তৃতীয় তলা
নয়ন একজন তরতাজা ছেলে। সবে পড়াশুনা শেষ করেই চাকরিটা পেয়ে যাবার পর থেকেই ওর ভেতরের বোহেমিয়ান সত্ত্বাটা জেগে উঠেছে। যখনই অফিসে দু চারদিনের ছুটি পায় তখনই একটা ছোট কীটব্যাগ ভরে নিয়ে বেড়িয়ে পরে। এখন ওর বাবা মাও আর বাঁধা দেন না।
পূজো এলেই ও আর বাড়িতে থাকতে চায় না। ওর ঐ কীটব্যাগ নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। ঘোরার ব্যাপারে ওর কোন পছন্দ নেই। পাহাড় সমুদ্র জঙ্গল যেখানেই হোক ওকে যেতে হবে।
কোন কারনে এবার প্রায় এক সপ্তাহের ছুটি পেয়ে গেছিল শনি রবি মিলিয়ে। ও তৎকালে টিকিট কেটে বেরিয়ে পড়লো।কালিম্পঙের উদ্দশ্যে। ট্রেন সময়মতো নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে দিয়েছে।
স্টেশন থেকে বাইরে বেড়িয়ে একটা শেয়ার ট্যাক্সিতে উঠে বসলো। এরপর একের পর এক ঝোড়া, নদী পেড়িয়ে চলে এলো ওর গন্তব্যে।
পথে আসতে আসতে ট্যাক্সির জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে এতোটাই বিভোর হয়ে গেছিল সময় কোনদিক দিয়ে চলে গেছে টেরই পায়নি।
পথের বাঁকে বাঁকে কতো যে নাম না জানা ফুল ফুটে রয়েছে তার ইয়ত্ত্বা নেই। পাহাড়ি পথের দুপাশ জুড়ে শুধুই সবুজ আর সবুজ। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় আট আটটা ঝরনা পরলো পথে যেতে যেতে। ওর মন একেবারে ভরে রয়েছে প্রকৃতির এই অকৃপণ সৌন্দর্য দেখে। এখানে পরিবেশ দূষণ নেই, নেই দৃশ্য দূষণ, আছে শুধুই প্রকৃতির ঢেলে দেওয়া অপরূপ সৌন্দর্য। দুচোখে শুধুই অপার স্নিগ্ধতা। যা শুধু ও নিজেই অনুভব করতে পারে। এই ভালোবাসা কোন ক্যামেরায় ধরে রাখা যায় না। একমাএ মনের ক্যানভাসেই আঁকা থাকে এই সৌন্দর্য।
যাইহোক ও একটু খুঁজেপেতে ওর আগের থেকে বুক করা হোমস্টেতে গিয়ে উঠলো। হোমস্টেতে পৌছানোর সাথে সাথেই হোমস্টের মালিক ও ওনার স্ত্রী নিজেরা এসে ওকে বরণ করে নিলেন। এ এক অনন্য অনুভূতি। এই আপ্যায়ণে ও মোহিত হয়ে পড়েছে। মালিক নিজে ওর কাঁধের কীটব্যাগটা নিয়ে ওর পছন্দ করা ঘরে নিয়ে গেলেন। ঘরটা তিন তলায়। বাড়িটা এমনিতে পাকা হলেও এই তিনতলার তিনটে ঘরই কাঠের তৈরী। এর আগে কাঠের বাড়িতে থাকবার কোন অভিজ্ঞতা না থাকবার জন্য ও এই ঘরটাকেই পছন্দ করেছিল। আরও একটা কারন অবশ্যই ছিল সেটা হলো এই ঘরগুলো থেকে বিছানায় শুয়ে শুয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে প্রতি মুহুর্তে প্রত্যক্ষ করা যায়। যা এককথায় অপূর্ব। প্রতি মুহুর্তে কাঞ্চনজঙ্ঘা তার সৌন্দর্য নিজেই সাজিয়ে নিচ্ছে। বারান্দায় এসে দাঁড়ালে যেদিকে তাকানো যাবে শুধুই পাহাড় আর নাম না জানা ফুলের সমাহার। ও যখন ঘরে ঢুকলো তখন বিকেল হয়ে গেছিল। পাহাড়ের গায়ে জোনাকির আলো ফুটতে শুরু করেছে। ও ঘরে ঢুকবার সাথে সাথেই মালিকের স্ত্রী এককাপ গরম গরম চা সাথে কিছু ভেজ পকোড়া নিয়ে এলেন। ও চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ওর চোখে এক অপার ভালোলাগার অনুভূতি। কানে এলো একটা শব্দ। ও এই হোমস্টের মালিককে মাষ্টারজী বলতে শুরু করেছে। ও বললো মাষ্টারজী এটা কিসের আওয়াজ।
ইয়ে তো সাহাব এক ডের কিলোমিটার দূর এক ঝরনা হ্যায় ইয়ে উসিকি আবাজ হ্যায়।
বাহ্ তাহলে কাল ভোরবেলাতেই উঠে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাবো এই ঝরনাটা দেখতে। বহুত খুব মাষ্টারজী। মেরা মন একদম ভর গ্যায়া।
ও বারান্দাতেই বসে থাকলো আর বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক শব্দ শুনতে লাগলো। দূরে পাহাড়ের গায়ে একটি দুটি করে আলো জ্বলছে। সেই সাথে জ্বলছে জোনাকির আলো। দূর থেকে মনে হচ্ছে যেন পাহাড়ের গায়ে কেউ আলোর মালা পড়িয়ে দিয়েছে।
রাত সাড়ে আটটা নাগাদ মাষ্টারজী ওকে খাবার খেয়ে নিতে ডাকলেন। ও নীচে গিয়ে সবার সাথে খেয়ে নিলো। খেয়ে দেয়ে ওপরে এসে বিছানায় কম্বলের তলায় যেতেই ওর চোখ বুজে এলো।
হঠাৎ মনে হলো ওর দরজায় কেউ ধাক্কা দিচ্ছে টক টক করে। একবার দুবার আওয়াজটা শুনেই কম্বলের তলা থেকে বেড়িয়ে মোবাইলে দেখলো রাত দেড়টা বাজছে। দরজা খুলবার জন্য কাছে যেতেই একটা ফুলের গন্ধ ওর নাকে এলো। যতো দরজার কাছে যাচ্ছে গন্ধটা ততো বাড়ছে। দরজার কাছে পৌঁছে হাতলটা ধরে টান দিতে যাবে এমন সময় ক্যাঁচ করে দরজাটা আপনা আপনি খুলে গেল। ও ভাবলো রাতে ঘুমের জন্য হয়তো দরজাটা দিতে ভুলে গেছে। দরজাটা খুলতেই একটা বিড়াল ম্যাঁও ম্যাঁও করে সিঁড়ির দিকে পালিয়ে গেল। ও মোবাইলটা হাতে নিয়ে সেদিকেই যেতে লাগলো। কিন্তু বিড়ালটা ততক্ষণে নীচে নেমে কোথায় চলে গেছে খুঁজেও পেলো না।
এবার এসে ও মোবাইলটাকে চার্জে বসিয়ে দরজাটা ভালো করে আটকে আবার কম্বলের নীচে ঢুকে গেলো।
সকালে ঘুম ভাঙতে ও ফ্রেশ ট্রেশ হয়ে নীচে আসতেই মাষ্টারজী বললেন ম্যায়নে আপকো বহুতবার বুলায়া থা লেকিন নিন্দহী নেহী টুটা আপকা।
আচ্ছা মাষ্টারজী একবাত বোলিয়ে তো কাল রাতকো এক খুশবু মিলা থা। জ্যায়সে জুহি ফুল কি খুশবু থি। পাহাড় মে তো জুহি নেহী হোতা হ্যায়।
মাষ্টারজী ওর কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো সাহাব আপকা কফি লাগা রাহা হু। নাস্তা কেয়া আভি কিজিয়েগা?
নেহী মাস্টারজী কফি নেহী মুঝে চায় পিলাইয়ে।
ঠিক হ্যায় সাহাব।
ওনার স্ত্রী তখন বাইরে কুকুরকে খেতে দিচ্ছিলেন। উনি হাত পা ধুয়ে নয়নের জন্য চা করে নিয়ে এলেন সাথে দু পিস বাটার দেওয়া পাউরুটি। লিজিয়ে সাহাব। ম্যায় আপকা নাস্তা বানা রহি হু।
নাস্তা করকে একবার বো ঝরনা দেখকে আউঙ্গা। মাষ্টারজী আপ মেরে সাথ চলিয়ে না।
ঠিক হ্যায় সাহাব যাউঙ্গা। বাহা সে আকে ম্যায় এক গাড়ি ঠিক কর দুঙ্গা বো আপকো ঘুমাকে লেকে আয়েগা।
ঠিক হ্যায় মাস্টারজী।
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে নয়ন আর মাস্টারজী হেঁটে হেঁটে ঝরনা দেখতে গেল। যতো কাছে যাচ্ছে ততো ঝরনার আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছে। একটা সময় ওরা পৌঁছালো ঝরনার গোড়াতে। মোবাইলে একের পর এক ছবি তুলে নিয়ে ও ঝরনার জলে হাত দিতে গেল। হাতে লাগতেই মনে হলো হাতটা বোধহয় কেটে বেড়িয়ে গেল এতো ঠান্ডা জল। ওখানে অনেকক্ষণ থাকবার পর আবার গুটি গুটি পায়ে ওরা ফিরে এলো। ততোক্ষণে রান্না শেষ।
খেয়ে দেয়ে মাস্টারজীর ঠিক করে দেওয়া গাড়িতে করে ও তাকদা পেশক তিনচুলে ডেলো পাহাড় দেখতে বেরিয়ে পড়লো। একের পর এক জায়গায় যাচ্ছে আর একেকরকম দৃশ্যে মোহিত হয়ে পড়ছে।
সন্ধ্যার কিছুটা আগে ও ফিরে এলো হোমস্টেতে।এসে গরম গরম চা খেল। এই দার্জিলিং চায়ের একটা বিশেষত্ব হলো যতোই চা খাও মনে হবে আর একটু খাই। ও নির্লজ্জের মতো আর এককাপ চা চেয়ে খেলো। সন্ধ্যাবেলা চিকেন পকোড়া খেলো সাথে আবার চা। এখানে এসে ও কফিই খেতে চাইছে না। ততোক্ষণে পাহাড়ের গায়ে একটা দুটো করে আলো জ্বলতে শুরু করেছে।
যথারীতি রাতের খাবার খেয়ে দরজা বন্ধ করে কম্বলের নীচে গিয়ে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।
আবার রাতে সেই খট খট আওয়াজ, সেই জুঁইফুলের গন্ধ। ও উঠে পরলো। দরজাটা খুলতেই দেখলো সেই বিড়ালটা। দরজাটা খুলতেই সেই গন্ধটা ওকে আকর্ষিত করলো। আজ আর মোবাইলটা নিলো না।
একটু একটু করে এগোতে থাকলো সিঁড়িটার দিকে। একটু এগোতেই আলো আঁধারিতে ও একটা নারীমূর্তি দেখতে পেলো। যে তার লম্বা চুল আঁচড়াচ্ছিল। আর ঐ চুল দিয়েই গন্ধটা আসছে।
কে, কে আপনি? এতো রাতে এখানে কি করছেন আপনি? সারাদিনে কি সময় পাননি চুল আঁচড়াবার? নারীমূূর্তিটি কোন কথাই বলছে না। চুপচাপ নিজের কাজ করেই চলেছে।
আর এদিকে নয়ন চিৎকার করতে করতে ঐ মহিলার প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়েছে। এমন সময় নারীমূর্তিটি ওর দিকে ঘুরে তাকালো। আর সে দেখেই নয়ন জ্ঞান হারালো।
পরের দিন সকালে মাস্টারজী এসে ওকে বারান্দা থেকে ডেকে তুললো।
ক্যায়া হুয়া সাহাব আপ কাল রাত বাহার কিউ শোয়ে থে। যাইয়ে আপ ফ্রেশ হোকর নীচে আ যাইয়ে।
নয়ন কোন কথা না বলে ঘরে চলে গেল। ঘরে গিয়ে ও দেখতে পেলো ওর হাতে একটা কানের দুল। ও টেবিলে রেখে ফ্রেশ হয়ে স্নান করে নীচে এলো।
নীচে এসে ও দেখলো মাস্টারজীর মেয়ে বান্টি এসেছে। ও নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে বোটানি নিয়ে মাষ্টার্স করছে। মাস্টারজী বললেন ইয়ে মেরা বেটি বান্টি হ্যায় বো শিলিগুড়ি মে রহেতী হ্যায়। আজ ইসকা জনমদিন হ্যায় ইসলিয়ে আজ গর ওয়াপস আয়ী। অউর বাহা সে কেক অউর মছলি লেকে আয়ী।আজ আপকো মছলি দেকে খানা খিলাউঙ্গা।
বান্টির দিকে তাকাতেই নয়ন ঘাবড়ে গেল। কিভাবে হতে পারে! কাল রাতে একেই তো বারান্দায় দেখেছিল! কিন্তু যে মেয়ে শিলিগুড়িতে থাকে সে কিভাবে অতো রাতে এখানে আসতে পারে? আর এলেও বা অতো রাতে তিনতলায় কেন যাবে চুল আঁচড়াতে? অস্ফুটে ওর মুখ থেকে বেড়িয়ে গেল কাল রাতে তুমি বারান্দায় কি করছিলে আর তোমার চুল থেকে জুঁই ফুলের গন্ধ আসছিল কেন? আমি তোমাকে এতোবার জিজ্ঞাসা করলাম কিছু বললে না কেন?
কি বলছেন আপনি, আমি তো এই সকালে এলাম।
নয়নের হঠাৎ কানের দুলটার কথা মনে পড়লো। আর এদিকে বান্টির জন্মদিন কি দেবে ও তো কিছু নিয়ে আসেনি। কিন্তু কিছু তো দিতে হবে।
হঠাৎ ওর মনে পড়লো ব্যাগে রাখা পার্কার পেনটার কথা যেটা ও নিজের লিখবার জন্য কিনেছিল।বান্টিকে একটু অপেক্ষা করতে বলে ও দৌঁড়ে নিজের রুমে চলে এলো।
এসে ব্যাগ থেকে পেনটা নিলো। কিন্তু দুলটা কোথায় রেখেছে ঠিক মনে করতে পাড়ছিল না। এদিকওদিক দেখতে দেখতে টেবিলের ওপর চোখ গেলো। ঈগলের মতো ছোঁ মেরে কানের দুলটা নিয়ে দুটো তিনটে সিঁড়ি টপকে টপকে নামতে লাগলো।
নীচে এসে বান্টিকে পেনটা উপহার হিসেবে দিলো। বান্টি খুব খুশী হলো উপহার পেয়ে। এরপর ও কানের দুলটা দেখালো। বললো দেখো তো দুলটা চিনতে পারো কিনা।
দুলটা দেখলো বান্টি। বেশ কিছু সময় পর বললো এই দুলটা আপনি কোথায় পেলেন?
গতকাল রাতে ওপরের বারান্দায়। যেখান থেকে আজ সকালে তোমার বাবা আমাকে ডেকে তুলেছেন। কাল রাতে যখন তুমি ওখানে চুল আঁচড়াচ্ছিলে তখন তোমার কান থেকে দুলটা পরে গেছিল আর আমি কুড়িয়ে নিয়েছিলাম। তোমার কানে হাত দিয়ে দেখো তো দুটো দুলই কি আছে?
