মিথ্যা আমায় কেন শরম দিলে
চোখের চাওয়া নীরব তিরস্কারে !
আমি তোমার পাড়ার প্রান্ত দিয়ে
চলেছিলেম আপন গৃহদ্বারে —
যেথা আমার বাঁধা ঘাটের কাছে
দুটি চাঁপায় ছায়া করে আছে ,
জামের শাখা ফলে – আঁধার – করা
স্বচ্ছগভীর পদ্মদিঘির ধারে ।
তুমি আমায় কেন শরম দিলে
চোখের চাওয়া নীরব তিরস্কারে !
আজ তো আমি মাটির পানে চেয়ে
দীনবেশে যাই নি তোমার ঘরে ।
অতিথ হয়ে দিই নি দ্বারে সাড়া ,
ভিক্ষাপাত্র নিই নি কাতর – করে ।
আমি আমার পথে যেতে যেতে
তোমার ঘরের দ্বারের বাহিরেতে
ঘনশ্যামল তমাল – তরুমূলে
দাঁড়িয়েছি এই দণ্ড – দুয়ের তরে ।
নতশিরে দুখানি হাত জুড়ি
দীনবেশে যাই নি তোমার ঘরে ।
আমি তোমার ফুল্ল পুষ্পবনে
তুলি নাই তো যূথীর একটি দল ।
আমি তোমার ফলের শাখা হতে
ক্ষুধাভরে ছিঁড়ি নাই তো ফল ।
আছি শুধু পথের প্রান্তদেশে
দাঁড়ায় যেথা সকল পান্থ এসে ,
নিয়েছি এই শুধু গাছের ছায়া—
পেয়েছি এই তরুণ তৃণতল ।
আমি তোমার ফুল্ল পুষ্পবনে
তুলি নাই তো যূথীর একটি দল ।
শ্রান্ত বটে আছে চরণ মম ,
পথের পঙ্ক লেগেছে দুই পায় ।
আষাঢ় – মেঘে হঠাৎ এল ধারা
আকাশ – ভাঙা বিপুল বরষায় ।
ঝোড়ো হাওয়ার এলোমেলো তালে
উঠল নৃত্য বাঁশের ডালে ডালে ,
ছুটল বেগে ঘন মেঘের শ্রেণী
ভগ্নরণে ছিন্নকেতুর প্রায় ।
শ্রান্ত বটে আছে চরণ মম ,
পথের পঙ্ক লেগেছে দুই পায় ।
কেমন করে জানব মনে আমি
কী যে আমায় ভাবলে মনে মনে ।
কাহার লাগি একলা ছিলে বসে
মুক্তকেশে আপন বাতায়নে ।
তড়িৎশিখা ক্ষণিক দীপ্তালোকে
হানতেছিল চমক তোমার চোখে ,
জানত কে বা দেখতে পাবে তুমি
আছি আমি কোথায় যে কোন্ কোণে ।
কেমন করে জানব মনে আমি
আমায় কী যে ভাবলে মনে মনে ।
বুঝি গো দিন ফুরিয়ে গেল আজি ,
এখনো মেঘ আছে আকাশ ভরে ।
থেমে এল বাতাস বেণুবনে ,
মাঠের ‘পরে বৃষ্টি এল ধরে ।
তোমার ছায়া দিলেম তবে ছাড়ি ,
লও গো তোমার ভূমি – আসন কাড়ি ,
সন্ধ্যা হল— দুয়ার করো রোধ ,
যাব আমি আপন পথ -‘ পরে ।
বুঝি গো দিন ফুরিয়ে গেল আজি ,
এখনো মেঘ আছে আকাশ ভরে ।
মিথ্যা আমায় কেন শরম দিলে
চোখের চাওয়া নীরব তিরস্কারে !
আছে আমার নতুন – ছাওয়া ঘর
পাড়ার পরে পদ্মদিঘির ধারে ।
কুটিরতলে দিবস হলে গত
জ্বলে প্রদীপ ধ্রুবতারার মতো ,
আমি কারো চাই নে কোনো দান
কাঙালবেশে কোনো ঘরের দ্বারে ।
মিথ্যা আমায় কেন শরম দিলে
চোখের চাওয়া নীরব তিরস্কারে !