নিজের অসুস্থ শরীরটাকে কোনও মতে বিছানা থেকে
সরিয়ে নিয়ে রাখলাম টেবিল-ঘেঁসা চেয়ারে।
টেবিলে গচ্ছিত খাতা আর কলম
তাকাল আমার দিকে। ওদের চোখে জিজ্ঞাসা,-‘ক’দিন
কেন পাইনি তোমার হাতের স্পর্শ? কেন তুমি নিশ্চুপ?’
কলমটিকে হাতে নিয়ে
খেলায় মেতে উঠি। না, শব্দরচনার খেলা নয়, ওকে
স্পর্শের সামান্য উষ্ণতা দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য। কলমের
অভিমান ঝুলেই থাকে ওর মুখমণ্ডলে, খাতা
নিশ্চুপ, শীতল লাশের মতো শুয়ে থাকে এক পাশে।
হঠাৎ একটি ফুটন্ত গোলাপ নর্তকীর ধরনে নাচের মুদ্রা
রচনা করে আমার কানে রাঙা ঠোঁটে
ছুঁইয়ে বলে, ‘কবি, তুমি আমার সঙ্গিনী হারাবার বেদনাকে
প্রস্ফুটিত করো তোমার খাতায়। পাখির কথা ফুরোতেই
একটি ছুটে-আসা নক্ষত্রের রুপালি বায়না
ঝলসে ওঠে, ‘কবি, তুমি আমার স্পন্দিত সৌন্দর্যকে
দীর্ঘজীবী করো তোমার সৃষ্টিতে।
প্রত্যেকের উক্তি আমাকে আন্দোলিত করে, আমি
দুলতে থাকি গোলাপের আনন্দিত নৃত্যের আভায়,
হলদে পাখির বিষণ্নতার ছায়ায়, নক্ষত্রের
সৌন্দর্যের স্পন্দনে! ওদের স্বপ্ন, সাধ
প্রবল আলোড়িত করে আমাকে। জানালার বাইরে
তাকিয়ে আসমানের অপরূপ নগ্নতায়
মিশে যেতে যেতে গোলাপের উচ্ছ্বসিত যৌবন, হলদে পাখির
বিষণ্নতা, নক্ষত্রের স্পন্দিত রূপ আমাকে
অতিশয় চঞ্চল করে। মনে হয়, এই মুহূর্তে
ওদের নিয়ে পৌঁছে যাব কবিতার কাঙ্ক্ষিত ঘাটে।
কে আমার দরজায় এসে দাঁড়ায়? একজন কঙ্কালসার
প্রৌঢ়, পরনে যার ছোঁড়া পিরাণ, ক্ষুধা-জ্বলজ্বলে
দু’টো চোখ, ভয়ানক ক্লিষ্ট অনাহারে,
নিশ্চুপ, অপেক্ষা-কাতর। অসুস্থ আমি
চেয়ার ছেড়ে মানিব্যাগ খুঁজি। দশ টাকার একটি নোট
বের করেই দেখি, সেই নীরব অতিথি উধাও।
তৎক্ষণাৎ কবিতার খাতা টেনে নিয়ে লিখতে
শুরু করি দ্রুত ভূতগ্রস্ততায়। গোলাপ, পাখি, নক্ষত্র
হারিয়ে যায় কোথায়, শুধু নেই হঠাৎ গায়েব-হয়ে যাওয়া
কঙ্কালসার অতিথির উপস্থিতি রূপায়িত খাতার পাতায়।