চা খেতে খেতে দেবাশিস বলল
পরদিন সকালবেলা ওপরের বসবার ঘরে চা খেতে খেতে দেবাশিস বলল–’তুমি সারাদিন একলা থাকে, সময় কাটে কি করে?
দীপা চুপ করে রইল। সময় কাটবার তাই কাটে, সময়ের যদি দাঁড়িয়ে পড়বার উপায় থাকত তাহলে বোধহয় দীপার সময় দাঁড়িয়েই পড়ত।
দেবাশিস বলল–’তোমার বই পড়ার শখ নেই; বাড়িতে কিছু বই আছে কিন্তু সেগুলো বিজ্ঞানের বই। তুমি যদি চাও বইয়ের দোকান থেকে গল্প-উপন্যাসের বই এনে দিতে পারি। মাসিক সাপ্তাহিক কাগজের গ্রাহক হওয়া যায়।’
দীপা এবারও চুপ করে রইল। বই পড়তে সে ভালবাসে, ভাল লেখকের ভাল গল্প-উপন্যাস পেলে পড়ে, কিন্তু বই মুখে দিয়ে তো সারা দিন-রাত কাটে না।
‘কিংবা তোমাকে বইয়ের দোকানে নিয়ে যেতে পারি, তুমি নিজের পছন্দ মত বই কিনো।’ দীপা সংশয় জড়িত স্বরে বলল–’আচ্ছা।’
দেবাশিস বুঝল, বই সম্বন্ধে দীপার বেশি আগ্রহ নেই। তখন সে বলল—’তোমার বান্ধবীদের বাড়িতে ডাকো না কেন? তাদের সঙ্গে গল্প করেও দুদণ্ড সময় কাটবে।’
দীপা বলল–’আচ্ছা, ডাকব।’
চা শেষ করে দেবাশিস জানলার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। নীচে অনাদৃত বাগানের পানে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ঘরের দিকে ফিরে বলল–’তুমি ফুল ভালবাস। বাগান করার শখ আছে কি?’
‘আছে।’ দীপা সাগ্রহে উঠে দাঁড়াল, এক পা এক পা করে দেবাশিসের কাছে এসে বলল-‘বাপের বাড়িতে ছাদের ওপর বাগান করেছিলুম, টবের বাগান।’
দেবাশিস হেসে বলল–’ব্যস, তবে আর কি, এখানে মাটিতে বাগান কর। বাবা মারা যাবার পর বাগানের যত্ন নেওয়া হয়নি। আমি আজই ব্যবস্থা করছি। আগে একটা মালী দরকার, তুমি একলা পারবে না।’
পরদিন মালী এল, গাড়ি গাড়ি সার এল, কোদাল খন্তা খুরপি গাছকটা কাঁচি এল, নাসরি থেকে মৌসুমী ফুলের বীজ, গোলাপের কলম, বারোমেসে গাছের চারা এল, ছোট ছোট সুপুরিগাছ এল। মহা আড়ম্বরে দীপার জীবনের উদ্যান পর্ব আরম্ভ হয়ে গেল।
তারপর কয়েকদিন প্রবল উত্তেজনার মধ্যে কাটল। প্রৌঢ় মালী পদ্মলোচন অতিশয় বিজ্ঞ ব্যক্তি, তার সঙ্গে পরামর্শ করে কোথায় মৌসুমী ফুলের বীজ পোঁতা হবে, কোথায় গোলাপের কলম বসবে, কীভাবে সুপুরি আর ঝাউ-এর সারি বসিয়ে বীথিপথ তৈরি হবে, দীপা তারই প্ল্যান করছে। ঘুমে জাগরণে বাগান ছাড়া তার অন্য চিস্তা নেই।
দেবাশিস নির্লিপ্তভাবে সব লক্ষ্য করে, কিন্তু দীপার কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করে না, এমন কি তাকে বাগান সম্বন্ধে পরামর্শ দিতেও যায় না। দীপা যা করছে। কারুক, তার যাতে মন ভাল থাকে। তাই ভাল।
দিন কাটছে।
একদিন দুপুরবেলা দীপা রেডিওর মৃদু গুঞ্জন শুনতে শুনতে ভাবছিল, আরোকোরিয়া পাইন-এর চারাটি বাগানের কোন জায়গায় বসালে ভাল হয়, এমন সময় ঘরের কোণে টেলিফোন বেজে উঠল। দীপা চকিতে সেই দিকে চাইল, তারপরে উঠে গিয়ে ফোন তুলে নিল—’হ্যালো।‘
টেলিফোনে আওয়াজ এল–’আমি। গলা চিনতে পারছ?’
দীপার বুকের মধ্যে দু’বার ধকধক করে উঠল। সে যেন ধাক্কা খেয়ে স্বপ্নলোক থেকে বাস্তব জগতে ফিরে এল। একটু দম নিয়ে একটু হাঁপিয়ে বলল—’হ্যাঁ।’
‘খবর সব ভাল?’
‘হাঁ।’
‘কোনো গোলমাল হয়নি?’
‘না।‘
‘তোমার স্বামী মানুষটা কেমন?
‘মন্দ মানুষ নয়।’
‘তোমার ওপর জোর-জুলুম করছে না?
‘না।‘
‘একেবারেই না?’
‘না।‘
‘হুঁ। আরো কিছুদিন এইভাবে চালাতে হবে।’
‘আর কত দিন?’
‘সময়ে জানতে পারবে। আচ্ছা।’
ফোন রেখে দিয়ে দীপা আবার আরাম-চেয়ারে এসে বসল, পিছনে মাথা হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইল। রেডিওর মৃদু গুঞ্জন চলছে। দুমিনিট আগে দীপা বাগানের কথা ভাবছিল, এখন মনে হল বাগানটা বহু দূরে চলে গেছে।
বিকেলবেলা আন্দাজ সাড়ে তিনটের সময় নীচে সদর দোরের ঘন্টি বেজে উঠল। দীপা চোখ খুলে উঠে বসল। কেউ এসেছে। দেবাশিস কি আজ তাড়াতাড়ি ফিরে এল? কিন্তু আজ তো শনিবার নয়–
দীপা উঠে গিয়ে সিঁড়ির মাথায় দাঁড়াল। নকুল দোর খুলছে। তারপরই মেয়েলি গলা শোনা গেল—’আমি দীপার বন্ধু, সে বাড়িতে আছে তো?
নকুল উত্তর দেবার আগেই দীপা ওপর থেকে ডাকল–’শুভ্রা, আয়, ওপরে চলে আয়।’
শুভ্ৰা ওপরে এসে সিঁড়ির মাথায় দীপকে জড়িয়ে ধরল, বলল—’সেই ফুলশয্যের রাত্রে তোকে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিলুম। তারপর আসিনি, তোকে হনিমুন করবার সময় দিলুম। আজ ভাবলুম, দীপা আর কনে-বাউ নেই, এত দিনে পাকা গিনী হয়েছে, যাই দেখে আসি। হ্যাঁ ভাই, তোর বর বাড়িতে নেই তো?’
‘না। আয়, ঘরে আয়।’
শুভ্রা মেয়েটি দীপার চেয়ে বছর দেড়েকের বড়, বছরখানেক আগে বিয়ে হয়েছে। তার চেহারা গোলগাল, প্রকৃতি রঙ্গপ্রিয়, গান গাইতে পারে। প্রকৃতি বিপরীত বলেই হয়তো দীপার সঙ্গে তার মনের সান্নিধ্য বেশি।
বসবার ঘরে গিয়ে তারা পশ্চিমের খোলা জানলার সামনে দাঁড়াল। শুভ্ৰা দীপাকে ভাল করে দেখে নিয়ে মৃদু হাসল, বলল—‘বিয়ের জল গায়ে লাগেনি, বিয়ের আগে যেমন ছিলি এখনো তেমনি আছিস। কিন্তু গায়ে গয়না নেই কেন? হাতে দু’গাছি চুড়ি, কানে ফুল আর গলায় সরু হার; কনে-বউকে কি এতে মানায়।’
দীপা চোখ নামাল, তারপর আবার চোখ তুলে বলল—’তুই তো এখনই বললি আমি আর কনে-বউ নই।’
শুভ্ৰা বলল–’গয়না পরার জন্য তুই এখনও কনে-বাউ। কিন্তু আসল কথাটা কী? ‘আভরণ সৌতিনি মান’?’
‘সে আবার কি?’
‘তা জানিস না! কবি গোবিন্দদাস বলেছেন, সময়বিশেষে গয়না সতীন হয়ে দাঁড়ায়।’ এই বলে দীপার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে গাইল–
‘সখি, কি ফল বেশ বনান
কানু পরশমণি পরাশক বাধন
আভরণ সৌতিনি মান।’
দীপার মুখের ওপর যেন এক মুঠো আবির ছড়িয়ে পড়ল। সে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল–’যাঃ, তুই বড় ফাজিল।’
শুভ্ৰা খিলখিল করে হেসে বলল—’তুইও এবার ফাজিল হয়ে যাবি, আর গাম্ভীৰ্য চলবে না। বিয়ে হলেই মেয়েরা ফাজিল হয়ে যায়।’
দীপা কি উত্তর দেবে ভেবে পেল না। কিন্তু যেমন করে হোক সত্যি কথা লুকিয়ে রাখতে হবে, মিথ্যে কথা বলে শুভ্রার চোখে ধুলো দিতে হবে। শুভ্রা যেন জানতে না পারে।
দীপা আকাশ-পাতাল ভাবছে শুভ্রার ঠাট্টার কি উত্তর দেবে, এমন সময় দোরের কাছে থেকে নকুলের গলা এল—’বউদি, চা জলখাবার আনি?’
দীপা যেন বেঁচে গেল। বলল—’হ্যাঁ নকুল, নিয়ে এস।’
নকুল নেমে গেল। দীপা বলল—’আয় ভাই, বসি। তারপর হিমানী সুপ্রিয়া কেমন আছে বল। মনে হচ্ছে যেন কতদিন তাদের দেখিনি!’
শুভ্ৰা চেয়ারে বসে বলল—’হিমানী সুপ্রিয়ার কথা পরে বলব, আগে তুই নিজের কথা বল। বরের সঙ্গে কেমন ভাব হল?’
দীপা ঘাড় হেঁট করে অর্ধস্ফুট স্বরে বলল–’ভাল।’
শুভ্রা বলল—’তোর বরটি ভাই দেখতে বেশ। কিন্তু দেখতে ভাল হলেই মানুষ ভাল হয় না। মানুষটি কেমন?’
দীপাবলল–’ভাল।’
শুভ্ৰা বিরক্ত হয়ে বলল–’ভাল আর ভাল, কেবল এক কথা! তুই কি কোনো দিন মন খুলে কিছু বলবি না?’
‘বললুম তো, আর কি বলব?’
‘এইটুকু বললেই বলা হল? আমার যখন বিয়ে হয়েছিল। আমি ছুটে ছুটে আসতুম তোর কাছে, সব কথা না বললে প্রাণ ঠাণ্ডা হত না। আর তুই মুখ সেলাই করে বসে আছিস। গা জ্বলে যায়।’
দীপা তার হাত ধরে মিনতির স্বরে বলল–’রাগ করিাসনি ভাই! জানিস তো, আমি কথা বলতে গেলেই গলায় কথা আটকে যায়। মনে মনে বুঝে নে না। সবই তো জানিস।’
শুভ্রা বলল—’সবায়ের কি এক রকম হয়? তাই জানতে ইচ্ছে করে। যাক গে, তুই যখন বলবি না। তখন মনে মনেই বুঝে নেব। আচ্ছা, আজ উঠি, তোর বিয়ে পুরনো হোক তখন আবার একদিন আসব।’
দীপা কিন্তু শক্ত করে তার হাত ধরে রইল, বলল–’না, তুই রাগ করে চলে যেতে পাবি না।’
শুভ্রার রাগ অমনি পড়ে গেল, সে হেসে বলল–’তুই হদ্দ করলি। বরের কাছেও যদি এমনি মুখ বুজে থাকিস বর ভুল বুঝবে। ওরা ভুল-বোঝা মানুষ।’
নকল চায়ের ট্রে নিয়ে এল, সঙ্গে স্তুপাকৃতি প্যাসট্রি। দীপা চা ঢেলে শুভ্রাকে দিল, নিজে নিল; দু’জনে চা আর প্যাসট্রি খেতে খেতে সাধারণভাবে গল্প করতে লাগল। শাড়ি ব্লাউজ, গয়নার নতুন ফ্যাশন, সেন্ট স্নো পাউডার-এর দুমূল্যতা, এই সব নিয়ে গল্প। শুভ্ৰাই বেশি কথা বলল, দীপা সায় উত্তর দিল।
আধা ঘণ্টা পরে চা খাওয়া শেষ হলে নকুল এসে ট্রে তুলে নিয়ে গেল, দীপা তখন বলল–’শুভ্রা, তুই এবার একটা গান গা, অনেক দিন তোর গান শুনিনি।’
শুভ্রা বলল—’কেন, এই তো কানে কানে গান শুনলি। আর কী শুনিবি? মম যৌবননিকুঞ্জে গাহে পাখি, সখি জাগো?
‘না না, ওসব নয়। আধুনিক গান।’
‘আধুনিক গানের কথায় মনে পড়ল, পরশু গ্রামোফোনের দোকানে গিয়েছিলুম, প্রবাল গুপ্তর একটা নতুন রেকর্ড শুনলাম। ভারি সুন্দর গেয়েছে। রেকর্ডখানা কিনেছি। তুই শুনেছিস?
দীপা অলসভাবে বলল–’শুনেছি। রেডিওতে প্রায়ই বাজায়। সিনেমার গানের কোনো নতুন রেকর্ড বেরিয়েছে নাকি?’
শুভ্রা বলল—’শুনিনি। কিন্তু একটা নতুন ছবি বেরিয়েছে, ‘দীপ্তি’ সিনেমায় দেখাচ্ছে; ছবিটা নাকি খুব ভাল হয়েছে। সুজন হিরো, জোনাকি রায় হিরোইন।’
দীপা একটু নড়েচড়ে বসল, কিছু বলল না। শুভ্রা বলল–’দীপা, ঘরে বসে কি করবি, চল ছবি দেখে আসি। আমার সঙ্গে যদি ছবি দেখতে যাস, তোর বর নিশ্চয় রাগ করবে না।’ কব্জির ঘড়ি দেখে বলল—’সওয়া চারটে বেজেছে। তোর বির কাজ থেকে ফেরে। কখন?’
‘পাঁচটার সময়।’
‘তবে তো ঠিকই হয়েছে। তুই সেজেগুজে তৈরি হতে হতে তোর বর এসে পড়বে, তখন তাকে জানিয়ে আমরা ছবি দেখতে চলে যাব। আর তোর বর। যদি সঙ্গে যেতে চায় তাহলে তো আরো ভাল।’
দীপার ইচ্ছে হল শুভ্রার সঙ্গে ছবি দেখতে যায়। দেবাশিস কোনো আপত্তি তুলবে না। তাও সে জানে। তবু তার মনের একটা অংশ তার ইচ্ছাকে পিছন থেকে টেনে ধরে রইল, তাকে যেতে দেবে না। সে কাচুমাচু হয়ে বলল–’আজ থাক ভাই, আর একদিন যাব।’
শুভ্ৰা আরো কিছুক্ষণ পীড়াপীড়ি করল, কিন্তু দীপা রাজী হল না। শুভ্রা তখন বলল—’বুঝেছি, তুই বর-হাংলা হয়েছিস, বরকে ছেড়ে নড়তে পারিস না। বিয়ের পর কিছু দিন আমারও হয়েছিল।’ সে নিজের বর-হ্যাংলামির গল্প বলতে লাগল। তারপর হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল–’পাঁচটা বাজে, আমি পালাই, এখনই তোর বর এসে পড়বে। আমি থাকলে তোদের অসুবিধে হবে। আবার একদিন আসব।’ শুভ্ব হাসতে হাসতে চলে গেল।
তাকে সদর দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে দীপা ভাবতে লাগল, কি আশ্চর্য মনের কথা মুখ ফুটে না বললে কি কেউ বুঝতে পারে না! সবাই ভাবে, যা গতানুগতিক তাই সত্যি!
তারপর দিন কাটছে।
একদিন বেশ গরম পড়েছে। গুমোট গরম, বাতাস নেই; তাই মনে হয়। শীগগিরই ঝড়-বৃষ্টি নামবে। দেবাশিস বিকেলবেলা ফ্যাক্টরি থেকে ফিরে এসে দেখল, দীপা আর পদ্মলোচন দড়ি ধরে বাগান মাপজোক করছে। দেবাশিসকে দেখে দীপা দড়ি ফেলে তাড়াতাড়ি তার গাড়ির কাছে এল, বেশ উত্তেজিতভাবে বলল–’ঈস্টার লিলিতে কুঁড়ি ধরেছে। দেখবে?
দেবাশিস গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলল–’তাই নাকি! কোথায় ঈস্টার লিলি?’
‘এস, দেখাচ্ছি।’
বাগানের এক ধারে দীপা আঙুল দেখাল। দেবাশিস দেখল, ভূমিলগ্ন ঝাড়ের মাঝখান থেকে ধ্বজার মত ডাঁটি বেরিয়েছে, তার মাথায় তিন-চারটি কুঁড়ির পতাকা। স্নিগ্ধ হেসে দেবাশিস দীপর পানে চাইল–’তোমার বাগানের প্রথম ফুল।’
হাসতে গিয়ে দীপা থেমে গেল। ‘তোমার বাগানের–’, বাগান কি দীপার? হঠাৎ তার মনটা বিকল হয়ে গেল, প্রথম মুকুলোদগম দেখে যে আনন্দ হয়েছিল তা নিবে গেল।
সন্ধ্যের পর নৃপতির আড্ডায় গিয়ে দেবাশিস দেখল আড্ডাধারীরা প্ৰায় সকলেই উপস্থিত, বেশ উত্তেজিতভাবে আলোচনা চলছে। তাকে দেখে সকলে কলরব করে উঠল–’ওহে, শুনেছি?’
সুজন থিয়েটারী পোজ দিয়ে বলল–’আবার শজারুর কাঁটা।’
নৃপতি বলল–’এস, বলছি। তুমি কাগজ পড় না, তাই জান না। মাসখানেক আগে একটা ভিখিরিকে কেউ শজারুর কাঁটা ফুটিয়ে মেরেছিল মনে আছে?
দেবাশিস বলল—’হ্যাঁ, মনে আছে।’
‘পরশু রাত্রে একটা মজুর লেকের ধারে বেঞ্চিতে শুয়ে ঘুমোচ্ছিল, তার হৃদযন্ত্রে শজারুর কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়ে কেউ তাকে খুন করেছে।’
দেবাশিস বলল–’কে খুন করেছে, জানা যায়নি?’
নৃপতি একটু হেসে বলল–’না, পুলিস তদন্ত করছে।’
কপিল বলল—’পুলিস অনন্তকাল ধরে তদন্ত করলেও আসামী ধরা পড়বে না। অবশ্য স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, ভিখিরি এবং মজুরের হত্যাকারী একই লোক। এ ছাড়া আর কেউ কিছু বুঝতে পেরেছ কি?’
খড়্গ বাহাদুর বলল—’দুটো খুনই আমাদের পাড়ায় হয়েছে, সুতরাং অনুমান করা যেতে পারে। যে হত্যাকারী আমাদের পাড়ার লোক।’
নৃপতি বলল–’তা নাও হতে পারে। হত্যাকারী হয়তো টালার লোক।’
এই সময় কফি এল। প্রবাল এতক্ষণ পিয়ানোর সামনে মুখ গোমড়া করে বসে ছিল, আলোচনার হল্লায় বাজাতে পারছিল না; এখন উঠে এসে এক পেয়ালা কফি তুলে নিল। কপিল তাকে প্রশ্ন করল–’কি হে মিঞা তানসেন, তোমার কি মনে হয়?’
প্রবাল কফির পেয়ালায় একবার ঠোঁট ঠেকিয়ে বলল–’আমার মনে হয় হত্যাকারী উম্মাদ এবং তোমরাও বদ্ধ পাগল!’
সবাই হইচই করে উঠল–’আমরা পাগল কেন?’
প্রবাল বলল—’তোমরা হয় পাগল নয়। ভণ্ড। একটা কুলিকে যদি কেউ খুন করে থাকে তোমাদের এত মাথাব্যথা কিসের? কুলির শোকে তোমাদের বুক ফেটে যাচ্ছে এই কথা বোঝাতে চাও?՚
অতঃপর তর্ক উদাম এবং উত্তাল হয়ে উঠল।
দেবাশিস তর্কাতর্কি বাগযুদ্ধ ভালবাসে না। সে কফি শেষ করে চুপিচুপি পালাবার চেষ্টায় ছিল, নৃপতি তা লক্ষ্য করে বলল–’কি হে দেবাশিস, চললে নাকি?’
দেবাশিস বলল—’হ্যাঁ, আজ যাই নৃপতিদা।’
‘নৃপতি বলল—’আচ্ছা, এস। সাবধানে পথ চলবে। দক্ষিণ কলকাতার পথেঘাটে এখন দলে দলে পাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
এক ধমক হাসির উচ্ছাসের সঙ্গে দেবাশিস বেরিয়ে এল। সে দু’চার পা চলেছে, এমন সময় শুনতে পেল দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে গোঁ গোঁ মড়মড় আওয়াজ আসছে। চকিতে আকাশের দিকে চোখ তুলে সে দেখল মেঘ ছুটে আসছে; গুমোট ফেটে ঝড় বেরিয়ে এসেছে। দেখতে দেখতে একঝাঁক জেট বিমানের মত ঝড় এসে পড়ল; বাতাসের প্রচণ্ড দাপটে চারদিক এলোমেলো হয়ে গেল।
দেবাশিস হাওয়ার ধাক্কায় টাল খেতে খেতে একবার ভাবল, ফিরে যাই, নৃপতিদার বাড়ি বরং কাছে; তারপর ভাবলা, ঝড় যখন উঠেছে তখন নিশ্চয় বৃষ্টি নামবে, কতক্ষণ ঝড়-বৃষ্টি চলবে ঠিক নেই; সুতরাং বাড়ির দিকে যাওয়াই ভাল, হয়তো বৃষ্টি নামার আগেই বাড়ি পৌঁছে যাব।
দেবাশিস ঝড়ের প্রতিকূলে মাথা ঝুকিয়ে চলতে লাগল। কিন্তু বেশি দূর চলতে হল না, বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল; বরফের মত ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা তার সবঙ্গে ভিজিয়ে দিল।
বাড়িতে ফিরে দেবাশিস সটান ওপরে চলে গেল। দীপা নিজের ঘরে ছিল, বন্ধ জানলার কাচের ভিতর দিয়ে বৃষ্টি দেখছিল; দেবাশিস জোরে টোকা দিয়ে ঘরে ঢুকতেই সে ফিরে দাঁড়িয়ে দেবাশিসের সিক্ত মূর্তি দেখে সশঙ্ক নিশ্বাস টেনে চক্ষু বিস্ফারিত করল। দেবাশিস লজ্জিতভাবে ‘ভিজে গেছি বলে বাথরুমে ঢুকে পড়ল।
দশ মিনিট পরে শুকনো জামাকাপড় পরে সে বেরিয়ে এল, তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে দেখল, দীপা যেমন ছিল তেমনি দাঁড়িয়ে আছে। সে বলল—’নৃপতিবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছি আর ঝড়-বৃষ্টি আরম্ভ হয়ে গেল। চল, খাবার সময় হয়েছে।’
পরদিন সকালে গায়ে দারুণ ব্যথা নিয়ে দেবাশিস ঘুম থেকে উঠল। বৃষ্টিতে ভেজার ফল, সন্দেহ নেই; হয়তো ইনফ্লুয়েঞ্জায় দাঁড়াবে। দেবাশিস ভাবল আজ আর কাজে যাবে না। কিন্তু সারা দিন বাড়িতে থাকলে বার বার দীপার সংস্পর্শে আসতে হবে, নিরর্থক কথা বলতে হবে; সে লক্ষ্য করেছে। রবিবারে দীপা যেন শঙ্কিত আড়ষ্ট হয়ে থাকে। কী দরকার? সে গায়ের ব্যথার কথা কাউকে বলল না, যথারীতি খাওয়া-দাওয়া করে ফ্যাক্টরি চলে গেল।
বিকেলবেলা সে গায়ে জ্বর নিয়ে বাড়ি ফিরল। জলখাবার খেতে বসে সে নকুলকে বলল–’নকুল, আমার একটু ঠাণ্ডা লেগেছে, রাত্তিরে ভাত খাবো না।’
নকুল বলল—’কাল রাত্তিরে যা ভেজাটা ভিজেছ, ঠাণ্ডা তো লাগবেই। তা ডাক্তারবাবুকে খবর দেব? ‘
দেবাশিস বলল—’আরে না না, তেমন কিছু নয়। গোটা দুই অ্যাসপিরিন খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।’
রাত্রে সে খেতে নামল না। খাবার সময় হলে দীপা নীচে গিয়ে নকুলকে বলল–’নকুল, ওর খাবার তৈরি হয়ে থাকে তো আমাকে দাও, আমি নিয়ে যাই।’
নকুল একটা ট্রে-র উপর সুপের বাটি, টোস্ট এবং স্যালাড সাজিয়ে রাখছিল, বলল–’সে কি বউদি, তুমি দাদাবাবুর খাবার নিয়ে যাবে! আমি তাহলে রয়েছি কি কত্তে? নাও, চল।’
ট্রে নিয়ে নকুল আগে আগে চলল, তার পিছনে দীপা। দীপার মন ধুকপুক করছে। ওপরে উঠে নকুল যখন দীপার ঘরের দিকে চলল, সে তখন ক্ষীণ কুষ্ঠিত স্বরে বলল—‘ওদিকে নয় নকুল, এই ঘরে।’
নকুল ফিরে দাঁড়িয়ে দীপার পানে তীক্ষ্ণ চোখে চাইল, তারপর অন্য ঘরে গিয়ে দেখল দেবাশিস বিছানায় শুয়ে বই পড়ছে। নকুল খাটের পাশে গিয়ে সন্দেহভরা গলায় বলল—’তুমি এ ঘরে শুয়েছ যে, দাদাবাবু!’
ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরেছে তাই আলাদা শুয়েছি। ছোঁয়াচে রোগ, শেষে দীপাকেও ধরবে।’
সন্তোষজনক কৈফিয়ত। দীপা নিশ্বাস ফেলে বাঁচল। নকুলও আর কিছু বলল না, কিন্তু তার চোখ সন্দিগ্ধ হয়ে রইল। সে যেন বুঝেছে, যেমনটি হওয়া উচিত ঠিক তেমনটি হচ্ছে না, কোথাও একটু গলদ রয়েছে।
ঘণ্টা তিনেক পরে দীপা নিজের ঘরে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল, দোরে ঠকঠক শব্দ শুনে তার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম-চোখে উঠে দোর খুলেই সে প্রায় অতিকে উঠল। দেবাশিস বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে, তার শরীর ঠকঠক করে কাঁপছে। সে জড়িয়ে জড়িয়ে বলল—’বুকে দারুণ ব্যথা, জ্বরও বেড়েছে…ডাক্তারকে খবর দিতে হবে।’ এই বলে সে টলতে টলতে নিজের ঘরে ফিরে গেল।
আকস্মিক বিপৎপাত মানুষের মন ক্ষণকালের জন্য অসাড় হয়ে যায়। তারপর সংবিৎ ফিরে আসে। দীপা স্বস্থ হয়ে ভাবল, ডাক্তার ডাকতে হবে; কিন্তু এ বাড়ির বাঁধা। ডাক্তার কে তা সে জানে না, তাঁকে ডাকতে হলে নকুলকে পাঠাতে হবে; তাতে অনেক দেরি হবে। তার চেয়ে যদি সোনকাকাকে ডাকা যায়–
দীপা ডাক্তার সুহৃৎ সেনকে টেলিফোন করল। ডাক্তার সেন দীপার বাপের বাড়ির পারিবারিক ডাক্তার।
একটি নিদ্ৰালু স্বর শোনা গেল-‘হ্যালো।’
দীপা বলল–’সোনকাকা! আমি দীপা।’
‘দীপা! কী ব্যাপার?’
‘আমি-আমার-? দীপা ঢোক গিলল—’আমার স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এখনই ডাক্তার চাই। আমি জানি না। এঁদের ডাক্তার কে, তাই আপনাকে ডাকছি। আপনি এক্ষুনি আসুন সেনকাকা।’
‘এক্ষুনি যাচ্ছি। কিন্তু অসুখের লক্ষণ কি?
‘বৃষ্টিতে ভিজে ঠাণ্ডা লেগেছিল–তারপর–’
‘আচ্ছা, আমি আসছি।’
‘বাড়ি চিনে আসতে পারবেন তো?’
‘খুব পারব! এই তো সেদিন তোমার বউভাতের নেমন্তন্ন খেয়েছি।’
মিনিট কুড়ির মধ্যে ডাক্তার সেন এলেন, ওপরে গিয়ে দেবাশিসের পরীক্ষা শুরু করলেন। দীপা দোরের চৌকাঠে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল।
প্রথমে কয়েকটা প্রশ্ন করে ডাক্তার রোগীর নাড়ি দেখলেন, টেম্পরেচার নিলেন, তারপর স্টেথস্কোপ কানে লাগিয়ে বুক পরীক্ষা করতে লাগলেন। পরীক্ষা করতে করতে তাঁর চোখ হঠাৎ বিস্ফারিত হল, তিনি বলে উঠলেন–’এ কি?’
দেবাশিস ক্লিষ্ট স্বরে বলল—’হ্যাঁ ডাক্তারবাবু্, আমার সবই উল্টে।’
দীপা সচকিত হয়ে উঠল, কিন্তু দেবাশিস আর কিছু বলল না। ডাক্তার কেবল ঘাড় নাড়লেন।
পরীক্ষা শেষ করে ডাক্তার বললেন–‘বুকে বেশ সর্দি জমেছে। আমি ইঞ্জেকশন দিচ্ছি, তাতেই কাজ হবে। আবার কাল সকালে আমি আসব, যদি দরকার মনে হয় তখন রীতিমত চিকিৎসা আরম্ভ করা যাবে।’
ইঞ্জেকশন দিয়ে দেবাশিসের মাথায় হাত বুলিয়ে ডাক্তার সস্নেহে বললেন–‘ভয়ের কিছু নেই, দু’ চার দিনের মধ্যেই সেরে উঠবে। আচ্ছা, আজ ঘুমিয়ে পড় বাবাজি, কাল ন’টার সময় আবার আমি আসব। তোমার বাড়ির ডাক্তারকেও খবর দিও।’
ডাক্তার ঘর থেকে বেরুলেন, দীপা তাঁর সঙ্গে সঙ্গে গেল। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে ডাক্তার সেন দীপাকে বললেন–‘একটা বড় আশ্চর্য ব্যাপার দেখলাম–’
‘কি দেখলেন?’
ডাক্তার যা দেখেছেন দীপাকে বললেন।
দিন দশেকের মধ্যে দেবাশিস আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল। এই দশটা দিন অসুখের সময় হলেও দেবাশিসের পক্ষে বড় সুখের সময়। দীপা ঘুরে ফিরে তার কাছে আসে, খাটের কিনারায় বসে তার সঙ্গে কথা বলে; তার খাবার সময় হলে নীচে গিয়ে নিজের হাতে খাবার নিয়ে আসে, নকুলকে আনতে দেয় না। রাত্রে ঘুম থেকে উঠে চুপিচুপি এসে তাকে দেখে যায়; আধ-জাগা আধ-ঘুমন্ত অবস্থায় দেবাশিস জানতে পারে।
একদিন, দেবাশিস তখন বেশ সেরে উঠেছে, বিকেলবেলা পিঠের নীচে বালিশ দিয়ে বিছানায় আধ-বসা হয়ে একটা বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে, দীপা দুধ-কোকোর পেয়ালা নিয়ে ঘরে ঢুকল। দেবাশিস হেসে তার হাত থেকে পেয়ালা নিল, দীপা খাটের পায়ের দিকে গিয়ে বসল। বলল-‘দাদা ফোন করেছিল, সন্ধ্যের পর আসবে।’
দেবাশিস উত্তর দিল না, কোকোর কাপে ছোট ছোট চুমুক দিতে দিতে দীপার। পানে চেয়ে রইল। বলা বাহুল্য, গত দশ দিনে দীপার বাপের বাড়ি থেকে রোজই কেউ না কেউ এসে তত্ত্ব-তল্লাশ নিয়ে গেছে। দীপার মা গোড়ার দিকে দু’ রাত্রি এসে এখানে ছিলেন। কিন্তু দীপা তার মা’র। এখানে থাকা মনে মনে পছন্দ করেনি।
দেবাশিস কাপে চুমুক দিচ্ছে আর চেয়ে আছে, দীপা একটু অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। একটা কিছু বলবার জন্যে সে বলল—‘বাগানে বোধ হয় আরো কিছু ক্রোটন দরকার হবে।’
এবারও দেবাশিস তার কথায় কান দিল না। খিন্ন-মধুর স্বরে বলল–’দীপা, তুমি আমাকে ভালবাস না, কিন্তু আমি তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি।’
নির্মেঘ আকাশ থেকে বজ্বপাতের মত অপ্রত্যাশিত কথা। দীপার মুখ রাঙা হয়ে উঠল, তারপরই ফ্যাকাসে হয়ে গেল। সে দোরের দিকে পা বাড়িয়ে স্খলিত স্বরে বলল–’বোধ হয় মালী এসেছে, যাই, দেখি সে কি করছে।’
পিছন থেকে দেবাশিস ডাকলা–’দীপা, শোনো।’
দীপা দুরুদুরু বুকে ফিরে এসে দাঁড়াল। দেবাশিসের মুখের সেই খিন্না-করুণ ভাব আর নেই, সে খালি পেয়ালা দীপকে দিয়ে সহজ সুরে বল—’আমার কয়েকজন বন্ধুকে চায়ের নেমন্তন্ন করতে চাই। চার-পাঁচ জনের বেশি নয়।’
দীপা মস্ত একটা নিশ্বাস ফেলে বলল–’কবে?’
‘তাড়া নেই। আজ রবিবার, ধরো আসছে রবিবারে যদি করা যায়?’
‘আচ্ছা।’
‘বাজারের খাবার কিন্তু একটুও থাকবে না। সব খাবার তুমি আর নকুল তৈরি করবে।’
‘আচ্ছা।’
তারপর দিন কাটছে। দেবাশিস আবার ফ্যাক্টরি যেতে আরম্ভ করল। শনিবার সন্ধ্যায়। নৃপতির আড়ায় গেল। অনেক দিন পরে তাকে দেখে সবাই খুশি। এমন কি প্রবাল পিয়ানোয় বসে একটা হাল্কা হাসির গৎ বাজাতে লাগল। নৃপতি বলল–’একটু রোগা হয়ে গেছ।’
খড়্গ বাহাদুর বলল–’ভাই দেবু্, ঠেসে শিককাবাব খাও, দু’ দিনে ইয়া লাশ হয়ে যাবে।’
কপিল বলল–’খড়গ, তুই খাম! তুই তো দিনে দেড় কিলো শিককাবাব খাস, তবে গায়ে গত্তি লাগে না কেন?’
খড়্গ বলল–’আমি যে ফুটবল খেলি, যারা ফুটবল খেলে তারা কখনো মোটা হয় না। মোটা ফুটবল খেলোয়াড় দেখেছিস?’
সুজন বলল—’কুস্তিগীর পালোয়ানেরা কিন্তু মোটা হয়। শুনেছি তারা হরদম পেস্তা আর বেদোনর রস খায়।’
এই সময় বিজয়মাধব এল। দেবাশিসকে দেখে তার কাছে এসে বলল–’অসুখের পর এই প্রথম এলে, না?’
দেবাশিস বলল–’হ্যাঁ।’
‘এখন তাহলে একেবারে ঠিক হয়ে গেছে?’
‘হ্যাঁ।’
দেবাশিসের কাছে কথা বলার বিশেষ উৎসাহ না পেয়ে বিজয় বিরস মুখে তক্তপোশের ধারে গিয়ে বসল। দেবাশিস তখন সকলের দিকে চোখ ফিরিয়ে বলল–’তোমাদের চায়ের নেমন্তন্ন করতে এসেছি। কাল রবিবার সাড়ে পাঁচটার পর যখন ইচ্ছে আসবে। কেমন, কারুর অসুবিধে নেই তো?’
কারুর অসুবিধে নেই। সবাই সানন্দে রাজী। কেবল খড়্গ বাহাদুর বলল—’কাল আমার খেলা আছে। তবু আমি যত শীগগির পারি যাব। চায়ের সঙ্গে শিককাবাব খাওয়াবে তো?’
কপিল বলল—’তুই জ্বালালি। চায়ের সঙ্গে কেউ শিককাবাব খায়? শিককাবাবের অনুপান হচ্ছে বোতল।’
দেবাশিস প্রবালের দিকে চেয়ে বলল—’তুমি আসবে তো?’
প্রবাল বলল—’যাব। বড়মানুষের বাড়িতে নেমন্তন্ন আমি কখনো উপেক্ষা করি না। কিন্তু উপলক্ষটা কি? রোগমুক্তির উৎসব?
দেবাশিস বলল–’আমার বউয়ের হাতের তৈরি খাবার তোমাদের খাওয়াব। বিজয়, তুমিও a
‘যাব।’