কবি, এবারে সত্যি করে বলুন তো, মধ্যগগন পেরিয়ে সূর্য এখন
চলে যাচ্ছে মধ্য বয়েসে, যেমন আপনার বয়েস,
প্রথম ফুল ফোটার মতন যৌবন উদগমে এবং বাতাসে বন্যার জলের মতন
আরও অনেক বছর
আপনি যে সব প্রেমের কবিতা লিখেছেন, ঠিক যেন
নেশাগ্রস্তের মতন প্রেম,
এই প্রেমের দাপট কি আপনার এই বয়েসেও থাকে? প্রেম কি
সত্যিই কখনো পুরনো হয় না, হারিয়ে যায় না?
প্রশ্ন শুনে কবি স্মিতহাস্যে বললেন, তুমি সেই গল্পটা
জানো না বুঝি?
একজন রবীন্দ্রনাথকে প্ল্যানচেটে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিল, গুরুদেব,
মৃত্যুর পর সত্যিই কি স্বর্গটর্গ…
তরুণ প্রশ্নকারীটি ঈষৎ বিদ্রূপের সুরে বলল, আপনি আমার
উত্তর এড়িয়ে গিয়ে নিজেকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তুলনা করলেন?
বুড়ো বয়েসে বুঝি এরকম হয়?
আমি পরকাল কিংবা স্বর্গ-নরক নিয়ে…
কিন্তু প্রেম, সে কি ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু, কিংবা
চোখ খোলা স্বপ্ন, কিংবা চার দেয়ালে বন্দির একটিমাত্র জানলা?
কবি হাসলেন, রবীন্দ্রনাথের কৌতুকটি তুমি বলতেই দিলে না
তা হলে প্রথম থেকেই এত উপমা দিচ্ছিলে কেন?
এসব প্রশ্ন করতে হয় সোজাসুজি!
তরুণটি বলল ঠিক আছে, স্পষ্টাস্পষ্টিই জিজ্ঞেস করছি, প্রেম
কতদিন টেকে বলুন তো? ক মাস? ক বছর?
একজনের সঙ্গে আজীবন প্রেম কি সম্ভব?
কবি মুচকি হেসে বললেন, আমার সোজাসুজি উত্তর, তোমায় বলব কেন?
তরুণটি ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, ব্যস, ভয় পেয়ে গেলেন, ভাবলেন
বুঝি আপনার ওসব মাখো মাখো প্রেমের কবিতাগুলো
আর কেউ পড়বে না?
কবি বললেন, তুমি এবার চাঁছাছোলা ভাষায় কথা বলছ
তবে আমি উপমা শুরু করি?
প্রেম একটা নদী। আসলে নদী বলে কিছু নেই অথচ
পৃথিবী ভর্তি নদীর কত নাম! কত কাব্য!
আজ তুমি একটা নদীতে স্নান করতে গেলে, কী সম্ভোগের দাপাদাপি
এক বছর পরে যাও, সেই নদীর অন্য জল, তুমিও অন্য মানুষ
ফুল আর ভ্রমরকে কতবার মেলানো হয়েছে, ফুল দুএকদিনে ঝরে যায়
ভ্রমরেরই বা কতটুকু আয়ু?
তবু ফুল ফুটতেই থাকে, ভ্রমরও আসে গুন গুনিয়ে
যেন একই ফুল, একই ভ্রমর
তরুণটি বলল, আপনি কিন্তু এখনো উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন
কবি বললেন, উপমা মাত্রই তো এড়িয়ে যাওয়া, তুমি
মধ্য গগনের কথা বলছিলে
কেন জানতে চাওনি, এই বয়সেও আমার সেই অঙ্গটি চাঙ্গা থাকে কিনা?
তরুণটি খানিকটা থতমতো খেয়ে বলল, তার মানে, তার মানে
প্রেম শুধু শরীর, মানে এতকাল যে…
কবি তাকে বাধা দিয়ে বললেন, শরীরও এক শরীর নয়,
নদীর মতন, হৃদয়ও এক হৃদয় নয়, নদীর
মতন। অথচ সবই আছে।
যাও, সন্ধেবেলা একটা নদীর ধারে গিয়ে বসে থাকো
তোমার সঙ্গিনীর কানে কানে সুমধুর শাশ্বত মিথ্যেগুলো বলো
তাকে দুঃখ দিও না,
সে-ও তোমাকে যা-দেবে, তুমি তার মানেই বুঝবে না।