বার্লিন এমন কোনো ব্যথিত শহর নয়।
তবুও বললুম সত্যি বার্লিন ব্যথিত!
কেন? সে রাত্রিবেলা কুলকুল কুয়াশায় শীতে
ঘুমোতে পারে না, তাই?
হাসপাতালে অপারেশন টেবিলে তার এক বিদেশী কবির
হৃদরোগ পান করে অবশ্য বাঁচতে হবে, তাই?
অথবা এত রঞ্জনরশ্মি সারাদিন অমায়িকভাবে কাজ করার পরও
সে তার পৃথিবীর কোথাও অসুখ, আগে নির্ধারণ
করতে পারলোনা-তাই?
অথবা পাবলো নেরুদাকে ওরা খড়কুটোর মতো
ছিঁড়ে ফেলেছে এই সেদিন
একটি সার্বজনীন গোলাপের ঘ্রাণের ভিতর ফুটে ওঠার আগে,
তাই তার এত আলোকিত শূন্যতার সর্বগ্রাসী বেদনা?
তার চিকন চোখের অন্তহীন শীতের ডাইনামো
সমস্ত ইউরোপ জুড়ে আজ
শুধু জেটি, ক্রেন, যুদ্ধজাহাজ কুয়াশার প্রগতি আর প্রগতি–
অথবা বার্লিন শীতে সবদিক শাদা-ইস্তাম্বুল থেকে শুরু করে
সমস্ত প্রাচ্যের অন্তহীন তাম্বুরায় আকাশবিহারী এক
সভ্যাতর উজ্জ্বিত কলরোল-তাই?
কিন্তু বার্লিন এমন কোনো ব্যথিত শহর নয়,
সত্যি বলছি ইউরোপও নয়!
মাঝে মাঝে এত পরিচ্ছন্ন আর পরিষ্কার এর পক্ষীমিথুন আর
এর মেয়েরা এমন সুন্দরী, এমন বিনীত–
যে স্তন স্পর্শ করলে মনে হয় লজ্জাহীন।
নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে, তাদের দিকে তাকানোর চোখ
সহজেই রুদ্ধ হয়–অত শাদা লাবণ্যের ঢেউ!
কালো চোখ পারেনা অতটা!
তবুও বললুম সত্যি বার্লিন ব্যথিত
এর এক কোণে প্রচণ্ড বিশাল
দারুণ দুর্দম এক শীতের কুয়াশা জমে আছে
মনে হয় সমস্ত ইউরোপে।
ভাঁড়ার ঘরের দিকে তাকালেই বোঝা যায় কী সে বেদনা।
দিন দিন জমে ওঠা উজ্জ্বল ফ্রীজের মধ্যে অন্তহীন
এর এত সুস্বাদু খাবার
কতদিন যে সত্যিকার একটি ক্ষুধার্ত মানুষের দেখা পায় না
কতদিন যে এইসব ফুলের সুঘ্রাণ দুধ সমৃদ্ধ শর্তরা
তাদের জিহ্বায় স্পর্শ করেনি এক খাদ্যহীন
জিহ্বার উদগ্র আকুতি!
কতদিন যে এরা কেউ সত্যিকার একটি শূন্য পাকস্থলীতে গিয়ে
বলতে পারলো না,
আহা! কী মুক্তি! মুক্তি!
কতদিন পর না জানি আজ সত্যিকার স্বদেশে পৌঁছে
বাড়ী ফেরার গান গাইছি।