Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী || Shipra Mukherjee » Page 4

বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী || Shipra Mukherjee

বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী -7

মন্দাকিনীর গলার স্বর কানে এল। ——–কি ভাবছ কৃষ্ণ দা?কখন থেকে তোমাকে ডাকছি।দেখো কি সুন্দর লক্ষী নারায়ণের মূর্তি! ——- হ্যাঁ। ভারি সুন্দর। তুমি পছন্দ করো।আমি এখানেই আছি। এখানেই আছি বললেও দু কদম পিছিয়ে গেলাম সেই দোকানে।গুনে একশ কুড়ি টাকা দিয়ে পকেটস্থ করলাম সেই দুর্লভ মালা।খুশিতে ডগমগ করছে আমার মন। জোর পায়ে পৌঁছে গেলাম সেই মেয়ের কাছে। বললাম——-,পছন্দ হল তোমার?কোন টা নেবে? আমার কথার উত্তর না দিয়ে দোকানদারের সঙ্গে বার্তালাপে ব্যস্ত সেই মেয়ে।চমকে গেলাম কারণ কথা হচ্ছিল তেলেগু ভাষাতেই। – ‘ইদি এন্তা এন্ডি’?লক্ষী নারায়ণের মূর্তি দেখিয়ে মন্দাকিনী বলল। ———-‘এরাবায় আরূ রুপায়লু’-দোকানদার বলল। মন্দাকিনীকে বললাম—–কত বলছে? ———-ছাব্বিশ টাকা বলছে।এরাবায় হল কুড়ি টাকা।আরু হল ছয় টাকা। এবার দোকানীর দিকে ফিরে বলল—-“–এরাবায় পেট্টেন্ডি ? দোকানী হাসতে হাসতেই প্যাক করে দিল। আমি তাজ্জব বনে গেলাম মন্দাকিনীর দক্ষতায়। তেলেগু ভাষায় কথা বলে এতো টাকা কমে গেল। হিন্দিতে কথা বলে আমি এক টাকাও কমাতে পারিনি। আমার বুক পকেটে মন্দাকিনীর গলার মালাটা জানান দিচ্ছে ওর উপস্থিতি।আমি বললাম——- আর কি নেবে? মন্দাকিনী বলল—–বাবার জন্য কিছু না নিলে হয়? শেষ অবধি কেনা হল একটা একটা তাম্রপাত্র। আর একটা সুদৃশ্য পেপার ওয়েট।তাতে ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তি বসান। আমি বললাম, মায়ের জন্য একটা আর বাবার জন্য দুটো কেন? – বাবার জন্য একটা আর তার চেলার জন্য একটা।বুঝলে মশায়!এটা তোমার জন্য। কথাটা বলে আমার চোখের সামনে পেপার ওয়েটটা হাতে করে ঘোরাল।যেন আমায় আরতী করছে।হেসে ফেললাম ওর উৎফুল্লিত মুখ দেখে। হাসবো নাই বা কেন!অমন একখানা নজর কাড়া মেয়ে।আমার কথাও ভেবেছে।তাছাড়া সেই মেয়ে যাকে আমি আমার অজান্তেই মন প্রাণ সব ঢেলে বসে আছি। হেসেই বললাম———-আমার জন্য আবার কেন? একটা বাউন্ডুলে মানুষের জন্য খরচা কেন? —–তোমাকে খরচের কথা ভাবতে হবে না। এটা আমার পকেট মানির থেকে দেব ,ভয় নেই। আমার কথায় কি ছিল তা জানি না।তবু নিজেকে দোষী ভাবি।নিশ্চয়ই আঘাত দিয়েছি।নইলে অমন দু’চোখের হাসি আমার কথায় এক লহমায় নিভে যায়! এগিয়ে চলেছে মন্দাকিনী।ভাবলাম, মেয়েদের বোঝা দায়!এতক্ষণে আমার মাথায়একটা কথাএল। খারাপ কথাই বলেছি।বিশেষ করে আমার মত শিক্ষিত একজন যুবকের কাছে তো নয় ই। বাউন্ডুলে কে কি নির্ভর করতে পারে?তা পারে না। কোন মেয়ে বাউন্ডুলে কে বরমাল্য দেবে না।মেয়ের বাবা ও না।বুঝলাম ‘বাউন্ডুল’ কথাটা জীবন থেকেই হাওয়া করে দিতে হবে। তবে না ওই মেয়ের হাসি দেখব। বাউন্ডুলে স্বামী তো সংসার ভাসিয়ে দেবে। পিছন থেকেই ডাকলাম। -মন্দাকিনী, একটু দাঁড়াও। আমার গলার স্বরে কি ছিল জানিনা।মন্দাকিনী দাঁড়িয়ে গেল। আমি ওকে জোর কদমে ছুঁয়ে ফেললাম। বান ডেকেছে আমার ভালবাসায়।বাঁধ দিতে পারব তো? বসার একটা বেদী ছিল কাছেই।ইচ্ছে ওকে জড়িয়ে ওখানেই বসি।কিন্তু তা হবার নয়।ওই মেয়ের হাত ধরে বললাম।- মন্দাকিনী,আমি তোমায় আঘাত দিয়েছি?তাকাও আমার দিকে। চোখে চোখ পড়তেই হৃদয়ে বান ডাকল। মনে হল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারব না।মনে ভাবলাম ,নিজেকে আর বাউন্ডুলে বলব না।এই দেখ তোমার জন্য কি এনেছি।এরপর ও তুমি রাগ করে থাকবে? মন্দাকিনীর হাসি ছড়িয়ে পড়ল সিমহাচলম মন্দিরের, সিমহাগিরির খাঁজে খাঁজে।স্বর্গের দেবী মন্দাকিনী কখনও বা স্রোতস্বিনী নদী,কখনও এক ঝাক বলাকার মত ডানা মেলে উড়ে চলেছে। সম্বিত ফিরতে দেখলাম মাসীমা মেশোমশায়ের দৃষ্টিতে চিন্তার ছাপ।আর সেই মেয়ের দৃষ্টিতে অন্য কিছু। কি হয়েছিল কেষ্টা?বেদীতে হাত চেপে বসে আছ?——-মাসীমা বললেন। বুঝলাম । বললাম——– দেবস্থানম তো তাই মা লক্ষীর ধ্যান করতে চেষ্টা করছিলাম। লক্ষীর পাদস্পর্শ করছিলাম মনে মনে। ভাবলাম ঠিক ই বলেছি। মন্দাকিনী তো স্বর্গের দেবী।মিথ্যে বলিনি মাসীমাকে। মেশোমশায় বললেন——— দেখো মায়া, কেমন ভক্তি!তুমি ওকে বাউন্ডুলে বল।শিবকে ও সবাই বাউন্ডুলে বলত। এ কথায় লজ্জা পেলাম। মাসীমা ও পেলেন তবে অন্য কারণেই। আর সেই মেয়ে!!!সে এখন চোখের নানান রকম কসরত করছে।ওর রঙ ঢঙ দেখেই বুঝলাম বেদীতে বসে আমি স্বপ্ন দেখিনি।নির্ঘাত ওর পায়ে হাত দিয়েছিলাম। আর বাবা মাকে দেখে সরে পড়েছিল সেই মেয়ে। সিমহাগিরি থেকে কৈলাশ গিরি- এন .এইচ.ফাইভ রোড ধরে চললাম আমরা। ব্রেকফাস্ট সেরে যাবার কথা ঋষিকোন্ডা।মসৃণ রাস্তা দিয়ে চলেছি।বাঁয়ে কৈলাশগিরির রেঞ্জ। চোখের আরাম হয় এমন সবুজ এখানে। দূরের পাহাড়ের রঙ গাঢ় নীল। মেশোমশায় বললেন – কেষ্টা চুপচাপ কেন? বললাম——এতবড় একটা ঝকঝকে শহর দেখে ভাবা যায় যে এখানে এককালে কয়েক শো লোকের বাস ছিল?মাছ ধরাই ওদের একমাত্র কাজ ছিল। মন্দাকিনী বলল – খুব পুরোন শহর তাই তো? বললাম—–রাজা অশোকের রাজত্ব কাল থেকে চোল, পল্লভ আর গঙ্গা রাজার আমলেও বিশাখাপত্তনমের অস্তিত্ব ছিল। বিশাখা আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে ধন্যবাদ জানাতে হয় এমন সুন্দর একটা শহর তৈরি করার জন্য। পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি না করলে আমরা ভাইজ্যাগ এর দীর্ঘ তম সমুদ্র উপকূল পেতাম না। গাড়ি চলছে, দু’পাশে শপিং কমপ্লেক্স। দেখে বোঝা যায় এদের ব্যবসা কেমন চলছে। মেশোমশায়ের বললেন, তোমরা কবে এখানে এসেছিলে? তখন সবে স্টিল প্ল্যন্ট চালু হয়েছিল। স্টেশনের নাম ছিল ওয়ালটেয়র। এখন কার ভাইজ্যাগ এর সঙ্গে ওয়ালটেয়র কে মেলান যাবে না। ড্রাইভার গাড়ি দাঁড় করাল।এক আলো আঁধারি রেঁস্তোরায় আমাদের নিয়ে এল।কেতায় কম যায় না।দুধ সাদা ঢাকনা প্রতিটি টেবল এ।আমরা এখন যা খাব তাতে এমন উঁচুদরের রেঁস্তোরাতে না আসলেও চলতো। চার সিটের টেবল এ আমাদের বসায় উর্দি পরা ‘বয়’ মানে ছেলে। মাসীমা মেশোমশায় বসে পড়তে আমিও আমার জায়গাটা বেছে নিলাম। একেবারেই জানালা মুখোমুখি করে চেয়ার টেনে নিলাম। জানালা দিয়ে দূরের পাহাড়ের তরঙ্গ মালা দেখা যাচ্ছে। আমার চোখ পড়ল মন্দাকিনীর দিকে।গাড়িতে সামনে বসার দরুন ওই শ্রীময়ীর মুখ দেখতে পাইনি। কাঁধের ঝোলা নামিয়ে রাখলাম চেয়ারে। হাত ধোবার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়াতেই মেশোমশায় বললেন—— —-কোথায় যাচ্ছ? ——- হাত ধুয়ে আসি। আমার কথা শুনেই মন্দাকিনী বলল——-আমিও হাত ধোব। কথাটা মাসীমার পছন্দ হল না।মেয়ে আমার সঙ্গে এই আলো আঁধারি পরিবেশে যাবে।কি জানি!!! যদি এই বাউন্ডুলে,চালচুলো হীন ছেলেকে মন দিয়ে ফেলে!!তাই বললেন। ———তুই আবার কোথায় যাবি? বাগড়া দিলেন মেশোমশায়।বললেন——– আহা!যাচ্ছে যাক না। কোথায় আর যাবে? আমি বুঝলাম মেশোমশায়ের ভোট টা আমারই তরে আছে ।কারণ এমন জামাই মেয়ে যদি ভুলকরে পছন্দ করেই বসে, ক্ষতি নেই। এমন বুদ্ধিমান, জ্ঞানী অথচ কর্মহীন ছেলে এ যুগে পাওয়া ভার।তাছাড়া চাল চুলো নেই বলে ই ঘর জামাই হতেও বুঝি আপত্তি করবে না কেষ্টাচরণ। মানে আমি।কিন্তু কোন ছেলে কি নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দিয়ে বৌএর বাপের বাড়ি পড়ে থাকবে? তবে কেষ্টাচরণের এমন কোন আকাঙ্খা নেই এখন ও।নিজের পায় দাঁড়িয়ে তবে বিয়ের কথা ভাববে। তাতে যদি ঐ শ্রীমুখীকে হারাতে হয় তো হবে। আমার পাশে হাঁটছে মন্দাকিনী।ওকে খোঁচা দিতেই বললাম – মাসীমা আমার সাথে আসতে মানা করছিলেন, তবুও এলে কেন? ও যে রেগে গেছে তা ওর ঝাঁঝে বুঝলাম——– আমার ইচ্ছে।তোমার খারাপ লাগছে?তবে আমি ফিরে যাচ্ছি। একলহমায় ঘুরে যায় মন্দাকিনী। গতি উল্টো পথে।ছুঁয়ে ফেলি ওরছুটন্ত শরীরটাকে। গলায় আমার গভীরতা।সেই গভীরতায় মন্দাকিনী থেমে গেল। – কি হচ্ছে মন? কথাটা আমার মন থেকেই উষ্ণ স্রোতের মত নির্গত হয়ছে। মন কথাটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে চমকে তাকিয়েছে মন্দাকিনী। কতক্ষণ যে আমার হাত ওর কাঁধে ছিল। ওর চোখের তারায় হারিয়ে গিয়েছিলাম আমি।ওই আলোছায়ার, আলো আঁধারে আমাদের মনে এক আবেশের সৃষ্টি করেছিল। তারই বুঝতেই পারিনি আমরা। “সাইড প্লিজ “। কথাটা কানে যেতেই ছিটকে পড়েছিলাম। মন্দাকিনী আমাকে পাশ কাটিয়ে হাত ধোবার পর্দা ঘেরা জায়গাতে ঢুকে গেল। আমার মনে হল আমার হৃদয়ের এক খন্ড ছিটকে পড়ল ভূমিতে।

বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী – 8

গাড়ি ছুটে চলেছে কৈলাশগিরির দিকে।কথা না বলে শুধুই উপলব্ধি করতে মন চায়।সবাই চুপচাপ। আমি যে মন্দাকিনীর চোখে ধরা পড়ে গেছি তা বুঝেছি। কারণ ঐ মেয়ের গালে লালের ছোপ। নইলে ঐ মেয়ে নির্বাক হয়ে যায়?পড়েছি তো পড়েছি তাতে লজ্জার কি আছে!ঐ মেয়ের মন যে আমার কাছে বাধা পড়েছে তা আমি হলপ করে বলতে পারি। গাড়ির গতি শ্লথ হচ্ছে।মন্দাকিনীর মনে চলছে তোলপাড়। কেন কৃষ্ণ দা ওকে এখনও ছাত্রী ভেবে চলেছে!সেই কবেকার কথা,কৃষ্ণ দা ওদের বাড়িতে এল।পর্দার ফাঁক দিয়ে মন্দা তার গৃহ শিক্ষককে দেখছে।পছন্দ হয়ে গেছে মন্দার। পছন্দ হবার একটাই কারণ সেই মাস্টার মন্দার বয়সের ধারে কাছের। যখন তিন তলার ঘরে জলখাবার নিয়ে গেছে।হাসি পেল মন্দার। এ আবার কেমন মাস্টার! মেঝেতে দাঁড়িয়ে কেমন ধেঁই ধেঁই করে লাফাচ্ছে সেই মাস্টার মশায়। পাড়ার যে ছেলেগুলো মন্দার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে তাদের বয়সের ই হবে।তবে এ ছেলের চেহারা ছবিই বলে দেয় এ ছেলেএকেবারেই অন্য ধাতের। প্রথমে মনে হয়েছিল পাগল টাগল নয় তো! নইলে অমন লাফায়!পর মুহুর্তে ভুল শুধরে নিয়েছে মন্দা। কারণ মন্দাকে আর তাদের কাজের মেয়ের হাতে জলখাবার দেখে তার মুখের আদল গেছে পাল্টে। এ যেন তালতলা গার্লস এর পন্ডিত মশায়!ন্যেড়া মুন্ডি ছেলেটা এক লহমায় বুড়ো মাস্টারের ভঙ্গিতে নজর চালিয়েছে মন্দার দিকে।যেন পরখ করা এই কী তার ছাত্রী!তবে ফ্রক পড়া মন্দাকে দেখে স্বস্তি পেয়েছে, তা ঐ বয়সেই বুঝেছে মন্দা। বছর পেরতে স্বস্তি হয়নি মন্দার। এমন মাস্টারের কাছে কি পড়া যায়!যার চোখে চোখ পড়তেই মন গভীরে চলে যায়!ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে হয় সেই চোখ। ছুঁয়ে দেখার আগেই সেই ছেলে পালিয়ে বেঁচেছে মন্দার কাছ থেকে। ছুঁয়ে দেখেনি বললে মিথ্যা উক্তি হবে। একটা হাতের স্পর্শ কি ভাবে হাজার বাতি জ্বালতে পারে!!!অনু পরমাণু ঝংকৃত হয়ে উঠেছিল মন্দার। সে হাত কেষ্টাচরণের অর্থাৎ মন্দার কৃষ্ণদার। গাড়ির ঝাঁকিতে চমক ভাঙলো। চোখে চোখ পড়তেই তার চোখে কাঁপন। গালে লালের ছোঁওয়ার সাথে সাথেই চোখ নেমে গেল আপনা থেকেই। আমি বুঝলাম যা বোঝার। কিন্তু এমনটা হলেও চলবে না।মাসীমার চোখে ধরা পড়ে গেলে হারিয়ে ফেলব আমার’ মন’ কে।কারণ মেয়ের ভাবগতিকের দিকে মাসীমা লক্ষ রাখছেন। তাই মন্দার সাথে সম্পর্ক টা সহজ করতে উঠে পড়ে লাগলাম। বললাম—– তেলেগু টা তো ভালোই রপ্ত করেছ?তাই না মেশোমশায়? মেশোমশায়ের অপার খুশির আভাস তার দরাজ গলার হাসিতে। মাসীমার মুখে ও হাসি।সেই মেয়ের শান দেওয়া গলা। ———– বাবাতো তোমাকে গাইড হিসাবেই এনেছেন। এখানকার কথাটা কি তোমার জানা উচিত ছিল না? বললাম——- মেশোমশায় যদি পনের দিন সময় দিতেন তবে নিশ্চয়ই চেষ্টা করতাম। তবে নিজে কেরামতি দেখাবার জন্যই লাস্ট মোমেন্ট এ আমাকে ডাকার ব্যবস্থা করেছ। ঠিক বলেছি কিনা মেশোমশায়? আমি মেশোমশায়কে সালিশি মানলাম। মেশোমশায় আমতা আমতা করে মাসীমার দিকে চাইলেন। সে চাউনির অর্থ না বোঝার মতো নিরেট আমি নই।কে আপত্তি জানিয়েছিল তাও আমি জানি।তবুও বলি। ————– এরপরের বার আমাকে জানাতে দেরি করো না।তখন বুঝব তোমার ভাষা শেখার মুরুব্বিয়ানা! সে বলল—–তখন দেখা যাবে। মন্দাকিনীর স্বরে প্রেম নেই।আছে তেজ। খুশি হলাম কেননা এত তাড়াতাড়ি প্রেমে পরিসমাপ্তি হলে আমি তো হাবুডুবু খাব। খুশি হয়ে বললাম—— কেষ্টা চরণ দেবশর্মণ কে জান ন তুমি একবার যা ধরবে তা ছাড়বে না এই অধম। কথাটা শুনে ঐ মেয়ের মুখভঙ্গী হল দেখার মতো। বুঝে নিলাম ঐ চোখে কি লেখা আছে!মনে ভাবি ওর তো স্বস্তির কারণ দেখিনা!যার মা আমাকে চালচুলো হীন বাউন্ডুল ভেবে বসে আছে।তার তো আমার বলা কথায় স্বস্তি হওয়ার কারণ দেখিনা। মন্দা কি ভেবেই নিয়েছে ওকে পাবার জন্য আমি সব লড়াইয়ে নামব?পুরণো কথায় ফিরলাম। ———–‘ দেখ মন্দাকিনী,তেলেগু যখন শিখেছ তখন কন্নড় ভাষাও তুমি শিখে নিও।তুমি হবে আমাদের গাইড। ———— আর তুমি কি করবে?তোমাকে কেন আনা হবে? বেশ রোষাইত নজরেই বলল মন্দাকিনী। আর তখনই আমার মগজে নাড়া দিল একটা দৃশ্য। হোটেলের সেই আলো আঁধারি ক্ষণে চারচোখের মিলন।আমি কি এতক্ষণ ভুল ভেবেছি?হয়তো বা! নিশ্চয়ই ভুল করেছিলাম। মন্দার গলার স্বর বলছে আমি ভুল করেছিলাম। নইলে ওর দৃষ্টি আশাহত কেন?মন্দাকিনী কি সেই ক্ষণে আমার কাছে আরও কিছু আশা করেছিল?আমি অর্বাচীন পুরুষ। নারীর একটা ছোট্ট চাহিদাকে মেটাতে অক্ষম হয়েছি।অন্য কোন পুরুষ হলে অমন সুযোগ অবহেলায় হারাতো না। বরং লুফে নিত। নিজেকে বাহবা দিতে পারি না।ইচ্ছে কি আমার ও হয়নি!!অমন নজর কাড়া মেয়েকে বুকে জাপটে রাখতে!!ঠিক যেমন টা মন্দাকিনীর হয়েছিল। তবে সাহসে ভর করে সে কাজটা করতে পারিনি।কি করে করব?সে এলেম কি আমার আছে??? সাহসে ভর করতে হলে মালকড়ির দরকার হয়। নিদেন পক্ষে একটা চাকরি।মোটামুটি উঁচুদরের। কোনটাই আমার নেই। তাই জয় মা বলে ঝুলে পড়িনি ঐ জোড়া ঠোঁটে।শুধুমাত্র দেবভোগ্যাকে এঁটো করে কি কাজ?আমি শিক্ষিত হয়ে মুর্খের কাজ কি করে করি?তবে হ্যাঁ।সেই সময়ের “সাইড প্লিজ” কথাটা চাবুকের মত কাজ করেছে। হঠাৎই মনে হল মাসীমা কিছু বলছেন মন্দাকে। বুঝলাম মাসীমা কেষ্টার প্রতি প্রসন্ন না হলেও মেয়েকে বলছেন———-ও কি কথা মন্দা?ও কি আমাদের গাইড।পড়াশুনা অনেক করেছে,ওর অনেক জ্ঞান। তাছাড়া ও তোমার শিক্ষক। তাকে তুমি অপমান করে কথা বলো! আমি শুধুই শুনি।জানি মাসীমা শিক্ষক কথায় জোর কেন দিচ্ছেন?মন্দাকিনীকে তিন বছর ইংরেজি পড়িয়েছিলাম। ভাল ফল হওয়ায় আমার কদরটা বেড়ে গিয়েছিল। ফ্রক পড়া মন্দাকিনীকে তখন মন্দা বলে ডাকতাম। ভাবলে হাসি পায়।তখন মন্দাকিনী আমার ভয়ে তটস্ত। ছাত্রীর ভয়টা কবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।অন্য কিছু। তবে কিছু ওর মনে ভর করেছে।ভয় পেলাম আমি। সদ্য বাবা মারা যাবার পরই প্রথম মন্দাকিনীকে পড়াতে গিয়েছিল কেষ্টাচরণ।বিশাল বাড়িতে ঢুকতে ভয় ভয় করছিল। তার জীবনের প্রথম টিউশন। ইংরেজিতে এম. এ করার পর ডক্টরেট করার ইচ্ছাকে চাপা দিতে হয়। টাকার দরকার। পড়াশোনা তো দূরের কথা,পেট চাই দায়। গ্রামের বাড়িতে মা থাকে। তাকে ও টাকা পাঠানো দরকার। টিউশন টা এককথায় লুফে নিয়েছিল বাড়তি টাকার লোভে। এ বাড়ির টিউশনের পাল্লাটা ছিল ভারী। কড়ার হয়েছিল মেয়ে পড়ানোর সাথে সাথেই ফুট ফরমায়েস খাটার। তার বদলে আহার, বাসস্থান ও মোটা টাকার ব্যবস্থা।খুশি করতে পারলে আরও আয় বাড়বে। মেশোমশায় কেষ্টাচরণকে পুত্রবৎ মেনে নিলেন। আর নেবেন নাই বা কেন?সদ্য পিতৃ হারা কেষ্টাচরণ তার মুন্ডিত মস্তকে হাজির হল সেই অট্টালিকা সমান বাড়িতে।উন্নত নাসা, গৌর কান্তি সলজ্জ ভঙ্গি কেষ্টাচরণের জায়গা হল তিন তলার একখানা বড়সর খোলা মেলা ঘরে। জানালার সামনে একটা শিমুল গাছ। টুকটুকে লাল ফুলে ছেয়ে আছে গাছ। আনন্দে নেচে উঠল মন। দেদার লাফ দিল কেষ্টাচরণ।লাফ থেমে গেল যখন দেখল যখন একটি ফ্রক পড়া মেয়ে এসে দাঁড়াল। ———– মাষ্টার মশায়, আপনার জলখাবার। পরিচারিকা টেবল এ খাবার সাজিয়ে দিল।সন্দেহ দানা বাঁধল মনে।এই বুঝি ছাত্রী । একেই পড়াতে হবে। মাষ্টার মশায় যখন বলেছে এই সে।পারবে তো পড়াতে। পারতেই হবে নইলে এই তিন তলার ঘরে থাকা যাবে না।কবিত্ব করার এটা দারুণ জায়গা। তাই, কেষ্টাচরণ” বি অনেষ্ট “।কাজে লেগে পড়। নিজেকেই নিজে বলল কেষ্টাচরণ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

2 thoughts on “বিশাখাপত্তনম এ মন্দাকিনী || Shipra Mukherjee”

  1. চোখের সামনে মনে হচ্ছে দৃশ্য গুলো ফুটে উঠছে, খুবই ভালো লাগলো দিদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *