একটুখানি সোনার বিন্দু , একটুখানি মুখ ,
একা একটি বনফুল ফোটে-ফোটে হয়েছে ,
কচি কচি পাতার মাঝে মাথা থুয়ে রয়েছে ।
চার দিকে তার গাছের ছায়া , চার দিকে তার নিষুতি-
চার দিকে তার ঝোপেঝাপে আঁধার দিয়ে ঢেকেছে ,
বনের সে যে স্নেহের ধন আদরিণী মেয়ে ,
তারে বুকের কাছে লুকিয়ে যেন রেখেছে ।
একটুখানি রূপের হাসি আঁধারেতে ঘুমিয়ে আলা ,
বনের স্নেহ শিয়রেতে জেগে আছে ।
সুকুমার প্রাণটুকু তার কিছু যেন জানে না ,
চোখে শুধু সুখের স্বপন লেগে আছে ।
একটি যেন রবির কিরণ ভোরের বেলা বনের মাঝে
খেলাতেছিল নেচে নেচে ,
নিরালাতে গাছের ছায়ে , আঁধারেতে শ্রান্তকায়ে
সে যেন ঘুমিয়ে পড়েছে ।
বনদেবী করুণ-হিয়ে তারে যেন কুড়িয়ে নিয়ে
যতন করে আপন ঘরেতে ।
থুয়ে কোমল পাতার’পরে মায়ের মতো স্নেহভরে
ছোঁয় তারে কোমল করেতে ।
ধীরি ধীরি বাতাস গিয়ে আসে তারে দোলা দিয়ে ,
চোখেতে চুমো খেয়ে যায় ।
ঘুরে ফিরে আশেপাশে বার বার ফিরে আসে ,
হাতটি বুলিয়ে দেয় গায় ।
একলা পাখি গাছের শাখে কাছে তোর বসে থাকে ,
সারা দুপুরবেলা শুধু ডাকে ,
যেন তার আর কেহ নাই , সারা দিন একলাটি তাই
স্নেহভরে তোরে নিয়েই থাকে ।
ও পাখির নাম জানি নে , কোথায় ছিল কে তা জানে ,
রাতের বেলায় কোথায় চলে যায় ,
দুপুরবেলা কাছে আসে- সারা দিন বসে পাশে
একটি শুধু আদরের গান গায় ।
রাতে কত তারা ওঠে , ভোরের বেলা চলে যায়-
তোরে তো কেউ দেখে না , জানে না ।
এক কালে তুই ছিলি যেন ওদেরই ঘরের মেয়ে ,
আজকে রে তুই অজানা অচেনা ।
নিত্যি দেখি রাতের বেলা একটি শুধু জোনাই আসে ,
আলো দিয়ে মুখপানে তোর চায় ।
কে জানে সে কী যে করে! তারা-জন্মের কাহিনী তোর
কানে বুঝি স্বপন দিয়ে যায় ।
ভোরের বেলা আলো এল , ডাকছে রে তোর নামটি ধরে ,
আজকে তবে মুখখানি তোর তোল্ ,
আজকে তবে আঁখিটি তোর খোল্ ,
লতা জাগে , পাখি জাগে গায়ের কাছে বাতাস লাগে ,
দেখি রে — ধীরে ধীরে দোল্ দোল্ দোল্ ।