নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফ্রেঞ্চ লেখক ‘অ্যানি এরনাক্স’
এবার ২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফ্রেঞ্চ লেখক অ্যানি এরনাক্স।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর ২০২২) বিকেলে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমিতে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৯তম লেখক হিসেবে অ্যানি এরনাক্স-এর নামটি ঘোষণা করে সুইডিশ অ্যাকাডেমি। গতবছর তানজানিয়ার লেখক ‘আবদুল রাজাকে গুরনাহ’ এই সম্মাননা পেয়েছিলেন।
এই বছরের সম্ভাব্য প্রতিযোগীদের মধ্যে ‘ফেভারিট’ তালিকায় ছিলেন আনি এরনাক্স। তাছাড়া প্রতিযোগিতার দৌড়ে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক ‘সালমান রুশদি’, কেনিয়ার লেখক ‘নগুগি ওয়া থিয়ঙ্গো’, জাপানের ‘হারুকি মুরাকামি’ ও নরওয়ের ‘জন ফোস’-এর মতো নামজাদা সাহিত্যিকরাও। তাদের পিছনে ফেলে রেখে শেষপর্যন্ত পুরস্কারের বিজয়ী মুকুট মাথায় তুলে নিয়েছেন ‘অ্যানি এরনাক্স’।
সাহিত্যে নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ‘অ্যান্ডার্স ওলসন’ বলেছেন, ‘এনরাক্সের কাজ প্রায়শই আপোষহীন এবং সরল ভাষায় লেখা। তিনি পরিষ্কারভাবে বিষয়বস্তু তুলে ধরেন। তিনি প্রশংসনীয় এবং স্থায়ী কিছু অর্জন করেছেন।’
১৯৪০ সালে ফ্রান্সের লিলিবোনে জন্মগ্রহণ করেন ‘অ্যানি এরনাক্স’। তিনি শ্রমজীবী পরিবার থেকে উঠে এসে ইতিহাসের সব থেকে সম্মানিত এই পুরস্কার জিতলেন। তাঁর বাবার ছিল একটি মুদি দোকান । সামান্যই আয় হতো সেখান থেকে।
অনেক কষ্টে তাদের সংসার চলতো।
শিক্ষাজীবনে নিজ প্রচেষ্টায় অ্যানি প্রথমে ‘রুয়েন বিশ্ববিদ্যালয়’, পরে ‘বোর্দো বিশ্ববিদ্যাল’-য়ে পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতা শুরু করে তিনি। সেই সাথে আধুনিক সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান নিবিড়ভাবে। ১৯৭০ সালের শেষে দিকে, ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিস্ট্যান্স লার্নিং’-য়ে যোগদান করেন। এর আগে অবশ্য ‘ইভিয়ার কলেজ’-য়ে পড়াতেন তিনি।
১৯৭৪ সালে আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘লেস আর্মোরিস ভাইবস’ দিয়ে অ্যানি এরনাক্স-এর সাহিত্য জীবন শুরু হয় ।
তিনি তাঁর আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘লা প্লেস’-এর জন্য ‘রেনাউডট পুরস্কার’ জিতেছিলেন। এই ‘লা প্লেস’ রচনাটি তিনি তাঁর পিতার সাথে সম্পর্ক, ও ফ্রান্সের একটি ছোট শহরে বেড়ে উঠার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছিলেন।
তিনি আত্মজীবনী লিখতে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলেন যে, কথাসাহিত্য থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছিলেন।
২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘লেস অ্যানেস বা দ্য ইয়ার্স’ বইটিকে তার শ্রেষ্ঠ রচনা বলে মনে করেন অনেক ফরাসি সাহিত্য-গবেষক।
এতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফরাসি সমাজের একটি প্রাণবন্ত চিত্র ফুটে উঠেছে। তাকে ‘গডমাদার’ নামে চেনে ইউরোপিয়ান সাহিত্য সমাজ।
অ্যানি এরনাক্স তার জীবনে ‘জার্নাল ডু ডিজোরস’ এবং ‘লা ভি এক্সটেরিউর’-এর মতো সাড়া জাগানো বই লিখেছেন।
অ্যানি একজন কথাসাহিত্যিকের পরিবর্তে ‘নিজেকে নৃতাত্ত্বিক’ বলে দাবি করেছেন। সুইডিশ নোবেল কমিটি পুরস্কার ঘোষণা করে বলেছে, ‘অ্যানি এরনাক্স লিঙ্গ, ভাষা এবং শ্রেণী সংক্রান্ত বৈষম্য দ্বারা পরিচালিত জীবনযুদ্ধের কথা লিখেছেন।’
এ’ছাড়াও তার চতুর্থ বই ‘লা প্লেস’-কে পৃথিবীর সাহিত্য-জগতের অগ্রগতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করে সংস্থাটি। এতে তিনি তাঁর পিতার একটি স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ প্রতিকৃতি এবং সমগ্র সামাজিক পরিবেশ ফুটিয়ে তোলেন, যাতে তার মৌলিকত্বের পরিচয় পাওয়া গেছে।
অ্যানির লেখায় বর্ণনামূলক ভাব-ভঙ্গীর অভাব থাকলেও তিনি অল্প কথায় বুঝিয়ে দিতে পারতেন নিজের অভিব্যক্তি। অন্যান্য লেখকদের তিনি বরাবরই সরলভাবে লেখার পরামর্শ দিয়েছেন। লেখালেখি সম্পর্কে অ্যানি এরনাক্স বলেন, ‘লেখা একটি রাজনৈতিক কাজ, যা সামাজিক বৈষম্যের জন্য আমাদের চোখ খুলে দেয়। লেখাকে একটি ছুরি হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।’
এছাড়াও তিনি যৌনতা এবং যৌনজীবন নিয়ে তার লেখায় খোলাখুলি আলোচনা করেছেন। এমনকি নিজের গর্ভপাত নিয়েও লিখতে তিনি কোন সংকোচ বোধ করেননি। তিনি চেয়েছেন সরলভাবে সমাজকে জানতে এবং তাঁর পাঠকদের জানাতে ।
————————————————-
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস/বিবিসি/ওয়াশিংটন পোস্ট (৬/১০/২০২২. ৬:৫১:১৫ PM)