নাট বল্টু : 11 – শেষ কথা
পরদিন ভোরে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য যখন মাইক্রোবোসে জিনিসপত্র ভোলা হচ্ছে, তখন হঠাৎ গাছের ডালে একটু হুটোপুটির শব্দ শুনে বল্টু ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখে, বানরের বাচ্চাটা একটা ছোট ডাল ধরে ঝুল খেয়ে মুখে বিচিত্র শব্দ করছে।
বল্টু বলল, “দেখো,দেখো, পিচ্চি বানরটা এসেছে।”
মুনিয়া বলল, “আমরা চলে যাচ্ছি তো, তাই আমাদের গুডবাই বলতে এসেছে।”
বল্টু একটু এগিয়ে গিয়ে বানরের বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে বলল, “খুব সাবধানে থাকবি কিন্তু। কেউ যেন আর তোকে ধরতে না পারে। ধরতে পারলে কিন্তু তোর খবর আছে!”
বানরের বাচ্চাটা কী বুঝল কে জানে। হঠাৎ গাছ থেকে নেমে বল্টুর কাছে সাবধানে এগিয়ে এল। তার পা ধরে দাঁড়িয়ে বল্টুর দিকে তাকাল। বল্টু সাবধানে বানরের বাচ্চাটা কোলে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “আমরা কিন্তু চলে যাচ্ছি। তোকে যদি ধরে, আমরা কিন্তু আর তোকে বাঁচাতে পারব না। কাজেই সাবধান!”।
বানরের বাচ্চাটা হাত নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করল। বল্টু মাথা নেড়ে বলল, “ভালো থাকিস। দুষ্টুমি করবি না। যদি তোদের স্কুল থাকে, স্কুলে যাবি। লেখাপড়া করবি। ঠিক আছে?”
বানরের বাচ্চাটা কোল থেকে নেমে আবার গাছে উঠে ডাল ধরে ঝাঁকাতে থাকল। তখন সবাই অবাক হয়ে দেখল, আশপাশের গাছগুলোতে অসংখ্য বানর নিঃশব্দে বসে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মুনিয়া বলল, “দেখেছ, বানরগুলো আমাদের গুডবাই বলতে এসেছে!”
নান্টু বলল, “আমরা ওদের ছেড়ে দিয়েছিলাম, সে জন্যে! তাই না, আপু?”
মুনিয়া বলল, “হ্যাঁ।”
তাদের মাইক্রোবাসটা যখন চা-বাগানের কাঁচা রাস্তা দিয়ে আস্তে আস্তে যেতে শুরু করল, তখন বানরগুলোও কাছাকাছি গাছের সারির ভেতর দিয়ে তাদের সঙ্গে সঙ্গে আসতে লাগল। সবার আগে বানরের বাচ্চাটি। যখন তারা বড় রাস্তায় উঠে গেল, তখন বানরগুলো থামল।
মাইক্রোবাসটা যখন চলে যাচ্ছে তখন তারা পিছন ফিরে দেখল, বানরগুলো একটা গাছে বসে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
মুনিয়া বলল, “আহা! দেখেছ, বানরগুলো কত সুইট!”
নান্টু বলল, “আসলে আমার বানর হয়েই জন্ম নেওয়া উচিত ছিল।”
কেউ লক্ষ করল না, বল্টু খুব সাবধানে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ দুটো মুছে নিল। তার চোখে কেন পানি এসেছে, কে জানে!