Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ইয়াঙ্কি খোকা-গুন্ডা || Hemendra Kumar Roy

ইয়াঙ্কি খোকা-গুন্ডা || Hemendra Kumar Roy

ইয়াঙ্কি খোকা-গুন্ডা

ইয়াঙ্কি বলে ডাকা হয়, আমেরিকানদের। আর গুন্ডা কাকে বলে তোমরা সকলেই তা জানো। গুন্ডা নেই এমন দেশও বোধহয় দুনিয়ায় নেই। কিন্তু গুন্ডামিতে এখন সকল দেশের সেরা বোধ করি ইয়াঙ্কিদেরই দেশ। আজ তাদেরই দেশের বালক-গুন্ডাদের কথা কিছু কিছু বলব।

প্রথমেই ইয়াঙ্কি-গুন্ডাদের নাম থেকেই শুরু করি। তাদের অনেকেরই ডাক-নাম ভারি মজার। যথা–খোকামুখো উইলি, পঙ্গু চার্চি, খ্যাপা বাচ্‌, মস্ত মাইক, পুঁচকে মাইক, নকল হাঁস, নরকের বিড়াল ম্যাগি, হুচি কুচি মেরি, খাই-খাই জোন্স, গু গু নক্স, ঝোড়ো লুই, ঘুঘু লিজি, সিদ্ধ ঝিনুক ম্যালয়, পুরুত প্যাডি, গলদা চিংড়ি কি, ছেঁড়া-ন্যাকড়া রিলে ও ওদের ধরে খাও জ্যাক প্রভৃতি।

ওদেশি গুন্ডাদের আড্ডাগুলোর নামও চমৎকার। যথা–আস্তাকুঁড়, নরকের রান্নাঘর, নরকের গর্ত, দেয়ালের গর্ত, মড়াঘর, প্লেগ, ধ্বংস, গোল্লায় যাওয়ার পথ, রক্তের বালতি ও আত্মহত্যার ঘর প্রভৃতি। ওইসব নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আমেরিকার গুন্ডারা– জ্ঞানপাপী।

অনাথ ছেলেরা লেখাপড়া না শিখলে ও গুরুজনের উপদেশ না পেলে কি হয়, আমেরিকায় তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখা যায়। কারণ, আমেরিকায় গুন্ডারা গুন্ডামি করতে শেখে প্রায় ছেলেবেলা থেকেই। ওখানকার কয়েকটি বিখ্যাত বালক-গুন্ডাদলের নাম হচ্ছে, চল্লিশ ছোট্ট চোর, খুদে মরা খরগোশ ও খোকা, গুন্ডাদল প্রভৃতি। ওইসব দলের ছোকরাদের বয়স আট-দশ-বারোর বেশি না হলেও চুরি, জুয়াচুরি, পকেট কাটা, রাহাজানি ও খুনখারাপি প্রভৃতিতে তারা ধাড়িদের চেয়ে কিছুমাত্র কম শয়তানি দেখায়নি!

ওদের একটি দলের দলপতির নাম, খোকামুখো উইলি, সে নিজের সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে গ্রান্ড ডিউক থিয়েটার নামে একটি রঙ্গালয় খুলে বাহাদুরির পরিচয়ও দিয়েছিল। তারা নিজেরাই নাটক লিখে অভিনয় করত! সিন ও সাজপোশাকের জন্যে তাদের কোনও ভাবনাই ছিল না। কারণ, যা-যা দরকার, শহরের বড় বড় থিয়েটারের ভাণ্ডার থেকে চুরি করে আনলেই চলত। এই শিশু-থিয়েটারের দর্শক হত নিউ ইয়র্ক শহরের যত অনাথ বালক-বালিকা ও বাপে-খেদানো মায়ে-তাড়ানো ছেলেরা এবং আসনের দাম ছিল মাত্র পাঁচ আনা পয়সা! কিছুদিন থিয়েটার খুব-জোরে চলল। বাচ্চা-গুন্ডাদের ট্র্যাকে পয়সা আর ধরে না! কিন্তু তাদের বাড়বাড়ন্ত অন্যান্য ছোকরা গুন্ডাদের দল সইতে পারলে না! তারা অভিনয়ের সময়ে রোজ এসে এমন। দাঙ্গাহাঙ্গামা শুরু করলে যে, পুলিশ শেষটা শিশু-থিয়েটার উঠিয়ে দিতে বাধ্য হল।

পুঁচকে মাইক বলে এক ছোকরা-গুন্ডা মস্ত এক দুষ্ট ছেলের দল গড়ে কিছুকাল বেজায় উৎপাত শুরু করেছিল। তাদের নাম ছিল, উনিশ নম্বর রাস্তার দল। ও-দলের ছোকরাদের স্বভাব ছিল এমনি ভয়ানক যে, পুলিশ পর্যন্ত তাদের কাছে ঘেঁষতে চাইত না! তাদের অত্যাচারে সে-অঞ্চলে পাদরিদের ইস্কুল পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যেত, কারণ ভালো ছেলেরা চোখের সামনে বসে পড়াশোনা করবে, এটা তাদের সহ্য হত না! ক্লাস বসলেই তারা বড়-বড় ইট-পাথর ছুড়ত এবং পুঁচকে মাইক ঘরের ভিতরে মুখ বাড়িয়ে মাস্টারদের ডেকে বলত, ওরে বুড়ো পাদরির দল, তোরা নরকে যানরকে যা!

তোমরা শুনলে অবাক হবে যে, কোনও-কোনও শিশু-গুন্ডাদলের চাই ছিল, বালিকা! চল্লিশ ছোট্ট চোর-দলের সর্দারনির নাম ছিল, পাগলি ম্যাগি কার্সন। নয় বছর বয়সেই সে চল্লিশটি শিশু-চোর নিয়ে শহরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। প্রত্যেক শিশু-চোরই তার হুকুমে প্রাণের তোয়াক্কা রাখত না! কিন্তু তার বয়স যখন বারো বৎসর, সেই সময়ে মিঃ পিজ নামে এক পাদরি সাহেব তাকে সদুপদেশ দিয়ে সেলাইয়ের কাজ শেখান। সেলাইয়ের কাজে পাগলি ম্যাগির এমন মন বসে গেল যে, শিশু-গুন্ডাদের মায়া কাটিয়ে সে একেবারে লক্ষ্মীমেয়ে হয়ে পড়ল! তারপর এক ভদ্র-পরিবারে আশ্রয় পেয়ে বিয়ে করে সে সুখে দিন কাটিয়ে দেয়।

.

খ্যাপা বাচ নামে আর-এক ছোকরার কীর্তি শোনো। আট বছর বয়সে বাপ-মা হারিয়ে সে হয় অনাথ। তারপর দুষ্টু ছেলেদের দলে ভিড়ে সে একটা কুকুর চুরি করে তার নাম রাখলে র‍্যাবি এবং তাকে হরেক রকম কৌশল শেখালে। রাস্তা দিয়ে মেমসাহেবেরা হাতব্যাগ ঝুলিয়ে চলেছে, কোথা থেকে ঝড়ের মতো ছুটে এল র‍্যাবি এবং চিলের মতো ছোঁ মেরে হাতব্যাগ মুখে করে দিলে ভেঁ-দৌড়! তারপর র‍্যাবি ল্যাজ নাড়তে-নাড়তে একেবারে মনিবের কাছে গিয়ে হাজির! ||||||||||

খ্যাপা বাচ আরও ঢের ফন্দি জানত। সেও একটা ছোটখাটো চোরের দল গড়ে তুলেছিল। এবং তার কার্যপদ্ধতি ছিল এইরকম। বিশ-ত্রিশ জন শিশু-পকেটমার নিয়ে সে পথে বেরিয়ে পড়ত। নিজে যেত বাইসাইকেলে চড়ে। পথে কোনও বুড়ি বা দুর্বল লোক দেখলেই খ্যাপা বাচ তার গায়ে ইচ্ছা করে বাইসাইকেলের ধাক্কা লাগিয়ে দিত এবং তারপর গাড়ি থেকে নেমে পড়ে চেঁচিয়ে এমন গালাগালি শুরু করত যে, মস্ত ভিড় জমে যেত। কৌতূহলী লোকের যখন ব্যাপার কি জানবার জন্যে ব্যস্ত হয়ে উঠত, তখন খ্যাপা বাঁচের স্যাঙাতরা সকলের পকেটে সুপটু হাত চালিয়ে টপাটপ মাণিব্যাগ প্রভৃতি তুলে নিয়ে সরে পড়ত! বলা বাহুল্য, দলের প্রধান পান্ডা বলে লাভের অংশ বেশির ভাগই হত তার পাওনা।

তোমরা পকেটমারের ইস্কুলের নাম শুনেছ?…না? কিন্তু আমেরিকায় সত্যি সত্যিই এই ইস্কুল ছিল, আজও হয়তো আছে!

কোনও দাগি পুরোনো ও বয়স্ক গাঁটকাটা হয় এর মাস্টার। রাজ্যের খুদে বদমাইশরা হয় এর ছাত্র। ক্লাসে সাজানো থাকে নানান ভঙ্গিতে সারে-সারে সাজ-পোশাক পরানো মূর্তি। ছাত্রেরা সাবধানে সেইসব মূর্তির পকেট কেটে বা পকেটে হাত চালিয়ে জিনিস তুলে নিতে চেষ্টা করে। প্রায়ই এমন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়, পকেটের ভিতরে জামার কাপড়ে হাত লাগলেই টুং-টুং করে ঘণ্টা বেজে ওঠে। পকেট কাটতে গিয়ে ছাত্রদের এরকম কোনও ভুল হলেই মাস্টার চোর পাহারাওয়ালার পোশাক পরে এসে সপাসপ বেত মারতে থাকে!

ছোকরা-গুন্ডাদের দলে এক-একজন ভীষণ প্রকৃতির লোকও দেখা গেছে। যেমন, গোবর গণেশ লুই। নাম তার গোবর-গণেশ বটে, কিন্তু গোঁফ ওঠার আগেই সে মানুষ খুন করতে ওস্তাদ হয়ে উঠেছিল। খুব ভালো পোশাক পরে সর্বদাই সে ফিটফাট হয়ে থাকত বটে, কিন্তু তার মনের ভিতরটা ছিল নোংরা ও ভয়াবহ।

কিড টুইস্ট–আমেরিকার এক নামজাদা গুন্ডা-সর্দার। বয়সে, গায়ের জোরে ও সহায় সম্পদে সে লুইয়ের চেয়ে ঢের বড়। লুই কিন্তু এমনি ডানপিটে ছেলে যে, তাকেও গ্রাহ্য করত না। যে-টুইস্টের নাম শুনলে মহা ধড়িবাজ ইয়াঙ্কি-ডাকাতরা পর্যন্ত পালিয়ে যায়, লুই একদিন তার সঙ্গেই ঝগড়া করে বসল! অথচ সেদিন টুইস্টের সঙ্গে ছিল ঝোড়ো লুই নামে আর-একজন এমন ষণ্ডা-গুন্ডা, যে হাতের চাপে মানুষকে ভেঙে দুখানা করে ফেলতে পারত।

ঝগড়াটা বাধল এক হোটেলের দোতলায়। কিড টুইস্ট তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললে, ওহে ছোকরা, শুনেছি তুমি খুব চটপটে! আচ্ছা, এখনি ওই জানলা দিয়ে রাস্তায় লাফ মারো দেখি!

লুই বেচারা একলা মারামারি করতেও পারলে না, অত উঁচু থেকে তার লাফ মারবারও ভরসা হল না। সে ইতস্তত করতে লাগল।

কিড টুইস্ট চোখ রাঙিয়ে পকেট থেকে রিভলভার বার করতে উদ্যত হল। তখন লুই আর কী করে, বাধ্য হয়ে জানলা থেকে মারলে এক লাফ!

অল্প বয়স, হালকা দেহ, কাজেই দোতলা থেকে নীচে পড়েও তার খুব বেশি লাগল না। কিন্তু সে গুন্ডা-সর্দার টুইস্টের ওপরে মর্মান্তিক চটে গেল।

রাস্তায় দাঁড়িয়েই সে শুনতে পেলে, ওপরে বসে টুইস্ট হেঁড়ে গলায় অট্টহাস্য করছে। লুই মনে-মনে প্রতিজ্ঞা করলে, এ অপমানের প্রতিশোধ না নিয়ে সে জলগ্রহণ করবে না!

তখনি সে ফোন করে দলের জন-ছয়েক লোককে আনিয়ে হোটেলের দরজার কাছে পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে রইল।

খানিক পরেই দেখা গেল, কিড টুইস্ট ও ঝোড়ো লুই সকলের সভয় সেলাম কুড়োতে কুড়োতে হোটেল থেকে বেরিয়ে আসছে!

গোবর-গণেশ লুই হেসে বললে, কিড, এইদিকে এসো!

কিড টুইস্ট মুখ তুলে তাকাতে-না-তাকাতেই লুই রিভলভারের দুই গুলিতে তার মাথা ও বুক ছাদা করে দিলে! পরমুহূর্তে তার মৃতদেহ পথের ওপরে পড়ে গেল।

ঝোড়ো লুই বেগতিক দেখে পালাতে চেষ্টা করলে, কিন্তু গোবর-গণেশের সাঙ্গোপাঙ্গরা তাকেও কুকুরের মতো গুলি করে মেরে ফেললে।

একজন পাহারাওয়ালা দৌড়ে এল, কিন্তু গোবর-গণেশের রিভলভার আবার গর্জন করতেই সে বুদ্ধিমানের মতো চটপট সরে পড়ল।

কিছুদিন পরে গোবর-গণেশ যেচে পুলিশের হাতে আত্মসমর্পণ করলে।

বিচারক তার নিতান্ত কাঁচা বয়স দেখে তাকে এগারো মাসের জন্যে সংশোধনী কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন।

গোবর-গণেশ লুই অবহেলা ভরে বললে, মোটে এগারো মাস? ওঃ, ভারি তো! আমি শূন্যে পা তুলে মাথার ওপর ভর দিয়েই এগারো মাস কাটিয়ে দিতে পারি।

.

আর-এক ছোকরা-গুন্ডার গল্প বলে আমরা এবারের পালা শেষ করব। তার নাম হচ্ছে, ওনি ম্যাডেন। কিন্তু লোকে তাকে ডাকে, খুনি ওনি বলে।

বিলাতে তার জন্ম। এগারো বছর বয়সে সে আসে আমেরিকায়। সতেরো বছর বয়সেই সে খুনি ওনি নাম অর্জন করে। তার মারাত্মক বীরত্ব দেখে বড়-বড় ইয়াঙ্কি-গুন্ডারা মুগ্ধ হয়ে তার দলে গিয়ে ভর্তি হয়। তারপর একে একে পাঁচটা নরহত্যা করে খুনি ওনি সর্বপ্রথম পুলিশের পাল্লায় পড়ে জেল খাটে।

খুনি ওনি যখন পথে বেরুত, তখন তার সঙ্গে থাকত অনেক রকম অস্ত্রশস্ত্র। প্রথমবার জেল খাটবার আগে সে কখনও শারীরিক পরিশ্রম করেনি। সারাদিন ঘুমিয়ে থাকত এবং সারারাত হোটেলে নেচে-গেয়ে ফুর্তি করে বেড়াত। টাকার দরকার হলেই রাহাজানি ও নরহত্যা করত–যাকে বলে, আদর্শ হিংস্র পশুর জীবন।

জেল থেকে বেরিয়ে সে আবার দুটি মানুষকে যমের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। পুলিশ আবার তার পিছনে লাগে। কিন্তু সাক্ষীর অভাবে তাকে ধরতে পারে না।

খুনি ওনি বুঝলে, এখন দিন কয়েকের জন্য গা-ঢাকা দিয়ে ভালোমানুষ সাজা উচিত। সে তখন কয়েকজন সাঙাতকে নিয়ে ভদ্রপাড়ায় একখানা বাড়ি ভাড়া করলে–বাড়িওয়ালার নাম কিটিং। সে সাধু ও গৃহস্থ ব্যক্তি; ভাড়াটেরা কোন শ্রেণির লোক, ঘুণাক্ষরেও তা কল্পনা করতে পারেনি।

কিন্তু স্বভাব না যায় মলে! বিশেষ, বাঘ আর কতদিন শান্ত হয়ে থাকতে পারে? খুনি ওনি আর তার চ্যালা-চামুন্ডারা সারা রাত নেচে-কুঁদে হট্টগোল করে এত বেশি ফুর্তি করতে লাগল যে, পাড়ার ভদ্রলোকদের পক্ষে আশেপাশে তিষ্ঠানো দায় হয়ে উঠল।

একদিন সন্ধ্যায় তারা গানবাজনা আরম্ভ করেছে, এমন সময়ে বাড়িওয়ালা কিটিং এসে হাজির।

বিরক্তমুখে ভারিক্কে-চালে কিটিং বললে, পাড়ার লোকে রাগ করছে। আমার বাড়িতে এত গোলমাল করলে আমি তোমাদের উঠিয়ে দেব।

ভারি মিঠে হাসি হেসে ওনি বললে, বলেন কি মশাই, আমাকে আপনি উঠিয়ে দেবেন? বেশ, বেশ। আচ্ছা, আপনি কি ওনি ম্যাডেনের নাম শুনেছেন?

খুনি ওনি? তার নাম কে শোনেনি?

বেশ, বেশ। তাহলে আর-একটা নতুন খবর শুনে রাখুন। আমারই নাম খুনি ওনি।

কিটিং-বেচারা আর একটাও কথা কইলে না, ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে নীচে নেমে গেল। তারপর আর কোনও হট্টগোলই সে কানে তুললে না, পুলিশে খবর দিলে না। কারণ সে জানত, খুনি ওনিকে ধরিয়ে দিলে তার দলের লোকেরা এসে তাকে টিপে মেরে ফেলবে।

কিন্তু সে চুপ করে থাকলে কি হবে, পাড়াপড়শিদের আর সহ্য হল না! থানায় খবর গেল। একজন পাহারাওয়ালা তদারক করতে এল। কিন্তু সে এসেই যেই শুনলে ভাড়াটের নাম খুনি ওনি, অমনি চোখ কপালে তুলে সরে পড়ল।

তারপর পুলিশ এল সদলবলে, সশস্ত্র হয়ে। কিন্তু খুনি ওনি তো সহজ ছেলে নয়, সহজে ধরাও দিলে না। রীতিমতো একটা খণ্ডযুদ্ধের পরে তবে পুলিশ খুনি ওনি ও তার বন্ধুদের পাকড়াও করে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যেতে পারলে।

পরদিনেই বিচার। জজসাহেব কিন্তু খুনি ওনিকে নাবালক দেখে তাকে সৎপথে থাকতে উপদেশ দিয়ে মুক্তি দিলেন।

গুন্ডাদের জগতে খুনি ওনির শত্রুও ছিল ঢের, কারণ অনেকে তাকে হিংসা করত।

একদিন এক নাচঘরে খুব নাচ-গান চলছে, শত-শত লোক আমোদ করছে, এমন সময়ে খুনি ওনি ধীরে ধীরে সেখানে প্রবেশ করলে। তাকে দেখেই সবাই ভয়ে তটস্থ, নাচ গেল থেমে এবং অনেকেই পালাবার উপক্রম করলে।

ওনি সবাইকে অভয় দিয়ে হেসে বললে, তোমরা যত খুশি নাচো–গাও–আমোদ করো! ভয় নেই, আজ আমি মারামারি করতে আসিনি। আবার নাচ শুরু হল, খুনি ওনি নিতান্ত নিরীহের মতন বসে নাচ দেখতে লাগল।

কিন্তু তখনি তার শত্রুমহলে খবর রটে গেল যে, খুনি ওনি আজ একলা পথে বেরিয়েছে!

এগারো জন শত্রু নাচঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে তার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল। ওনি বাইরে আসতেই এগারোটা রিভলভার গুলিবৃষ্টি করলে। ছয়টা গুলি ওনির গায়ে ঢুকল–সে। রাজপথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।

হাসপাতালে পুলিশ যখন জিগ্যেস করলে, কারা তোমাকে মেরেছে? ওনি তখন বললে, সে-কথায় তোমাদের দরকার কি? কারুর নাম আমি বলব না। আমার চ্যালারাই তাদের শাস্তি দেবে!

ওনি মিথ্যে জাঁক দেখায়নি। হপ্তাখানেকের মধ্যেই তার এগারো জন শত্রুর মধ্যে তিনজনকে পরলোকে প্রস্থান করতে হল। এবং ওদিকে ছয়-ছয়টা গুলি খেয়েও খুনি ওনি মরল না। কিছুদিন পরে সে আবার সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ফিরে এল! ইয়াঙ্কি-গুন্ডাদের গল্প তোমাদের হয়তো ভালোই লাগছে; তোমাদের মধ্যে যারা অ্যাডভেঞ্চার খোঁজো, তারা হয়তো ভাবছ, কী মজার ওদের জীবন। কিন্তু তোমরা হয়তো জানো না যে, গুন্ডারা প্রায় সকলেই জীবনে কখনও সুখী হতে পারে না। অধিকাংশ গুন্ডারই পঁচিশ-ত্রিশ বৎসর বয়সের ভিতরেই প্রাণদণ্ডের হুকুম হয়; অনেকে যাবজ্জীবন কারাবাস ভোগ করে; যারা পুলিশকে ফাঁকি দেয়, তারা অনেকেই দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা নিজেদের মধ্যেই মারামারি করে অল্পবয়সেই মারা পড়ে। দীর্ঘজীবী গুন্ডা জেলখানার বাইরে খুব কমই দেখা যায়। যে দু-চারজন বাঁচে, তারা প্রভুত্ব ও শক্তি হারিয়ে প্রায় ভিখারির মতো কষ্ট পায়, কারণ কোনও গুন্ডারই আধিপত্য বেশি দিন থাকে না। পরলোকের কথা কেউ জানে না। কিন্তু ইহলোকেই বেশির ভাগ গুন্ডার পরিণাম হয় ভয়ংকর। সুখে ও শান্তিতে জীবনযাপনের পক্ষে পৃথিবীতে একমাত্র শ্রেষ্ঠ পথ হচ্ছে, সৎপথ, এর চেয়ে বড় সত্য আর নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *