Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আপন-পর

দুধ কলা দিয়ে আমরা এতদিন একটা কাল সাপ পুষেছি।আমাদের চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা। আর কোনোদিন ওই কালো মুখ আমাদের দেখাবি না।
একটানা এতো গুলো কথা বলে হাঁফাচ্ছেন দীনবন্ধু রায়। সেই কত বছর আগের কথা, যখন ওনাদের কোনো সন্তান আসছিলো না তখন অনাথআশ্রম থেকে ছোট্ট একটা শিশুকে নিয়ে এসেছিলেন রায় দম্পতি। বড় আদর যত্ন করে ওকে বুকে আঁকড়ে ধরে রায় গিন্নি একটা একটা করে স্বপ্ন সাজাচ্ছিলেন ওকে ঘিরে। আদর করে নাম রেখেছিলেন দুর্লভ। ভালো স্কুলে ভর্তি করে ছিলেন। কোনো দিক থেকেই কোনো ত্রুটি রাখেন নি। দিন গুলো হেসে খেলে ভালোই কেটে যাচ্ছিল।এর মধ্যেই একদিন রায় গিন্নি অনুভব করলেন তার শরীরে নতুন কোনো আগন্তুকের আগমন বার্তা।
খুশিতে ওর মন ভরে উঠলো। এতদিনে ঈশ্বর মুখ তুলে চেয়েছেন। যথা সময়ে তিনি একটা পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। তারপর থেকে তিনি দুর্লভের প্রতি একটু উদাসীন। সবসময় তার সবটা ঘিরে শুধু তার নিজের সন্তান অর্ক। অর্কও বোঝে দাদার থেকে মা ওকেই বেশি ভালোবাসে আর সে সুযোগের সৎব্যবহার করতে ও কখনোই ছাড়ে না। দুর্লভ কিন্তু ভাইকে খুব ভালোবাসে। সে সবসময় ভাইয়ের খেয়াল রাখে। ভাইয়ের কোনো অন্যায় ও নিজের ঘাড়ে নিয়ে ভাইকে বকুনি খাওয়ার হাত থেকে বাঁচায়। কিন্তু তাতে অর্ক যে দাদার প্রতি কৃতজ্ঞ এমনটা নয়। আর হবে নাই বা কেন! রায় গিন্নি তো ছেলের দোষ কখনোই দেখতে পাননা।এমনি করে দুজনেই বড় হয়েছে। দুর্লভ বরাবরই পড়াশোনায় ভালো। সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটা বড় কোম্পানিতে চাকরি করছে। আর অর্ক কলেজে পড়ছে। একদিন অর্ক কলেজ থেকে ফেরার পথে একজন পথচারি কে গাড়ি চাপা দেয়। গুরুতর আহত হয় সেই ব্যক্তি। বেগতিক দেখে অর্ক দাদাকে ফোন করে। দাদা ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে বলে ড্রাইভিং সিটে অর্ক নয় সে ছিল।
পুলিশ দুর্লভকে এরেস্ট করে।খবর পেয়ে দীনবন্ধু বাবু থানায় এসে দুর্লভকে জামিন করিয়ে বাড়ি নিয়ে যান।পথচারি প্রাণে বেঁচে যাওয়ায় দুর্লভ মুক্তি পেয়ে যায়। বাড়ি ফিরে দীনবন্ধু বাবু বলেন
– এতদিন দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছি। তুই আমাদের চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা।ওই কালো মুখ আর কোনোদিন দেখাবি না। দুর্লভ একটা কথারও প্রতিবাদ করে নি। অর্কও একবার বলেনি দোষটা দাদার ছিল না। দোষী সে।
রায় দম্পতি তো ধরেই নিয়েছে তাদের রক্ত এ কাজ করতে পারে না, অতএব সব দোষ দুর্লভের।
দুর্লভ মাথা নিচু করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। কয়েক দিন একটা বন্ধুর বাড়িতে থাকার পর হঠাৎ বিদেশে চাকরির একটা অফার পেয়ে বিদেশ চলে যায়।যাওয়ার সময় খুব ইচ্ছে করছিল যাদেরকে এতদিন বাবা মা বলে জেনে এসেছে তাদের পা ছুয়ে একবার আশীর্বাদ নিতে। কিন্তু তাদের ওই কথাটা কানে বাজছে – “ওই কালো মুখ আর কোনোদিন দেখবি না।” সব ইচ্ছের গলা টিপে দুর্লভ বিদেশ পাড়ি দিলো। কিন্তু সবার অলক্ষে সে নিয়ে এসেছে ওঁদের দুজনের ছবি আর এক মুঠো দেশের মাটি।
এদিকে অর্ক কলেজের পরীক্ষায় ফেল করে মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরেছে। দীনবন্ধু বাবু ছেলেকে ডেকে বললেন
– আমি আর তোমাকে পড়াতে পারবো না।আমি রিটায়ার করেছি সামান্য টাকা পেনশন পাই। তার উপর তোমার দাদাও এখন এখানে থাকে না। ও যতদিন এখানে ছিলো তোমার পড়াশোনার খরচ চালাত।এখন তুমি ফেল করে বসে আছ এখন আর তোমার পড়ার খরচ আমি চালাতে পারবো না, তুমি টিউশনি করে নিজের পড়ার খরচ চালাবে।
অর্ক বাবার কথা শুনে রাগে বাবার সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করে। ওর ব্যবহার দেখে দীনবন্ধু বাবু এই অর্ককে চিনতে পারেন না। স্ত্রী কে বলেন – আমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে। দুর্লভকে আমরা ভুল বুঝেছি।অর্কর সব অন্যায় ও সব সময় নিজের কাঁধে নিয়ে অর্ককে বাঁচিয়ে এসেছে। আজ অর্কর ব্যবহারে আমার ভুল ভাঙলো। ওকে ফিরিয়ে আনতেই হবে। ওর কাছে আমরা ক্ষমা চাইব। আবার সবকিছু নতুন করে শুরু করবো।
দীনবন্ধু বাবু জানতে পারেন দুর্লভ এখন আমেরিকায় থাকে। অনেক কষ্টে ওর ফোন নাম্বার জোগাড় করে ওকে ফোন করেন। দুর্লভ ফোন পেয়ে কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারেনি কান্নায় তার গলা বুজে এসেছে। অনেক কষ্টে অস্ফুটে বলে মা বাবা আমাকে ক্ষমা করো। আমার দেশের মাটিকে আমি কোনদিন ভুলতে পারিনি।শুধু অভিমান করে এখানে স্বেচ্ছানির্বাসন নিয়েছি। দেশ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।দেশের মাটির গন্ধ আমি চোখ বুজলেই নাকে পাই।
তুই ফিরে আয় বাবা আমাদের ক্ষমা করে তুই ফিরে আয়। তোর মা, তোর দেশের মাটি তোর জন্য আঁচল পেতে রেখেছে। তুই ফিরে আয়।
পরদিন দুর্লভ মায়ের টানে, দেশের মাটির টানে, সব অভিমান ভুলে, ফেরার টিকিট কেটে প্লেনে উঠে বসল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *