প্রিয়ার গালেতে চুমো খেয়ে যায় চকিতে পিয়াল রেণু!-
এল দক্ষিণা,-কাননের বীণা,- বনানীপথের বেণু!
তাই মৃগী আজ মৃগের চোখেতে বুলায়ে নিতেছে আখিঁ,
বনের কিনারে কপোত আজিকে নেয় কপোতীরে ডাকি!
ঘুঘুর পাখায় ঘুঙুর বাজায় আজিকে আকাশখানা,-
আজ দখিনার ফর্দা হাওয়ায় পর্দা মানে না মানা!
শিশিরশীর্ণা বালার কপোলে কুহেলির কালো জাল
উষ্ণ চুমোর আঘাতে হয়েছে ডালিমের মতো লাল!
দাড়িমের বীজ ফাটিয়া পড়িছে অধরের চারিপাশে
আজ মাধবীর প্রথম উষার,- দখিনা হাওয়ার শ্বাসে!
মদের পেয়ালা শুকায়ে গেছিল,- উড়ে গিয়েছিল মাছি,
দখিনাপরশে ভরা পেয়ালায় বুদবুদ্ ওঠে নাচি!
বেয়ালার সুরে বাজিয়া উঠিছে শিরা-উপশিরাগুলি!
শ্মাশানের পথে করোটি হাসিছে,-হেসে খুন হ’ল খুলি!
এস্রাজ বাজে আজ মলয়ের,- চিতার রৌদ্রাতপ
সুরের সুঠামে নিভে যায় যেন,- হেসে ওঠে যেন শব!
নিভে যায় রাঙা অঙ্কারমালা,- বৈতরনীর জলে,
সুর-জাহ্নবী ফুটে ওঠে আজ মলয়ের কোলাহলে!
আকাশ- শিথানে মধু- পরিণয়,-মিলন- বাসর পাতি
হিমানীশীর্ণ বিধবা তারারা জ্বলে ওঠে রাতারাতি!
ফাগুয়ার রাগে চাঁদের কপোল চকিতে হয়েছে রাঙা!
-হিমের ঘোমটা চিরে দেয় কে গো মরমস্নায়ুতে দাঙা!
লালসে কাহার আজ নীলিমার আনন রুধির- লাল,-
নিখিলের গালে গাল পাতে কার কুঙ্কুম- ভাঙা গাল!
নারাঙ্গি- ফাটা অধর কাহার আকাশ বাতাসে ঝরে!
কাহার বাঁশিটি খুন উথলায়,- পরান উদাস করে!
কাহার পানেতে ছুটিছে উধাও শিশুপিয়ালের শাখা!
ঠোঁটে ঠোঁট ডলে- পরাগ চোঁয়ায় অশোকফুলের ঝাঁকা!
কাহার পরশে পলাশ-বধূর আঁখির কেশরগুলি
মুদে মুদে আসে,-আর বার করে কুঁদে কুঁদে কোলাকুলি!
পাতার বাজারে বাজে হুল্লোড়,-পায়েলার রুণ রুণ,
কিশলয়দের ডাঁশা পেষে কে গো-চোখ করে ঘুম-ঘুম!
এসেছে দখিনা-ক্ষীরের মাঝারে লুকায়ে কোন্ এক হীরের ছুরি!-
তার লাগি তবু ক্ষ্যপা শাল নিম, তমাল- বকুলে হুড়াহুড়ি!
আমের কুঁড়িতে বাউল বোলতা খুনসুড়ি দিয়ে খসে যায়,
অঘ্রাণে যার ঘ্রাণ পেয়েছিল,- পেয়েছিল যারে ‘পোষলা’য়,
সাতাশে মাঘের বাতাসে তাহার দর বেড়ে গেছে দশগুণ,-
নিছক হাওয়ায় ঝরিয়া পড়িছে আজ মউলের কষ গুণ!
ঠেলে ফেলে দিয়ে নীলমাছি আর প্রজাপতিদের ভিড়
দখিনার মুখে রসের বাগান বিকায়ে দিতেছে ক্ষীর!
এসেছে নাগর,- যামিনীর আজ জাগর রঙিন আঁখি,-
কুয়াশার দিনে কাঁচুলি বাঁধিয়া কুচ রেখেছিল ঢাকি,-
আজিকে কাঞ্চী যেতেছে খুলিয়া,- মদঘূর্ণনে হায়!
নিশীথের স্বেদ-সীধুধারা আজ ক্ষরিছে দক্ষিণায়!
রূপসী ধরনী বাসকসজ্জা,- রূপালি চাঁদের তলে
বালুর ফরাশে রাঙা উল্লাসে ঢেউয়ের আগুন জ্বলে!
রোল উতরোল শোণিতে শিরায়,- হোরীর হা রা রা চিৎকার,-
মুখে মুখে মধু,- সুধাসীধু শুধু,- তিত্ কোথা আজ- তিত্ কার!
শীতের বাস্তুভিত ভেঙে আজ এল দক্ষিণা,- মিষ্টি- মধু,
মদনের হুলে ঢুলে ঢুলে ঢুলে হুশ-হারা হ’ল সৃষ্টি- বধূ!