বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী – 11
আবার ও মন্দাকিনী বলল—কি গো,খাবে না? ওর মন রাখতে বললাম। দারুন মিষ্টি ,খেয়ে দেখ। মুখে দিয়ে ওর মিষ্টত্বের মাপ কাঠিটা বুঝে নিলাম। বিশেষ করে অসময়ের আম।বেশিক্ষণ মুখে রাখতে পারলাম না।ফেলে দিলাম থুথু করে। এই তোমার মিষ্টি?দাঁত টকে গেল। ঐ রকম করে আম খায় নাকি?তুমি কি গো। এটা কি পাকা আম?একটু খানি নুন লাগিয়ে খেতে হয়।পুরোটা নুন ছাড়া খেলে টক তো লাগবেই। মন্দাকিনীর বাঁ হাতে নুন আর ডান হাতে আমের ফালি দেখে আমার মনে হল ভাগ্যিস আমি এদিকে এসেছিলাম, নইলে কি ওর দেখা পেতাম?পাব কি করে?কারণ একটু একটু করে যদি নুন দিয়ে আম খাওয়া যায়,তবে এক ফালিতে আধ ঘন্টা লাগে।না! আমি আর ওর আমের হিসাব নিতে নারাজ। আম খেতে গিয়ে ওর কি আমাদের কথা মনে পড়ত কিনা সন্দেহ!তাই বেশ রাগেই ওকে দাঁড় করালাম। শাড়ি খসে পড়ে আপনা হতেই। আহ্!কি করছ?আমগুলো পড়ে যাবে তো? এইরূপ আমি মন্দাকিনীর দেখিনি।আম গুলো ওর কাছে বেশি দামি! যার শাড়ির স্খলন হয় আমার হাতের ছোঁওয়ায়!সে দিকে হেল দেল নেই মেয়ের। অথচ আম পড়ে যাবার ভয়ে চকিত। রাগের ঝাঁঝেই বলি—- তোমার বাবা মা তোমার জন্য চিন্তা করছেন। আর তুমি তাড়িয়ে তাড়িয়ে আমের স্বাদ নিচ্ছ? বলিহারি তোমার নোলাকে। এই কথায় কি ছিল জানিনা।একটানে শাড়ির আঁচল থেকে আমগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিল মন্দাকিনী।রাগেই গট্ মট্ করে ছুটল।আমি চোখ রাখলাম সেদিকে। যেদিকে মাসীমা মেশোমশায় আছেন সেদিকেই গেল। তারমানে আগেই দেখে রেখেছিল আমরা কোথায় ছিলাম। হাসি পেল আমার। নোলা কথাটা সহ্য হয়নি। পার্কের পাশেই দেখলাম আম ওয়ালা বসে আছে। তার থেকে মন্দাকিনীর মন পসন্দ আম আর সঙ্গে ঝাল নুন নিয়ে নিলাম। মন্দাকিনীর এখন আর এক রুপ। হাতে ক্যামেরা। নানান দিকের নানান ছবি তুলেছে।মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে আসছে। প্রায় উড়িয়ে নিচ্ছে আমাদের। মন্দাকিনী শাড়ির আঁচল কোমরে কষে নিল।আমরা শহরের উত্তরে রয়েছি।ছবির মত লাগছে শহরকে।ডলফিন নোজ থেকে উন্মুক্ত সমুদ্র ‘লওসন বে’ অবধি দেখা যাচ্ছে।এরপর ই দুর্লঙ্ঘ প্রাচীরের মত দাঁড়িয়ে কৈলাশগিরি। মেশোমশায়কে বললাম——ঐ যে কোনা করা সবুজ জমি দেখছেন, ওটা’ লওসন বে’ কলোনী।’লর্ড হারবার্ট ইন্ডিয়ান ম্যান’ এর কমান্ডার “প্যাট্রিক লওসন ” এর নামে ঐ জায়গার নাম। সবাই আগ্রহের সঙ্গেই শুনছিল। মেশোমশায় বললেন——কৈলাশগিরির কোন ও ঐতিহাসিক তথ্য নেই? না।তবে এ জায়গাকে হয়তো বা কোন কারণেই “থমাস ফলি” বলেই লোকে জানত।উন্নতি হচ্ছে এখনও। আরও প্ল্যান আছে ‘ভুডা’র। কৈলাশগিরিতে চক্র রেল চলছে।এসি কোচ,তাতে ফাইবার গ্লাসের জানালা।কৈলাশগিরিকে পাক খেয়ে রেল চলছে ।রিং রেল এ চড়ে সমুদ্র কে দারুণ উপভোগ করা যায়। মন্দা বলল—-অনেক টা জমি নিয়ে রেল চলেছে। এখন রেল চলবে না? বললাম——না ।বিকাল থেকে চলে রেল।চলুন ওদিকে শিব পার্বতী বিশাল মূর্তি আছে। একটু একটু করে এগুলাম হর পার্বতীর পাদ মূলে। মাথা উঁচু করে তাকাতে হল হর পার্বতীর দিকে। মাসীমা বললেন—-বাব্বা!এত উঁচু মূর্তি! আমি বললাম – হ্যাঁ। চল্লিশ ফিট। জলপ্রপাতের ধারা নির্গত হচ্ছে।ভাবলাম একেবারেই যেন কৈলাশ থেকে গঙ্গা আসছে।আমার দৃষ্টি তখন অন্য দিকে।সেই মেয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে ঐ অপরূপ জলস্রোতের দিকে। জানতে ইচ্ছে ঐ মেয়ের মনের কথা।কোথায় ডুবে আছে সে!নুড়ি পাথরে জল ছিটকে পড়ে নানা রং এর সৃষ্টি করছে।যেন দেবী মন্দাকিনী স্নেহ ভরে চেয়ে আছেন শিলাখন্ড পড়ে। তার শিথিল পীত বাস জল কেলী করছে।সম্বিত ফিরল আমার,মাসীমার গলার স্বরে। এই মন্দা !কি কান্ড দেখ মেয়ের!আরে জলে কি করছিস?শাড়িটা ভিজিয়ে ফেললি তো! আমি তাহলে ভুল দেখিনি।মন্দাকিনীর আঁচল মেকি জলপ্রপাতের জলে লুটোপুটি খাচ্ছিল। মাসীমার বলায় সেই চোখে হাসির চমক। হাসতে হাসতেই দেখাল দূরের ‘ফ্লোরাল ক্লক ‘ এর দিকে। বলল, ওটা দেখেছ বাবা? মন্দাকিনীর কথায় সে দিকে চোখ ফিরল।ঐ মেয়ে আমাকে টেক্কা দিতে পারলে দারুণ খুশি।আর সেই নমুনা সে বোঝাল চোখের কসরত করে।আমিও পলক ফেলে বুঝিয়ে দিলাম,” সুস্বাগতম দেবী”। এগিয়ে গেলাম সেই ফ্লোরাল ক্লক এর দিকে। মেশোমশায়কে বললাম—- এই’ ফ্লোরাল ক্লক’ এর ব্যাস দশ মিটার। ভারতের বড় বড় “ফ্লোরাল ক্লক ” এর মধ্যে কৈলাশগিরির “ফ্লোরাল ক্লক “একটা। মাসীমা বললেন——-চল ওটা দেখে নেই। আমি বললাম—–কৈলাশগিরিতে ভাইজ্যাগ এর সপ্তম আশ্চর্যের একটি ক্লে মডেল তৈরি করেছে। সিমহাচলম, বোরাকেভস, ট্রাইব্যাল হ্যাবিটেশন, থোটলা কান্না,শঙ্করম, রস্ হিলস্, ডাচ্ সিমেট্রি কে মডেল হিসাবেই তৈরি করে রেখেছে।এর থেকে আপনি একটা ধারণা করতে পারবেন ঐ জায়গাগুলো সম্বন্ধে। মাসীমা বললেন, না না মডেল দেখে কাজ নেই। আসল টাই দেখব। আমার মাথা ধরেছে, এবার ঘরে ফিরব। আমি বললাম, সেই ভাল। যাবার পথে খেয়ে গেস্ট হাউজ ফিরব।সমুদ্রের ধার দিয়েই ফিরব। গাড়ি এঁকে বেঁকে নামছে।একপাশে অপার জলধি। অন্য দিকে সবুজের স্তর। তাতে বুনো ফুলের মেলা। মন্দাকিনী এই দ্যাখ, ইউ সেপ এর জায়গা দিয়েই চলেছি। লওসন’ স বে? বললাম——হ্যাঁ।কৈলাশগিরির দুর্লঙ্ঘ প্রাচীরকে গুড়িয়ে পথ করে ফেলল মানুষ। আমাদের উপহার দিল উন্মুক্ত পয়ত্রিশ কিলোমিটারের বিচ রোড। মন্দাকিনী বলল, কি মসৃণ রাস্তা!তবে বাঁক আসলে ভয় করে। আমি ভাবলাম ঠিক ই।তবে দক্ষ ড্রাইভার নিপুণ পাহাড়ের ওপরে উঠছে। ওপর থেকে দূরের ডলফিন নোজ দেখা যাচ্ছে, । বললাম, বিমলী পত্তনম থেকে ডলফিন নোজ এর পাহাড় অবধি দেখা যাচ্ছে। চিক চিক করছে সাগর জল। তির তিরে সর পড়া ভাব। আবার ঢেউ ভাঙ্গার আগে জলের রং যেন সবজে কাচ।বালিতে যখন আছড়ে পড়ছে তখন যেন দুধ সাদা গোরের মালা।গড়াতে গড়াতে চলে আসছে তট রেখার দিকে। মুগ্ধ আমি।অনন্ত জলরাশির ওপার টা কত দূর!!তা জানার জন্য মনটা আকুলি বিকুলি করে উঠল। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে নৌসেনার টহল দারী জাহাজ টহল দিচ্ছে।দিন ভর ওটাই কাজ। মাছ ধরার ট্রলার ও দেখা যাচ্ছে। হঠাৎই আকাশের রং গেল পাল্টে। ঘোলা জলের ঢেউ পড়ছে লালচে রঙের হয়ে।লালচে বালি মাটিতে কাঁচ সবুজ রঙ পাল্টে যাচ্ছে। কিছুটা গিয়েই রোপ ওয়ে। মন্দাকিনী ছেলেমানুষের মত বায়না শুরু করল রোপ ওয়ে তে চড়বে।বেচারা ড্রাইভার ঐ মেয়ের চাতুরিতে গাড়ি থামিয়ে দিল। গাড়ি থামতে মাসীমা হৈ হৈ করে উঠলেন। কি হচ্ছে মন্দা?কবে তুই বড় হবি? এবার স্বামীর দিকে ফিরে বললেন, তুমি কিছু বলছ না? এবার মন্দাকিনী বাবাকে ঘায়েল করল—-বাবা, আমি রোপ ওয়েতে চড়বো। এ যেন বেদ বাক্য। রদ করবে কে? হাসি পেল আমার। ওর ঐ ছলনা দেখে। ঐ ছলনা ময়ী যে আমার দিকে মাঝে মাঝেই ঘোর লাগা চোখে তাকাতে পারে,তা এখন ওর ঐ গলা শুনে কে বলবে! ইনি আর তিনি কি একই মেয়ে?মেশোমশায়কে ঘায়েল করল ঐ মেয়ে। বাবা কেষ্টা,তুমি সঙ্গে যাও। এটা আমার জানা ছিল। বাধ্য ছেলের মত উঠে দাঁড়ালাম। কয়েক পা এগোতেই ফুঁসে উঠল সেই মেয়ে। কি গো এই যে বললে রোপ ওয়ে চালু হয়নি? যদি আমি জানতাম যে নীচে নামার পর ও তুমি রোপ ওয়েতে চড়ার জন্য উঠবে তাহলে মিথ্যা বলতাম না। রোপ ওয়েতে যাতে না চড়ি তাই মিথ্যা বলেছ? হ্যাঁ তাই।বলিহারি তোমাকে। বাবা মা যাবে গাড়িতে চড়ে আর তুমি যাবে রোপ ওয়েতে? তোমার বাবা মা কে ছেড়ে আমি তোমার সঙ্গে আসি। আর কি কি তোমার ইচ্ছা,বলে নাও। আমার রাগ দেখে হাসতে থাকে। অদ্ভুত একটা মুখভঙ্গী করে বলল, তুমি যে সে বান্দা নও তা জানি,তাই আগে ভাগেই সব সাধ মিটিয়ে নিচ্ছি। মেয়ে চলে যেতে মন্দার মা ফেটে পড়েন—— তোমার মতলব টা কি বলতো?মেয়ে যাদের বায়না করছে, অমনি কেষ্টাকে ভিড়িয়ে দিচ্ছ?মেয়ের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছো?ওকে কি জামাই করার তালে আছ? ভবতোষ বাবু বলেন—– আহা চটছো কেন?অমন ছেলে না কেষ্টা। কেমন ছেলে?একটা যুবতী মেয়েকে ঠেলে দিতে পারবে?তোমার মেয়ে ঐ ছেলের মাথা চিবিয়ে খেতে জানে। তোমার ই মেয়ে তো!মনে আছে সব কথা?তুমিও আমার মাথা চিবিয়ে খেয়েছিলে। মনে নেই। লজ্জা পান মায়া দেবী।লজ্জার ভঙ্গি ফুটে ওঠে মুখে। কোন কালের কথা। ——-আরে সব সময় ওদের সঙ্গে থাকলে চলে। আমাদের ও তো একটু নিরিবিলি চাই।যাতে আমার মায়াকে পুরোপুরি আগের মত পাই।কি বল মায়া? ড্রাইভার কি বুঝল কে জানে?সে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল। বোধহয় বাইরের হাওয়া নিতে। মায়া, তোমার মাথা ধরা কমেছে? -না গো। —- এখানে শোও। মাথা টিপে দিই। স্বামীর কথায় শুয়ে পড়লেন। আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। মেয়ের গলায় জেগে গেলেন।
বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী -12
মাকে পেছনের সীট এ শোওয়া দেখে সামনে বসতে গেল। তা দেখে মাসীমা লাফিয়ে উঠতে গেলেন। ব্যাপার টা কোন দিকে যাচ্ছে তা বুঝেই আমি বলি। মেসোমশায়, আপনি সামনে আসুন। মাসীমার বললেন—— হ্যাঁ, তাই ভাল। তুমি সামনে বোস। মেশোমশায় খুশি হয়ে বলেন——সাধে কি আমি কেষ্টার গুন গাই?দেখ কেমন মুশকিল আসান করে দেয়। চোখ কান বুজে ওকে নির্ভর করি। মাসীমার গলায় খুশির আমেজ। কারণ মেয়ে আমার পাশে বসেনি।আমিও মাসীমার খুশিতে খুশি। মাসীমা বললেন——– বুঝলে কেষ্টা, আগের জন্মে তুমি বোধহয় তোমার মেশোমশায়ের কেউ ছিলে? নইলে কথায় কথায় তোমার প্রশংসা করে।তা তোমার ওকি ঐ রকম কিছু মনে হয়? চুপ করে থাকতে পারলাম না ঐ কথা শুনে। বললাম——আগের জন্মের কথা জানিনা।তবে এই জন্মে ওঁর যা ভালোবাসা পেলাম তা কোন দিন ভুলবো না। মন্দাকিনী এবার ফোড়ন কাটল। কি ব্যাপার কৃষ্ণ দা বাবাকে এত তোয়াজ কেন? চুপ করে রইলাম। মাসীমা বললেন —– কেষ্টা তোমার ইয়ারের পাত্র? ও তোমার মাষ্টার মশায় তা ভুলো না।ওকে কেষ্টাদা ডাকতে পারো না?কেন কৃষ্ণ দা বল? ——— কেষ্টা নামটা খুব বাজে। তোমরা বরং কৃষ্ণ চরণ বলে ডেকো। মাসীমা এবার মেশোমশায়কে বললেন—– —– মেয়েকে , একটা ধমক ও দিতে পারতো? মেশোমশায় বললেন ,—- সাবধান মায়া ঐ কাজ করতে যেও না।এটা হল নারী স্বাধীনতার যুগ।তাছাড়া আমার এ কথাটা মনে ধরেছে।কেষ্টা না ডেকে কৃষ্ণ বলে ডাকলে হয়। মাসীমা বললেন—– দেখেছ কেষ্টা,কি ভাবে মেয়েকে লাই দিচ্ছে!কোথায় শাসন করবে তা না আদিখ্যেতা ! এবার মন্দাকিনী বলল—-কৃষ্ণ দা মন্দাকিনী বললে মা তো কিছুই বলে না? ——– ঠিক আছে, তোর মা না করুক আমি জিজ্ঞেস করছি। ও কেষ্টা, উত্তর দাও। কেন মন্দাকে ,মন্দা বলে ডাক না? ঘাবড়ে গেলাম আমি।কি করে বলি যে আমি স্বর্গের দেবীকে বাস্তবে আনতে চাই না।তবুও বললাম। মন্দা বললে মনে হয় বাজার মন্দা যাচ্ছে। আমার কথা শুনেই মেশোমশায় দম ফাটা হাসি হাসলেন। এরপর মেয়েকে বলেন—এবার কি বলবি বল? মন্দা বলল—আমার ও কেষ্টা বললে চেষ্টা,তেষ্টা মনে হয়। মেশোমশায় আবার ও হাসতে লাগলেন। তার পর বলেন—–দেখো গিন্নি, মন্দা কি বলে? মাসীমা রাগত সুরের বলেন—-আমার আর শোনা র দরকার নেই, তোমরা বাপ বেটিতেশোন। গাড়ি ছুটতে লাগল। তবে শ্লথ গতিতে। আমার একটা কথা মনে হল। এই জালারপেটা থেকে মেছোয়ালিদের সড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ডলফিন নোজ এর কাছে ওদের জন্য আবাস তৈরি হল।কিছু দিনের মধ্যেই দেখা গেল ওরা একে একে মারা যাচ্ছে। সাহেব রা আবার ওদের জালার পেটিতে ফেরত পাঠানো হল। মেশোমশায় বললেন—-তবে তো সাহেব দের প্রশংসা না করে পারা যাচ্ছেনা। মন্দা বলল—-এমন তো আগে শুনিনি?নিশ্চয়ই স্বার্থ জড়িত ছিল। বললাম——-কি সার্থ? মন্দা বলল—- ভুলে যেও না গলদা চিংড়ি র কথা। ঐ চিংড়ি যারা এনে দেয় তাদের স্বাস্থ্যের কথাতো ভাবতেই হবে।কারণ ওরা না থাকলে কারগো তে কি শুধু মশলাপাতি যাবে? মেশোমশায়ের আবার ও দম ফাটা হাসি।বললেন। দেখ গিন্নি, একটু আগেই বলেছিলাম তোমার মেয়ের মাথাটা তোমার মতোই খাঁসা। মায় দেবীর সেই কথাটা মনে পড়ল, “তুমিও যেমন আমার মাথা চিবিয়ে খেয়েছ ঠিক তেমনই তোমার মেয়ে- – – – ।”লোক টার যদি কোন বুদ্ধি থাকে!ওদের সামনে এমন কথা বলে!! মন্দা বলল—– বাবা কি বলেছিল গো মা,বলো না? লজ্জার কি আছে? মেশোমশায় বললেন—-আরে তোর মায়ের প্রশংসা করছিলাম। তাই লজ্জা পাচ্ছে।তুই তোর মায়ের মতোই হয়েছিস। মন্দা বলল—–কি রকম? ——-অমুকের মোটা উপুরি,অমুক এটা করেছে নিজের সার্থেই ।এই যে বললি ইংরেজ রা সার্থে করেছে। রেগে গেল মন্দা।- তুমিতো আমাদের নিন্দা করছ? না রে মা,আমি তোর নিন্দা করতে পারি?অমন যুক্তি খাড়া করলি ।ঠিকই বলেছিস। যারা নেটিভ দের সঙ্গে নিজেদের ফারাক টা বেঁধেছিল মোটা দাগে। তাদের প্রশংসা করতে হলে দেখতে হলে,”পর্দে কে পিছে ক্যায়া হ্যায় ” তাতো দেখতে ই হবে। ———- তবে তুমি আমার নিন্দা করলে কেন? ——,আরে না না তোর মায়ের সঙ্গে একটু মজা করলাম। ———- মা,তুমি হাসছো?বাবা তোমাকে নিন্দুক বলল? ———– তোর বাবা বললে কি আমি নিন্দুক হয়ে যাব? হাসি পেল আমার। মন্দাকিনী এখন ও নাবালিকা।বাবা মায়ের প্রেম বোঝা ওর সাধ্য নয়। মাসীমার কথায় আশ্চর্য হলাম না,কারণ আমাদের অবর্তমানে মেশোমশায় নিশ্চয়ই কিছু খোরাক জুগিয়েছেন যাতে মাসীমা এখনও ভরপুর। মন্দাকিনীকে বললাম—–এই দেখ ভু ডা পার্ক। পুরো কথাটা হল.ভিশাখা.আরবান. ডেভেলপমেন্ট. অথরিটি । মেশোমশায় বললেন—কেষ্টা, হোটেল পার্ক এর খাবে? ড্রাইভার বলল—-স্যার, ইদি ফাইভ স্টার হোটেল। চালা ডাবলু কাওয়ালি। আমি বললাম—-ফাইভ স্টার তো তাই চার্জ বেশি। মেশোমশায় হোটেল পার্ক বলতেই ড্রাইভার গাড়ি পার্ক হোটেল এ ঢুকিয়ে দিল।আমরা লনে দাঁড়ালাম। উর্দি পড়া বেয়ারা এগিয়ে সেলাম করল।লাউঞ্জের দুধ সাদা গদী মোড়া কুশনে বসাল। এটাই ওয়েটিং হল।সুন্দর সাজান, জায়গায় জায়গায় পাথরের মূর্তি বসান। রকমারী রংএর টাটকা গোলাপ ফুল । আমি বেমানান এই হোটেলে। দুধ সাদা টেবল ঢাকা কেতাদুরস্ততার পরিচয় দিচ্ছে। হঠাৎই আমাদের মাথার ওপর আলো জ্বলে উঠল। চেয়ে দেখলাম ঝাড়বাতি জ্বলছে।হিরের চমক ঐ ঝাড়বাতির আন্দোলিত অগণিত কাঁচে। সেই খাঁজ কাটা কাঁচের চিক্কন আলো ছড়িয়ে পড়ছে টেবলে। মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছি সেই আলোর দিকে। একটু পরেই মেনু দেখে চক্ষু চরক গাছে। মেশোমশায় বললেন—-ভালোই হল এখানে এসে। এদের সাজের বহরটা তো জানা হল।টাকার কথা ভাবলে হবে না।আমাদের সঙ্গে একজন লেখক আছেন। তার লেখার খোরাক জুটে যাবে এখানে। মেশোমশায়ের কথায় আমি যার পর নাই লজ্জা পেলাম। ছিঃ ছিঃ ,লেখার কথা মন্দাকিনীকে না বললেই হত। আপনা হতেই আমার দৃষ্টির বাণ ছুটল সেই মেয়ের দিকে। তার হাসি চল্ কে পড়ল আমার চোখে।চোখ ফিরিয়ে নিলাম কারণ মাসীমার দৃষ্টি আমার দিকে। আমার ও মন্দাকিনীর নজরের জরিপে মাসীমা উঠে পড়ে লেগেছেন। ঐ দৃষ্টিতে কি লেখা ছিল তা আমার অজানা নয়। মেয়ে এখন মায়ের মন ভিজাতে লেগেছে। মা,তোমার মাথা ব্যথাটা কমেছে? একটু কম এখন। মিউজিক বাজছে। এমন পরিবেশে চোখ বুজে আসে।মেশোমশায়ের কথায় চমকে উঠলাম। কেষ্টা,টেস্ট করে দেখ। কাঁচের সুদৃশ্য প্লেটে, একখানা সুদৃশ্য কাঁচের বাটিতে কোন পানীয় রয়েছে।আর প্লেটে একখানা চামচ। দেখেই বুঝলাম ওটা স্যুপ্। মাসীমা,মেশোমশায় ও মন্দাকিনী চামচ দিয়েই খাচ্ছে। দু,চার চামচ খাবার পর তাতে কোন স্বাদ পেলাম না। মেশোমশায় বললেন —-কি হল ভাল লাগছে না। আমি কি বলব ভেবেই চুপ করে আছি দেখে মাসীমা বললেন—-এমন অখাদ্য কেউ চামচ দিয়ে একটু একটু করে খায়? কথাটা বলেই একটা কান্ড করলেন। চামচ টা ঠক করে প্লেটে রেখে, বাটিটা মুখের কাছে নিয়ে এক চুমুকে পানীয় সাবার করে দিলেন। মেশোমশায় আর মন্দাকিনীর তাক লাগা চাউনিকে পরিণত করতে আমিও মাসীমার পদ্ধতির অনুসরণ করলাম। কিন্তু মেশোমশায়কে হেসে উঠতে দেখে আমি আশ্বস্ত হয়েছি। মেশোমশায় বললেন, যাক এতদিনে তোমার সঙ্গে তোমার মাসীমার একটা মিল খুঁজে পেলাম। ও বাবা,আস্তে।দেখ সবাই কেমন চেয়ে আছে। মন্দাকিনী ঠিক ই বলেছে।দর্শকেরা হাসির উৎস খুজতে চেয়ে আছেন। মন্দাকিনী লজ্জা পেল যখন দেখল ওর বাবা দর্শকদের হাত নেড়ে উইশ করছে। আমি আজ একটা সত্য প্রত্যক্ষ করলাম। হাসির মত আর কোন ভাষা নেই। যে ভাষা দিয়ে মানুষ কে বাগ মানানো যায়।আর সেই হাসির অর্থ বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়।সে যে ভাষা যে প্রদেশের ই হোক না কেন? বেয়ারা ট্রে নিয়ে এল।আমি মন্দাকিনীকে বলি—- এতো কিছুর অর্ডার দিয়েছ? না না আমি তো দুটো প্রিপারশন এর অর্ডার দিয়েছি। উর্দি পরা বেয়ারা দাঁড়িয়েছিল। মন্দাকিনী তাকে কি যেন বলল। সে চলে যেতে মন্দাকিনী বলল। ——- এগুলো ফ্রি।সবার মেনুর সঙ্গেই এগুলো থাকবে। আশ্চর্য হলাম শুনে।এমন ও হয়!ল্যান্সডাউন উড়ে হোটেলে অবধি জল নুন ছাড়া বিনে পয়সায় কিছুই মেলে না। চমকে ফিরলাম মাসীমার দিকে। বোঝার চেষ্টা করলাম মাসীমার কথা। বাবা কেষ্টা,তুমি আমার থেকে একটু পনীর নাও।নিয়ে নাও প্লেট টা। ভাবলাম সুর টা কি করে পাল্টে গেল!এ সুরে তো আমি অভ্যস্ত নই!তাই আমার বিষম খাবার অবস্থা। বললাম—–আমার লাগবেনা মাসীমা। আমার কথা শুনে আবার বললেন—- বলছি নাও। লজ্জার কি আছে।আমি তোমার মায়ের মতো। এবার আর পারলাম না।বললাম—–সে জন্য না মাসীমা,আপনি তো বেগুনের কোপ্তাটা নিলেন না।এটা খুব ভাল হয়েছে। তাই নাকি? একটু নেবেন মাসীমা? আমি।হাত দিই নি। ঠিক আছে,একটু তুলে দাও। আমার আবার বেগুন বারণ। তাহলে থাক। না না দাও একটা দিন বৈ তো নয়।চেখে দেখি। মেশোমশায়ের চোখে খুশির ঝলক।মন্দাকিনীর চাউনি তে হালে পানী পাবার মত। মেশোমশায় বললেন——- গিন্নি, একটু রয়ে সয়ে। নইলে কিন্তু পেটে সইবে না। অন্তর্নিহিত কথাটা আমার বুঝতে অসুবিধা হল না। তবে মাসীমার এই হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ টা আঁচ করার চেষ্টা করতে করতে মনে পড়ে গেল বাটিতে চুমুক দিয়ে স্যুপ খাবার কথাটা। গাড়িতে উঠেই মন্দাকিনী বলল—-কে কে পান খাবে?আমার থেকে নিতে পার। ওর হাতে আট দশটা পান হবেই ।ভাবলাম এখন ও ছেলেমানুষী গেল না।একে নিয়ে কি আমি পুতুল খেলব?ধাক্কা খেলাম মনে।মনের একটা কুঠুরী বলল—–তুমি কে হে নেবার?দেখবে সময় হলে ঐ মেয়ে অন্য ঘরে মৌরুসীপাট্টা জমাবে। আর একটা কুঠুরি বলল, “কেন আমি কি এলে বেলে ছেলে যে আমার দর পড়ে যাবে”? মেশোমশায়ের গলার স্বরে চিন্তা টা থমকে গেল। অত গুলো পান কি তুই খাবি? —–,মায়ের জন্য নিয়েছি।মায়ের মাথা ধরায় পান মুখে দিলে ভাল লাগবে। তা বলে অতগুলো? মাসীমা বললেন——– মন্দা আমায় ক’টা পান দেতো। মন্দা বলল——–দেখলে তো মায়ের নিশ্চয়ই গা গুলাচ্ছে!এখানে কোথায় পান খুঁজতে? মাসীমাকে পান দেবার পর সে আমায় নিয়ে পড়ল। ওর ঠোঁট লাল টুকটুকে। পানের রস নিতে নিতে ঝুঁকে পড়ল আমার দিকে। বলল——একটা পান নেবে? নাও না দারুণ লাগবে! আমি পিছু ফিরে ওর দারুণ লাগার অনুভব করলাম। ঐ লাল টুসটুসে ঠোঁটের রসের খেলা দেখে আমি কৈলাশগিরিতেও না করতে পারিনি।আর এখন ও অনুরোধ ঠেলতে পারবো না।সে কথা জানে ঐ মেয়ে। তাই তো জোর খাটায়। ভাবলাম তোমার টেস্টের নমুনা আমার জানা হয়ে গেছে তোমার দেওয়া ঐ টক আম খেয়ে। তবুও হাত পাতলাম। গাড়ি দাঁড়াল সাব মেরিন মিউজিয়াম এর কাছে।
চোখের সামনে মনে হচ্ছে দৃশ্য গুলো ফুটে উঠছে, খুবই ভালো লাগলো দিদি।
Excellent!