এই তো আমার দুটো দুল কানে ঝুলছে। আমি অন্যরকম ভাবছি, এই দুলটার মালকিন তো গত এক বছর আগে মারা গেছে। সে ছিল আমার জমজ বোন। একেবারে অবিকল আমার মতো দেখতে। এতোদিন পরে আপনি দুলটা পেলেন কিভাবে? আচ্ছা আমাকে বলতে পারবেন গতকাল ঠিক কি ঘটনা ঘটেছিল? যে কারনে আপনি অজ্ঞান হয়ে গেছিলেন আর ঐ অবস্থায় ওখানেই সারারাত পড়েছিলেন।
আমি ঘুমাচ্ছিলাম। তখন রাত কতো হবে বলতে পারব না। হঠাৎ দরজায় একটা খট খট আওয়াজ শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল। দরজা খুলতেই একটা বিড়াল দেখলাম। আর জুঁই ফুলের গন্ধে চারিদিক ম ম করছে। আমি বারান্দা ধরে এগোতে থাকলাম। চারিদিকটা কেমন আবছা অন্ধকার। তার মধ্যে একটা নারীমুর্তিকে দেখলাম চুল আঁচড়াচ্ছে। আমি অনেকবার জিজ্ঞাসা করলাম কে আপনি আর এতো রাতে এখানে কি করছেন? কিন্তু মূর্তিটি কোন সাড়া দিচ্ছিল না। আমি আবার একটু এগোতেই মূর্তিটি তার মুখটা আমার দিকে ঘোরালো। দেখতে অবিকল তুমি। কিন্তু দেখলাম তার ঠোঁটের কষ বেয়ে তাজা রক্ত ঝরছে। যেন মনে হচ্ছে এখনি কিছুর রক্ত খেয়ে এসেছে। আর ওর চোখ দুটো মনে হচ্ছিল ঠিকরে বেরিয়ে আসছে আর এতো রক্তবর্ণ চোখ আমি বাপের জন্মে দেখিনি। আমি অনেক চিৎকার করবার চেষ্টা করলাম কিন্তু মূর্তিটি আমার গলাটা চেপে ধরে রেখেছিল। কি অসম্ভব শক্তি গায়ে! গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না। এদিকে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি হাত পা ছুঁড়ছিলাম ঠিক তখনই ওর কানের দুলটা আমার হাতে চলে আসে। একটা সময় আমার গলাটা ছেড়ে দিলো কিন্তু তখন আমি অবসন্ন। আমার দেহে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট ছিল না। আমাকে ফেলেই মূর্তিটা হাওয়ায় উবে গেল। আমার আর কিছু মনে নেই। আজ সকালে মাস্টারজী আমাকে ডেকে তুলেছেন। এছাড়া আর কিছু জানি না বা বলতে পারব না।
আমার জমজ বোন নাম মান্টি। আসলে ওর উৎসাহেই এই কাঠের ঘরগুলো তৈরী করা হয়েছিল। ও কাঠের ঘরে থাকতে ভালোবাসতো। রাতেও ও এই ঘরেই একা ঘুমাতো। সেদিন রাতে সবাই মিলে আমরা খুব আনন্দ করে ডিনার সেরে ঘুমাতে গেলাম। সেদিন বাবা মা ওকে আমাদের সাথেই থাকতে বললো কিন্তু ও ওপরের ঘরে চলে গেলো। পরের দিন সকালে অনেক ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকতেই ওর নিথর দেহটা দেখতে পেলাম। দেখে মনে হলো ওর দেহে কোন রক্ত নেই। আর চোখ দুটো ভয় পেয়ে ঠিকরে বেড়িয়ে আসছে। আমরা ভয় পেয়ে গেছিলাম ওকে দেখে। আপনি যে জুঁই ফুলের গন্ধের কথা বলেছেন সেই গন্ধ তেল এই বাড়িতে ও একাই মাখতো। এই কারণে বাবা শিলিগুড়ি থেকে ওর জন্য ঐ তেল নিয়ে আসতো। এখানে একজন ডাক্তার ছিলেন, উনিই ওর ডেথ সার্টিফিকেট দেন। তখন আমরা ওকে দাহ করে আসি।
তোমরা জমজ বোন, তার মানে ওরও আজ জন্মদিন। হয়তো এই কথাটা বলতেই ও গতকাল এসেছিল।
জানিনা। মাস্টারজী ও তার স্ত্রী তখন বাকরহিত…………।।