কর্মফল
রমেশ আর ইন্দ্রনাথ ছেলেবেলার বন্ধু। ইন্দ্রনাথের তুলনায় রমেশের আয় কম, সে গরিব। ইন্দ্রর তাই মনে অহংকার। রমেশকে হাবেভাবে বোঝায় সে বড়লোক। রমেশ বুঝেও মিলেমিশে চলে।
রমেশের ছেলে বিমল মেধাবী,পরীক্ষায় প্রথম হয়। ইন্দ্রনাথের ছেলে প্রদীপ বিমলের সাথে একই শ্রেণীতে পড়ে। পড়াশুনায় তেমন ভালো নয়। এতে বিমলের প্রতি ইন্দ্রনাথের ঈর্ষাভাব। ওদিকে স্কুলের মাষ্টাররা বিমলকে খুব ভালোবাসে দেখে প্রদীপও বিমলকে কুনজরে দেখে।
একদিন পাড়ার মোড়ে রমেশ, ইন্দ্র, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারছে, এমন সময় বিমলকে কয়েকটা পেয়ারা শার্টের কোঁচড়ে করে আনতে দেখে রমেশ জিজ্ঞাসা করে, কোথায় পেলি এত পেয়ারা? বিমল বলে বন্ধুরা দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পরে পাশের পাড়ার ধীরেনবাবু এসে বলে, রমেশ তোমার ছেলে আমার গাছের পেয়ারা চুরি করেছে। সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রনাথ বলে, হ্যাঁ এইতো দেখলাম নিয়ে গেলো। যাও যাও ঘরে গিয়ে চোরকে ধরো।
ধীরেনের সঙ্গে সকলে রমেশের ঘরে এলো। ধীরেন বললো, বিমল তোমায় ভালো ছেলে বলে জানতাম, তুমি পেয়ারা চুরি করলে বাবা! বিমল যত বলে আমি চুরি করিনি তত ইন্দ্রনাথ উস্কে দিয়ে বলে চুরি না করলে এত পেয়ারা দেয় কেউ?
রমেশ ধৈর্য্য রাখতে না পেরে সকলের সামনে ছেলেকে খুব মারে এবং পেয়ারাগুলি ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
এই ঘটনার মাস ছয়েক পরে বিমল বাস অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। রমেশের স্ত্রী শোকে পাগলপ্রায়। রমেশ চুপ হয়ে যায়,বন্ধুদের আড্ডায় আর যায়না।
বেশ কয়েক বছর পর ইন্দ্রনাথের ছেলে প্রদীপ একদিন রাতে টিউশন থেকে ফিরছে সেইসময় কিছুলোক চোর তাড়া করতে করতে এসে ওকে দেখে চোর ভেবে বেদম পেটালে প্রদীপ অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ইন্দ্রনাথ ছেলেকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। ইন্দ্রনাথ ছেলের বিয়োগে মর্মাহত হয়ে ভাবে, এ তার বিমলকে চোর অপবাদ দেওয়ার কর্মফল।