Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনের মোতির মালা || Adrish Bardhan

গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনের মোতির মালা || Adrish Bardhan

গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনের মোতির মালা

আগাথা ক্রিস্টি-র গল্প নিয়ে গোয়েন্দা ধাঁধা
গ্র্যান্ড মেট্রোপলিটনের মোতির মালা। হারকুল পয়রট।

হেস্টিংস বললে, পয়রট, চলো ব্রাইটনে গিয়ে মাথা ঠান্ডা করে আসি।

সঙ্গে-সঙ্গে রাজি হল হারকুল পয়রট। এলাম ব্রাইটন। কিন্তু মস্তিষ্কের ব্যায়াম থেকে রেহাই পেলাম না। ঘটনাটা ঘটল সেই রাতেই।

পয়রট তো বলেই ফেলল, হেস্টিংস, ইচ্ছে যাচ্ছে কিছু হিরে-জহরত ছিনতাই করে নিই এই তালে। থামের পাশে ওই মোটা মেয়েটাকে দেখেছ? গয়নার সচল দোকান তাই না?

ওঁর নাম মিসেস ওপালসেন, বলল হেস্টিংস।

চেনো?

সামান্য। স্বামী শেয়ার মার্কেটের দালাল। তেলের হিড়িকে আঙুল ফুলে কলাগাছ।

খাওয়াদাওয়ার পর লাউঞ্জে দেখা হয়ে গেল ওপালসেন দম্পতির সঙ্গে। একগাল হেসে মিসেস তার বক্ষশোভা দেখালেন পয়রটকে। মানে, মূল্যবান কণ্ঠহারটি। তাতেও আশ মিটল না। হারকুল পয়রটকে তার মোতির মালা না দেখালেই নয়। ছুটলেন শোওয়ার ঘরে মহামূল্যবান নেই নেকলেস আনতে।

স্বামীদেবতা গম্ভীর চালে বললেন, মালার মতো মালা মশাই। দেখে চোখ ঠিকরে যাবে। দামটা অবশ্য চড়া–

কথা আটকে গেল এক ছোকরা খানসামার আবির্ভাবে। মেমসাহেব তলব করেছেন কর্তাকে।

দৌড়লেন ধনকুবের ওপালসেন। দশ মিনিট আর পাত্তা নেই।

ভুরু কুঁচকে বলল হেস্টিংস, আরে গেল যা! এঁরা কি আর আসবেন না?

পয়রট বললেন–না। একটা গোলমাল হয়েছে।

তুমি জানলে কী করে?

এইমাত্র হন্তদন্ত হয়ে অফিসঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন হোটেল ম্যানেজার। লিফটম্যান গুজগুজ করছে ওয়েটারদের সঙ্গে তিনবার ঘণ্টা বাজল লিফটের কিন্তু খেয়াল নেই লিফটম্যানের। ওয়েটারদেরও মন নেই খদ্দেরদের দিকে। ওয়েটাররা যখন খদ্দেরদের কথাও ভুলে যায়, তখন জানবে–দেখো, পুলিশ এসে গেল। সত্যি সত্যিই দুজন পুলিশ ঢুকল হোটেলে। তারপরেই দৌড়ে এল একজন হোটেল কর্মচারী।

স্যার, আপনারা দয়া করে মিস্টার ওপালসেনের ঘরে পায়ের ধুলো দেবেন?

নিশ্চয়, নিশ্চয়। পয়রট যেন এক পায়ে খাড়া ছিল এতক্ষণ।

মিসেস ওপালসেনের ঘরে ঢুকে দেখলাম দেখবার মতো এক দৃশ্য। গয়নামোড়া গৃহিণী ইজিচেয়ারে চিৎপটাং হয়ে শুয়ে কাঁদছেন হাপুসনয়নে। জলের ধারায় ধুয়ে যাচ্ছে মুখের পাউডার। পেছনে হাত দিয়ে রাঙামুখে পায়চারি করছেন কর্তা। পুলিশ-অফিসার নোটবই খুলে জেরা করছেন আর লিখছেন। একজন পরিচারিকা বলির পাঁঠার মতো কাঁপছে সামনে। আর একজন রাগে ফুলছে পাশে দাঁড়িয়ে।

ব্যাপার অতি গুরুতর। মহামূল্যবান মোতির মালা চুরি হয়ে গেছে। খেতে যাওয়ার আগেও গিন্নি দেখেছিলেন মালাটা। গয়নার বাক্সে চাবি দিয়ে রেখে গেছিলেন টেবিলের ড্রয়ারে। গয়নার বাক্সের চাবিটা অবশ্য মামুলি। যে কেউ খুলতে পারে। ড্রয়ারেও চাবি থাকে না। কেননা, বলির পাঁঠার মত কাঁপছে, ওই যে মেয়েটা, ও সবসময় থাকে ঘরে। ওর নাম সিলেসটিন। ফরাসি মেয়ে। গিন্নির সেবাদাসী। কর্তার হুকুমমতো সে ঘর থেকে বেরোয় না। এমনকি হোটেলের ঝি (রাগে ফুলছে যে মেয়েটা) যখন ঘরে ঢোকে, তখনও সিলেসটিন থাকে ঘরে। তা সত্ত্বেও এইটুকু সময়ের মধ্যে কে যে নিল মোতির মালা বোঝা যাচ্ছে না।

সিলেসটিন দৌড়ে এল পয়রটের সামনে। সে কী কান্না। পয়রট জাতে ফরাসি (পয়রট বলে, মোটেই না আমি বেলজিয়ান), সুতরাং সিলেসটিকে বাঁচাতেই হবে। গোলমুখো ওই ঝি মাগিই হাতসাফাই করেছে মালাটা।

হোটেলের ঝি তেড়ে উঠল। সার্চ করা হোক এখুনি। কিন্তু সার্চ করেও মোতির মালা পাওয়া গেল না কারও কাছে।

সিলেসটিন বললে, দু-বার আমি পাশের ঘরে গেছিলাম। ওইটাই আমার ঘর। একবার তুলো আনতে। আর কেবার কঁচি আনতে।

পয়রট ঘড়ি বের করে বললে, যাও তো একবার। দেখি কতক্ষণ লাগে।

দু-বার গেল সিলেসটিন। প্রথমবার লাগল বারো সেকেন্ড। দ্বিতীয়বার পনেরো সেকেন্ড।

পয়রট নিজে এবার ঘড়ি ধরে ড্রয়ার খুলল, গয়নার বাক্স বার করল। চাবি খুলল ডালা খুলে ফের বন্ধ করল, চাবি বন্ধ করল, ড্রয়ার খুলে রেখে দিল। সবশুদ্ধ লাগল ছেচল্লিশ সেকেন্ড। তার মানে, হোটেলের ঝি মোতির মালা নেয়নি। সিলেসটিনই চুরনী। সত্যি সত্যিই সিলেসটিনের বিছানার তলা থেকে পাওয়া গেল মালাটা।

পুলিশ ধরে নিয়ে গেল তাকে।

পয়রট দেখল, টেবিলের পাশে একটা খিল আঁটা দরজা। ওদিক থেকেও আঁটা খিল। গেল সেই ঘরে। ফাঁকা ঘর। দরজার পাশেই একটা ধূলিধূসরিত টেবিল। ধুলোর ওপর একটা চৌকো ছাপ।

বেরিয়ে এল পয়রট। হোটেলের ঝিকে নিয়ে গেল মিস্টার ওপালসেনের ঘরে। গিন্নির ঘরের উলটোদিকে তার ঘর। পকেট থেকে একটা কার্ড বার করে বলল, এরকম একটা কার্ড দেখেছ কোথাও?

না তো। কার্ডটা উলটেপালটে দেখে বলল হোটেল-ঝি।

খানসামাকে ডাক। খানসামা আসতেই কার্ডটা বাড়িয়ে ধরল পয়রট। উলটেপালটে দেখে কার্ড ফিরিয়ে দিয়ে ঘাড় নাড়ল খানসামানা, এ কার্ড সে আগে দেখেনি।

বেরিয়ে এল পয়রট। দুই চোখ বেশ উজ্জ্বল। বলল হেস্টিংসকে, আমি লন্ডন যাচ্ছি। হারকুল পয়রটকে এত সহজে ধোঁকা দেওয়া যায় না। মালা-চোর এবার ধরা পড়বে।

মালা তো পাওয়া গেছে, বলল হেস্টিংস।

দূর। ওটা নকল মালা। বলে গায়ের কোটটা হেস্টিংসের হাতে ধরিয়ে দিল পয়রট। বলল, কোটের হাতায় সাদা গুঁড়োটা বুরুশ দিয়ে ঝেড়ে রেখো তো।

কীসের গুঁড়ো?

ফ্রেঞ্চ চক। ড্রয়ারে ছিল–কোটে লেগে গেছে।

পরের দিন সন্ধেবেলা ফিরে এল হারকুল পয়রট।

সত্যিই ফিরে এসেছে আসল মুক্তোর মালা। খাঁচায় ঢুকেছে হোটেল-ঝি আর খানসামা।

কিন্তু কীভাবে?

গোয়েন্দা ধাঁধার সমাধান

খানসামা বন্ধ ঘরের দরজার পাশে দাঁড়িয়েছিল নকল চাবি হাতে। খিল খুলে রেখেছিল। সিলেসটিন প্রথমবার তুলে আনতে গেল নিজের ঘরে। ড্রয়ার টেনে গয়নার বাক্স বের করল হোটেল-ঝি। খিল খুলে চালান করল পাশের ঘরে। ফিরে এল সিলেসটিন। আবার গেল কাঁচি আনতে। আবার দরজা খুলল হোটেল-ঝি। খানসামা ততক্ষণে বাক্স খুলে মালা নিয়ে নিয়েছে। খালি বাক্সটা নিয়ে ড্রয়ারে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল হোটেল-ঝি।

নকল মুক্তোর মালাটা সকালবেলা বিছানা ঝাড়বার সময়ে সিলেসটিনের গদির তলায় লুকিয়ে রেখেছিল হোটেল-ঝি।

পয়রট দেখল খালি ঘরে ধুলো জমা টেবিলে একটা চৌকো ছাপ। গয়নার বাক্সটাও চৌকো এবং একই মাপের। বুঝে ফেলল হোটেল-ঝির সঙ্গে এ ঘরের খানসামা হাত মিলিয়েছে। তাই আগে থেকেই ফ্রেঞ্চ চক মাখিয়ে রাখা হয়েছিল ড্রয়ারে যাতে টানাটানিতে আওয়াজ না হয়।

সাদা কার্ডটা বিশেষ মশলা মাখানো আঙুলের ছাপ নেওয়ার কার্ড। ঝি আর খানসামার আঙুলের ছাপ কার্ডের ওপর ধরে নিয়ে পয়রট গেল লন্ডনে। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুরোনো ফাইল দেখে বললো, এরা দুজনেই দাগি হিরে চোর। এখন ফেরারি।

গ্রেপ্তার হল দেবা আর দেবী। খানসামার পকেটে পাওয়া গেল আসল মুক্তোর মালা।

ফ্রেঞ্চ চক আর ধুলোর ছাপ হেস্টিংসও দেখেছিল কিন্তু বুদ্ধির খেলায় হেরে গেল পয়রটের কাছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *