Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মুরগিখেকো মামদো || Syed Mustafa Siraj

মুরগিখেকো মামদো || Syed Mustafa Siraj

মুরগিখেকো মামদো

টিমামার সঙ্গে কোথাও গিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাত্তির হলেই ভূতের পাল্লায় হাপড়াটা যেন অনিবার্য। তাই সেবার পাশের গায়ে ঝুলনপুর্ণিমার রাসের মেলায় যাওয়ার জন্য ছোটমামা আমাকে খুব সাধাসাধি করলেও বেঁকে দাঁড়ালুম।

ছোটমামা আমাকে কলকাতায় যাত্রা, সার্কাসের বাঘ, সিংহ, প্রোফেসর ফুং চু র ম্যাজিক আর নররাক্ষসের আস্ত মুরগিভক্ষণের অনেক সব রোমাঞ্চকর গল্প শোনালেন। তবু আমি গো ধরে রইলুম। বললুম, আমি কিছুতেই যাচ্ছি না ছোটমামা! আপনার যদি অত ইচ্ছে, আপনি একাই যান।

ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে ছোটমামা বললেন, প্রবলেম কী জানিস পুঁটু? কথায় বলে, একা না থোক। একা হলেই মানুষ কেন যেন বোকা মনে যায়। কিন্তু তুই কেন যেতে চাচ্ছিস না খুলে বল্ তো শুনি?

অগত্যা বললুম,–আমার ভয় করে।

–ভয়? কীসের ভয়?

–ভূতের।

ছোটমামা খুব অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললেন,-তুই কী বলছিস পুঁটু? ভূতকে তুই ভয় পাস? তুই এত বোকা তা তো জানতুম না। ছ-ছা। ভূতকে তুই ভয় পাবি কী, ভূতই তো তোকে ভয় পাবে। ওরে বোকা! ভূতেরা মানুষকে ভয় পায় বলেই তো নিরিবিলি জায়গায় লুকিয়ে থাকে। তুই কি ভেবে দেখেছিস, কেন ভূতেরা পারতপক্ষে দিনের বেলা বেরোয় না? বেরুলেই যে মানুষের সামনে পড়ে যাবে। তাই ওরা রাতবিরেতে বেরোয়। হ্যাঁ, ঠিক দুকুরবেলা, ভূতে মারে ঢেলা। তার মানে, দুপুরবেলায় ভূতেরা টুপটুপ করে ঢিল ছোড়ে বটে, কিন্তু সামনে আসে না। গাছপালার আড়াল থেকেই ঢিলগুলো ছোড়ে। তাহলে ভেবে দ্যাখ–

ছোটমামার কথার ওপর বলে দিলুম,–ও আপনি যতই বলুন, আমি যাচ্ছি না।

হঠাৎ ছোটমামা উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ঠিক আছে! আয় আমরা মোনাদার বাড়ি যাই।

এতে অবিশ্যি আপত্তি করলুম না। ছোটমামার মোনাদা হল মোনা-ওঝা। কেউ-কেউ তাকে মোনা বুজরুকও বলে। সে থাকে আমাদের গাঁয়ের শেষদিকটায় গঙ্গার ধারে পুরোনো শিবমন্দিরের কাছে। মাথায় সাধুবাবাদের মতো চুড়োবাঁধা জটা। মুখভর্তি গোঁফ-দাড়ি। কপালে লাল তিলক, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। বাঁ-হাতের কবজিতে একটা তামার বালাও দেখেছি। সবসময় গাঁজা-ভাঙের নেশায় তার চোখদুটো টকটকে লাল হয়ে থাকে।

কিন্তু চেহারা যতই ভয় জাগানো হোক, স্বভাব বেশ অমায়িক আর হাসিখুশি মানুষ মোনা। ওপর পাটির দুটো দাঁত নেই বলেই যেন তার হাসি দেখলে হাসি পায়।

মোনা-ওঝা থাকে মন্দিরের পেছনে একটা ভাঙাচোরা ঘরে। সেখানে একটা প্রকাণ্ড বটগাছ আছে। নিরিবিলি সুনসান জায়গা। নেহাত সময়টা বিকেল। তা না হলে ছোটমামার সঙ্গে এমন জায়গায় কিছুতেই আসতুম না।

ছোটমামা ডাকলেন,–মোনাদা আছে নাকি? ও মোনাদা!

মোনা ওঝা বটগাছের দিক থেকে সাড়া দিল,–কে ডাকে গো এমন অবেলায়?

ছোটমামা মুখে রহস্য ফুটিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চাপাস্বরে বললেন, গোপনে তন্ত্রসাধনা করছে, বুঝলি পুঁটু? ওকে এ সময় ডিসটার্ব করাটা রিস্কি।

কিন্তু তখনই বটগাছের আড়াল থেকে মোনা-ওঝা বেরুল। তার হাতে একটা মড়ার খুলি দেখে এবার বুকটা ধড়াস করে উঠল। ছোটমামা কাচুমাচু মুখে বললেন,-কিছু মনে কোরো না মোনাদা। এই পুঁটুটার জন্য তোমার কাছে আসতে হল।

মোনা ওঝা আমার দিকে লাল চোখে তাকিয়েই ফিক করে হাসল। অমনি আমার ভয়টা কেটে গেল। ওপর পাটির দুটো দাঁত না থাকায় তার হাসিটা সত্যিই হাসিয়ে ছাড়ে। ছোটমামা আমাকে ইশারায় হাসতে বারণ করলে কী হবে?

মোনা-ওঝা বলল, ব্যস। ব্যস! পুটুবাবুর ওপর যে পেতনিটার নজর লেগেছিল, সে পালিয়ে গেল। ওই দ্যাখো, যাচ্ছে। সে মড়ার খুলিসুদ্ধ হাতটা তুলে দূরে স্কুলবাড়ির দিকটা দেখাল। পেতনিটা থাকে ইস্কুলের পেছনে ওই তালগাছের ডগায়। দ্যাখো, তালপাতাগুলো কেমন নড়ছে। দেখতে পাচ্ছ তো?

আমি তেমন কিছু দেখতে পেলুম না। কিন্তু ছোটমামা দেখে নিয়ে বললেন, হুঁ, নড়ছে বটে। তবে মোনাদা, এর একটা স্থায়ী প্রতিকার করো। পেতনিটার নজর লাগার জন্যই পুঁটু রাতবিরেতে বড্ড ভয় পায়।

মোনা-ওঝা বলল,-একটাকা দক্ষিণে লাগবে ছোটবাবু।

পকেট থেকে একটা টাকা বের করে ছোটমামা বললেন,–এই নাও। কিন্তু মোনাদা, একেবারে স্থায়ী প্রতিকার চাই। পুঁটু যেন আর রাতবিরেতে আমার সঙ্গে বেরিয়ে একটুও ভয় না পায়।

টাকাটা নিয়ে চুড়োবাঁধা জটার ভেতর খুঁজে মোনা-ওঝা বলল,–তাহলে বরঞ্চ তুমিই এই মন্তরটা শিখে নাও ছোটবাবু! ও ছোট ছেলে। ঠিকমতো মন্তরটা বলতে না পারলেই কেলেঙ্কারি। নাও, মুখস্থ করো?

ভূত-পেতনি ভুতুম
দেখাং যদি পেতুম
ধরেং ধরেং খেতুম।

ছোটমামা মরটা আওড়ালেন। বারকতক ট্রেনিংয়ের পর মোনা-ওঝা বলল, ব্যস! ব্যস্! ঠিক আছে। এবার যেখানে ইচ্ছে যত রাত্তির হোক ঘোয়রা। পুঁটুবাবু। নির্ভয়ে চলে যাও মামাবাবুর সঙ্গে। যেখানে খুশি, যখন খুশি। সন্ধে হোক কী নিশুতি, শ্মশান কী মশান, বনবাদাড় কী পাহাড়-পর্বত, মাঠ কী ঘাট, নদী কী বিল কঁহা হা মুল্লুক বুক ফুলিয়ে ঘোয়রা!

শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন বৃষ্টিবাদলা হওয়াই নাকি নিয়ম। এবারকার দিনটিতে সন্ধ্যা অবধি তেমন কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। আকাশ ছিল সাফসুতরো ঝকঝকে নীল। তাই রাসের মেলায় ভিড় জমেছিল বড় বেশি। কলকাতার যাত্রা শেষ হতে রাত নটা বেজে গেল। আকাশে তখন ঝলমলে নিখুঁত গোল চাঁদ। আমরা ঢুকলাম নররাক্ষসের তাবুতে জ্যান্ত মুরগিভক্ষণ দেখতে। কারণ সার্কাস আর ম্যাজিক দুই তাঁবুতেই নাইট শোয়ের টিকিট কাটার কিউটা বেজায় লম্বা।

কিন্তু ভয়ংকর চেহারার নররাক্ষস যেই হউ হউ মাউ মাউ বিকট গর্জন করে মুরগির খাঁচা খুলতে গেছে, অমনি কড় কড় কড়াৎ করে বাজ পড়ার শব্দ কানে তালা ধরিয়ে দিল। নররাক্ষস আচমকা হকচকিয়ে গিয়েছিল হয়তো। তা না হলে ওর হাতছাড়া হয়ে মুরগিটা দর্শকের ভিড়ে এসে পড়বে কেন?

তারপর শুরু হয়ে গেল একটা হই-হট্টগোল। লোকের গায়ের ওপর জ্যান্ত মুরগি পড়াটা খুব অস্বস্তিকর ব্যাপার। সেই সঙ্গে ভাবুটাও দমকা বাতাস আর বৃষ্টির দাপটে প্রায় ছিঁড়ে পড়ার অবস্থা। সবাই প্রাণ এবং মাথা বাঁচাতে তাঁবু ফদাই করে বেরুতে থাকল। আবার বাজ পড়ার শব্দ এবং চোখ ধাঁধানো আলো। ছোটমামাকে জড়িয়ে ধরেছিলুম ভাগ্যিস। নইলে এই হুলুস্থূলের ভেতর যে তার আর পাত্তা পাওয়া যেতে না, সেটা আমি ভালোই জানি। টের পেলুম, ছোটমামা সামনে কোনও জিনিসে ঢুঁ দেওয়ার পর সেখানটা ফাঁক হল। তখন বেরিয়ে পড়লেন। আমিও ওঁর প্যান্টের বেল্ট আঁকড়ে ধরে বাইরে চলে গেলুম।

ঝোড়োহাওয়া আর বৃষ্টিতে মেলার আলোগুলো দুলছিল। হঠাৎ একসঙ্গে সবগুলো নিভে গেল। গত গাজনের মেলাতেও এমনটি হয়েছিল। প্রাকৃতিক বিদ্যুতের ঝিলিকে চারদিকে মানুষজনকে ছোটাছুটি করে বেড়াতে দেখলুম। ছোটমামা বললেন, ট্রান্সফরমারে বাজ পড়েছে মনে হচ্ছে। চল পুটু, আমরা বরং গাঁয়ের ভেতরে কোনও বাড়িতে আশ্রয় নিই। বড্ড বেশি ভিজে যাচ্ছি।

মেলা বসেছিল গাঁয়ের বাইরে খেলার মাঠে। পিচরাস্তা ডিঙিয়ে গিয়ে সামনে একটা বাড়ির বারান্দা দেখতে পেলুম। বারান্দায় উঠে এতক্ষণে ছোটমামার বেল্ট ছেড়ে দিলুম। তারপরই সেই আবছা আঁধারে কোঁক্টো শব্দ শুনে চমকে উঠলুম–ও কীসের শব্দ ছোটমামা?

ছোটমামা খিকখিক করে হেসে বললেন,–সেই নররাক্ষসের মুরগিটা। বুঝলি পুঁটু? ওটা ধরে এনেছি।

আঁতকে উঠে বললাম, ও ছোটমামা!নররাক্ষসটা যদি মুরগির খোঁজে এখানে চলে আসে?

আসবে না বলে ছোটমামা মুরগিটার পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে চুপ করাতে ব্যস্ত হলেন।

আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। বললুম, না ছোটমামা। মুরগিটা ছেড়ে দিন। একবার যখন প্রাণে বেঁচে গেছে, একে বাঁচিয়ে রাখাই উচিত।

ছোটমামা গদগদভাবে বললেন, বুঝতে চেষ্টা কর পুঁটু! মুরগিটা ডিম পাড়বে। একগাদা ছানা হবে। সেগুলো বড় হয়ে ডিম পাড়বে। এমনি করে রীতিমতো একটা পোলট্রি হয়ে যাবে। তাই না? একেই বলে বিনি ক্যাপিট্যালে বিজনেস! আমরা বিজনেসম্যান হব। বুঝলি তো?

ডবুঝলুম বটে, কিন্তু অস্বস্তিটা গেল না। খালি মনে হচ্ছিল, নররাক্ষসটা যদি মুরগির গন্ধে-গন্ধে এখানে এসে পড়ে, মোনা-ওঝার মন্তর দিয়ে কি ওকে ঠেকানো যাবে? ও তো ভূত নয়, রাক্ষস।

কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থেমে গেল। আকাশ পরিষ্কার হয়ে আবার পূর্ণিমার জ্যোৎস্না ফুটল। আমরা বাড়ির পথ ধরলুম। খোয়া-বিছানো পথ বলে কাদা নেই। ছোটমামা মুরগিটা বুকের কাছে যত্ন করে ধরে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে চলেছেন। খোলামেলা মাঠের মাঝামাঝি একটা খালপোল। সেখানে কালো হয়ে কে দাঁড়িয়ে আছে দেখে চাপাস্বরে বললুম,–ও ছোটমামা! সেই নররাক্ষসটা নয়তো?

ছোটমামা থমকে দাঁড়িয়ে গিয়ে চ্যালেঞ্জের ভঙ্গিতে বললেন, কে ওখানে?

পাল্টা চ্যালেঞ্জ শোনা গেল,–তোমরাই বা কে হে?

ছোটমামা খাপ্পা হয়ে বললেন,–আমরা যেই হই। তুমি ভূতের মতো ওখানে দাঁড়িয়ে কী করছ?

–কী বললে? কী বললে? ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছি?

–হ্যাঁ। তাই তো আছে।

–আমি ভূতের মতো দাঁড়িয়ে আছি? মানে, তুমি মতো বলছ?

–মতো বলছি ভদ্রতা করে। নইলে—

কালো মূর্তিটা ছোটমামার কথার ওপর বলে উঠল, নইলে?

–নইলে ভূতই বলতুম।

–যাকগে! ভদ্রতার দরকার নেই। তুমি তা-ই বলো। মতো শুনে-শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেল। মতো কেন বলবে? মানুষকে মানুষের মতো বলাটা অপমান নয়? যে যা, তাকে তাই বলা উচিত।

ছোটমামা হেসে ফেললেন। বাব্বা! তুমি কি ভূত নাকি যে ভূত বলব?

–একশোবার বলবে।

–কী আশ্চর্য! তুমি ভূত?

–সেন্ট পারসেন্ট। একেবারে বিশুদ্ধ খাঁটি ভূত।

ছোটমামার মেজাজ এই ভালো, এই খারাপ। ফের রেগে গিয়ে বললেন, তুমি যদি খাঁটি ভূত, তাহলে প্রমাণ দাও।

–কী প্রমাণ চাও বলো!

–তুমি অদৃশ্য হও।

সেটাই তো হয়েছে প্রবলেম রে ভাই!–ভূতের দীর্ঘশ্বাস পড়ল।

ছোটমামা বললেন, কী প্রবলেম?

–অদৃশ্য হতে পারছি না। মাঝে-মাঝে এটা হয়, বুঝেছ? আসলে টাটকা ভূত তো। তাই অনেক কষ্ট করে যদি বা রূপ ধরতে পারি, ঝটপট অদৃশ্য হতে পারিনে। ট্রেনিংয়ের জন্য টিচার খুঁজে বেড়াচ্ছি। পাচ্ছিনে। শুনেছিলুম, এই খালপোলে এক মামদো থাকে। সে নাকি উইকের জ্বাশকোর্সে ঝটপট ভ্যানিশ হওয়া শেখায়। কিন্তু কোথায় সে? তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।

ছোটমামার গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে ছিলুম। ফিসফিস করে বললুম,–সেই মন্তরটা, ছোটমামা!

ছোটমামা নিশ্চয় ভুলে গিয়েছিলেন। বললেন,-হ্যাঁ, শোনো হে ভূতচন্দর! তোমাকে এক্ষুনি ভ্যানিশ করে দিচ্ছি।

ভূত পেতনি ভুতুম
দেখাং যদি পেতুম।
ধরেং ধরেং খেতুম।

ভূতটা অমনি ডিগবাজি খেতে-খেতে অদৃশ্য হয়ে গেল। ছোটমামা খিকখিক করে খুব হেসে বললেন,–আয় পুঁটু! বলেছিলুম না মোনাদার ক্ষমতার তুলনা হয় না?

সেই সময় খালপোলের নিচের দিক থেকে কেউ হেঁড়ে গলায় বলে উঠল, কী হে ছোকরা, আমার হবু-ট্রেনিকে ভাগিয়ে দিলে? কবরখানায় ট্রেনিং দিয়ে এসে সবে দুমুঠো খেতে আসছি, আর তুমি কিনা–রোসো! দেখাচ্ছি মজা!

খালপোলের ও-মাথায় আবার একটা কালো মূর্তি দেখা গেল। এই মূর্তিটা বেশ মোটাসোটা। ছোটমামা সেই মন্তরটা পড়তে যাচ্ছেন, সে খ্যাখ্যা করে অদ্ভুত হেসে বলল,–মোনা-বুজরুকের মন্তরে কাজ হবে না হে ছোকরা। আমি যে-সে ভূত নই, মামদো!

ছোটমামা খুব হাঁকডাক করে মন্তরটা আওড়ালেন। কিন্তু মামদোর কিছু হল না। সে তেমনি খ্যাখ্যা করে হাসতে থাকল! তখন ফিসফিস করে বললুম,–ছোটমামা! ওকে বরং মুরগিটা দিয়ে দিন।

ছোটমামা চটে গিয়ে বললেন,–দিচ্ছি মুরগি!

মামদোর কানে যেতেই সে কয়েক পা এগিয়ে এল! মুরগি দিচ্ছ তুমি? বাঃ। তুমি তো তাহলে বড় ভালো। দাও, দাও! আহা কতদিন মুরগি খাইনি!

ছোটমামা চ্যাঁচামেচি করে বললেন,–দেব না!

মামদো এক-পা এগিয়ে এল। তারপর লম্ফঝম্প নাচের সঙ্গে ঘ্যানঘেনে গলায় বলতে লাগল,

কেতন রোজ বাদ মুরগা খায়েগা হাম
সুরুয়া পিয়েগা হাম
হাড্ডি খায়েগা হাম।।
কুড়মুড়াকে মুড়মুড়াকে
হাড্ডি খায়েগা হাম!!

নাচের চোটে কাঠের পোল মচমচ করে কাঁপতে থাকল। সে নাচতে নাচতে কাছে আসতেই ছোটমামা মুরগিটা খালের দিকে ছুঁড়ে ফেললেন। কিন্তু কী আশ্চর্য, মুরগিটা কোঁ-কোঁ করতে করতে ডানা মেলে উড়ে গেল।

আমার মামদোও জ্যোত্সাভরা মাঠে মুরগি ধরতে দৌ। ছোটমামা পা বাড়িয়ে বললেন,–পালিয়ে আয়, পুঁটু!

দুজনে দৌড়তে শুরু করলুম। অনেকটা দৌড়নোর পর থেমে গিয়ে ছোটমামা বললেন,–মামদো যতই চেষ্টা করুক, নররাক্ষসের মুরগি ধরতে পারবে না। তবে বলা যায় না, এতক্ষণ হয়তো নররাক্ষসও তার মুরগির খোঁজে বেরিয়ে পড়েছে। তা যদি পড়ে, বুঝলি পুঁটু? একখানা দেখবার মতো ডুয়েল হবে বটে। ভাগ্যিস বুদ্ধি করে মুরগিটা ধরে এনেছিলুম। নইলে মামদো আজ কেলেঙ্কারি করে ছাড়ত।

ছোটমামা খিকখিক করে হাসতে লাগলেন। বললুম, আর এখানে নয় ছোটমামা! শিগগির বাড়ি চলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress