Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ডেডেলাস || Shamsur Rahman

ডেডেলাস || Shamsur Rahman

না, আমি বিলাপ করবো না তার জন্যে, যে আমার
নিজের একান্ত অংশ, স্বপ্ন, ভবিশ্যত; যাকে আমি
দেখেছি উঠোনে হাঁটি-হাঁটি পা-পা হেঁটে যেতে
আনন্দের মতো বহুবার। যখন প্রথম তার
মুখে ফুটেছিলো বুলি, কি যে আনন্দিত
হয়েছি সেদিন আমি; যখন জননী তার ওকে
বুকে নিয়ে চাঁদের কপালে চাঁদ আয় টিপ দিয়ে
যা ব’লে পাড়াতো ঘুম, আমি
স্বর্গসুখ পেয়েছি তখন।
কতদিন ওকে
নিজেই দিয়েছি গ’ড়ে পুতুল এবং
বসেছে সে আমার আপনকার পিঠে, ক্ষুদে অশ্বারোহী।
আমার স্নেহের ঘরে সে উঠেছে বেড়ে
ক্রমান্বয়ে,
আজ সে শুধুই স্মৃতি, বেদনার মতো বয়ে যায়
আমার শিরায়।
কোন কোনদিন স্থাপত্যের গূঢ় সুত্র-বিষয়ক চিন্তার সময়
অকস্মাৎ দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে আমার শয্যার পাশে
সুকান্ত তরুণ;
ইকারুস ইকারুস ব’লে ডাকলেই উজ্জ্বীবিত
দেবে সাড়া। কখনো বা মনে হয় আমার নিজের
হাতে গড়া ডানা নিয়ে দেবে সে উড়াল
দূর নীলিমায়
অসম্ভব উঁচুতে আবার।

না, আমি বিলাপ করবো না তার জন্যে, স্মৃতি যার
মোমের মতন গলে আমার সত্তায়, চেতনায়।
সর্বদা সতর্ক আমি, বিপদের গন্ধ সিদ্ধ, তাই
বুঝিয়েছিলাম তাকে সাবধানী হ’তে,
যেন সে না যায় উড়ে পেরিয়ে বিপদসীমা কখনো আকাশে।
কিন্তু সে তরুণ, চটপটে, ঝকঝকে, ব্যগ্র অস্থির, উজ্জ্বল,
যখন মেললো পাখা আমার শিল্পের ভরসায়,
গেলো উড়ে ঊর্ধে, আরো ঊর্ধে, বহুদূরে,
সূর্যের অনেক কাছে প্রকৃত শিল্পীর মতো সব
বাধা, সতর্কতা
নিমেষে পেছনে ফেলে, আমি
শংকিত অথচ মুগ্ধ রইলাম চেয়ে
তার দিকে, দেখলাম তাকে
পরিণাম বিষয়ে কেমন
উদাসীন, ক্রর রোদ্রঝলসিত, সাহসী, স্বাধীন।

না আমি বিলাপ করবো না তার জন্যে, স্মৃতি যার
মোমের মতন গলে আমার সত্তায়, চেতনায়।

যেন আমি এখন উঠেছি জেগে অন্তহীন নির্জন সমুদ্রতীরে একা
আদিম বিস্ময় নিয়ে চোখে। আস্তে আস্তে মনে পড়ে
নানা কথা, মনে পড়ে বাসগৃহ, বহুদূরে ফেলে-আসা কত
স্থাপত্যের কথা আর নারীর প্রণয়। মনে পড়ে,
আমার সন্তান যেতো পাখির বাসার খোঁজে, কখনো কখনো
দেখতো উৎসুক চেয়ে আমার নিজের
বাটালি ছেনির চঞ্চলতা। মনে পড়ে
দেবতার মতো স্তব্ধ আলোচ্ছ্বাস, তরুণের ওড়া
ভয়ংকর অপরূপ দীপ্তিময়তায়। তার পতন নিশ্চিত
বলেই হয়তো আমি তাকে আরো বেশি ভালোবেসেছি তখন।
পিতা আমি, তাই সন্তানের আসন্ন বিলয় জেনে
শোকবিদ্ধ, অগ্নিদগ্ধ পাখির মতন দিশাহারা;
শিল্পী আমি, তাই তরুণের সাহসের ভষ্ম আজ
মৃত্যুঞ্জয় নান্দনিক সঞ্চয় আমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *