জীবনের অন্তিম প্রহর ও নতুন শুরুর আশায়
এই তো আর কিছু বছর বাকি — জীবনের দীর্ঘ পথের শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি যেন। এক মিনিটের কান্নায় যে শিশুর জন্ম হয়েছিল, সেই শিশুটি আজ জীবনের শেষ অধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এই পথচলায় কত কিছু দেখলাম — হাসি, কান্না, সাফল্য, ব্যর্থতা, গড়া আর ভাঙার অসংখ্য গল্প। প্রতিটি দিন ছিল নতুন শিক্ষা, যেখানে সময় ছিল শিক্ষক, আর অভিজ্ঞতা ছিল সবচেয়ে বড় পাঠ্যবই।
আজ যখন পেছনে তাকাই, দেখি কত মুখ, কত প্রিয়জন, কত স্মৃতি এসে চলে গেছে জীবনের মঞ্চে। মা-বাবার ভালোবাসা, ভাই-বোনের স্নেহ, বন্ধুত্বের হাসি — সব যেন এক সোনালি সময়ের রঙিন ক্যানভাসে। কিন্তু এখন মনে হয়, এই সবকিছুরই তো এক শেষ আছে। শরীর একদিন থেমে যাবে, নিশ্বাস নিঃশেষ হবে, শুধু আত্মা এগিয়ে যাবে এক অজানা পথে — অনন্ত যাত্রার দিকে।
তারপর কোথায় যাবো জানি না — আবার হিন্দু হয়ে জন্ম নেবো, না মুসলমান, না খ্রিস্টান, না বৌদ্ধ, কে জানে? হয়তো কোনো নতুন শরীরে, কোনো নতুন পৃথিবীতে, আবার শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়। জন্ম ও মৃত্যু এক চিরন্তন চক্র — আজ যা শেষ, আগামীকাল তা-ই নতুন সূচনা। যেমন সূর্য পশ্চিমে ডুবে যায়, তেমনি আবার পূর্বে উদিত হয় নতুন আলো নিয়ে।
এই জন্মে মা-বাবার ভালোবাসা পেয়েছি, সেটাই জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। সেই স্নেহ, সেই মমতা হয়তো পরের জন্মেও খুঁজে পাবো — কিন্তু সে সৌভাগ্য আবার হবে কি না, তা সময়ই জানে। হয়তো আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে, নতুন মুখ নিয়ে, নতুন জীবনের ছোঁয়ায় নিয়ে।
তবু এখন স্পষ্ট বুঝি — ধর্ম কোনো পরিচয় নয়, ধর্ম হলো মানবতা। হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, সিখ বা বৌদ্ধ — সবই পথ, কিন্তু গন্তব্য একটাই — ভালোবাসা ও করুণা। মৃত্যুর পর সব মুছে যায়, কিন্তু ভালো কাজ, ভালো মন, আর ভালোবাসা চিরকাল থেকে যায় এই পৃথিবীতে।
তাই আজ আমি প্রতিটি দিনকে ভালোবাসতে চাই, প্রতিটি সম্পর্ককে যত্নে বাঁচাতে চাই। কারণ জীবন ক্ষণস্থায়ী হলেও ভালোবাসা অমর। মৃত্যু শুধু এক দরজা, যার ওপারে অপেক্ষা করছে নতুন আলো, নতুন শুরু, আর এক নতুন সকাল।
