Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » অতীতের ছবি – পর্ব ৩ || Atiter Chhobi-3 by Sukumar Ray

অতীতের ছবি – পর্ব ৩ || Atiter Chhobi-3 by Sukumar Ray

এখনও গভীর তমসা রাতি,
ভারত ভবনে নিভিছে বাতি –
মানুষ না দেখি ভারতভূমে,
সবাই মগন গভীর ঘুমে।
কত জাতি আজ হেলার ভরে
হেথায় আসিয়া বসতি করে।
ভারতের বুকে নিশান গাথি
বসেছে সবলে আসন পাতি।
নিজ ধনমান নিজ বিভব
বিদেশীর হাতে সঁপিয়া সব,
ভারতের মুখে না ফুটে বাণী,
মৌন রহে দেশ শরম মানি। –
হেনকালে শুন ভেদি আঁধার
সুগম্ভীর বানী উঠিল কার-
“ভাব সেই এক ভাবহ তারে,
জলে স্থলে শুন্যে হেরিছ যারে
নিয়ত যাহার স্বরূপ ধ্যানে
দিব্য জ্ঞান জাগে মানব প্রাণে।
ছাড় তুচ্ছ পূজা জড় সাধন,
মিথ্যা দেবসেবা ছাড়া এখন,
বেদান্তের বাণী স্মরণ কর,
ব্রহ্মজ্ঞান-শিখা হৃদয়ে ধর
সত্য মিথ্যা দেখে করি বিচার
খুলি দাও যত মনের দ্বার ।
মানুষের মত স্বাধীন প্রাণ
নির্ভয়ে তাকাও জগত পানে-
দিকে দিকে দেখ ঘুচিছে রাতি,
দিকে দিকে জাগে কত না জাতি;
দিকে দিকে লোক সাধনারত
জ্ঞানের ভান্ডার খুলেছে কত।
নাহি কি তোমার জ্ঞানের খনি ?
বেদান্ত রতন মুকুটমণি?
অসারে মজে কি ভুলেছ তুমি-
ধর্মে গরীয়ান ভারতভুমি?”
-শুনি মৃতদেশ পরান পায়,
বিস্ময়ে মানুষ ফিরিয়া চায়।
দেখে দিব্যরূপ পুরুষ বরে
কান্তি তেজোময় নয়ন হরে,
গবল শরীর সুঠাম অতি,
ললাট প্রসর, নয়নে জ্যোতি,
গম্ভীর স্বভাব, বচন ধীর,
সত্যের সংগ্রামে অজেয় বীর;
অতুল প্রখর প্রতিভা ধরে
নানা শাস্ত্র ভাষা বিচার করে।
রামমোহনের জীবন স্মরি,
কৃতজ্ঞতা ভরে প্রনাম করি।
দেশের দুর্গতি সকলখানে
হেরিয়া বাজিল রাজার প্রাণে ।
কত অসহায় অবোধ নারী
সতীত্বের নামে সকল ছাড়ি,
কেহ স্ব-ইচছায়, কেহবা ভয়ে,
শাসনে তাড়নে পিষিত হয়ে,
পতির চিতায় পুড়িয়া মরে-
শুনি কাদে প্রাণ তাদের তরে ।
নারীদুঃখ নাশ করিল পণ,
ঘুচিল নারীর সহমরণ ।
নিষ্কাম করম- যোগীর মত
দেশের কল্যাণ সাধনে রত,
নানা শাস্ত্রবাণী করে চয়ন,
দেশ দেশান্তের ঋষিবচন;
পশ্চিমের নব জ্ঞানের বাণী
দেশের সমুখে ধরিল আনি।
কিরূপেতে পুন এ ভারতভবে
ব্রহ্মজ্ঞান কথা প্রচার হবে,
নিয়ত যতন তাহারি তরে,
কত শ্রম কত প্রয়াস করে ;
তর্ক আলোচনা কত বিচার
কত গ্রন্থ রচি’ করে প্রচার;
-ক্রমে বিনাশিতে জড় ধরম
‘ব্রহ্ম সমাজে’র হল জনম ।
শুনে দেশবাসি নুতন কথা,
মূরতিবিহীন পুজার প্রথা
উপাসনা-গৃহ দেখে নতুন-
যেথায় স্বদেশী বিদেশী জন
শুদ্র দ্বিজ আদি মিলিয়া সবে
নির্বিচারে সদা আসন লাভে।
মহাপুরুষের বিপুল শ্রমে
দেশে যুগান্তর আসিল ক্রমে।
স্বদেশের তার আকুল প্রাণ
প্রবাসেতে রাজা করে প্রয়ান;
সেথায় সুদুর বিলাতে হায়
অকালেতে রাজা ত্যজিল কায়।
অসমাপ্ত কাজ রহিল পড়ে,
ফিরে যায় লোকে নিরাশা ভরে;
একে একে সব যেতেছে চলে-
ভাসে রামচন্দ্র নয়নজলে।
রাজার জীবন নিয়ত স্মরি’
উপাসনা গৃহে রহে সে পড়ি,
নিয়ম ধরিয়া পূজার কালে
নিষ্ঠাভাবে সেথা প্রদীপ জ্বালে।
একা বসি ভাবে রাজার কাজ
এমন দুর্দিনে কে লবে আজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress