গুরুভার মন লয়ে কত বা বেড়াবি বয়ে ?
এমন কি কেহ তোর নাই ,
যাহার হৃদয়- ‘ পরে মিলিবে মুহূর্ত তরে
হৃদয়টি রাখিবার ঠাঁই ?
‘ কেহ না , কেহ না! ‘
সংসারে যে দিকে ফিরে চাই
এমন কি কেহ তোর নাই —
তোর দিন শেষ হলে , স্মৃতিখানি লয়ে কোলে ,
শোয়াইয়া বিষাদের কোমল শয়নে ,
বিমল শিশির-মাখা প্রেম-ফুলে দিয়ে ঢাকা
চেয়ে রবে আনত নয়নে ?
হৃদয়েতে রেখে দিবে তুলে ,
প্রতিদিন ঢেকে দিবে ফুলে ,
মনোমাঝে প্রবেশিয়ে বিন্দু বিন্দু অশ্রু দিয়ে
বৃন্ত-ছিন্ন প্রেম-ফুলগুলি
রাখিবেক জিয়াইয়া তুলি ?
এমন কি কেহ তোর নাই ?
‘ কেহ না , কেহ না! ‘
প্রাণ তুই খুলে দিলি ভালোবাসা বিলাইলি
কেহ তাহা তুলে না লইল ,
ভূমিতলে পড়িয়া রহিল ;
ভালোবাসা কেন দিলি তবে
কেহ যদি কুড়ায়ে না লবে ?
কেন সখা কেন ?
‘ জানি না , জানি না! ‘
বিজনে বনের মাঝে ফুল এক আছে ফুটে
শুধাইতে গেনু তার কাছে ,
‘ ফুল , তুই এ আঁধারে পরিমল দিস কারে ,
এ কাননে কে বা তোর আছে!
যখন পড়িবি তুই ঝরে ,
শুকাইয়া দলগুলি ধূলিতে হইবে ধূলি ,
মনে কি করিবে কেহ তোরে!
তবে কেন পরিমল ঢেলে দিস অবিরল
ছোটো মনখানি ভ ‘ রে ভ ‘ রে ?
কেন , ফুল , কেন ?
সেও বলে , ‘ জানি না । জানি না! ‘
সখা , তুমি গান গাও কেন ?
কেহ যদি শুনিতে না চায় ?
ওই দেখো পথমাঝে যে যাহার নিজ কাজে
আপনার মনে চলে যায় ।
কেহ যদি শুনিতে না চায়
কেন তবে , কেন গাও গান ,
আকাশে ঢালিয়া দাও প্রাণ ?
গান তব ফুরাইবে যবে ,
রাগিণী কারো কি মনে রবে ?
বাতাসেতে স্বরধার খেলিয়াছে অনিবার ,
বাতাসে সমাধি তার হবে ।
কাহারো মনেও নাহি রবে ,
কেন সখা গান গাও তবে ?
কেন , সখা , কেন ?
‘জানি না , জানি না!’
বিজন তরুর শাখে একাকি পাখিটি ডাকে ,
শুধাইতে গেনু তার কাছে ,
‘ পাখি তুই এ আঁধারে গান শুনাইবি কারে ?
এ কাননে কে বা তোর আছে!
যখনি ফুরাবে তোর প্রাণ ,
যখনি থামিবে তোর গান ,
বন ছিল যেমন নীরবে ,
তেমনি নীরব পুন হবে ।
যেমনি থামিবে গীত , অমনি সে সচকিত
প্রতিধ্বনি আকাশে মিলাবে ,
তোর গান তোরি সাথে যাবে!
আকাশে ঢালিয়া দিয়া প্রাণ ,
তবে , পাখি , কেন গাস গান ?
কেন , পাখি , কেন ?
সেও বলে , ‘ জানি না , জানি না! ‘