অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
অমন সুধা-করুণ সুরে
গেয়ো না ।
সকালবেলা সকল কাজে
আসিতে যেতে পথের মাঝে
আমারি এই আঙিনা দিয়ে
যেয়ো না ।
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
মনের কথা রেখেছি মনে
যতনে ,
ফিরিছ মিছে মাগিয়া সেই
রতনে ।
তুচ্ছ অতি , কিছু সে নয় ,
দু চারি ফোঁটা অশ্রু ময়
একটি শুধু শোণিত-রাঙা
বেদনা ।
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
কাহার আশে দুয়ারে কর
হানিছ ?
না জানি তুমি কী মোরে মনে
মানিছ!
রয়েছি হেথা লুকাতে লাজ ,
নাহিকো মোর রানীর সাজ ,
পরিয়া আছি জীর্ণচীর
বাসনা ।
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
কী ধন তুমি এনেছ ভরি
দু হাতে ।
অমন করি যেয়ো না ফেলি
ধুলাতে ।
এ ঋণ যদি শুধিতে চাই
কী আছে হেন , কোথায় পাই —
জনম-তরে বিকাতে হবে
আপনা ।
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
ভেবেছি মনে , ঘরের কোণে
রহিব ।
গোপন দুখ আপন বুকে
বহিব ।
কিসের লাগি করিব আশা ,
বলিতে চাহি , নাহিকো ভাষা —
রয়েছে সাধ , না জানি তার
সাধনা ।
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
যে-সুর তুমি ভরেছ তব
বাঁশিতে
উহার সাথে আমি কি পারি
গাহিতে ?
গাহিতে গেলে ভাঙিয়া গান
উছলি উঠে সকল প্রাণ ,
না মানে রোধ অতি অবোধ
রোদনা ।
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
এসেছ তুমি গলায় মালা
ধরিয়া —
নবীন বেশ , শোভন ভূষা
পরিয়া ।
হেথায় কোথা কনক-থালা ,
কোথায় ফুল , কোথায় মালা —
বাসরসেবা করিবে কে বা
রচনা ?
অমন দীননয়নে তুমি
চেয়ো না ।
ভুলিয়া পথ এসেছ , সখা ,
এ ঘরে ।
অন্ধকারে মালা-বদল
কে করে!
সন্ধ্যা হতে কঠিন ভুঁয়ে
একাকী আমি রয়েছি শুয়ে ,
নিবায়ে দীপ জীবননিশি
যাপনা!
অমন দীননয়নে আর
চেয়ো না ।