নাস্তিকের ঈশ্বর দর্শন -3
খুব নীচু গলায় ঐ কাওয়ারিদের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন -ঠিক পাঁচখানা বাড়ি পরেই দেখবেন ডান দিকে একটা বাড়ির গেট।গেটটা ভাঙা,ভেতরে মস্ত উঠোন, একটা গাড়িও আছে,চুপচাপ ঢুকে যাবেন,যেখানে সোজা হেঁটে ধাক্কা খাবেন দেখবেন ডান দিকে একটা পাতলা গলি,ঐ গলি দিয়ে এলেই আমাদের ঠিক পেছনেই পৌঁছে যাবেন।কিন্তু খবরদার বিশ্বনাথ গলিতে এসেই বাঁ দিক ধরে হেঁটে সোজা মন্দিরের দিকে চলে যাবেন একবারের জন্যও সিং দরজার দিকে দেখবেন না।এখানে এখন একমাত্র লোকাল লোকেদের অ্যালাও করছে ঐ সব নামহীন গলি দিয়ে যেতে।আপনারাও লোকাল হয়ে চলে যান।তবুও বলি ভেতরেও ব্যারিকেড আছে,দেখুন যদি তাদের টপকাতে পারেন তবেই বাবার দর্শন পাবেন।এতদূর থেকে এসেছেন বলে বাবাই হয়ত আমাকে দিয়ে আপনাদের ডেকে নিল।বাকিটা আপনাদের কর্মফল আর বাবার মহিমা।বলেই হাতের ঘড়ি দেখে ফের বললেন -মন্দির খুলতে এখনও দেড় ঘন্টা দেরি।চলে যান আর ঐ কাওয়ারিদের হাটো হাটো লোকাল লোককে যেতে দাও বলে সরিয়ে সরিয়ে ঐ গেটওয়ালা বাড়িটা অবধি যাবেন না হলে ওরা আপনাদের যেতেই দেবে না।তারপর কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে উঠলেন -হর হর মহাদেব।যান দাদা আপনাকেই মনে হয় বাবা ডাকছেন।আর শুনুন ভেতরে যে পুলিশ চৌকি আছে সেখানে কিন্তু বাবার কৃপা ছাড়া টপকানো মুশকিল।দেখুন কি হয়।একটানা বলে উনি থামতেই আমার প্রথমেই নজর গেল ওনার উর্দিতে আঁটা নেম ব্যাজের দিকে “এ কে শ্রীবাস্তব”,সাব-ইন্সপেক্টর,বারাণসী পুলিশ।কৃতজ্ঞ চিত্তে ওনার দুহাত ধরে বললাম-জানি না বাবার কৃপা পাবো কি না তবে আপনাকে কখনোই ভুলবো না।ওনার কথা মত আমরা কাওয়ারিদের ভীড় ঠেলে ঐ গেটওয়ালা বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম।বিহার ,উত্তর প্রদেশে দীর্ঘদিন কাটানোর জন্য সঙ্গীদের থেকে আমি হিন্দিটাতে সাবলীল,তাই আমার উচ্চারণে সরে যাও, যেতে দাও বলাতে ওরা একফালি জায়গা বের করে দিচ্ছিল যাতে আমরা যেতে পারি।ওইটুকু জায়গা যেতেই পাঁচ মিনিট লেগে গেল।পেলাম সেই বাড়ি যার উঠোনে একটা অস্টিন গাড়িও আছে।ঢুকে গেলাম,কোনও বাধা নেই, উঠোনে দাঁড়িয়ে দোতলা তিনতলা দেখলাম,বারান্দায় কিছু জামা কাপড় মেলা আর পায়রাদের ভীড় ছাড়া জন মানুষ আছে বলে মনে হলো না।নির্দেশ মেনে ডান দিকে চোখ মেলতেই একটা অত্যন্ত সরু গলি নজরে এলো,চওড়ায় সাকুল্যে ফুট দেড়েক ,অনতিদূরে ফের অন্য গলি নজরে এলো।দলের সবাই মাঝারি মাপের তাই গলি দিয়ে বের হতে তেমন কসরৎ করতে হলো না। আমি সবার আগে,এই গলিটা যেখানে অন্য গলিতে মিশেছে সেইখানে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে ডান দিকে চোখ মেলে দেখি শ্রীবাস্তব একদম ঠিক,একটু দূরেই সেই দুর্ভেদ্য সিং দরজা।পেছন ঘুরে সবাইকে কি করতে হবে বুঝিয়ে দু ধাপ নীচে নেবে বিশ্বনাথ গলিতে এলাম, পেছনে কেউ তাকায় নি।বাঁ দিক ধরে এগিয়ে যেতে লাগলাম মন্দিরের দিকে।এখানে বলা ভালো এই ভ্রমণের আগে আমরা কেউই বেনারস আগে আসি নি। প্রচুর দোকান,সব আধ-বন্ধ,জিগ্যেস করে এগোচ্ছি। পথে যত বাই লেন পাচ্ছি সব কটাই বাঁশ ,শালখুঁটি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড,যেন ভারত পাকিস্তানের সীমান্ত। এক দোকানদার ,বাঙালি, হতাশ হয়ে বললেন-দেখুন যেতে পারেন কি না।আমরা হেঁটেই চলেছি।ঘড়ি বলছে পনেরো মিনিট হয়ে গেছে।আমার কিন্তু মনে হচ্ছে আমরা গোলকধাঁধায় ঘুরছি।এইরকমই একটা একটু চওড়া মুখের গলির ভেতরে দেখি বেশ বড় একটা উঠোন আর কিছু লোক যেন আনাজ বিক্রী করছে, মানে ছোটখাটো বাজারের মত।এখানেও যথারীতি ব্যারিকেড তবে অন্যগুলোতে যেমন কেউ নেই এখানে গোটা চারেক পুলিশ এক সাব-ইন্সপেক্টরের আন্ডারে পাহারা দিচ্ছে।আমি কয়েক সেকেন্ড ভেবে সোজা এগিয়ে গেলাম বাজারের দিকে।যথারীতি বাধা, ঐ অফিসার আর আমার কথাবার্তা -কোথায় যাবেন – মান্ডিতে -কি করতে -সবজি কিনতে -এখন তো গ্রহণ চলছে ? -আপনি কাঁচা আনাজ ভাত ,রুটির সঙ্গে খেয়ে থাকেন বুঝি -মানে-এখন কিনে বাড়ি যাবো,গ্রহণ মিটলে সবজি পাকিয়ে গরম গরম পরোটার সঙ্গে খাবো,এখন না এলে তখন কি গলি ফাঁকা পাবো ?আপনারাও তো পালাবেন কাওয়ারিদের ভয়ে- এনারা -পরিবার ( ছ্যা ছ্যা লোকের বউকে নিজের বৌ বানালাম) আর সারুভাই ( ভায়রা ভাই) শালী আর ওদের বাচ্ছারা – কোথায় থাকেন ( কৌন সি মকান হ্যায় আপকা)- ( আসার সময় একটা গেস্ট হাউসের সাইনবোর্ড নজরে এসেছিল, হিন্দি আর বাংলাতে লেখা নাম, ঠিকানা, বাংলাতে আরও লেখা ছিল বাঙালি প্রতিষ্ঠান এবং মালিকের নাম -ফের মিথ্যে কথা ( ছিঃ ছিঃ দেবস্থানে এসে মিথ্যের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছি)-কলার তুলে বললাম- ওমুক গেস্ট হাউসের নাম শুনেছেন -হ্যাঁ -মালিককে চেনেন -না, দরকার নেই তাই জানি না,তবে আসতে যেতে গেস্ট হাউসটা দেখেছি -বেশ করেছেন;এতদিন বাড়িটা দেখেছেন এবার মালিকের ছেলেকে দেখুন – আপনি !!!! -আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার ( কান এঁটো করা হেসে বললাম) – যান,যান, তবে জলদি করবেন, সময় কম। দলের সবাই কে নিয়ে যেতে গিয়েই বাধা একজন যাবেন প্লিজ। আমার উত্তর-আপনার ঘরে আপনি বাজার করেন না ভাবী জি?-আমার সময় কৈ-আমারও তাই উনিই করেন,আমি গেস্ট হাউস নিয়েই থাকি,এখন গেস্ট হাউস বন্ধ তাই আমিও এলাম, বুঝলেন।অগত্যা কি আর উনি করবেন-যান।আমরাও চললাম বাজার করতে।