ওগো বধূ সুন্দরী
দীর্ঘদিন লকডাউনে অফিস বন্ধ থাকার পর আজ বিশ্বাস বাবুর অফিস খুলছে। অনেক দিন পর অফিস যাবে, বিশ্বাস বাবুর মন টা বেশ খুশি খুশি লাগছে। লকডাউনের ঠেলায় শরীর টাও লকডাউন হয়ে গেছিল।আজ যেন একটু মুক্তির স্বাদ পাচ্ছে। বউকে চেঁচিয়ে বললেন – ‘আমি বেরোলাম।’
অফিস পৌঁছে বিশ্বাস বাবুর তো ভ্যাবাচ্যাকা অবস্থা। সব কেমন যেন অচেনা অচেনা লাগছে।তার সিট টা কোথায় ছিলো সেটাই মনে করতে পারছেন না। মস্তিস্কের অনেক কসরত করে শেষমেশ মনে করতে পারলেন তার সিট কোনটা।
সিটে বসে দারোয়ান কে চা আনতে বললেন।
একটু পরে দারোয়ান সেলাম করে চা দিয়ে গেল।
চায়ে চুমুক দিয়ে উনি একটা আরামের নিঃস্বাস ছাড়লেন- ‘আঃ, কতদিন পর অন্যের তৈরিকরা চা খেতে পাচ্ছি। এতদিন তো রোজ চা করে খাওয়াতে হয়েছে। আঃ, কি শান্তি।’
বস চেঁচিয়ে বললেন – “বিশ্বাসবাবু একটু আমার কেবিনে আসবেন।”
বিশ্বাসবাবু শুনতেই পেলেন না। তিনি তখন মৌজ করে চায়ের আমেজ নিচ্ছেন। মন তার উড়ে গেছে।
বস এবার বিশ্বাস বাবুর চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে ডাকলেন ” বিশ্বাস বাবু কোন দুনিয়ায় আছেন?”
বিশ্বাস বাবু মেয়েদের মত কোমল স্বরে বললেন “হ্যাঁ বলো, এই চা টা খেয়েই রান্না বসাতে যাচ্ছি।বাসন গুলোও মেজে ফেলবো,তুমি চিন্তা করোনা।”
” বিশ্বাস বাবু! কি যা তা বলছেন? আমি এতক্ষণ ধরে আপনাকে কি বলছি আর আপনি তার কি উত্তর দিচ্ছেন? রান্না! বাসন! এসব অফিসে পেলেন কোথায়?”
বিশ্বাস বাবু কান ধরে জিভ কেটে “সরি স্যার আমায় ক্ষমা করে দিন বড্ড ভুল হয়ে গেছে।এই লকডাউন টাই যত নষ্টের গোড়া। আর হবেনা স্যার এবারের মত ক্ষমা করেদিন।” বলে বসের হাতে পায়ে ধরার অবস্থা।
বস চলে যেতেই আশপাশের চেয়ার থেকে নানা রকম মন্তব্য উড়ে আসতে থাকলো, সঙ্গে ঠাট্টা টিটকারি কিছুই বাদ গেলোনা।
বিশ্বাস বাবু মনে মনে ভাবছেন কি কুক্ষনে যে চা টা অতো তারিয়ে খেতে গেলাম..
অফিসে এখন টিফিন ব্রেক চলছে। টিফিন খেয়ে বিশ্বাস বাবু সিটে এসে বসেছেন। একটা হাই তুললেন হা.. করে। মনে মনে তাকে এখন ঘরের বিছানা টা ডাকছে। আহা কি সুখের দিন ছিল এই লকডাউনের কয়েক মাস খেয়ে দেয়ে লম্বা টানা ঘুম; দূর অফিস টফিস আর ভাল্লাগে না। সরকার তো আরো কিছুদিন অফিস ছুটির নোটিস দিতে পারতো না কি! কি সুন্দর বাড়ি বসে মাইনে টাও পাচ্ছিলাম, দুপুরে ভাত ঘুম টাও হচ্ছিল; তা না এখন বসে বসে মুখ গুঁজে ফাইল দেখো।
পাশের সিট থেকে তনিমা একটু হেসে জিজ্ঞেস করল – “কি বিশ্বাস বাবু ; বউ ভালোমন্দ রেঁধে খাইয়ে অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে? খেয়েদেয়েই ঘুম পাচ্ছে? তা আর কি করবেন বলুনঃ অফিস টা তো খুলে গেছে। দেখুন বসের কাছে আবেদন করে দুপুরে এক ঘন্টা ঘুমের পারমিশন স্যাংশন হয় কিনা!
বিশ্বাস বাবু দাঁত কিড়মিড় করে মনে মনে বললেন এই সব মহিলাদের দেখলে গা জ্বলে যায়। বাড়িতে বর গুলোকে গাঁধার মত খাটাবে আর অফিসে এসে লেকচার দেবে! অবশ্য মুখে হাসি এঁটে বললেন ” তা যা বলেছেন। আমার বউ সত্যিই খুব লক্ষ্মীমন্ত। রোজ ভালো ভালো রান্না করে খাইয়ে আমার অভ্যাস খারাপ করে দিয়েছে। আর কাজ তো একটুও করতে হতনা; শুধু এই ক মাস শুয়ে বসে কাটিয়েছি। আপনিও তো দাদা কে অনেক ভালোমন্দ রেঁধে খাইয়েছেন বলুন? দাদাও তো এই ক মাস শুয়ে বসেই কাটিয়েছে।দাদারও কিন্তু অফিস গিয়ে খুব অসুবিধা হবে, এই ঠিক আমার মতো। সত্যি আপনাদের মত সহধর্মিণী না থাকলে আমাদের যে কি হত?
তনিমা চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বলল “আরে না না, আমি তো এই ক মাস কমপ্লিট রেস্ট করেছি। ঘরের সব কাজ আমার হাসব্যান্ড সামলেছে। ও তো আমাকে কোনো কাজ করতেই দিতনা, ঘর মোছা, বাসন মজা, রান্না করা, সব একা হাতে সামলেছে। ও তো সব সময় বলে তুমি কাজ করতে পারবেনা। এসব কি তুমি কখনো করেছো? আর এই সময় তো কাজের লোক ও ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।কি করবো বলুন।আমি তো ঘরের কোনো কাজ ই পারিনা। (একটু লজ্জা পেয়ে) আর ও তো আমাকে খুব ভালোবাসে আমাকে ও বলে তুমি কাজ করলে তোমার রং কালো হয়ে যাবে, চেহারা খারাপ হয়ে যাবে, তাই সব কাজ ও একা হাতে করত।
বিশ্বাস বাবু তনিমার কথা শুনে মনে একটু বল পেলেন, এই ভেবে, এই দুনিয়ায় তিনিই একা নন তার দোসর আছে।
(কপালে দু হাত জোড় করে) মুখে বললেন – “সত্যি আপনাদের তুলনা নেই। মহামায়ার অংশ আপনারা। আপনাদের মায়া তেই তো এই বিশ্ব জগৎ চলছে। এই জন্যই স্বয়ং মহাদেবও দেবীর পদতলে। আপনাদের ভালোবেসে আমরা ধন্য। জয় হোক সকল নারী কুলের”
মনে মনে বললেন- ওগো বধূ সুন্দরী!!