Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পুতুল পূরাণ || Shamsur Rahman

পুতুল পূরাণ || Shamsur Rahman

পুতুলটি সে, হাল আমলের যুবক, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে
নিছক খেয়ালবশে আনল কিনে। সে বিবাহিত
নয়, ওর ঘর হয় না মুখর কোনো শিশুর
হাসির ঝরণাধারায়। পুতুলটি ওর, যুবকের, হারানো
শৈশবকে আকর্ষণ করে
মধ্যদুপুরে অথবা বিকেল-জেলের জমকালো আলোর জাল
গুটিয়ে নেয়ার মুহূর্তে। পুকুরে মেঘের ছায়া,
জানালা থেকে দেখা
কিছু গাছগাছালি আর গলির মোড়ে আস্তাবলে
ঘোড়ার ঘাসবিচালি,
ভেজা ছোলা খাওয়া, কোচোয়ানের চোখে ঘোড়দৌড়ের
ছবি, জখমি ঘোড়ার পিঠে দীর্ঘ চুল খেলিয়ে
এলিয়ে থাকা হুরীর
থই থই জওয়ানী, নড়বড়ে টুলে বসে
দো-আনির চা খাওয়া, গলির ভেতরে জুয়াড়ির
আসা-যাওয়া-যুবককে
দাঁড় করিয়ে দেয় বাল্যকালের মুখোমুখি। আপাতত
সুখী নয় সে, মাথা রাখে বিষাদের ডালে।

ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে কিনে আনা পুতুল, মানে
একটা মেশিন, ভোরবেলা হঠাৎ
নড়ে ওঠে চমৎকার ভঙ্গিতে, যুবকের ভালো লাগে এই সঙ্গীকে।
মনে হয়, রঙধনু ছড়িয়ে পড়ে
ঘরে, যখন সেই মেশিন ঘুরে বেড়ায় আশেপাশে
দম দেয়া ছাড়াই। ছোট আর রঙিন খেলনার মতো
মেশিনের সঙ্গে তার খেলা, বলা যেতে পারে,
সারাবেলা। মেশিনটাকে বারবার দেখা নানা
কোণ থেকে, একটু স্পর্শ করা
আদর-ঝরানো আঙুলে শিশুর মতো দুলিয়ে দুলিয়ে
ঘুম-পাড়ানো, ছড়া কাটা,
পুতুলকে ঘিরে সাইকেডেলিক ছবি দেখা
হয়ে ওঠে যুবকের নাছোড় নেশা। বস্তুত বিবাহিত
সে এই মেশিনময় প্রহরের সঙ্গে।
খেলাচ্ছলে মেশিনটাকে ফিডিং-বটল দিয়ে সে
দুধ খাওয়ানোর ভান করে
কখনো কখনো, আবার ওষুধও খাইয়ে দেয় ঘনঘোর
বর্ষার দিনে, যেন সর্দিতে
ভুগছে তার পুতুল। মাঝে মধ্যে নৃতত্ত্ব অথবা দর্শনে বই
তুলে দেয় মেশিনের হাতে, জপাতে চেষ্টা করে
মার্কস আর এঙ্গেলস-এর
নাম, পুতুলের মনোরঞ্জনের জন্যে ক্যাসেট প্লেয়ারে
বাজায় পপ গান, বোঝায় পাখি-পড়ার মতো
কেউ টেড হিউজ কে-ইবা টম গান। তারপর নিজেই হেসে ওঠে
ঘর কাঁপিয়ে, বেরিয়ে পড়ে কালো মখমলের জ্যাকেট
চাপিয়ে গায়ে, মধ্যরাতে ফিরে আসে স্খলিত পায়ে।

যুবকের আদর আপ্যায়নে
মেশিন, তার রঙিন খেলনা, পুতুল , বাড়তে থাকে
দৈর্ঘ্যে প্রস্থে দিনের পর দিন
রাতের পর রাত; প্রথমে একটু একটু করে,
পরে লাফিয়ে লাফিয়ে। মেশিনের আকারের
তুলনায় ঘর যেন দেশলাইয়ের বাক্স। অকস্মাৎ ছাদ ফুঁড়ে
বেরিয়ে পড়ে মেশিনের মাথা; হাত
দেয়াল ভেদ করে অশত্থের শাখার মতো
প্রসারিত হয় পৌরপথে। স্তম্ভিত যুবক টিপ করে
মাথা ঠেকায় মাটিতে মেশিন-পুতুলের
উদ্দেশ্যে, যেমন গুহামানব
মাথা নত করত, হতো নতজানু বিশাল কোনো
বৃক্ষ কিংবা পাহাড়ের সামনে। যুবক
তার এই ভয়ংকর পুতুল নিয়ে কী করবে ভেবে পায় না।
এখন মেশিন ওর দিকে তাকায়
একনায়কের দৃষ্টিতে, ভীষণ ধাতব হাতে তুলে নেয়
যুবকটিকে, তারপর শুরু করে অবিরাম লোফালুফি
যেন দক্ষ অ্যাক্রোবেটের
করতলে একটা চাকতি কিংবা বল। একদিন
অমাবস্যা রাতে মেশিন
মুখে পুরে নেয় প্রভু যুবককে, খেলাচ্ছলে
গিলতে থাকে এবং সেই যুবক
মর্মমূল-ছেঁড়া চিৎকার করতে গিয়েও
পারে না, দ্রুত বিলীন হতে থাকে নিঃসীম একাকিত্বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress