১
তোমার চোখের মতো আমি দেখিনি কখনো,
তোমার ঠোঁটের মতো ঠোঁটে ওষ্ঠ করিনি স্থাপন
কোনোদিন, তোমার বুকের পাখি একদা ধ্বনিত এ
জীবনে।
তোমার চুলের মতো চুল কোথাও কি এরকম
ছায়া দেয় ক্লান্তির প্রহরে? মুছে ফেলে হিংস্র
দুঃস্বপ্নগুলোকে?
এই যে কবিতা লিখে সত্যের অধিক সত্য রটিয়ে দিলাম
সারা বাংলাদেশে, তার মর্মকথা তুমিই জানো না।
২
বালিকা-বয়সে তুমি কী রকম ছিলে? বাগানের চারাগাছ
জড়িয়ে কোমল বুকে উঠতে কি দুলে ফুল হওয়ার
আশায়?
অনেক বছর আগে-যখন দোয়েল ছিল হৃদয়ে আমার,
যখন আমার চোখ যৌবনের প্রথম স্বপ্নের আচ্ছন্নতা-
তুমি যে বালিকা বিদ্যালয়ে যেতে হাসিখুশি নীল-শাদা
ফ্রক
পরে, বেণী দুলিয়ে সকালবেলা, আমি ছড়ি হাতে
গোধূলিতে
তার কাছ ঘেঁষে হাঁটি একা মাঝে-মাঝে বৈকালিক ভ্রমণের
অছিলায়, যদি পেয়ে যাই তোমার বালিকা-বয়সের ঘ্রাণ।
৩
একটি সোনালি দিন শুধু দিয়েছিলে উপহার,
কেবল একটি দিন কেটেছিল সান্নিধ্যে তোমার
প্রতিটি মুহূর্ত নেচেছিল, মনে পড়ে, শ্যামা পাখির মতন
নিরিবিলি, একটি সোনালি দিন পথে ঘুরে
লিখেছি কবিতা, প্রিয়তমা, তোমারই উদ্দেশে। যদি
একটি দিনের সঙ্গ কবিতার ইতিহাসে অমরতা পায়,
তা’হলে বলো তো কেন এরকম কার্পণ্য তোমার?
৪
ক’দিন জ্বরের ঘোরে কেটেছে আমার; তুমি এলে
অপরাহ্নে এবং উপেক্ষা করে পরিবেশ আমার উপর ঝুঁকে
ঠোঁটে ঠোঁটে ছোঁয়ালে প্রগাঢ়, স্তনভার
লহমায় দ্রুত করে হৃৎস্পন্দন আমার। কী সহজে
ভুলে গেলে সমাজের বিরূপতা, আমাকে সারিয়ে
তুললে অলৌকিক পথ্যে, তোমার কবোষ্ণ কোলে মাথা
রেখে শুয়ে থাকি আর কখনো তোমাকে, কখনো বা
কবিতাকে দেখে নিই-
ক’দিন জ্বরের পরে এই তো তোমার সঙ্গে স্বপ্নে দেখা
হলো।
৫
এখন ঘুমিয়ে আছো তুমি বৈবাহিক বিছানায়,
মৈথুনের ক্লান্তি কুয়াশার মতো লেগে আছে সারা
শরীরে তোমার, প্রেম জাগে সপ্তর্ষিমন্ডলে আর
আমি দূরে বাংলা কবিতার মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি
এক ঠায়, ঘুম নেই। তোমার নিদ্রার রূপ ভেবে
চতুর্দশপদী লিখি, গোপন ঈর্ষায় জ্ব’লে নিই
প্রতিশোধ নিজেরাই উপর। শোনো, একদিন আমিও
ঘুমিয়ে পড়ব, জাগব না আর, তুমি জেগে থেকো।
৬
ঢাকার সুন্দরীদের খ্যাতি প্রজাপতি হয়ে ওড়ে
বহু ঠোঁটে, লাস্যময়ী রমণীরা সৌন্দর্যের উগ্র ঢেউ
তুলে কূটনৈতিক পার্টিতে কিংবা ফ্যাশন শো-এর
ঝলমলে হলঘরে ঘোরে প্রায়শই। তোমাকে যায় না দেখা
সেখানে কখনো, তুমি আছো খুব নিরালায়
এই শহরের এক কোণে আপন সৌন্দর্য নিয়ে। তোমার
মতন
সুন্দর দেখিনি কাউকেই। অবিশ্বাস্য মনে হ’লে
আমার প্রেমের পদাবলী ভাল ক’রে প’ড়ে দেখো।