আর কত দূরে নিয়ে যাবে মোরে
হে সুন্দরী ?
বলো কোন্ পার ভিড়িবে তোমার
সোনার তরী ।
যখনি শুধাই , ওগো বিদেশিনী ,
তুমি হাস শুধু , মধুরহাসিনী —
বুঝিতে না পারি , কী জানি কী আছে
তোমার মনে ।
নীরবে দেখাও অঙ্গুলি তুলি
অকূল সিন্ধু উঠিছে আকুলি ,
দূরে পশ্চিমে ডুবিছে তপন
গগনকোণে ।
কী আছে হোথায় — চলেছি কিসের
অন্বেষণে ?
বলো দেখি মোরে , শুধাই তোমায়
অপরিচিতা —
ওই যেথা জ্বলে সন্ধ্যার কূলে
দিনের চিতা ,
ঝলিতেছে জল তরল অনল ,
গলিয়া পড়িছে অম্বরতল ,
দিক্বধূ যেন ছলছল-আঁখি
অশ্রুজলে ,
হোথায় কি আছে আলয় তোমার
ঊর্মিমুখর সাগরের পার ,
মেঘচুম্বিত অস্তগিরির
চরণতলে ?
তুমি হাস শুধু মুখপানে চেয়ে
কথা না ব ‘ লে ।
হু হু ক ‘ রে বায়ু ফেলিছে সতত
দীর্ঘশ্বাস ।
অন্ধ আবেগে করে গর্জন
জলোচ্ছ্বাস ।
সংশয়ময় ঘননীল নীর ,
কোনো দিকে চেয়ে নাহি হেরি তীর ,
অসীম রোদন জগৎ প্লাবিয়া
দুলিছে যেন ।
তারি ‘ পরে ভাসে তরণী হিরণ ,
তারি ‘ পরে পড়ে সন্ধ্যাকিরণ ,
তারি মাঝে বসি এ নীরব হাসি
হাসিছ কেন ?
আমি তো বুঝি না কী লাগি তোমার
বিলাস হেন ।
যখন প্রথম ডেকেছিলে তুমি
‘ কে যাবে সাথে ‘
চাহিনু বারেক তোমার নয়নে
নবীন প্রাতে ।
দেখালে সমুখে প্রসারিয়া কর
পশ্চিম-পানে অসীম সাগর ,
চঞ্চল আলো আশার মতন
কাঁপিছে জলে ।
তরীতে উঠিয়া শুধানু তখন
আছে কি হোথায় নবীন জীবন ,
আশার স্বপন ফলে কি হোথায়
সোনার ফলে ?
মুখপানে চেয়ে হাসিলে কেবল
কথা না ব ‘ লে ।
তার পরে কভু উঠিয়াছে মেঘ
কখনো রবি —
কখনো ক্ষুব্ধ সাগর , কখনো
শান্ত ছবি ।
বেলা বহে যায় , পালে লাগে বায় —
সোনার তরণী কোথা চলে যায় ,
পশ্চিমে হেরি নামিছে তপন
অস্তাচলে ।
এখন বারেক শুধাই তোমায় ,
স্নিগ্ধ মরণ আছে কি হোথায় ,
আছে কি শান্তি , আছে কি সুপ্তি
তিমির-তলে ?
হাসিতেছ তুমি তুলিয়া নয়ন
কথা না ব ‘ লে ।
আঁধার রজনী আসিবে এখনি
মেলিয়া পাখা ,
সন্ধ্যা-আকাশে স্বর্ণ-আলোক
পড়িবে ঢাকা ।
শুধু ভাসে তব দেহসৌরভ ,
শুধু কানে আসে জল-কলরব ,
গায়ে উড়ে পড়ে বায়ুভরে তব
কেশের রাশি ।
বিকল হৃদয় বিবশ শরীর
ডাকিয়া তোমারে কহিব অধীর ,
‘ কোথা আছ ওগো করহ পরশ
নিকটে আসি । ‘
কহিবে না কথা , দেখিতে পাব না
নীরব হাসি ।