Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ভয়ংকর সুন্দর || Sunil Gangopadhyay » Page 9

ভয়ংকর সুন্দর || Sunil Gangopadhyay

সূচা সিং জানলা থেকে সরে যাবার পর কাকাবাবু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, লোকটা পাগল হয়ে গেছে! একটা পাগলের জন্য আমার এত পরিশ্রম হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে।

আমরা কাছে এসে কাকাবাবুর পাশে খাটের ওপর বসলাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ককাবাবু, তোমাকে কী করে নিয়ে এল এখানে?

কাকাবাবু অদ্ভুতভাবে হেসে বললেন, আমাকে ধরে আনা খুবই সহজ। আমি তো দৌড়তেও পারি না, মারামারিও করতে পারি না। পোস্ট অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম, একটা গাড়ি আসছিল আমার গা ঘেঁষে। দুটো লোক তার থেকে নেমে আমার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ জোর করে চেপে ধরে গাড়িতে তুলে নিল। ঐখানে রাস্তাটা নির্জন, সকালে বিশেষ লোকও থাকে না-কেউ কিছু বুঝতে পারেনি। আমিও চ্যাঁচামেচি করিনি, তাতে কোনও লাভও হত না-কারণ একজন আমার পাঁজরার কাছে একটা ছুরি চেপে ধরেছিল?

গাড়িতে করে সোজা এখানে নিয়ে এল?

না। কাল সারাদিন রেখে দিয়েছিল ওদের গ্যারেজের পেছনে একটা ঘরে। সূচা সিং-এর বদ্ধমূল বিশ্বাস হয়ে গেছে, আমি কোনও গুপ্তধন কিংবা সোনার খনি আবিষ্কার করেছি। সেই যে কাঠের বাক্সটা ওকে দেখতে দিইনি, তাতেই ওর সন্দেহ হয়েছে। এমনিতে ও আমার সঙ্গে বিশেষ কিছু খারাপ ব্যবহার করেনি, শুধু বারবার এক কথা-ওকে আমি গুপ্তধনের সন্ধান বলে দিলে ও আমাকে আধা বাখরা দেবে।

সিদ্ধাৰ্থদা জিজ্ঞেস করলেন, আপনার হাতে লাগল কী করে?

একবার শুধু ওর একজন সঙ্গী আমার হাতে গরম লোহার ছাঁকা দিয়ে দিয়েছে। সূচা সিং বলেছিল কাছে এনে ভয় দেখাতে, লোকটা সত্যি সত্যি ছাঁকা লাগিয়ে দিল। সূচা সিং তখন বকল লোকটাকে। সূচা সিং আমার ওপর ঠিক অত্যাচার করতে চায় না। ওর কায়দা হচ্ছে, ভাল ব্যবহার করে আমাকে বশে আনা, ভোরবেলা আমাকে নিয়ে এসেছে এই বাড়িতে।

কিন্তু আপনাদের তাঁবু লণ্ডভণ্ড করেও তো ও কিছুই খুঁজে পায়নি। পাথরের মূর্তিটা দেখে ও তো কিছুই বুঝবে না। তাহলে এখনও আটকে রেখেছে কেন?

বললাম না, ও পাগলের মতন ব্যবহার করছে। মুণ্ডুটার ভেতর দিকে কতকগুলো অক্ষর লেখা আছে। ওর ধারণা ওর মধ্যেই আছে গুপ্তধনের সন্ধান। সিনেমা-টিনেমায় যে রকম দেখা যায় অনেক সময়! বিশেষত, মূর্তিটার জন্য আমার এত ব্যাকুলতাই ওর প্রধান সন্দেহের কারণ। আমার সামনে ও মুণ্ডুটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে গিয়েছিল, আমি ওর পা জড়িয়ে ধরেছিলাম!

সিদ্ধাৰ্থদা বললেন, ও যদি মুণ্ডুটার কোনও ক্ষতি করে, আমি ওকে খুন করে ফেলব!

কাকাবাবু বললেন, ওকে দমন করার কোনও সাধ্য আমাদের নেই। ওর সঙ্গে আরও দুজন লোক আছে।

সিদ্ধাৰ্থদা জানালার কাছে গিয়ে শিকগুলো পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর বললেন, জানালাটা ভাঙা বোধহয় খুব শক্ত হবে না। আমরা চেষ্টা করলে এখান থেকে পালাতে পারি।

কাকাবাবু বিষণ্ণভাবে বললেন, ঐ মুণ্ডুটা ফেলে আমি কিছুতেই যাব না। তার বদলে আমি মরতেও রাজি আছি। তোমরা বরং যাও-

কাকাবাবুকে ফেলে যে আমরা কেউ যাব না, তা তো বোঝাই যায়। সিদ্ধাৰ্থদা ওভারকেট খুলে ভাল করে বসলেন। স্নিগ্ধাদি আর রিণি এতক্ষণে শ্ৰীনগরে পৌঁছে নিশ্চয়ই খুব দুশ্চিন্তা করছে। আমরা কবে এখান থেকে ছাড়া পাব, ঠিক নেই। কিংবা কোনওদিন ছাড়া পাব কি না

একটু রাত হলে সূচা সিং দরজা খুলে ঘরে ঢুকল। তার সঙ্গে আরও দুজন লোক। একজনের হাতে একটা মস্ত বড় ছুরি, অন্যজনের হাতে খাবারদাবার। সূচা সিং বলল, কী প্রোফেসারসাব, মত বদলাল?

কাকাবাবু হাত জোড় করে বললেন, সিংখ্রজী, তোমাকে সত্যিই বলছি, আমি কোনও গুপ্তধনের খবর জানি না?

সূচা সিং ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল, আপনারা বাঙালিরা বড় ধড়িবাজ! এত টাকা পয়সা খরচ করে, এত কষ্ট করে আপনি শুধু ঐ মুণ্ডুটা খুঁজতে এসেছিলেন? এই কথা আমি বিশ্বাস করব?

ওটার জন্য আসিনি। এমনি হঠাৎ পেয়ে গেলাম।

ঠিক আছে, ওটা কোথায় পেয়েছেন, সে কথা আমাকে বলুন। ওটা কীসের মুণ্ডু? কোনও দেওতার মুণ্ডু? আপনারা যেখানে গিয়েছিলেন, সেখানে কোনও মন্দির নেই, আমি খোঁজ নিয়েছি। ওখানে পাথরের মুণ্ডু এল কোথা থেকে? বাকি মুর্তিটা কোথায়? বলুন সে কথা?

ওকে কিছুতেই বোঝানো যাবে না ভেবে কাকাবাবু চুপ করলেন। সিদ্ধাৰ্থদা তেজের সঙ্গে বললেন, আমরা ওটা যেখানে পাই না কেন? তার জন্য তুমি আমাদের আটকে রাখবে? দেশে আইন নেই? পুলিশের হাত থেকে তুমি বাঁচাতে পারবে?

সূচা সিং-এর সঙ্গী ছুরিটা উঁচু করল। সূচা সিং তাকে হাত দিয়ে বারণ করে বলল, আমাকে পুলিশের ভয় দেখিও না। চুপচাপ থাকো। তোমার মতন ছোকরাকে আমি এক রদ দিয়ে কাৎ করে দিতে পারি। যদি ভাল চাও তো মুখ বুজে থাকো! আমি শুধু প্রোফেসারের সঙ্গে কথা বলছি।

কাকাবাবু বললেন, আমার আর কিছু বলার নেই!

খাবার রেখে ওরা চলে গেল। আমাদের বেশ খিদে পেয়েছিল। সিদ্ধার্থদা ঢাকনাগুলো খুলে চমকে গিয়ে বললেন, আরে, বাস! খাবারগুলো তো দারুণ দিয়েছে! বন্দী করে রেখে কেউ এরকম খাবার দেয় কখনও শুনিনি।

বড় বড় বাটিতে করে বিরিয়ানি, ডিম ভাজা, মুরগীর মাংস, চিড়ের পায়েস রাখা আছে। কাকাবাবু ঠিকই বলেছিলেন। আমাদের ভাল ভাল খাবার দিয়ে ভুলিয়ে ও কাকাবাবুকে দলে টানতে চাইছে। সেইসব খাবার দেখেই আমার খিদে বেড়ে গেল। সিদ্ধার্থদা তিনজনের জন্য ভাগ করে দিলেন। আমি সবে মুখে তুলতে গেছি, সিদ্ধাৰ্থদা বললেন, খােচ্ছ যে, যদি বিষ মেশানো থাকে?

শুনেই আমি ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি হাত তুলে নিলাম। কাকাবাবু বললেন, সূচা সিং সে-রকম কিছু করবে বলে মনে হয় না। তবু সাবধানের মাের নেই। তোমরা আগে খেয়ো না, আমি খেয়ে দেখছি প্ৰথমে। আমি বুড়ো মানুষ, আমি মরলেও ক্ষতি নেই!

সিদ্ধাৰ্থদা হাসতে হাসতে বললেন, বিষ মেশানো থাক। আর যাই থাক, এ রকম চমৎকার খাবার চোখের সামনে রেখে আমি না খেয়ে থাকতে পারব না।

টপ করে একটা মাংস তুলে কামড় বসিয়ে সিদ্ধাৰ্থদা বললেন, বাঃ, গ্র্যান্ড! এ রকম খাবার পেলে আমি অনেকদিন এখানে থাকতে রাজি আছি!

সত্যিই যদি আমাদের এখানে অনেকদিন থাকতে হয়, তাহলে স্নিগ্ধাদি আর রিণির কী হবে? সিদ্ধাৰ্থদার যে সেজন্য কোনও চিন্তাই নেই।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে আমরা বিছানা পেতে ফেললাম। খাটের তলায় আশ-দশটা কম্বল রাখা ছিল। কম্বলগুলো বেশ নোংরা, কিন্তু উপায় তো নেই।

অনেক রাত পর্যন্ত আমরা না ঘুমিয়ে বিছানায় শুয়ে এখান থেকে উদ্ধার পাবার উপায় সম্বন্ধে আলোচনা করলাম। কিন্তু কোনও পথই পাওয়া গেল না। কণিষ্কর মুণ্ডুটা না পেলে কাকাবাবু কিছুতেই যাবেন না। সেটা সূচা সিং-এর কাছ থেকে কী করে উদ্ধার করা যাবে? বেশি কিছু করতে গেলে ও যদি মুণ্ডুটা ভেঙে ফেলে!

ভোরবেলা উঠেই সিদ্ধার্থদা বিছানার পাশে হাত বাড়িয়ে বললেন, কই, এখনও চা দেয়নি?

সকালবেলা বেড-টি খাওয়ার অভ্যোস, সিদ্ধার্থদা বোধহয় ভেবেছিলেন হোটেলের ঘরে শুয়ে আছেন। ধড়মড় করে উঠে বসে সিদ্ধার্থদা বললেন, ব্যাটারা আচ্ছা অভদ্র তো, এখনও চা দেয় না কেন?

দরজার কাছে গিয়ে দুম দুম করে ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে বললেন, কই হ্যায়? চা লৌ আও

আমি বললাম, ওরা বোধহয় চা খায় না।

সিদ্ধার্থদা বললেন, নিশ্চয়ই খায়! পাঞ্জাবিরা বাঙালিদের মতনই চা খেতে খুব ভালবাসে।

কিন্তু কারুর কোনও সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। চা তো দূরের কথা, সকালবেলা কেউ কোনও খাবারও দিতে এল না। কাল রাত্তিরে অত খাইয়ে হঠাৎ আজ সকালবেলা এই ব্যবহার! ভাগ্যিস ঘরটার সঙ্গে একটা ছোট বাথরুম ছিল, নইলে আমাদের আরও অসুবিধে হত।

সিদ্ধার্থদা খানিকটা বাদে ধৈর্য হারিয়ে শিক ধরে টানাটানি করছিলেন, এমন সময় একটা গাড়ি থামার আওয়াজ শোনা গেল। সিদ্ধার্থদা বললেন, নিশ্চয়ই পুলিশের গাড়ি।

আমিও ছুটে গেলাম জানলার কাছে। কাকাবাবু নিশ্চল হয়ে বসে রইলেন খাটে। সকাল থেকে কাকাবাবু একটাও কথা বলেননি।

আমাদের নিরাশ করে গাড়ি থেকে নামল সূচা সিং আর একটা লোক। সূচা সিং একা গট গট করে উঠে এল ওপরে। তার হাতে সেই মহামূল্যবান কাঠের বাক্সট।

সিদ্ধাৰ্থদা হালকাভাবে বললেন, কী সিংজী, সকালবেলা কোথায় গিয়েছিলে? আমাদের চা খাওয়ালে না?

সূচা সিং কঠোরভাবে বলল, জানলাসে হঠ যাও! আমি প্রোফেসারের সঙ্গে কথা বলব!

কাকাবাবু তখনও খাটে বসে আছেন। সূচা সিং আমার দিকে তাকিয়ে বলল, এই যে খোকাবাবু, তোমার আংকেলের চশমাটা নিয়ে যাও! দেখুন প্রোফেসারসাব, আপনি যা চাইছেন, তাই দিচ্ছি! এবার আমার কথা শুনবেন।

চশমাটা পেয়ে কাকাবাবু স্পষ্টভাবে খুশি হয়ে উঠলেন। বললেন, সূচা সিং, তোমার সঙ্গে আমাদের তো কোনও ঝগড়া নেই। তুমি আমাদের ছেড়ে দাও। আমরা পুলিশকে কিছু জনাব না তোমার নামে। আমি কথা দিচ্ছি!

সূচা সিং বিরক্তভাবে বলল, এক কথা বারবার বলতে আমি পছন্দ করি না! আমি পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে ঠিক করুন, আমার কথা শুনবেন কি না!

সিদ্ধাৰ্থদা বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ঘরের মধ্যে এসে বসুন, আমরা এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করব।

সূচা সিং প্রচণ্ড এক ধমক দিয়ে বলল, চোপ! তোমার কোনও কথা শুনতে চাইনা!

তারপর সে কাঠের বাক্স খুলে কণিষ্কর মুখটা দু আঙুলে তুলে উঁচু করে বলল, কী প্রোফেসারসাব, কিছু ঠিক করলেন?

কাকাবাবু পাথরের মুখটার দিকে এক দৃষ্টি চেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, সিংজী, ঈশ্বরের নামে অনুরোধ করছি, তুমি ওটাকে ওভাবে ধরো না। সাবধানে ধরে। ওটা ভেঙে গেলে আমার জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে?

বটে! বটে! এটার তাহলে অনেক দাম!

সিংজী, তুমি ওটা ফেরত দাও, তোমাকে তার বদলে আমি পাঁচ হাজার টাকা দেব। তার বেশি দেবার সামর্থ্য আমার নেই।

পাঁচ হাজার? একটা পাথরের মুণ্ডুর দাম পাঁচ হাজার! এ রকম পাথরকা চীজ তো হামেশা পাওয়া যায়। আপনি পাঁচ হাজার রুপিয়া দিতে চাইছেন! তাহলে এক লাখ রুপিয়ার কম আমি ছাড়ব না।

এক লাখ টাকা আমার নেই, থাকলে দিতাম। ও মূর্তিটার বাজারে কোনও দাম নেই। আমার কাছেই শুধু ওর দাম।

ওসব চালাকি ছাড়ুন। খাঁটি কথাটা কী বলুন!

সিদ্ধাৰ্থদা জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে খপ করে পাথরের মুখটা চেপে ধরলেন। তাপর বললেন, ছাড়ব না, কিছুতেই ছাড়ব না।

কাকাবাবু ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, সিদ্ধার্থ ছেড়ে দাও, শিগগির ছেড়ে দাও! ভেঙে যাবে ওটা। তবু ওর কাছেই থাকুক!

সূচা সিং দু হাতে চেপে ধরেছে সিদ্ধাৰ্থদার হাত। আস্তে আস্তে পাথরের মুখটা ছাড়িয়ে নিয়ে কাঠের বাক্সে রাখল। সাধারণ মানুষের মুখের চেয়ে দেড় গুণ বড় কণিষ্কর মুখটা। বেশ ভারী। কিন্তু সূচা সিং অনায়াসেই হাল্কা বলের মতন সেটা বাঁ হাতে ধরে মাটিতে রাখল। তারপর সিদ্ধার্থদার হাতটা ধরে মোচড়াতে লাগল। সিদ্ধাৰ্থদা যন্ত্রণায় মুখ কুঁচকে ফেললেন। হাতটা বোধহয় ভেঙেই যাবে। আমি কাঁদো-কাঁদো মুখে সূচা সিংকে অনুরোধ করলাম, ছেড়ে দিন! ওঁকে ছেড়ে দিন। আর কখনও এ রকম করবে না

সূচা সিং ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, বেতমীজ! আমার সঙ্গে জোর দেখাতে যায়! খুলে নেব হাতখানা?

যন্ত্রণায় সিদ্ধাৰ্থদার মুখ কুঁকড়ে যাচ্ছে, কিন্তু গলা দিয়ে একটা আওয়াজ বার করলেন না। শেষ পর্যন্ত সূচা সিং এক ধাক্কা দিয়ে সিদ্ধাৰ্থদাকে মেঝেতে ফেলে দিল। তারপর কর্কশ গলায় বলল, প্রোফেসার, শুনলে না। আমার কথা। তাহলে থাকো এখানে! আমি জম্মুতে চললাম, ওখানে আমার এক দোস্তু পাখরের দোকানদার, তাকে দেখাব জিনিসটা! তোমাদের মারব না-কাল আমার লোক এসে তোমাদের ছেড়ে দেবে।

সূচা সিং গটমট করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গিয়ে গাড়িটাতে উঠল। কাকাবাবুও খাট থেকে নেমে এসে জানলার পাশে দাঁড়িয়েছেন। গাড়িটা ছাড়ার পর সূচা সিং আমাদের দিকে তাকিয়ে দাঁত বার করে হাসল। তারপর চলে গেল হুশ করে!

গাড়িটা চলে যাওয়া মাত্ৰ কাকাবাবু অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। সিদ্ধাৰ্থদার পাশে বসে পড়ে ব্যাকুলভাবে জিজ্ঞেস করলেন, সিদ্ধার্থ, তোমার হাত ভাঙেনি তো?

সিদ্ধার্থদা, উঠে বসে বললেন, না, ভাঙেনি বোধহয় শেষ পর্যন্ত! শয়তানটাকে আমি শেষ পর্যন্ত শিক্ষা দেবই। এর প্রতিশোধ যদি না নিই-

শোনো, এখন এক মিনিটও সময় নষ্ট করার উপায় নেই। শিগগির ওঠে! দরজা ভাঙতে হবে।

কাকাবাবু নিজেই খোঁড়া পা নিয়ে ছুটে গিয়ে দরজার গায়ে জোরে ধাক্কা দিলেন। পুরু কাঠের দরজা-কেঁপে উঠল শুধু। সিদ্ধাৰ্থদা উঠে এসে বললেন, কাকাবাবু, আপনি সরুন, আমি দেখছি!

না, না, এসো, আমরা তিনজনে মিলেই এক সঙ্গে ধাক্কা দিই–

সিদ্ধাৰ্থদার দেখাদেখি আমিও অনেকটা ছুটে গিয়ে ধাক্কা দিলাম দরজায়। প্রত্যেকবার শব্দ হচ্ছে প্ৰচণ্ড জোরে। কাকাবাবু বললেন, হোক শব্দ, তাই শুনে যদি কেউ আসে তো ভালই!

কেউ এল না। আমরা পর পর ধাক্কা দিয়ে যেতে লাগলাম। বেশ খানিকটা বাদে একটা পাল্লায় একটু ফাটল দেখা দিল, তাই দেখে আমাদের উৎসাহ হয়ে গেল। দ্বিগুণ। শেষ পর্যন্ত যে আমরা দরজাটা ভেঙে ফেলতে পারলাম, সেটা শুধু গায়ের জোরে নয়, মনের জোরে।

ঘর থেকে বেরিয়েই কাকাবাবু বললেন, আমি দৌড়তে পারব না, তোমরা দুজন দৌড়ে যাও। বড় রাস্তায় গিয়ে যে-কোনও একটা গাড়ি থামাবার চেষ্টা করো! যে-কোনও উপায়ে থামানো চাই। আমি আসছি। পরে–

প্ৰথমে একটা প্রাইভেট গাড়িকে থামাবার চেষ্টা করলাম। কিছুতেই থামল না। আর একটু হলে আমাদের চাপা দিয়ে চলে যেত। তারপর একটা বাস। এখানকার বাস মাঝরাস্তায় কিছুতেই থামে না। বেশ কিছুক্ষণ আর কোনও গাড়ি নেই। ততক্ষণে কাকাবাবু এসে পৌঁছেছেন। এবার দূর থেকে একটা জিপ আসতে দেখা গেল। কাকাবাবু বললেন, এসো সবাই মিলে রাস্তার মাঝখানে পাশাপাশি দাঁড়াই। এটাকে থামাতেই হবে।

জিপটা প্ৰচণ্ড জোরে হর্ন দিতে দিতে কাছাকাছি এসে গেল। সিদ্ধাৰ্থদা হতাশভাবে বললেন, এটা মিলিটারির জিপ। এরা কিছুতেই থামে না।

কাকাবাবু জোর দিয়ে বললেন, থামাতেই হবে। না হলে চাপা দেয় দিক!

জিপটা আমাদের একেবারে সামনে এসে ব্ৰেক কষল। একজন অফিসার রুক্ষভাবে বললেন, হোয়াটস দা ম্যাটার জেন্টেলমেন?

কাকাবাবু এগিয়ে গেলেন। অফিসারটির পোশাকের চিহ্ন দেখে বললেন, আপনি তো একজন করনেল? শুনুন করনেল, আপনাকে আমাদের সাহায্য করতেই হবে। একটুও সময় নেই!

তারপর কাকাবাবু যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাপারটার গুরুত্ব বুঝিয়ে দিলেন, মনোযোগ দিয়ে শুনলেন করনেল। তারপর বললেন, হুঁ, বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার কিছু করার নেই। আমাকে জরুরি কাজে যেতে হচ্ছে।

কাকাবাবু গাড়ির সামনে পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে বললেন, যতই জরুরি কাজ থাক, আপনাকে যেতেই হবে।

কাকাবাবু গভর্নমেন্টের এক গাদা বড় বড় অফিসার, মিলিটারির অফিসারের নাম বললেন।

করনেল বললেন, আপনি ওসব যতই নাম বলুন, আমার মিলিটারি ডিউটির সময় আমি অন্য কারুর কথা শুনতে বাধ্য নই।

কাকাবাবু হাত জোড় করে বললেন, মিলিটারি হিসেবে নয়, আপনাকে আমার দেশের একজন মানুষ হিসেবে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি!

করনেল একটুক্ষণ ভু কুঁচকে বসে রইলেন। তারপর বললেন, ঠিক আছে, গেট ইন!

আমরা উঠে পড়তেই গাড়ি চলল। ফুল স্পীড়ে। কারনেল পুরো ব্যাপারটা আবার শুনলেন। তারপর বললেন, ইতিহাস সম্পর্কে আমারও ইন্টারেস্ট আছে। সত্যি, এটা একটা মস্ত বড় আবিষ্কার। এটা নষ্ট হলে খুবই দুঃখের ব্যাপার হবে।

করনেলের নাম রণজিৎ দত্তা। বাঙালি নয়, পাঞ্জাবি। প্ৰথমে তিনি আমাদের নিতে রাজি হচ্ছিলেন না, পরে কিন্তু বেশ উৎসাহ পেয়ে গেলেন। ওঁর কাছেও এটা একটা অ্যাডভেঞ্চার।

গাড়ি এত জোরে যাচ্ছে যে হাওয়ায় কোনও কথা শোনা যাচ্ছে না। চেঁচিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। কারনেল বললেন, ওদের গাড়ি অনেক দূর চলে গেছে। পাহাড়ি রাস্তায় একটা মুস্কিল, কোনও গাড়িকে ওভারটেক করা যায় না। মাঝখানে যে-সব গাড়ি পড়ছে তাদের পার হব। কী করে?

কাকাবাবু বললেন, উপায় একটা বার করতেই হবে।

সিদ্ধার্থদা বললেন, একটা উপায় আছে। উল্টো দিকের গাড়িকে পাশ দেবার জন্য মাঝে মাঝে যে কয়েক জায়গায় খানিকটা করে কাটা আছে–

করনেল দত্তা বললেন, হ্যাঁ, সেটা একটা হতে পারে বটে। অবশ্য, যদি মাঝখানের গাড়িগুলো জায়গা দেয়।

আপনার মিলিটারির গাড়ি। আপনার গাড়ির হর্ন শুনলে সবাই রাস্তা দেবে। আমাদের খুব ভাগ্য যে আপনাকে পেয়ে গেছি।

করনেল ড্রাইভারকে বললেন, সামনের দাড়ি দেখলেই দুবার করে জোরে হর্ন দেবে। আপনার সূচা সিং-এর গাড়ি চিনতে পারবেন তো?

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, হ্যাঁ, সাদা জীপ গাড়ি। নম্বরও আমি মুখস্থ করে রেখেছি।

সিদ্ধাৰ্থদা আস্তে করে আমার পিঠ চাপড়ে দিয়েই উঃ বলে চেঁচিয়ে উঠলেন। ওঁর ডান হাতে সাঙ্ঘাতিক ব্যথা এখনও।

পাহাড়ি রাস্তা। এঁকেবেঁকে চলেছে। রাস্তাটা ওপরে উঠে গেলে নীচের রাস্তা স্পষ্ট দেখা যায়। একটু বাদেই আমরা যখন পাহাড়ের ওপর দিকে উঠছি, পাহাড় পেরিয়ে নীচের দিকের রাস্তায় দেখতে পেলাম খেলনার মতন তিনটে গাড়ি। তার একটাকে বাস বলে চেনা যায়।

করনেল দূরবীন বার করলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গাড়ির নম্বরটা বলো তো, দেখি এর মধ্যে আছে কি না?

একটু দেখেই উত্তেজিতভাবে বললেন, দ্যাটস ইট! ঐ তো সাদা জীপ!

আমরা সবাই উত্তেজনায় ছটফট করতে লাগলাম। এবার আর সূচা সিংকে কিছুতেই ছাড়া হবে না। কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় খুব জোরে তো গাড়ি চালানো যায় না, প্ৰত্যেক বাঁকে বাঁকে হর্ন দিয়ে গতি কমিয়ে দিতে হয়। একদিকে অতলস্পশী খাদ, অন্যদিকে পাহাড়ের দেয়াল। খাদের নীচের দিকে তাকালে মাথা ঝিমঝিম করে। একটু আগে বৃষ্টি হয়েছে এক পশিলা, ভিজে রাস্তা বেশি বিপজ্জনক।

কাকাবাবু হঠাৎ বলে উঠলেন, কী সুন্দর রামধনু উঠেছে দ্যাখো। এ পাশের সারাটা আকাশ জুড়ে আছে। অনেকদিন বাদে সম্পূর্ণ রামধনু, দেখলাম—সাধারণত দেখা যায় না।

আমাদের চোখ নীচের রাস্তার সেই খেলনার মতন গাড়ির দিকে আবদ্ধ ছিল। সিদ্ধাৰ্থদা অবাক হয়ে কাকাবাবুর দিকে ঘুরে জিজ্ঞেস করলেন, কাকাবাবু, আপনার এখন রামধনু দেখার মতন মনের অবস্থা আছে? আমি তো ধৈর্য রাখতে পারছিনা।

কাকাবাবু শান্ত গলায় বললেন, মনকে বেশি চঞ্চল হতে দিতে নেই, তাতে কাজ নষ্ট হয়। দণ্ডকারণ্যে রাম যখন সীতাকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন, সেই সময়ও তিনি পাম্পা সরোবরের সৌন্দৰ্য দেখে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন।

করনেল ড্রাইভারকে বললেন, বাসটা কাছাকাছি এসে গেছে। হর্ন দাও! হর্ন দাও-দুবার!

বাসটা সহজেই আমাদের পথ ছেড়ে দিল। কিন্তু তার পরের গাড়িটা আর কিছুতেই জায়গা দিতে চায় না। আমরা সেটার পেছন পেছন এসে অনবরতহর্ন দিতে লাগলাম। মাইল দুয়েক বাদে রাস্তাটা একটু চওড়া দেখেই বিপদের পুরো কুঁকি নিয়ে গাড়িটাকে পাশ কাটিয়ে গেলাম। সেই গাড়িটাতে শুধু একজন ড্রাইভার, আর কেউ নেই।

সিদ্ধাৰ্থদা বললেন, ও গাড়ির ড্রাইভারটা বোধহয় কালা-আমাদের এত হর্ন ও শুনতে পায়নি।

করনেল বললেন, কালা লোকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয় না। কালা নয়, লোকটা পাজি।

এবার আমাদের ঠিক সামনে সূচা সিং-এর গাড়ি। বড় জোর সিকি মাইল দূরে। আমরা দেখতেও পাচ্ছি, গাড়িতে সূচা সিং আর তার একজন সঙ্গী বসে আছে। ওরাও নিশ্চয়ই দেখেছে আমাদের।

সিদ্ধার্থদা গাড়ির সীট ছেড়ে উঠে দাঁড়াচ্ছেন প্ৰায়। ছটফট করে বললেন, ব্যাটার আর কোনও উপায় নেই, এবার ওকে ধরবই।

আমাদের হর্নে ও-গাড়ি কর্ণপাতও করল না। দুটি গাড়ির মধ্যে ব্যবধান কমে আসছে একটু একটু করে। ওরা মরিয়া হয়ে জোরে চালাচ্ছে। সূচা সিং খুব ভাল ড্রাইভার—আমরা আগে দেখেছি।

করনেল বেল্ট থেকে রিভলভার বার করে বললেন, ও গাড়ির চাকায় গুলি করতে পারি। কিন্তু তাতে একটা ভয় আছে গাড়িটা হঠাৎ উল্টে যেতে পারে।

কাকাবাবু আর্তনাদ করে উঠলেন, খবরদার, সে কাজও করবেন না। আমি সূচা সিংকে শান্তি দিতে চাই না, আমি আমার জিনিসটা ফেরত চাই।

সিদ্ধাৰ্থদা বললেন, আর বেশি জোর চালালে আমাদের গাড়িই উল্টে একেবারে বিলম নদীতে পড়বে। ঐ দাখো, সন্তু, ঝিলম নদী!

আমি একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলাম। অত নীচে তাকালে আমার মাথা বিমঝিম করে।

আট দশ মাইল চলল দুই গাড়ির রেস। ক্রমশ আমরাই কাছে চলে আসছি। কারনেল জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে খুব জোরে চিৎকার করে উঠলেন, হল্ট?

সূচা সিং মুখ ফিরিয়ে আমাদের দেখল। কিন্তু গাড়ি থামাল না।

কাকাবাবু বললেন, করনেল দত্তা, সাবধান! সূচা সিং-এর কাছে আমার রিভলভারটা আছে।

করনেল বললেন, মিলিটারির গাড়ি দেখেও গুলি চালাবে এমন সাহস এখানে কারুর নেই।

আর কয়েকমাইল গিয়েই ভাগ্য আমাদের পক্ষে এল। দেখতে পেলাম উল্টোদিক থেকে একটা কনভয় আসছে। এক সঙ্গে কুড়ি-পঁচিশটা। লরি। সূচা সিং-এর আর উপায় নেই। কনভয়কে জায়গা দিতেই হবে, পাশ কাটিয়ে যাবার রাস্তা পাবে না।

করনেল তাঁর ড্রাইভারকে বললেন, আমাদের গাড়ির স্পীড কমিয়ে দাও। আগে দেখা যাক-ও কী করে।

সূচা সিং-এর গাড়ির গতিও কমে এল! এক জায়গায় ছোট একটা বাইপাস আছে, সেখানে গাড়ি ঘুরেই থেমে গেল, সঙ্গে সঙ্গে ওরা দুজনে গাড়ি থেকে নেমেই দুদিকে দৌড়েছে। কয়েক মুহুর্ত পরে আমরাও গাড়ি থেকে নেমে ওদের দিকে ছুটে গেলাম। সূচা সিং-এর সঙ্গী প্ৰাণপণে দৌড়চ্ছে উল্টো দিকের রাস্তায়। তার দিকে আমরা মনোযোগ দিলাম না। সূচা সিং পাহাড়ের খাঁজ দিয়ে দিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। এক হাতে সেই কাঠের বাক্স।

সিদ্ধাৰ্থদাই আগে আগে যাচ্ছিলেন। সূচা সিং হঠাৎ রিভলভার তুলে বলল, এদিকে এলে জানে মেরে দেব।

সিদ্ধাৰ্থদা থমকে দাঁড়ালেন। আমরাও দাঁড়িয়ে পড়লাম। শুধু করনেল একটুও ভয় না পেয়ে গম্ভীর গলায় হুকুম দিলেন, এক্ষুনি তোমার পিস্তল ফেলে না দিলে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব।

আমি তাকিয়ে দেখলাম, কারনেলের হাতে রিভলভার ছাড়াও, ওঁর গাড়ি যিনি চালাচ্ছিলেন তাঁর হাতে একটা কী যেন কিন্তুতি চেহারার অন্ত্র। দেখলেই ভয় করে। সূচা সিং সেই দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে রিভলভারটা ফেলে দিল। কিন্তু তবু তার মুখে একটা অদ্ভুত ধরনের হাসি ফুটে উঠল।

কাঠের বাক্সটা উঁচু করে ধরে বলল, এটার কী হবে প্রোফেসারসাব? আমার কাছে কেউ এলে আমি এটা নীচে নদীতে ফেলে দেব।

কাকাবাবু করনেলকে হাত দিয়ে বাধা দিয়ে বললেন, আর এগোবেন না। ও সত্যিই ফেলে দিতে পারে।

তারপর কাকাবাবু হাতজোড় করে বললেন, সূচা সিং, তোমাকে অনুরোধ করছি, ওটা ফিরিয়ে দাও!

সূচা সিং আর একটা পাথর ওপরে উঠে গিয়ে বলল, এটা আমি দেব না। কিছুতেই দেব না?

ফিরিয়ে দাও সূচা সিং! গভর্নমেন্টকে বলে তোমাকে আমি পুরস্কার দেবার ব্যবস্থা করব। আমি নিজে তোমাকে পাঁচ হাজার টাকা দেব বলেছি-

বিশ্বাস করি না। তোমরা মিলিটারি নিয়ে এসেছি। এটা ফিরিয়ে দিলেই তোমরা আমাকে ধরবে।

না ধরব না। তুমি বাক্সটা ওখানে পাথরের ওপর রেখে যাও। আমরা আধঘণ্টা আগে ছোঁব না। তুমি চলে না গেলে-

ওসব বাজে চালাকি ছাড়ো!

না, সত্যি, বিশ্বাস করো, ঈশ্বরের নাম নিয়ে বলছি!

সূচা সিং বাক্সটা হাতে নিয়ে দোলাতে লাগল। চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে।

হুকুমের সুরে বলল, তোমরা এক্ষুনি গাড়িতে ফিরে যাও! না হলে আমি এটা ঠিক ফেলে দেব!

কাকাবাবু অসহায়ভাবে কারনেলের দিকে তাকালেন। ভাঙা গলায় বললেন, কী করা উচিত বলুন তো? আমাদের বোধহয় ওর কথা মতন গাড়িতে ফিরে যাওয়াই উচিত! ও যদি ফিরে যায়-

করনেল বললেন, ওর কথা বিশ্বাস করা যায় না। ওদিকে হয়তো নেমে যাবার রাস্তা আছে। ও পালাবে।

কথার ফাঁকে ফাঁকে সিদ্ধাৰ্থদা এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কেউ লক্ষ করেনি। আস্তে আস্তে পাথরের খাঁজে পা দিয়ে সিদ্ধাৰ্থদা একেবারে সূচা সিং-এর সামনে পৌঁছে গেলেন। বাক্সটা ধরার জন্য সিদ্ধাৰ্থদা, যেই হাত বাড়িয়েছেন, সূচা সিং ঠেলে দিতে গেল তাঁকে।

তারপর মরিয়ার মতন বলল, যাক, তাহলে আপদ যাক।

সূচা সিং বাক্সটা ছুঁড়ে ফেলে দিল নীচে!

আমরা কয়েক মুহূর্তের জন্য দম বন্ধ করে রইলাম। কাকাবাবু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন মাটিতে। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান।

সিদ্ধাৰ্থদা বাঘের মতন সূচা সিং-এর গায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলেন, তোমাকে আমি কিছুতেই ছাড়ব না।

ঝটাপটি করতে করতে দুজনেই পড়ে গেলেন পাথরের ওপাশে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress