কী ক’রে যে তোমাকে শুইয়ে দিতে পেরেছি এখানে
শীতল মাটির নিচে? মা, তুমি নিথর নিদ্রা মুড়ি
দিয়ে আছো; ফাল্গুনের রোদ
বিছানো কাফন-ঢাকা শরীরে, তোমার
উন্মোচিত মুখ স্পর্শ করি শেষবারের মতন।
বজ্রের আওয়াজ কর্জ ক’রে
যদি ডাকি বারবার, তবু তোমার এই ঘুম
ভাঙবে না কোনওদিন, কোনওদিন আর।
নির্বিকার গোরখোদকের কোদালের
মাটি-খোবলানো ঘায়ে দ্বিপ্রহরে আমার পাঁজর
বোবা আর্তনাদ করে। নিঃসীম অনন্তে
তোমার নিঃসঙ্গ যাত্রা করেছি ধারণ অনুভবে
প্রত্যেকের অগোচরে। হঠাৎ কবরস্তানে ব্যাকুল কোকিল
ডেকে ওঠে রৌদ্র চিরে, নিঝুম দুপুর
আরও বেশি স্তব্ধতায় সমাহিত। মার কবরের
পাশে ব’সে এবং দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ
মার আদরের মতো প্রশান্তির স্নেহ পাই; মাটি
ক্রন্দনের প্রতি উদাসীন বুকে টেনে নেয় তাঁকে।
মানুষের কী স্বভাব! এখানেও কতিপয় লোক কিয়দ্দূরে
তুমুল বচসা করে না জানি কী নিয়ে!
টাকাটাড়ি? দলাদলি? কবর-বাঁধানো বিষয়ক
জটিলতা? মাঝে মাঝে নিভৃত কোকিল ডেকে ওঠে।
বলতে বুক পোড়োবাড়ি হ’য়ে যাচ্ছে, তবু
বলছি মা, তোমার আমার দেখা হবে না কোথাও
কোনওকালে; আমিও তোমারই মতো অস্তিত্ববিহীন
হয়ে যাব কোনওদিন, শুধু
মাঝে মাঝে ধুধু স্মৃতিকণারূপে ছুঁয়ে
যাব কি যাব না কারও কারও ভুলো মন!
মা তোমার শিয়রে গোলাপ রেখে হৃদয়ে সায়াহ্ন
নিয়ে পথ হাঁটি, প্রাণে ঝরে মরা পাতা,
মৃদু হাওয়া বন্দিনীর শীতল ফোঁপানি,
চোখ বড় বেশি জ্বালা করে।