Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » সাফল্য || Saswati Das

সাফল্য || Saswati Das

সাফল্য

স্টেশনে ট্রেনটা থামতেই সবাই ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিল।কেউ উঠতে ব্যস্ত, কেউ নামতে ব্যস্ত। প্রলয় চুপ করে বার্থে শুয়ে শুয়ে লোকজনের ব্যস্ততা দেখছিল। একজন মোটা লোক একটা ঢাউস সুটকেস নিয়ে প্রলয়ের গায়ের উপর ফেলে দিল। যন্ত্রনায় ওর মুখ থেকে গোঁ গোঁ শব্দ বের হতে লাগলো। প্রলয়ের বউ আলো সেই সময় বাথরুমে গিয়েছিল।এসে দেখে তার স্বামী ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। আর মোটা লোকটা প্রলয়ের উপর হিন্দিতে চোটপাট করছে। আলো লোকটাকে ভাঙা হিন্দিতে বলল “আপ দেখতা নাহি কা হামারা স্বামী উপর মে শুয়ে হায়।ও অসুস্থ হায় আপ উসকা উপর এতো বড় সুটকেস রাখ দিয়া।”
” আমি বুঝিনি উনি ওখানে সুয়ে আছেন।
আমাকে ক্ষমা করে দিন। উনার কি হয়েছে?”
“আপনি বাংলা জানেন! উঃ বাঁচালেন আমি আর হিন্দিতে বলতে পারছিলাম না।”
“হাঁ আমার বাপ দাদা ওনেক দিন বেঙ্গলে আছেন। তাই আমিও বংলাটা বলতে সিখে গেছি।”
“ও তাই বলুন! হ্যাঁ ওঁর তো পায়ে কোনো জোর পাচ্ছে না,হাটতে পারেনা। কলকাতায় অনেক চিকিসৎসা করালাম কিন্তু কিছুই হল না। সবাই বলল ভেলোরে নিয়ে যেতে তাই ওখানে নিয়ে যাচ্ছি।কিন্তু আমিতো অতো শিক্ষিত না, কি করবো কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“আমিও তো ভেলোর যাচ্ছি ওখানে আমাদের বেওসা আছে।মেডিকেল জিনিসের বেওসা। আপনি কিসু চিন্তা করবেন না, আমি আপনাকে সাহায্য করবে।”
“সত্যি! আপনি সাহায্য করবেন? তাহলে যে আমার কি উপকার হয়।”
প্রলয় উপর থেকে আবার অস্ফুটে কিছু বলে উঠলো। আলো মুখ ঝামটা দিয়ে বলল
“তুমি চুপ করো।নিজে তো একটা অপদার্থ লোক আবার আমার জন্যে বেশি চিন্তা করা হচ্ছে। কোথায় তুমি আমাকে সামলাবে না আমাকে তোমার দেখাশোনা করতে হচ্ছে।আমি যা ঠিক করবো সেইভাবেই হবে। বুঝেছো।”
ওই অবাঙালি ভদ্রলোক বুঝলো স্বামী স্ত্রী তে তাকে নিয়েই কথা হচ্ছে।
সে তাড়াতাড়ি বলে উঠলো
“কই বাত নেহি আপনারা যেটা ঠিক বুঝবেন সেটাই করবেন।”
“না না ও কিছু না। আপনি ওখানে সব কিছু চেনেন আমাদের তো সুবিধাই হবে।”
অতঃপর নির্দিষ্ট স্টেশনে দুজনে মিলে ধরাধরি করে প্রলয়কে নামানো হল। সব জিনিসপত্র নামিয়ে আলো অটো ডাকতে যাচ্ছিল ওই ভদ্রলোক বলে উঠলেন আরে ভাবীজি কি করছেন আমি থাকতে আপনারা ওটোতে যাবেন! আমার গাড়ি আসছে, আপনারা আমার বাড়িতে থাকবেন,হামি তাহলে খুব খুশি হবো। প্রলয় মিনমিন করে বলল-
“আপনি আমাদের চেনেন না জানেন না আমাদের থাকতে দেবেন কেন?”
“আরে দাদা আমি এরকম ওনেক লোকের সাহায্য করে। নতুন লোক আপনারা, তার উপর ভাবীজি কিসু চিনেনা।উনি একা একা কি করবেন বলেন?
আমার ওনেক বোরো বাড়ি আছে ভাবীজির কোনো অসুবিধা হবে না।”
অগত্যা কি আর করা। সত্যিই তো প্রলয়ের তো শিরদাঁড়াটাই সোজা নেই এখন এই অবস্থায় ওর কি বা করার আছে!
গাড়ি এসে এক বিশাল বাড়ির সামনে দাঁড়াল।ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নেমে ওদের খুব খাতির করে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আলো সব অবাক হয়ে দেখছে।জীবনে সে এতো সুন্দর বাড়ি দেখেনি।
আলো ভদ্রলোক কে জিজ্ঞেস করলো
“আপনার বউকে দেখছি না।উনি বাড়ি নেই?”
না, উনি কয়েক বছর আগে আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন।”
“ও! আর আপনার ছেলে মেয়ে?”
“নেই।”
“ও!তাহলে তো আপনার খুবই কষ্টের জীবন।”
“না না আমার কোনো কষ্ট নেই।এইতো, মানুষের সেওয়া করি, যারা চিকিৎসা করাতে পারেনা তাদের চিকিৎসার খরচ চালাই। এইভাবেই আমার বেশ ভালোই কেটে যায়।”
প্রলয় মনে মনে ভাবলো এতক্ষন লোকটাকে ভুলই বুঝে ছিলাম। এতো ভালো মানুষ এখনো আছে এই পৃথিবীতে!
“যান আপনারা কাপড়া চেঞ্জ করে কিছু খেয়ে নিন তারপর হসপিটালে নিয়ে যাবো। আজকেই দেখানো হলে চিকিৎসা তাড়াতাড়ি সুরু হবে।”
প্রলয় মনে মনে ভদ্রলোককে প্রণাম না করে পারলো না।
ভদ্রলোকের চেষ্টায় প্রথম দিনই প্রলয় কে এডমিট করে নিয়েছে। ভরসা দিয়েছে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।
আলো ভদ্রলোকের সঙ্গে বাড়ি ফিরে এসেছে।
ভদ্রলোক চাকরকে ডেকে দুজনের খাবার দিতে বলল।
খাবার খেয়ে আলো ঘরে এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে। এতো নরম বিছানায় ও কোনোদিন শোয় নি।
পরদিন সকালে তাড়াতাড়ি আলো ঘুম থেকে উঠে পড়ল। বাইরে এসে দেখে ভদ্রলোক উঠে খবরের কাগজ পড়ছেন। আলো সামনে আসতেই জিজ্ঞেস করলো
“ভালো ঘুম হয়ে ছিল?”
আলো হেসে বলল- “হ্যাঁ”
তারপর দুজনে হসপিটালে গিয়ে প্রলয়কে দেখে এলো।
একটা সপ্তাহ এভাবে ভালোই কাটলো।শুধু আলো বুঝতে পারছিল ভদ্রলোক ওর প্রতি একটু বেশিই ভালো ব্যবহার করছে।কখনো তো আপনি আমার নিজের ভাবী আছেন বলে হাতটা জড়িয়ে ধরে। কখনো যেন একটু আলতো ছোঁয়া লেগে গেছে এরকম ভাব করে।
আলো কিছু বলতে পারে না। ভাবে সত্যিই হয়তো ওকে নিজের বৌদির মতোই দেখে। তার উপর ওর কৃতজ্ঞতা বোধ ওকে আরোই বেঁধে রেখে।
এর পর একদিন রাতে, আলো সবে শুয়েছে ভদ্রলোক এসে ওর দরজায় টোকা দিচ্ছে।
আলো উঠেগিয়ে দরজা খুলে দিতেই ভদ্রলোক ওকে জড়িয়ে ধরে বিছানার কাছে নিয়ে এসেছে।
আলো বুঝতে পারলো উনি ড্রিঙ্ক করে এসেছেন।
এক ধাক্কায় আলো ওকে ফেলেদিয়ে ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে গেল।ভদ্রলোক পেছন পেছন এসে আলোকে বলল – “আমি তোমার বরের চিকিৎসার জন্য এতো খরচ করছি, এতো সুযোগ সুবিধা তুমি আমার জন্য পাচ্ছ তার দাম দেবেনা আমাকে? এমনি সব পাওয়া যায়?”
“আমিতো তোমার এখানে আসতে চাই নি,তুমি উপকারী বন্ধু সেজে আমাদের নিয়ে এসছো।এখন আমার সঙ্গে এ রকম ব্যবহার করছো? তুমি একটা শিরদাঁড়া হীন মুখোশধারী পুরুষ মানুষ।তোমার যদি মেরুদন্ড থাকতো তবে তুমি রাতের অন্ধকারে অসহায় মহিলাদের অসম্মান করতে না। কোনো মহিলাকে সম্মানের সঙ্গে ঘরে বিয়ে করে নিয়ে আসতে।তোমার মত পুরুষদের আমি ঘৃণা করি।আমার বর আজ হাটতে পারেনা তবু ওর শিরদাঁড়া আছে।তাই ও আমাকে ট্রেনে তোমার সঙ্গে আসতে বারণ করে ছিলো।আমি ওর বারণ শুনিনি, তাই আমাকে এই দিন দেখতে হল।” এই বলে আলো রাতের অন্ধকারে ছুটতে ছুটতে হসপিটালে এসে গেট ধরে বসে রইল।ও জানতো ওই লোকটার মত লোকেরা হায়নার মতো হয়।একলা মেয়ে পেলে খুবলে খেতে চায় কিন্তু প্রকাশ্যে আসার সাহস নেই।
ভোর হতেই আলো প্রলয়ের কাছে এসে কেঁদে পড়ল।
প্রলয় এখন অনেকটা সুস্থ হয়েছে। আলোকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করল ” কি হয়েছে? কাঁদছ কেন?”
আলোর সমস্ত রাগ দুঃখ অভিমান গিয়ে প্রলয়ের উপর পড়ল। প্রলয়ের বুকের উপর আছাড় খেয়ে পড়ে বলতে লাগলো ” অপদার্থ কোথাকার। তুমি আমাকে কেন সামলাতে পারোনা?কেন আমাকে হায়নারা রাতের অন্ধকারে ছিঁড়ে খাওয়ার চেষ্টা করবে? তোমাকে উঠতেই হবে, উঠে দাঁড়াতেই হবে তোমাকে, না হলে আমি আত্মহত্যা করব।” প্রলয় অনেক কষ্টে নিজের মনে জোর সঞ্চয় করে বেডের থেকে নামার চেষ্টা করে। আলো তাই দেখে প্রলয়ের হাতটা ধরে বলে আমি আছি তোমার পাশে। তুমি ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে।আমি এখন থেকে যতদিন না তুমি সুস্থ হচ্ছ এই হসপিটালের বারান্দায় থাকবো। আর কোথাও যাবো না।
পরদিন সকালে যখন গত কাল রাতের কথা মনে পড়ল তখন ওই ভদ্রলোক লজ্জায় মরমে মরে যেতে লাগলেন। নিজের মনে মনে বললেন সব মানুষের ভেতরেই কি একটা পশু থাকে যেটা সুযোগ বুঝে ঠিক বেরিয়ে পড়ে!পোশাকের আড়ালে আমরা যতই সভ্য হই না কেন কোনো দুর্বল মুহূর্তে সেই পশুটা ঠিক তার নখ দাঁত বের করে বেরিয়ে আসতে চায়। ছি ছি আমি ভাবীজিকে মুখ দেখাবো কি করে! এই কদিনে ওই মেয়েটার উপর একটা মায়া পড়ে গেছে। কি মনের জোর! কি অসম্ভব পরিশ্রম করছে নিজের স্বামীকে সুস্থ করে তুলতে! না! আমি নিজে গিয়ে ওদের কাছে ক্ষমা চাইবো। আমার কৃত কর্মের সাজা আমার পাওয়াই উচিত। উনি স্নান সেরে হসপিটালের দিকে রওনা হলেন। হসপিটালে বেড নম্বরটা জানাই আছে তবু লজ্জায় ওর পা দুটো আটকে যাচ্ছে। এমন সময় আলোর চোখে পড়লো ভদ্রলোক মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন। ওকে দেখেই আলোর মাথা গরম হয়ে গেলো। ও প্রায় ছুটে এসে কিছু বলতে যাচ্ছিল ভদ্রলোক এক অসম্ভব কান্ড করে বসলেন “ভাবীজি আমাকে ক্ষমা করে দিন; আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিল। আমি এই কসম খাচ্ছি যতদিন আপনি আমার বাড়ি থাকবেন আমি সারাবে হাত ও লাগবো না। আমাকে একবার ক্ষমা করে দিন। আপনি আমার বোন আছেন, আর এমন হবে না। প্রলয় বাবু আপনি ভাবীজি কে বোঝান আর কোনোদিন ভাবীজিকে অপমান করবো না। এটা আমি সাচ্চা দিলসে বলছি। ভদ্রলোকের কথায় এমন কাকুতির সুর ছিল প্রলয় বুঝলো উনি কথাটা অন্তর থেকেই বলছেন। ও আলোকে বলল দেখো মানুষ তো ভুল করে আবার মানুষই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে। উনি ঠিক বলেছেন তোমার আর চিন্তা নেই। এবার তুমি নিশ্চিন্তে ওই বাড়ি যেতে পারো। এই কথা শুনে ভদ্রলোক আবার বললেন আপনি আমাকে বিশ্বাস করে ঠকবেন না, আমি আপনাকে বোন বলেছি, দাদা হয়ে দাদার দায়িত্ব পালন করবো, এই আমি কথা দিলাম। আলো ভদ্রলোকের সঙ্গে ওনার বাড়ি গেল। ওই ভদ্রলোক নিজে ডাক্তারের সাথে কথা বলে আরো ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। আলোর মনের জোর, ডাক্তারের চিকিৎসা আর প্রলয়ের নিজের চেষ্টায় ওকে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে সাহায্য করে। এখনও এমন মানুষ পৃথিবীতে আছে যারা নিঃস্বার্থে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাই আজও পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় আছে। খুব তাড়াতাড়ি প্রলয় নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। ভদ্রলোকের কাছে বিদায় নিয়ে আলোকে নিয়ে প্রলয় নিজের বাড়ি ফিরে এলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress