সতর্কতার দরকার ছিল না। কিন্তু অমিয়বাবুর মৃত্যুর পর সে খুব সতর্ক হয়ে উঠেছিল। কর্নেল ভাবনার মধ্যেই বললেন–তখনও কি ভাঙা অংশটায় বেড়া দেওয়া হয়নি?

–লক্ষ্য করিনি। তবে পাঁচিল ডিঙিয়ে যাওয়া এমন কিছু শক্ত নয় ওর পক্ষে।

–তোমার কাছে কেন এসেছিল ও?

সীমন্ত একটু ইতস্ততঃ করে বলল–তখন ব্যাপারটা এত তলিয়ে ভাবিনি। তাই আপনাকে গোপন করেছিলুম। আফটার অল স্বপন আমার বন্ধু। তাকে বিপদে ফেলতে চাইনি।

–দ্যাটস রাইট। বল।

–স্বপন আমাকে বলল, তার এক বান্ধবী সিনেমায় নামার জন্য একটা ছবি পাঠিয়েছিল অমিয়বাবুর কাছে। অমিয়বাবু তো মারা পড়েছেন। ছবিটা যদি অফিস থেকে খুঁজে বের করে দিই, সে তাকে ফেরত দেবে। স্বপন ছবিটার বর্ণনাও দিল মোটামুটি। শুনেই আমি বুঝলুম কোন্ ছবিটার কথা ও বলছে।

–তুমি কী বললে?

–তখনও ছবিটার আমি নেগেটিভ তুলিনি। তাই চেপে গিয়ে বললুম, পরশু আসিস। খুঁজে রেখে দেব। ও চলে গেল।

তারপর আবার এল তো?

–হ্যাঁ। ছবিটা আমি এনেছিলুম সঙ্গে। ওকে ফেরত দিয়ে বললুম, ছবিটা অসাধারণ রে! এনলার্জ করে কয়েকটা প্রিন্ট করে রেখেছি। ভাবছি অল ইন্ডিয়া ফোটো একজিবিশনে দেব। শুনে ও গম্ভীর হয়ে চলে গেল। দুদিন পরে সেভেন্থ মে রাত্রে আমার স্টুডিওর তালা ভেঙে

–ওয়েট, ওয়েট! তাহলে তুমি জানতে ছবিগুলো কে চুরি করেছিল?

জানতুম। কিন্তু স্বপনের স্বার্থে কথাটা বলিনি। আমি আন্দাজ করেছিলুম, ব্যাপারটার পিছনে কোনো গণ্ডগোল আছে। যাই হোক, আমি এজন্য ক্ষমা চাইতে এসেছি, কর্নেল!

–নেভার মাইন্ড! স্বপনকে পুলিস অমিয়বাবু আর ওর বাবা উজ্জ্বলবাবুকে খুন করার অভিযোগে খুঁজছে।

সীমন্ত চমকে উঠল।–সে কি! স্বপন তার বাবাকে খুন করেছে? অসম্ভব। অমিদার ওপর ওই মেয়েটার ব্যাপারে তার রাগ থাকতে পারে। কিন্তু নিজের বাবাকে–এ আমি বিশ্বাস করি না, কর্নেল! আপনি যাই বলুন!

কর্নেল একটা ক্যাকটাসের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে দিতে বললেন– স্বপনের বোন রাখীকে তুমি চেনো?

–খুব চিনি। শি ইজ এ স্পয়েল্ড চাইল্ড! বারে হোটেলে রেস্তোরাঁয় ঘোরে। বহুবার রাস্তায় অনেকের সঙ্গে ফ্লার্টিং করতেও দেখেছি। কলগার্ল টাইপ মেয়ে।

–স্বপন কিছু বলত না বোনকে?

জানি না। ওর সঙ্গে রাখীর কথা আলোচনা করা যায় না।

রাখী কখনও কি স্টুডিও পাড়ায় এসেছে?

–একসময় আসত ওর বাবার সঙ্গে। চান্স পায়নি। ওর ফেস ফোটোজেনিক নয়। ছবিতে বড় বাজে আসে! গলার স্বরও কেমন ক্যানকেনে। আমার সঙ্গে মেশার চেষ্টা করত। পাত্তা দিইনি।

কর্নেল একটা অর্কিডের দিকে এগিয়ে গেলেন। ফুট চারেক উঁচু মাচায় বসানো আছে। পাতাগুলো জিভের গড়নের। সবুজ রঙ। মধ্যে প্রচণ্ড লাল-লাল ছিটে। কিনারায় হলুদ লম্বাটে রেখা।

বরাবার এরকম ঘটেছে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডে। যারা যা জানে, তার পুরোটা বলছে না। গোপন করছে নানা স্বার্থের কথা ভেবে। আবার যে জানে, সে জানে যে সে তা জানে না। অনর্গল কথা বলতে বলতে তবে তা বেরিয়ে আসে। সক্রেটিসের উক্তির মতো–আই নো দ্যাট আই ডোন্ট নো হোয়াট আই নো অ্যান্ড আই ডোন্ট নো দ্যাট আই নো হোয়াট আই ডোন্ট নো। হেঁয়ালি নয়? মানুষের মনস্তত্ত্বের এই নিয়ম। যাকে জেরা করছি, সে ভাবছে এ কথাটা অপ্রয়োজনীয়, অতএব বলে লাভ নেই–অথচ সেটাই হয়তো আমার কাছে খুব প্রয়োজনীয়।

তবে সীমন্ত বন্ধুত্বের খাতিরেই কিছু সত্য গোপন করেছিল। অবশ্য তাতে অসুবিধে হয়নি। স্বপনই যে ছবি চুরি করেছে, তাতে সন্দেহ ছিল না। শুধু আনুষঙ্গিক কিছু ব্যাপার স্পষ্ট হচ্ছিল না। এবার হল।

সীমন্ত উঠে এল অর্কিডটার কাছে।–আরে! এমন অর্কিড তো প্রচুর। দেখেছি একস্থানে।

কর্নেল হাসলেন–আবার একটা মিথ্যা বলছ, ডার্লিং?

ভড়কে গেল সীমন্ত–না, বিশ্বাস করুন, দেখেছি। প্রচুর।

–এ অর্কিড খুব রেয়ার স্পেসিজ। কোত্থেকে এনেছি জান? প্রশান্ত মহাসাগরের টোরা আইল্যান্ড থেকে। আর তুমি বলছ প্রচুর দেখেছ।–কোথায় দেখেছ?

–ডায়মন্ডহারবার থেকে কাকদ্বীপের পথে জাস্ট দু মাইল দূরে। নদীর ধারে একটা বাগানে। ওখানে একটা ছবির লোকেশন দেখতে গিয়েছিলুম গত বছর।

কর্নেল ঘুরে দাঁড়ালেন–ঠিক এই অর্কিড? ভাল করে দেখে বল!

সীমন্ত জোর দিয়ে বলল–আমি বলছি আপনাকে! চলুন, বালকদার বাড়িতে আপনাকে দেখাব। বালকদারও এ সব বাতিক আছে। একগাদা নিয়ে এসেছিলেন।

–কে বালকদা?

–ফিল্ম ডাইরেকটার বালক দাশগুপ্ত। ঠিক এই জিনিস। আমিই তো ওঁকে—

–আমাকে নিয়ে যাবে সেখানে?

–হাঁ। বলুন, কবে যাবেন?

–ধর, এখনই যদি বেরোই?

–কোনো আপত্তি নেই। আমি স্টুডিও পাড়া যাওয়া বন্ধ করেছি। অগাধ সময় হাতে।

–চল, ব্রেকফাস্ট করে নিই। তারপর বেরিয়ে পড়া যাবে।

রাখী প্রচণ্ড সাজছিল ড্রেসিং টেবিলের সামনে। মেজদা তপন ঘরে ঢুকে চুপচাপ এক মিনিট দাঁড়িয়ে আগুনজ্বালা চোখে তাকে দেখে নিয়ে বলল–তোর লজ্জা হয় না?

রাখী ফোঁস করে উঠল না। তুমি ঘোমটা ঢাকা দিয়ে বসে থাক, যদি তোমার লজ্জা হয়।

–আশ্চর্য! কাগজে সুপুর ছবি বেরিয়েছে। কাউকে মুখ দেখাতে পারছি নে। আর তুই গলির মেয়েদের মতো সেজে

শাট আপ! তোমার পয়সায় সাজছি? ইস্। বড়দার শূন্যস্থান দখল করেছে। একেবারে!

রাখী, আর তোকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেব না বলে দিচ্ছি। তুই বেরো– তারপর দেখছি কী করে ঢুকিস!

–আমার যেন জায়গা নেই কোথাও? নেহাত মায়ের জন্য এই পচা বাড়িতে পড়ে আছি।

তপন মুখ বিকৃত করে বলল–তা তো আছেই। ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের কি যেন নাম, যাচ্চলে! সেই ইসের বাড়ি তো? তাই চলে যা! সুপুর একটা ব্যবস্থা হয়েছে। এবার তোর হোক।

বারান্দা থেকে রুণ কণ্ঠস্বরে অরুন্ধতী বললেন–আঃ! কী হচ্ছে তোদের? একটুও শান্তিতে থাকতে দিবি নে তোরা আমাকে?

রাখী ব্যাগ হাতে নিয়ে বেরিয়ে এল–তোমার ছেলেকে বলে দাও, কক্ষণো যেন আমার পেছনে লাগতে না আসে।

অরুন্ধতী বললেন–তপু, কেন বাবা ওর সঙ্গে ঝামেলা করিস?

সাধে করি! তপন গলা চেপে বলল–পাড়ায় মুখ দেখাতে পারছি না। আমি বেরুনো পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছি, জান? ভবেশদা কালই মুখের ওপর বলল, বোনকে একটু শাসন করতে পারলে না এত কাণ্ডের পরও?

অরুন্ধতী রেগে গেলেন কাণ্ডটা কী? জিজ্ঞেস করতে পারলি নে, কাণ্ডটা কী? ইস! ভবার খুব বড় বড় কথা হয়েছে এখন। সুপু নেই কি না, তাই। একদিন তো সে আসবে। তখন দেখব সবাইকে।

রাখী বলল–মা, আমি বেরুচ্ছি। আজ রাত্তিরে না ফিরতেও পারি।

অরুন্ধতী আস্তে বললেন–কোথায় থাকবি রাত্তিরে?

–উত্তরপাড়ায় নিরু মাসির বাড়ি।

–তাই থাকিস। ও খুশি হবে। নিরুকে বলিস একবার আসতে। আমাদের তো ভীষণ বিপদ চলেছে একটার পর একটা। ওকে বলিস, মা ডেকেছে। দরকার আছে খুব।

বলব। বলে রাখী বেরিয়ে গেল।

তপন রাগী চোখে তাকে দেখার পর ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে বলল–মরুক!

রাখী ততক্ষণে বড় রাস্তার মোড়ে পৌঁছে গেছে। ঘড়ি দেখল সে। আটটা দশ। এখনও গাড়ি আসছে না কেন? জোক করে বলেনি তো?

নাঃ। জোক করার লোক নয়। হয়তো কোনো ঝামেলা হয়েছে। কিংবা জ্যামে আটকে গেছে। পাতাল রেলের ঠ্যালায় রাস্তার যা অবস্থা হয়েছে! রাখী। সানগ্লাস খুলে উদ্বিগ্ন মুখে রাস্তা দেখতে থাকল।

সাদা একটা ফিয়াট গাড়ি আচমকা সামনে এসে ব্রেক কষতেই রাখী তাকাল। তার মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।বাবা! আমি কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি। পা ব্যথা হয়ে গেল।

অমর্ত্যের চোখে সানগ্লাস। হাত বাড়িয়ে ওপাশের দরজা খুলে দিলেন। রাখী চঞ্চল পায়ে গাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরে ওপাশে গেল এবং ভেতরে বসে দরজা বন্ধ করল। সে যখন ছোট্ট মেয়ে ছিল, তার বাবার জন্য এমনি সব গাড়ি আসত। বাবার সঙ্গে সে স্টুডিওতে যেত গাড়ি চেপে। হঠাৎ কথাটা মনে ভেসে এলে সে আনমনা হয়ে পড়ল।

গাড়ি ঘুরিয়ে অমর্ত্য বললেন–টিকটিকির চোটে অস্থির। এক সন অফ এ বিচ সক্কালে এসে মাথাটা গরম করে দিয়ে গেল।

–সেই বুড়ো ডিটেকটিভ?

না। অমর্ত্য একটু হাসলেন। সিগারেট বের করে ধরিয়ে দাও!

–যাঃ! আমি কি সিগারেট খাই নাকি?

ন্যাকামি কোরো না। আমি দেখেছি।

রাখী অবশ্য প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করছিল–কোথায় দেখেছ বল?

স্যাটেলাইট বারে। আরও অনেক জায়গায়।

উঃ! তোমার চোখ সব দিকে। রাখী সিগারেট ধরিয়ে অমর্ত্যের ঠোঁটে গুঁজে দিয়ে বলল–খেতে ইচ্ছে করছে। থাক্‌, পরে খাব। কলকাতা ছেড়ে বেরিয়ে–তবে।

–ওক্কে হনি!

–আচ্ছা অমর্ত্যদা! আজ আমাকে তুমি বলছ কেন গো?

–আজ তুমি সাবালিকার মতো ব্যবহার করছ, তাই। রাখী একটু চুপ করে থেকে বলল–আমরা কোথায় যাচ্ছি?

–ডায়মন্ডহারবার।

-এই! আমার কিন্তু ভয় করছে। অত দূরে যাবে বলনি তো! অত্তো দূরে!

-ভয় কিসের বল তো?

–তুমি বেশি বেশি অসভ্যতা করবে না তো?

–যদি করি, তুমি তো সাবালিকা মাই ডিয়ার! রাখী ব্যস্তভাবে দরজা খোলার ভান করল–এই! আমাকে নামিয়ে দাও। আমি যাব না।

অমর্ত্য হাসলেন–তুমি দেখছি একেবারে–যাকে বলে পাগলি মেয়ে! চন্দ্রাকে মনে পড়ে? চন্দ্রা–তোমার বন্ধু এবং তোমার বড়দার প্রেমিকা।

না। কেন?

চন্দ্রা একবার আমার সঙ্গে ডায়মন্ডহারবারে গিয়েছিল।

–আমি চন্দ্রা নাকি?

–চন্দ্রা তোমার চেয়ে বয়সে কিছু ছোট ছিল। জাস্ট এইটিন! তোমার কত?

–আমার টোয়েন্টি।

–উঁহু। একটু ওঠ আরও।

–স্কুল সার্টিফিকেট দেখাতে পারি।

-ওক্কে হনি। তবে তাই! অমর্ত্য গিয়ার চেঞ্জ করে বললেন–চন্দ্রার জন্য আমার দুঃখ হয়। স্বপনই ওর অকালমৃত্যুর কারণ। আমি যদি সুযোগ পেতুম ওকে আরও অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারতুম। ইডিয়ট স্বপনটা খমোকা আমার সঙ্গে ঝামেলা পাকাল।

–চন্দ্রা বড়দার প্রেমিকা ছিল যে!

অমর্ত্যর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।-প্রেমিকা! কিসের প্রেমিকা? ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ব্রথেল গার্ল! তার জন্য নিজের অমন ব্রাইট কেরিয়ারটা নষ্ট করে ফেলল স্বপন।

–আজ কাগজে বড়দার ছবি বেরিয়েছে।

–দেখেছি। পাপের বেতন মৃত্যু।

রাখী কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে গেল। তারপর বলল–আচ্ছা, বড়দা ধরা পড়লে কী পানিশমেন্ট হবে?

–ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন জেল। ..বলে অমর্ত্য ঘুরলেন ওর দিকে।– কী? বোনের দুঃখ হচ্ছে তো? সেটা অবশ্য স্বাভাবিক। আফটার অল সহোদর ভাইবোন। বাট স্বপন ইজ এ রিয়্যাল রোগ।

রাখী শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল–না। বাবাকে মার্ডার করেছে যে তার জন্য দুঃখ হয় না আমার। ওর ফাঁসি হলে কালীঘাটে পুজো দিয়ে আসব।

বলেই সে ঝুঁকে গেল সামনে।–এই অমর্ত্যদা! তোমার কার-রেডিও আছে, আর বলছ না? সে রেডিওর নব ঘোরাতে শুরু করল। একটু পরে বিবিধ ভারতী ধরা পড়ল। চটুল বাজনা এবং গান! রাখী সিগারেটের প্যাকেট থেকে দুটো সিগারেট বের করল। লাইটার জ্বেলে ধরিয়ে একটা সিগারেট অমর্তের ঠোঁটে গুঁজে দিল।

প্রকৃতি সত্যিই রহস্যময়ী। কোথায় টোরা আইল্যান্ড, কোথায় দক্ষিণবঙ্গ। নদীর ধারে আমবাগানের ভেতর কর্নেল ও সীমন্ত দাঁড়িয়ে অর্কিড দেখছিল। কর্নেলের চোখে বাইনোকুলার। মাঝে মাঝে পাখিও দেখে নিচ্ছিলেন। তারপর বললেন–অন্তত দুটো নমুনা নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু অত উঁচু থেকে কী করে পাড়া যায়?

সীমন্ত বলল কাউকে পাই কি না দেখি।

–শুধু পেলে চলবে না, সে গাছে চড়তে পারে কি না সেটাই আসল কথা। সীমন্ত হাসল।–কি বলছেন! গ্রামের লোকেরা প্রত্যেকে গাছে চড়তে পারে।

–একমত নই, ডার্লিং! যাই হোক, দেখ।

সীমন্ত হন্তদন্ত হয়ে চলে গেল। কোথায় চাতক পাখি ডাকছে। কর্নেল বাইনোকুলার খুঁজতে ব্যস্ত হলেন। হুঁশিমূল গাছটার ডগায় বসে আছে। পাখিটা। ঠোঁট ফাঁক করে আছে। শব্দটা হচ্ছে গলার ভেতরে। বেলা যত বাড়ছে, পশুপাখি সবারই ঠোঁট ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। গ্রীষ্মের তাপ বাড়ছে। অবশ্য বাতাস বইছে হু-হু করে। গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে আদিগন্ত জল। নৌকো ভাসছে জেলেদের। একটা পাইলট-জাহাজ আসছে সমুদ্র থেকে একটা বড় জাহাজকে পথ দেখিয়ে।

মাই গুডনেস! এখানে পাপিয়াও আছে! খুঁজে পাখিটাকে পাওয়া গেল না। এখন পাখিদের মিলনের ঋতু। প্রত্যেকটি পাখি মিলনের তীব্র কামনায় জ্বরোজ্বরো হয়ে আছে। শালিক পাখিরা ঠোঁটে খড়কুটো নিয়ে যাচ্ছে বাসা বাঁধতে। সবাই জন্ম দিতে চায়। তাই ঘর বাঁধার ব্যস্ততা। প্রকৃতি সত্যি বড় রসহ্যময়ী। কেন এত জন্ম মৃত্যু–সৃষ্টি এবং ধ্বংসের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া প্রকৃতি জগতে, কে জানে! কিছু বোঝা যায় না।

কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার। প্রকৃতিতে যেন মৃত্যুর জন্য কোনো বিলাপ নেই, দুঃখ নেই, কান্না নেই। নেপালের জঙ্গলে দেখেছিলেন, সদ্যোজাত হরিণ শিশুকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল একটা চিতাবাঘ। হরিণী-মা সেইদিকে তাকিয়ে চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সামনের ঝোপের পাতার দিকে মুখ এগিয়ে নিয়ে গেল!

হুঁ, প্রকৃতিতে হত্যার জন্য অনুশোচনাও কি আছে? হত্যা এত স্বাভাবিক মনে হয় প্রকৃতিতে। হত্যা যেন এখানে জরুরি নিয়ম। অথচ মানুষ প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত হয়েও অন্যরকম। সে প্রকৃতির বিদ্রোহী সন্তান। মৃত্যুর জন্য সে কাঁদে। হত্যার জন্য সে শাস্তি দেয়।

হতভাগ্য স্বপনের শাস্তি অনিবার্য। পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে তার বাঁচোয়া নেই। সে নিজেই যেন নিজের ফাঁদে ধরা দিয়েছে। তার বোন তার বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে। সীমন্ত সাক্ষী দেবে। অমর্ত্যও সাক্ষী দেবেন। সারা দেশ তার বিরুদ্ধে পিতৃঘাতী বলে ধিক্কার জানাবে।

এদিকে রাখী অমর্ত্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা শুরু করেছে। স্বপন অ্যাবস্কন্ডার শুনেই হয়তো এটা পারছে। কিন্তু স্বপন এখনও ধরা পড়েনি।

হঠাৎ একটু শিউরে উঠলেন কর্নেল। ষষ্ঠেন্দ্রিয়জাত বোধ একটা ইনটুইশান যেন মস্তিকের ভেতর ঝিলিক দিল। ওদের সাবধান করে দেওয়া উচিত। এ একটা নৈতিক দায়িত্ব তার।

সীমন্ত বলল–অনেক খুঁজে গাছে চড়া তোক পাওয়া গেল। ইউ আর রাইট,– কর্নেল!

কর্নেল লোকটাকে দেখলেন। আস্ত কঙ্কাল! বললেন–দেখো বাবা, যেন আছাড় খেও না গাছ থেকে। আগে ভেবে দেখ, ওই যে ঝালরের মতো পরগাছাটা দেখছ, ওটা পাড়তে পারবে কি না?

লোকটা দাঁত বের করল।কী যে বলেন ছার! গাছেই আমার জন্মো।

সীমন্ত হাসতে লাগল। কর্নেল বললেন–গাছে তোমার জন্ম? তুমি কি হনুমান নাকি হে?

–তা বললেও বলতি পারেন ছার!

বলে লোকটা প্রকাণ্ড আমগাছের গুঁড়িকে তিনবার নমো করে সত্যি সত্যি হনুমানের মতো উঠে গেল।…

দুটো অর্কিডই যথেষ্ট। পরীক্ষা করে দেখবেন, নিশ্চয় কোনো সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। জলবায়ু ভিন্ন, মাটিও ভিন্ন, পরিবেশ ভিন্ন। একই প্রজাতির পরগাছা হলেও কিছু বৈষম্য থাকা উচিত।

গাড়ির কাছে ফিরে আসতে আসতে ঘড়ি দেখে কর্নেল বললেন–ডায়মন্ড হারবারে ইলিশ-ভাত খেয়ে নিলে মন্দ হয় না। এত তাড়ার কিছু নেই, কী বল সীমন্ত।

সীমন্ত বলল–আমিও তাই বলব ভাবছিলুম।

–তুমি ড্রাইভ কর এবার। আমি পাখি দেখতে দেখতে যাই। প্রচুর পাখি এ এলাকায়।

সীমন্তের নিজের গাড়ি আছে। চমৎকার ড্রাইভ করে। আসার পথে অনেকক্ষণ সে ড্রাইভ করেছে। কর্নেল বাইনোকুলারে পাখি দেখছিলেন। ডায়মন্ডহারবারে ঢোকার মুখে হঠাৎ বললেন–মাই গুডনেস!

সীমন্ত বলল কী কর্নেল?

–হর্নবিল একটা।

না। কর্নেল ট্যুরিস্ট লজের দোতলার ব্যালকনিতে রাখীকে দেখতে পেয়েছিলেন। পাশে অমর্ত্য। মস্তিষ্কের ভেতর যেন বরফের ঢিল গাড়য়ে গেছে এক সেকেন্ডের জন্য।

বাজারের ভেতরে এক হোটেলের সামনে ব্রেক কষল সীমন্ত। কর্নেল! সাধুবাবুর এই হোটেলে সেবার দারুণ খেয়েছিলুম ইলিশ-ভাত। দেখতে একটু বাজে–কিন্তু রাঁধে অপূর্ব। আগে চেহারা দেখে নিন, পছন্দ হচ্ছে কি না।

—মন্দ কি! কর্নেল বেরুলেন। পেছনে ঘুরে বাইনোকুলারে চোখ দিলেন। ট্যুরিস্ট লজের ব্যালকনিটা দেখা যাচ্ছে। রাখী আর অমর্ত্য নেই। তাঁকে দেখতে পেয়ে লুকিয়ে গেল না তো?

সত্যিই দেখতে পেয়েছিল রাখী। কারণ সে ক্রমশ এখানে এসে অতি মাত্রায় সতর্ক হয়ে উঠেছিল। দৈবাৎ চেনা লোকের চোখে পড়ে গেলে কি ভাববে, সেই ভাবনা। কলকাতায় সে সাহসী দুঃসাহসী। কিন্তু বাইরে এসে এবং অমর্তের হাবভাব লক্ষ্য করে সে আত্মরক্ষার জন্য সচেতন হয়ে উঠছিল ক্রমশ। অমর্ত্য একটু অসভ্যতা করেছেন। ক্লাবের টেন্টেও একটু-আধটু করে থাকেন। কিন্তু রাখী এমন অসহায় বোধ করে না নিজেকে। বাইরে এসে তার মনে হচ্ছে, খুব হঠকারিতা হয়ে গেছে।

তারপর হঠাৎ চোখে পড়েছে দাড়িওলা ডিটেকটিভ বুড়োকে–চোখে সেদিনকার মতো বাইনোকুলার। শিউরে উঠেছে সঙ্গে সঙ্গে। লোকটা তাকেই যেন ফলো করে চলে এসেছে। আজই তো তার বড়দার ছবি বেরিয়েছে কাগজে!

অমর্ত্য বললেন কী হল রাখী? অমন দেখাচ্ছে কেন, হনি? চেনা লোক দেখেছ বুঝি?

ভয়ার্ত মুখে রাখী ফিসফিসিয়ে উঠল।–সেই ডিটেকটিভ! আমাদের ফলো করে এসেছে।

–হোয়াট?

–ওই দেখ, লাল গাড়িটা যাচ্ছে। কর্নেলেরই গাড়ি।

–ভুল দেখনি তো? অমর্তের কাঁধ উঁচু আর শক্ত হয়ে গেল। মুখের শিরা ফুলে উঠল।

রাখী চাপা স্বরে বলল–সামনে দিয়ে গেল। গাড়ি ড্রাইভ করতে দেখলুম সীমন্তদাকে। আমি ভুল দেখি না!

–কে সীমন্ত? হু ইজ দ্যাট ফেলো?

বড়দার এক বন্ধু। সিনেমা করে। রাখী ব্যস্ত হয়ে উঠল।না, আর এক মুহূর্ত আমি থাকব না। চল! আমার বড় ভয় করছে। এক্ষুণি আমাকে কলকাতা নিয়ে চল অমর্ত্যদা!

বলে রাখী ঘরে ঢুকে ব্যাগ গোছাতে থাকল। অমর্ত্য গুম হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ভেতরে এসে বললেন–কী করছ? আই কেয়ার এ ফিগ ফর দ্যাট ব্লাডি হেল, ডিটেকটিভ। রাখী, কথা শোনো! আঃ, কী হচ্ছে!

রাখী জেদ ধরে বলল–না, না, না। আমি এক্ষুণি চলে যাব। তুমি যাবে কি না বল!

অমর্ত্য বলল রাখী! কথা শোনো! যদি ভাল চাও—

রাখী বলল–আমি ভাল চাই না! তারপর দরজা খুলে প্রায় দৌড়ে বেরিয়ে গেল।…

কর্নেল তখনও দাঁড়িয়ে আছেন এদিক ঘুরে। বাইনোকুলার নামিয়ে রেখেছেন। দেখলেন রাখী হাঁফাতে হাঁফাতে ছুটে আসছে। সামনে এলে বললেন–হ্যাল্লো রাখী! কী ব্যাপার? চলে এলে যে?

রাখী কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল–আপনারা কলকাতা ফিরছেন তো?

–হ্যাঁ, কর্নেল হাসলেন। ইলিশ-ভাত খেয়েই ফিরব।

রাখী গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ভেতরে বসে পড়ল। সীমন্ত হোটেলের বারান্দা থেকে দৌড়ে এল। রাখী, তুমি! আরে কান্নাকাটি করছ যে! ব্যাপারটা কী?

রাখী চোখে রুমাল ঢেকে কাঁদছিল নিঃশব্দে। কর্নেল বললেন–আসছি। তারপর ট্যুরিস্ট লজের দিকে হাঁটতে থাকলেন। অমর্ত্য নিচে এসে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন। মুখে প্রচণ্ড রাগের ছাপ!

কর্নেল খুব কাছে গিয়ে আস্তে বললেন–অমর্ত্যবাবু, ইওর লাইফ ইজ ইন ডেঞ্জার। বি কেয়ারফুল!

অমর্ত্য চেঁচিয়ে উঠলেন–গো টু হেল ইউ ব্লাডি ওল্ড হ্যাঁগার্ড! আই উইল কিল ইউ!

কথাটা বলেই কর্নেল ঘুরেছেন। আস্তে হেঁটে চলেছেন হোটেলের দিকে। অমর্ত্য তখনও শূন্যে ঘুষি ছুড়ছেন পাগলের মতো।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *