Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কমলা ভুত || Suchandra Basu

কমলা ভুত || Suchandra Basu

কমলা ভুত

শ্বশুর বাড়িতে এসে প্রথম দেখলাম কিভাবে
ধান সিদ্ধ শুকনো করে চাল হয়।পাটের ঝি কমলাদিদি ওই ধান সিদ্ধ শুকনো করে দিত।আপন মনে কাজ করত আর মুখে যেন খৈ ফুটত।গ্রামে সবাই ওকে অল ইন্ডিয়া রেডিও বলত।গ্রামাঞ্চলে খবর বিলি হওয়াই রেওয়াজ।
শেষে সেই খবর মুখে মুখে চাউর হয়ে তিল থেকে তাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।

সেদিন কমলা দিদির কাজ দেখছি আর ওর কথা মন দিয়ে শুনছি। পিসিশাশুড়ির কথা কিছু শুনেছি কিনা ও আমার কাছে জানতে চায়।পরে বলে তার অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে। তারপর থেকে নাকি সে ওই ওদের বাড়ির বেল গাছটায় আশ্রয় নেয়। কেউ তা জানতো না।

রোজই সে বাঁশ কাটে ভাত রাঁধবে বলে।সেদিনই
সে বাঁশের বদলে বেলডাল কাটে। আসেপাশে কেউ ছিল না বলে বেলগাছের গোড়ায় সে প্রস্রাব করে আর তখনই তার শরীর কেমন ভারী হয়ে যায়।তার আগেই সে নাকি ধান সিদ্ধ করে বাড়ি গেছিলো। আবার তখনই ছুটতে ছুটতে আমাদের বাড়ি এসে কমলাকে ডাকে। সবাই তো চমকে যায় কমলার এই আচরণে।তখন থেকেই তার মধ্যে একটা পরিবর্তন সবাই লক্ষ্য করে। পিসিমা যেভাবে গালিগালাজ করত কমলাও তাই করতে লাগল।যত দিন যায় তার এই অস্বাভাবিক আচরণ বেড়ে যায়। তখনই ওর বাড়ির লোক একজন ওঝাকে ডাকে। সে দেখে বলে ওকে “ভুতে” ধরেছে।

ওঝার কথামত এক অমাবস্যা তিথিতে সকাল থেকে শুরু হয় ভুত তাড়ানো ক্রিয়া_প্রক্রিয়া। যজ্ঞের সামনে একদিকে ওঝা অন্যদিকে কমলা। চারিদিক ঘিরে দাঁড়িয়ে পাড়া প্রতিবেশি। তারা
দেখল।

ওঝা—হাতে সরষে নিয়ে ভুত ভুত করে মন্ত্র পড়ে তার গায়ে ছিটিয়ে, একটা ঝাঁটা আগুনে জ্বালিয়ে কমলাকে বেদম ঠ্যাঙায় ।
কমলা— বিকট চিৎকার করে বলে মরে গেলুম
শরীর আগুনে পুড়ে গেল।আর সহ্য করতে
পারছি না। চলে যাব ঠিক। কেন এত ভীড়?আমার ধার শোধ দিলেই চলে যাব।
ওঝা— ঝাঁটার পিটুনি দেয় আর প্রশ্ন করে। তোর নাম কি?
কমলা—আমি নীলাবতি। সাপের কামড়ে
মারা যাই। টাকা শোধ দিলেই চলে যাব।
ওঝা—তুই থাকিস কোথায়?
কমলা— বাড়ি জমি বেদখল করে তাড়িয়ে দিলে
থাকব কোথায়? তাই ওই বেল গাছটাতেই আছি।
ওঝা—আরও মারতে থাকে। তবে কমলাকে ধরে আছিস কেন?
কমলা —গাছের গোড়ায় কেন প্রস্রাব করল?নাকে গন্ধ লাগবে না?তাই তো ওখানটা ছেড়ে ওর কাছে এলাম।থাক টাকার আর দরকার নেই। আর মারিস না। চলে যাচ্ছি আমি।
ওঝা—প্রমাণ দিয়ে যেতে হবে।
কমলা—আচ্ছা তাই দেব।
ওঝা—-এক ঘড়া জল এনে রাখছি।তুই সেটা দাঁতে ধরে ওই বেলতলায় যাবি।
কমলা—জলভর্তি ঘড়াটা দাঁতে ধরে নিয়ে ছুটতে ছুটতে বেলতলায়।
ওঝা–পিছনে ছোটে।
কমলা—ওইখানে গিয়ে পড়ে তারস্বরে চিৎকার করে বলে “টাকা দে আমার”। বলে জ্ঞান হারায়।
তাকে আবার ধরাধরি করে যজ্ঞস্থানে আনা হয়।
ওঝা—ফের ঝাঁটার পিটুনি শুরু করে। তখনও সে “টাকা দে টাকা দে”বলে গোঙাতে থাকে।
কমলা—সত্যি আর গ্রামে আর থাকব না।
ওঝা—প্রমাণ দিয়ে যা।পিটুনিও থামায় না।
কমলা–“আর মারিস না”কালি মন্দিরের সামনের অশ্বত্থের ডাল ভেঙে চলে যাব।
সবাই গেল সেখানে আর দেখল মোটা একটা ডাল মরমর করে আপনি ভেঙে পড়ে গেল। কমলা আবার অজ্ঞান হয়ে গেল।গোঙানি থেমে
গেল তার।পরিপুর্ণ সুস্থ হতে বেশ কয়েক মাস লেগেছিল তার।এর কোন ব্যাখ্যা আজও আমি
খুঁজে পাইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress