Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » আবার || Abar by Rabindranath Tagore

আবার || Abar by Rabindranath Tagore

তুমি কেন আসিলে হেথায়
   এ আমার সাধের আবাসে ?
   এ আলয়ে যে নিবাসী থাকে ,
  এ আলয়ে যে অতিথি আসে ,
   সবাই আমার সখা ,     সবাই আমার বঁধু ,
           সবারেই আমি ভালোবাসি ,
           তারাও আমারে ভালোবাসে --
           তুমি তবে কেন এলে হেথা
           এ আমার সাধের আবাসে ? 

            এ আমার প্রেমের আলয় ,
            এ মোর স্নেহের নিকেতন ;
           বেছে বেছে কুসুম তুলিয়া
           রচিয়াছি কোমল আসন ।
           কেহ হেথা নাইকো নিষ্ঠুর ,
            কিছু হেথা নাইকো কঠিন ,
           কবিতা আমার প্রণয়িনী
           এইখানে আসে প্রতিদিন ।
সমীর কোমল - মন       আসে হেথা অনুক্ষণ ,
          যখনি সে পায় অবকাশ
যখনি প্রভাত ফুটে ,    যখনি সে জেগে উঠে ,
          ছুটিয়া সে আসে মোর পাশে ;
দুই বাহু প্রসারিয়া           আমারে বুকেতে নিয়া
          কত শত বারতা শুধায় ,
          সখা মোর প্রভাতের বায় ।
আকাশেতে তুলে আঁখি                বাতায়নে বসে থাকি
          নিশি যবে পোহায় - পোহায় ;
উষার আলোকে হারা     সখী মোর শুকতারা
          আমার এ মুখপানে চায় ।
নীরবে চাহিয়া রহে ,    নীরব নয়নে কহে ,
           “ সখা , আজ বিদায় , বিদায় । ” 

   ধীরে ধীরে সন্ধ্যার বাতাস
          প্রতিদিন আসে মোর পাশ ।
দেখে , আমি বাতায়নে ,           অশ্রু ঝরে দু নয়নে ,
          ফেলিতেছি দুখের নিশ্বাস ।
          অতি ধীরে আলিঙ্গন করে ,
          কথা কহে সকরুণ স্বরে ,
          কানে কানে বলে , “ হায় হায় । ”
কোমল কপোল দিয়া      কপোল চুম্বন করি
          অশ্রু বিন্দু সুধীরে শুকায় ।
          সবাই আমার মন বুঝে ,
          সবাই আমার দু : খ জানে ,
          সবাই করুণ আঁখি মেলি
          চেয়ে থাকে এই মুখপানে ।
          যে কেহ আমার ঘরে আসে
           সবাই আমারে ভালোবাসে --
          তবে কেন তুমি এলে হেথা
          এ আমার সাধের আবাসে ? 

ফেরো ফেরো , ও নয়নরসহীন ও বয়ন
          আনিয়ো না এ মোর আলয়ে ,
আমরা সখারা মিলি     আছি হেথা নিরিবিলি
          আপনার মনোদু : খ লয়ে ।
          এমনি হয়েছে শান্ত মন ,
          ঘুচেছে দু : খের কঠোরতা ;
          ভালো লাগে বিহঙ্গের গান ,
          ভালো লাগে তটিনীর কথা ।
          ভালো লাগে কাননে দেখিতে
          বসন্তের কুসুমের মেলা ,
          ভালো লাগে সারাদিন বসে
          দেখিতে মেঘের ছেলেখেলা ।
          এইরূপে সায়াহ্নের কোলে
           রচেছি গোধূলি - নিকেতন ,
          দিবসের অবসান - কালে
          পশে হেথা রবির কিরণ ।
          আসে হেথা অতি দূর হতে
          পাখিদের বিরামের তান ,
          ম্রিয়মাণ সন্ধ্যা - বাতাসের
          থেকে থেকে মরণের গান ।
          পরিশ্রান্ত অবশ পরানে
          বসিয়া রয়েছি এইখানে । 

যাও মোরে যাও ছেড়ে    নিয়ো না নিয়ো না কেড়ে ,
          নিয়ো না নিয়ো না মন মোর ;
সখাদের কাছ হতে     ছিনিয়া নিয়ো না মোরে ,
          ছিঁড়ো না এ প্রণয়ের ডোর ।
আবার হারাই যদি      এই গিরি , এই নদী ,
          মেঘ বায়ু কানন নির্ঝর ,
আবার স্বপন ছুটে            একেবারে যায় টুটে
          এ আমার গোধূলির ঘর ।
আবার আশ্রয়হারা ,           ঘুরে ঘুরে হই সারা
          ঝটিকার মেঘখণ্ড - সম ,
দু : খের বিদ্যুৎ - ফণা      ভীষণ ভুজঙ্গ এক
          পোষণ করিয়া বক্ষে মম --
তাহা হলে এ জনমে ,           নিরাশ্রয় এ জীবনে
          ভাঙা ঘর আর গড়িবে না ,
          ভাঙা হৃদি আর জুড়িবে না ।
          কাল সবে গড়েছি আলয় ,
          কাল সবে জুড়েছি হৃদয় -
          আজি তা দিয়ো না যেন ভেঙে ,
          রাখো তুমি রাখো এ বিনয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress