আমি যে এক খুব সাধারণ পুরুষ।
বলতে গেলে প্রেম পিরীতে
পুরোই কাপুরুষ!
সকল কথাই সত্যি ধরি
সবাইকেই আপন আদর
আপন করে নিই –
হয়তো কথা হালকাছলে
পাড়লে তুমি যেই সকালে
আমি ভাবি সত্যি বটে!,
তাইতো আমার মন পোড়ালে!
আমায় তুমি চিনবে কিরূপ?
আমার পোড়াকপাল এযে !
শোনো গো তবে!
দমকা হাওয়ার হঠাৎ ঝড়ে
পূব বাগানের আমের পাতা
পড়লো তোমার শয়নঘরে।
তখন তুমি নিদ্রামগন
ছিলে আপন স্বপনভরে!
হঠাৎ পাতার পরশ পেয়ে
চমকে জেগে ভাবলে কি তা?
ঘুমপুরীর ওই স্বপনকুমার
পাঠালো তার প্রেমচিরকূট আলসভরে!
বারান্দাতে দৌড়ে এসে
দেখলে সে এক দেহাতী মালী
কতক বালিকাসাথ জুটে
খেলছে এক্কা দোক্কা খালি
হয়ে যে পুরো বেসামালই!
তুমি তখন থমকে গিয়ে
বললে – ” তবে আমিও খেলি?”
মালী তখন বললো “মামন
তবে যে হও আদুল গায়ে ভূষণহীনা! “
লাগলো তখন শিহর তোমার মনে!
শঙ্কা যত ছিলো তোমার
উড়িয়ে দিলে,গুঁড়িয়ে দিলে
একলহমায় ছোট্টবেলা
সে মালী কি ফিরিয়ে দিলে?
মালির বাগান মালঞ্চতে
অনেক সে ফুল
নেই কোন ভুল।
তুমি যেন একলহমায়
সেই মালিকে জড়িয়ে নিলে
আপন অহঙ্কারের আবরণ সরিয়ে
অলঙ্কারে!
তোমার সোনার কুন্দকলি,
কর্ণমূলের দিলে ঠেলে!
মাথের কুরুবক সে তুমি দিলেই খুলে!
বাজুবন্ধের সোনার শেকল
সোনার নুপুর খুলে দিলে
আপন কণ্ঠহারটিও যে
হলো বটে কোটরগত,
তোমার আপন গোপনপুরে!
মালীর আপন মালঞ্চরই
পুষ্পহারে করলে আপন
কুচযুগ সে প্রষ্ফুটিত!
সকল রকম ফুলসাজে
মালী তোমায় সাজিয়ে দিয়ে –
দিলে আপন পূজার আসন
হেলার ভরে,তোমার তরে!
ভুললে সে তার পরম আপন
গোপালটিরেও, বীর হনুমান –
যাদের পূজা দেবার লাগি
মূর্তি কেনে, বুকটি চিরে!
চললো এমন লীলাখেলা
দিনভর সে।
তারই মাঝে হঠাৎ যেন
সূর্য গেল অস্তাচলে!
বসন্ত সে কচি পাতায়
হিমেল হাওয়ার শিরশিরানি!
ঠাণ্ডা বাতাস হঠাৎ যেন
সম্বিৎ সে ফিরিয়ে দিলে!
সঙ্কা, সাথে লজ্জা এলো!
তাড়াতাড়ি নিরাবরণ অাভরণটি
জড়িয়ে দিলো!
দৌড়ে তুমি ফিরলে ঘরে –
কেউ কি তবে দেখে নিলো?
চিনেই নিলো?
কিন্তু না! যাক কেউ দেখে নি
কেউ চেনেনি, তাইতো মনে
শান্তি এলো!
এরূপ চলে মাসকালবৎ
বসন্ত সে ধীরে গো তার রূপ
বাড়ালো!
ঋতুরাজের পরশ যেন
তোমায় আশীষ ঠিক পাঠিয়ে
ঋতুমতী ফল ফলালো!
তারপরেতে হঠাৎ তোমার
কারন বিনাই শুরুর মতন
এমন খেলা বন্ধ হলো!
সেই বাগানে অনেক ফুলের
একে একে সব শুকালো!
এদিকে সব ফলের বাগান
নিরস হয়ে শুকিয়ে মলো।
তার মামনি আর আসেনা –
মালীটা যে রোজ গো তাকায়
বাতায়নে – ওপর ঘরের !
কিন্তু সে তো আর খোলেনা!
কি হলো তার সেই মামনির?
খিলখিলিয়ে হেসে তার এই
বাগানখানির ভরতো আলো?
আজকে সেথা মেঘ জমে হায়
কেবল কালো?
হঠাৎ কেন পেয়াদা এসে
বন্দী করে এই মালীকে
কারাগারে?
মালীর ওপর রাজার আদেশ
মালী তখন নিক্ষেপিত
রাজকারাগার – পাতালে শেষ!
হায় গো বিধি এ কার সে দায়
তুলে নিলো নিজের কাঁধে
দেহাতী মালী?
এদিকে যে স্বপনকুমার,
ফাঁকি দিয়ে
তার মামনিরই মনের বাগান
লুটেই নিয়ে
আপন সে ভ্রুণ পুঁতে কোথায়
পালিয়ে গেলো?
আর সেই অছিলায় দেহাতী মালীর
শাস্তি হলো, যা সে আপন
নিয়ত্ বলেই
গ্রহণ বটে করেছিলো!
সত্যি বলো এই মালী কী
তিরিশটি ওই বসন্তেরই পূর্বে
এমন বৃদ্ধ ছিলো?
স্বপনপুরের রাজারকুমার
আর মামনির গল্প মাঝে
এক দেহাতী মালী তো হায়
বলতে গেলে খল হয়ে আজ
রয়েই গেলো!
সেই মালী আজ বৃদ্ধ বটে
তোমরা বলো!
পরিস্থিতির সবাই কেমন
সুযোগ নিলো?
আজকের এই বৃদ্ধ মালীর
দোষ কী ছিলো?
হয়তো অসম প্রেমকে নিয়ে
কারান্ধকার চিন্তা নিয়ে
বৃদ্ধ শেষের দিন কাটালো!