মরীচিকা
প্রভাসের পদোন্নতিতে, রুপাই সবচেয়ে বেশি উৎফুল্ল। প্রভাসও মনে মনে রুপাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে।
সেই পদোন্নতিকে উপলক্ষ করেই, প্রভাস একটা টি-পার্টির আয়োজন করেছে। ইচ্ছে ওই দিন রুপার সাথে বন্ধু দের আনুষ্ঠানিক পরিচয়টা সেরে নেবে।রুপাও ‘অবশ্যই থাকবো’ বলে কথা দিয়েছে। কিন্তু…
পার্টির দিন, সময় যায়…
প্রভাসের মনটাও ভারি হয়…।
বন্ধুবান্ধবরা সকলে একে একে, যে-যার বাড়ি ফিরে গেছে।
প্রভাস ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। দরজায় কলিংবেলের শব্দ। দরজার লুকিং হোল দিয়ে, রুপাকে দেখা গেল। ঘড়িতে তখন রাত নটা।
না,আজ কোন’ যুক্তিই, প্রভাসের কষ্টে মলম লাগাতে পারবে না। তাই দরজা না খুলে ফিরে এলো। কলিংবেলটা বার বার বাজছে…।
রুপা বুঝেছে, প্রভাস ইচ্ছে করেই দরজা খুলছে না। কিন্তু আজ যে ও বড় অসহায়। যে লড়াইটা রুপা এতক্ষণ একা লড়ে যাচ্ছিল এই ভেবে, প্রভাস ওর পাশে আছে। কিন্তু প্রভাসের আচরণে ও স্তম্ভিত। ও কিছু না জেনে, না শুনে দরজাটা খুলছে না! কোনো কথাই শুনতে চাইল না! অভিমানে রুপার চোখ ফেটে জল আসছে; পায়ের শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে; আজ ওর পাশে কেউ নেই!
সারাদিনের ছোটাছুটিতে বিধ্বস্ত রুপা এতকিছুর পরও প্রভাসের এই বিশেষ দিনে ছুটে এসেছে; আর প্রভাস..!
দুপুরে রুপা যখন বেরোতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে গেলো চরম ঘটনাটা; তারপর সারাদিন ডাক্তার আর হসপিটাল..
প্রভাস দরজা না খুললেও কান দুটো সজাগ রেখেছিল। রুপার পায়ের শব্দ ক্রমে ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। রুপা ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু প্রভাসেরও আজকে জেদ চেপে গেল, ও কিছুতেই দরজা খুলবে না। রাত বাড়ছে প্রভাসের ছটফটানি বাড়ছে। ও কি খুব বড়ো ভুল করে ফেলল! রুপাকে কেমন যেন উদভ্রান্তের মতো লাগছিল না! নাহ্, এভাবে রুপাকে দুঃখ দেওয়া উচিত হয় নি! মোবাইলটা হাতে নিয়ে একটা রিং করলো। ফোন সুইচড অফ। পুরো রাত গেল দুশ্চিন্তায়।সকাল হতেই আবার ফোন করলো, রুপার মা’র গলা- “প্রভাস বলো?”
” কাকিমা, রুপা কোথায়?”
” হসপিটাল থেকে ফোন এসেছে,ও কথা বলছে।”
“হসপিটাল! কেন! কি হয়েছে?”
“তুমি জানো না! কাল তো ওর বাবাকে হসপিটালে এডমিট করতে হয়েছে। মেয়েটা কাল সারা দিন একা ছুটোছুটি করেছে।”
” কাকিমা, আমি কি এতই পর?”
“না..,তা.. না! আসলে কাল তোমার একটা বিশেষ দিন ছিলো…; তাই তো রুপার তোমার ওখানে যেতে অতো দেরি হলো।”
প্রভাস বুঝলো রুপা বাড়িতে এসে কিছুই জানায়নি। না জেনে সে মস্ত বড় ভুল করে ফেলেছে।
কলিং বেলটা বাজছে। রুপা দরজা খুলল। কোনো ভণিতা না করে প্রভাস বলল..
“আমাকে ক্ষমা করো রুপা, আমি না বুঝে তোমাকে আঘাত করে ফেলেছি।”
“প্রভাস! সম্পর্কে প্রধান শর্ত হলো পারস্পরিক বিশ্বাস,ও সম্মান, যে দুটোই তুমি হারিয়েছ। তাই এখন এ কথাগুলো অর্থহীন।”
“আমাকে শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও লক্ষ্মীটি।”
“বিভাস, আমার বাবা এই মাত্র চলে গেলেন। আমাকে এখুনি হসপিটাল যেতে হবে। আমার এখন কিছু শোনার মতো মানসিক শক্তি নেই। তুমি বরং এখন বাড়ি যাও।”