নাস্তিকের ঈশ্বর দর্শন -7
ওই যে লোহার খাঁচার মত ভাড়া/ভারা বাঁধা ছিল তা মূলত মন্দিরের ডানদিক ও পেছনদিকে, যেখানে বিগ্রহ দর্শনার্থীদের ভীড় নেইই বললে চলে। মন্দির চত্বরের ওই অংশে অনেক ছোট ছোট মন্দির আছে যেখানে বিভিন্ন দেব দেবী অধিষ্ঠিত।রোদের তেজ বাড়ছে, এমনিতেই মন্দিরে আজ পূণ্যার্থীর সংখ্যা কম। আমরা যখন বই খুলে দেওয়ালের প্যাটার্ন আর ভাস্কর্য নিয়ে আলোচনা করছি তখন থেকে এক ফর্সা নধরকান্তি ( যথেষ্ট মোটা ) লোক আদুর গা, পৈতে আছে, খালি ধুতি পড়েছেন আর কাঁধে একটা গামছা, বয়স আন্দাজ পঞ্চান্ন আমাদের পেছনে সেঁটে গেলেন । আমরা ব্যাপারটা লক্ষ্য করে গলার ভ্যলুম কমিয়ে দিয়েছিলাম, দেখেই বোঝা যাচ্ছে মন্দিরের পুরোহিত বা ওই জাতীয় কিছু হবেন। উল্টোদিক থেকে আসা মন্দিরের অন্য কর্মীরা ওনাকে নমস্কার করে নিজেদের ভাষায় সৌজন্য বিনিময় করছিল, ভাষা না বুঝলেও এইটুকু বোঝা যাচ্ছিল যে উনি একজন তালেবর গোছের। আমরা ওনাকে নিয়ে আলোচনা একপ্রস্থ করেও নিলাম। একবার তো ঘাড়ের ওপর উঠেই পড়লেন প্রায়। রাণা থাকতে না পেরে খোলা বইটা ওনার দিকে এগিয়ে দিয়ে কিঞ্চিত উদ্ধত সুরে ইংরাজিতে কিছুটা জ্ঞান দিতে গিয়ে বেকুব, উনি প্রায় ঝরঝরে বাংলাতে বলেছিলেন, বাবাদের আলোচনা তার শুনতে ভাল লাগছে বলেই সে আমাদের সঙ্গ ছাড়েনি। এখানে সবাই আসে প্রভুর কাছে নিজের জন্য চাইতে, তারপরেই মন্দিরের দেওয়ালের মিথুন ভাস্কর্য দেখিয়ে বলেছিলেন, এর মধ্যে ওরা আদিম রিপু খোঁজে, অথচ এগুলো কেন এখানে তা জানার ইচ্ছেটুকুও নেই। আমরা ওনাকে থামিয়ে প্রায় সমস্বরে বলে উঠলাম, কেন ? ওনার উত্তর ছিল, বাবারা, মানব দেহ রিপুর আধার, ভক্তিমার্গে যেতে গেলে, ঈশ্বরের সঠিক আরাধনা করতে গেলে সব রিপুকে ত্যাগ করতে হয় যা করেছিলেন বুদ্ধদেব, উনিও তো মানুষ ছিলেন, তাই নয় কি ? এইসব মিথুন মূর্তি এখানে দিয়ে বলা হচ্ছে সম্পূর্ণ নিস্কাম দেহ ও মন নিয়ে দেবতার সামনে যেতে, কে শোনে এর অর্থ, সবাই তো লোভী, আমার ভাল কি করে হবে হে দয়াময় জগন্নাথ তাই করে দাও, কেউ একজন বলুক দেখি সে অন্যের ভাল চেয়েছে প্রভুর কাছে ? একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ওনার ব্যাখ্যা শুনে আমরা থ , সত্যই তো আমরাও আমাদের, পরিবারের ভাল চেয়েছি, অন্যের জন্য তো চাইনি ! উনি বলে চলেছেন, এই স্বার্থপরদের ভীড়ে আমাদের আলোচনা ওনার খুব ভাল লেগেছে, যদিও বাপ ঠার্কুদার কাছ থেকে উনি মন্দির ও বিগ্রহ সংক্রান্ত সমস্তটাই জানেন , তবুও দেখতে চেয়েছেন যে আমরা কোন নতুন ব্যাখ্যা দিতে পারি কি না, নিছকই কৌতুহল ওনার, বাবাদের এই কাজ যে স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয় তা ওনার বিলক্ষণ জানা আছে। আমরা প্রভুর সামনে কিছু নিজের জন্য চাইলে প্রভু নিশ্চয়ই দেবেন । বলেই হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে জয় জগন্নাথ বলে উঠলেন, তাই দেখে আমরাও হাতজোড় করে জয় জগন্নাথ বলে। তারপর আমাদের নমস্কার করে বললেন, আচ্ছা বাবারা তোমরা তোমাদের কাজ কর, আমি একটু বিশ্রাম নি বরং, বলে মন্দিরের একটা সিঁড়ির ধাপে থামের গায়ে হেলান দিয়ে বসে গামছা ডানদিক বাঁদিক করে হাওয়া খেতে লাগলেন। বলতে গেলে ওনার কথা বলার ভঙ্গিতে আমরা আপ্লুত। ওনাকে নমস্কার জানিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে উদ্যোগ নিলাম। সবে মাত্র দু পা গেছি – বাঁ পায়ের তলাতে কিছু একটা ফুটে গেল, এমন কিছু ফুটেছে আর তার তীব্রতা এতটাই ছিল যে আমি ওরে বাবারে বলে চেঁচিয়ে ধপ করে দুদিকে দু হাত সাপোর্ট দিয়ে বসে পড়তে বাধ্য হলাম, বসা মাত্রই দু হাতের তালুতে কিছু ফুটে গেল। বলছি যতক্ষণ ধরে তার থেকে অনেক অনেক কম সময় লেগেছিল, দ্বিতীয় শক খেয়ে হাত দুটো তুলে দেখি দু হাতে ছোট ছোট কাঁচের টুকরো ফুটে গেছে। টান মেরে বের করলাম, অল্প অল্প রক্ত বের হতে লাগল, নজর দিলাম বাঁ পায়ে, কি ভয়ঙ্কর,একটা কাঁচের টুকরো, প্রায় দু ইঞ্চি মাপের ,পায়ের নিচে গেঁথে আছে। হাতের কথা ভুলে বন্ধুদের হাত ধরে ত্রিভঙ্গ মুরারি হয়ে দেখালাম আমার ঠিক কি হয়েছে। ইতিমধ্যেই আমার পড়ে যাওয়া দেখে ওই ভদ্রলোক হাঁক দিয়ে জানতে চাইছেন আমি কেন পড়ে গেলাম, কি প্রবলেম ? পাহাড়ে চড়া মানুষ আমি, হাত তুলে ওনাকে স্থির থাকতে বলে বন্ধুদের কাঁধে হাতের সাপোর্ট নিয়ে ওই সিঁড়িতে এসে বসেই পা থেকে কাঁচের টুকরো একটানে বের করলাম। , উনি বলে উঠলেন, হায় প্রভু, এখানে কাঁচ এল কি করে। যে মুহুর্তে কাঁচটা পা থেকে টেনে বের করলাম,পা থেকে রক্ত ফিনকি দিয়ে বের হতে শুরু করল। এক লহমাতে জায়গাটা অল মোস্ট ব্লাড ব্যাঙ্ক । আমি যেহেতু ফার্স্ট এইড জানি বন্ধুদের হুকুম দিচ্ছি মন্দিরের উল্টোদিকের ওষুধের দোকান থেকে কি কি আনতে হবে , যাতে প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। ভদ্রলোক গম্ভীর গলায় বললেন, যা আনতে যাচ্ছ , যাও, এ সব প্রভুর লীলা, বলেই নিজের ধুতি ফরফর করে ছিঁড়ে আমার পায়ে ব্যান্ডেজ আকারে লাগাতে শুরু করলেন, আর বিড়বিড় করে কি সব মন্ত্র বলছেন। একজন বয়স্ক মানুষ আমার পায়ে হাত লাগাচ্ছেন ভাবতে খুব লজ্জিত হয়ে গেলাম, বারবার ওনাকে ছেড়ে দিতে বলছি ,উনি শুনছেন না। অল্পক্ষণ, উনি মুখ তুলে তাকালেন, দেখি দুচোখে জল। আমি অবাক, কাঁদছেন কেন ? অস্ফুট স্বরে বলে যাচ্ছেন, প্রভু তোমার লীলা অপার, আমরা মূর্খ, তোমাকে চিনতে পারি না, তুমি জগতের নাথ, সবার মধ্যে বিরাজ কর, হে প্রভু,করুণাসিন্ধু, মানবজাতির কল্যাণ কর। কুনালের একটা হাত আমার কাঁধে, আলতো চাপ দিতে ওর দিকে তাকাতে ঘাড় নেড়ে ওনার কথার সমর্থন করল। উনি কথাগুলো বলে হাঁকডাক শুরু করলেন, মুহূর্তেই অনেক মানুষের ভীড় হয়ে গেল। ইতিমধ্যে অন্যরা ( বন্ধুরা) বেটাডিন লোশন, গজ কাপড়, তুলো,ব্যান্ডেজ নিয়ে হাজির।ওনারা স্থানীয় ভাষাতে নিজেদের মধ্যে উত্তেজিত হয়ে কি সব আলোচনা করছেন, ভাষা অন্তরায়, বুঝতেই পারছি না ওনাদের বক্তব্য, তবে একটা জিনিস দেখছি, এই যে বিভিন্ন পোষাকের, বিভিন্ন বয়সের লোকেরা এখানে জমায়েত হয়েছে তারা ওনার কথা মন দিয়ে শুনছে, আমাকে সমীহের চোখে দেখছে, আর মাঝেমধ্যেই জয় জগন্নাথ বলে হাঁক দিচ্ছে। উনি কিছু একটা বলতে খান দুয়েক অল্প বয়সি ছেলে দৌড়ে মন্দিরের ভেতরে চলে গেল, একটু পরেই একজন ফিরে এসে ওনার হাতে একটা ফুল দিলেন, আমি ওনাদের যেমন লক্ষ্য করছি তেমন বাঁ পাটাও দেখে যাচ্ছি। ডান ঊরুর ওপর তুলে রেখেছি, তখনও রক্ত বের হচ্ছে। এইসব ক্ষেত্রে কি করে ব্যান্ডেজ করতে হয় তা আমার বিলক্ষণ জানা আছে, উপকরণ সব হাজির , শুধু করতে পারছি না ওনার হাতজোড় করে অনুরোধ করাকে সম্মান দিতে, বুঝতে পারছি এইভাবে বেশিক্ষণ থাকলে ক্ষততে স্টিচ করতেই হবে,অথচ ……, একটু একটু বিরক্ত হচ্ছি।আবার এ’ও ভাবছি, ধুতি ছিঁড়ে ব্যান্ডেজ তো করলে, প্রথমত অপটু হাতের করা,কাজ হবে না, দ্বিতীয়ত ধুতিটা তো আদৌ স্টেরিলাইজড্ নয়, ইনফেকশন যখন তখন হতে পারে। ফুলটা হাতে নিয়ে উনি পৈতে ডানহাতের বুড়ো আঙুলে জড়িয়ে মুঠো করে ধরে চোখ বুজে বিড়বিড় করে কি সব মন্ত্র পড়লেন আর তারপরেই একটা পাপড়ি ছিঁড়ে আমাকে খেতে বললেন। বাধ্য ছেলের মত করলাম, উনি বন্ধুদের জলের বোতল চেয়ে ডানহাতে রাখা ফুলে একটু ঢেলে ফের মন্ত্র পড়ে জলটা ক্ষত বরাবর বাঁ পায়ে একটু একটু করে ঢেলে দিলেন। মিনিট তিন কি চার সমস্ত কাজ মিটিয়ে একগাল হেসে আমাকে বললেন , আপনি কে তা নিজেও জানেন না। আমি এই মন্দিরে শিশু বয়স থেকে আজ পর্যন্ত অনেক মানুষ দেখেছি কিন্তু আপনার মত পরমাত্মার কাছের লোক আঙুলে গুনে চার কি পাঁচজনকে দেখেছি।বলেই সঙ্গীদের কি একটা হুকুম দিতে ফের একটা লোক দৌড়ে মন্দিরের ভেতর চলে গেল। উনি বলে চলেছেন, এখানে কাঁচ আসবে কোত্থেকে, এ তো ঘর বাড়ি নয় যে কাঁচ আসবে, তাহলে ? বলেই সঙ্গীদের ফের কি একটা বলে চাতালের যেখানে আমার পায়ে কাঁচ ঢুকেছিল জায়গাটা আঙুল দিয়ে দেখাতে দলটা চলে গিয়ে খুব মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। উনি বলছেন, জগন্নাথ নারায়ণের আরেক রূপ, নারায়ণ জগতের পালনকর্তা। তিনি যেমন প্রেম দিতে জানেন ঠিক ততটাই জগতকে রক্ষা করতে সুদর্শন চক্র তুলে নিতেও পারেন। আপনি ইয়াং, আপনি নারায়ণের সুদর্শন, কারণ আপনার রক্তের এখনকার তেজ, কিন্তু বাবা তোমাকে তো প্রেম দিতেই হবে, দুটো সত্বা নিয়েই যে চলতে হবে বাবা, প্রভু জগন্নাথ তোমাকে কাছে ডেকে এই কথাটাই বলতে চেয়েছেন, তোমার বয়স তোমার কানে সেই ডাক পৌঁছে দেয় নি, তাই প্রভু এই ছলনা করলেন। দেখ তো বাবা রক্ত বের হওয়া বন্ধ হয়েছে কি ? এতক্ষণ ধরে আর পায়ের দিকে নজর দিতে পারিনি, ওনার কথায় চটকা ভাঙে দেখি, কি আশ্চর্য রক্তপাত পুরোপুরি বন্ধ, উনি উবু হয়ে বসে ব্যান্ডেজটা খুলে দিলেন। সত্যিই তাই ক্ষতের ওপরে আর চারধারে রক্তের দাগ থাকলেও রক্ত বের হচ্ছে না। আমরা সকলেই অবাক। উনি এককোণে গিয়ে ব্যান্ডেজটা ফেলে বোতলের জল দিয়ে হাত ধুলেন, বন্ধুরা ঝুঁকে আমার পা দেখতে লাগল, উনি চেঁচিয়ে হাত লাগাতে মানা করলেন।হঠাৎই একটা হৈচৈ শুনে মন্দিরের ঢোকার দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একজন প্রবীণ মানুষ, ঘিয়ে রঙের সিল্কের ধুতি পড়ে, বেশ ফর্সা, চোখে চশমা, কাঁধে গামছা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছেন, ওনাকে দেখে ভীড়টা আমাদের কাছে আসার পথ করে দিল। প্রবীণ লোকটি আমাদের দিকে তাকালেন আর ঘুরে ওই ভদ্রলোক, যিনি এই কাহিনীর মূল চরিত্র, তাকে কিছু বলতেই উনি হাত দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিলেন। উনি সঙ্গীদের সাহায্যে সিঁড়ির ধাপ ভেঙে আমার সামনে এসে নমস্কার করে ভাঙা ভাঙা বাংলাতে নাম জানতে চাইতে যেই নাম শুনেছেন, একগাল হেসে প্রথমজনকে বললেন, ব্রাহ্মণ সন্তান …….ফের দেশোয়ালী ভাষায় দুজনে কিছু আলাপচারিতা করে ফের মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করার আগে আমাদের হাত নেড়ে ওনাকে ফলো করতে বললেন ।প্রথমজন বললেন ,উনি মন্দিরের মূল দ্বৈতাপতি বা মূল পুরোহিত, বলে হাতটা এগিয়ে ধরতে বলে বললেন চলো তোমরা ভেতরে এস। ব্যান্ডেজ ছাড়া আর যেতে মন চাইছে না, উনি মনে হয় বুঝতে পারলেন,বললেন, ঠিক আছে একটা পট্টি পায়ে জড়িয়ে ভেতরে এস আমি ওখানে আছি। এতক্ষণ বাদে সব বন্ধুরা কাছাকাছি এলাম, সকলেই চমৎকৃত। রাণাদের আনা ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ভেতরে আসতেই সব কুঁচো লোকগুলো নমস্কার করে পথ করে দিল। ভেতরে তখন জনা দশেক দর্শনার্থীদের আর মন্দিরের সেবার জন্য নিযুক্ত গোটা কুড়িজন উপস্থিত। এতদিন বাদে প্রথমজনের নাম খেয়াল নেই, আমাদের দেখে উনি কিছু একটা হুকুম দিতে গোটা চারেক লোক ছুটে গিয়ে গর্ভগৃহের মুখে লাগান শাল খুঁটিটা তুলে একধারে রাখল। উনি বললেন, চলো বাবা প্রভুর লোক তুমি, তুমি সুদর্শন চক্র, যাও তোমার গন্তব্যে যাও, সেই প্রবীণ লোকটা ইতিমধ্যেই একটা উঁচু টুলের সাহায্যে রত্ন সিংহাসনে উঠে গেছেন। আমি বিহ্বল, এগিয়ে গেলাম গর্ভগৃহের দিকে। যে শালখুঁটি দিনে একটা নির্দিষ্ট সময়েই খোলা হয় ভক্তদের জন্য তা আজ আমার জন্য অসময়ে খোলা হল। প্রথমে রত্ন সিংহাসন প্রদক্ষিণ করলাম,এবার মূল দ্বৈতাপতি টুলের সাহায্যে আমাকে সিংহাসনে আসতে বললেন, যেতেই একটা বড় বাটিতে রাখা চন্দন বাটা থেকে চন্দন নিয়ে বিগ্রহগুলোর পায়ের দিকে মাখাতে বললেন। করলাম, বসতে বললেন, বসলাম থালা থেকে ফুল নিয়ে হাতে দিলেন, নিচে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুদের দিলেন, ওনার সঙ্গে অঞ্জলি মন্ত্র বলতে বললেন, সব করলাম,শেষে বললেন, তোমার পুজো প্রভু গ্রহণ করেছিলেন অনেক আগেই, এখন তোমাকে আর্শীবাদ করলেন মাত্র, নাও যা মনের বাসনা তাইই চাও প্রভুর কাছে। কি চাইব আমি, মনে এল প্রথম দ্বৈতাপতির কথা, সকলেই স্বার্থপর, নিজেদের কথাই ভাবে। চেঁচিয়ে বললাম, জগতের মঙ্গল কর প্রভু, কল্যাণ কর। উনি চেঁচিয়ে বললেন, জয় জগন্নাথ। উপস্থিত সকলেই বলে উঠল , জয় জগন্নাথ। পরের কথা সংক্ষিপ্ত। মূল পুরোহিত আমাদের অপেক্ষা করতে বললেন বাইরে, এখুনি ভোগ হবে, আমরা যেন কিঞ্চিত প্রসাদ নিয়ে তবেই ফিরি হোটেলে। ফের এসে বসলাম ওই সিঁড়িতে। একঘন্টা বাদে প্রথম দ্বৈতাপতি একটা মাটির থালাতে খুরির মধ্যে রাখা, ধোঁয়া ওঠা ভাত,ডাল,ভাজা,তরকারি আরও কি কি ছিল আর খেয়াল নেই একজনের হাতে ধরিয়ে বলল ,বাবা এই প্রসাদ কেউই পায় না, তুমি সুদর্শন চক্র, তোমাকে কি করে ফাঁকি দি বল, প্রভু আমার ওপর রুষ্ট হতেন, তোমরা খাও, ফের এস, আমি তোমাকে চিনতে পারব, এখন যাই ভেতরে কাজ আছে। উনি নমস্কার করে চলে গেলেন। আমরা অল্প অল্প করে ভোগ খেলাম। সত্যি বলছি ভোগ খেয়ে মুখটা বাংলার পাঁচ হয়ে গেল ,এত বিচ্ছিরি খেতে।অন্যদের সহযোগিতায় থালা রেখে হাত ধুয়ে হোটেলের যাবার জন্য এগিয়ে গেলাম মূল ফটকের দিকে, দেখি হোটেলের পান্ডাবাবু হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে আসছেন,কাছে এসে আমাদের নমস্কার করে বললেন, আমি চলে যেতেই এত হব কান্ড হল, খুব আফসোস হচ্ছে এখন। আমি বল্লাম, আর আফসোস করতে হবে না, একটা অটো বুক করুন,আমরা জুতো পরে আসছি, আপনিও হোটেলে চলুন আমাদের সাথে। উনি দৌড় দিলেন বাইরে অটো বুক করতে। হোটেলের লবিতে আমরা বসে, প্রবীণ ম্যানেজার এই রোমহর্ষক ঘটনা শুনছে, কিছু স্টাফও আছে। বৃত্তান্ত শেষ করে পান্ডাবাবুকে বললাম যান এককাপ চা আনুন দেখি। আনছি বলে দৌড়লেন রান্নাঘরের দিকে, বন্ধুরা হাসতে হাসতে বলে উঠল- জয় জগন্নাথ।
( সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা )।