কেন জন্ম হলো মম তাই বসি ভাবি আজি মনে |
ফাল্গুন-উতলা-প্রাতে পুষ্প সম কেন অকারণে
উঠেছিনু ফুটি মম জননীর কোলে ? দুঃখে সুখে
দিবস-রজনী শুধু অনিবার চলেছি সম্মুখে |
প্রভাত-আলোক আজি অন্ধকার মেঘের মালায় |
বহিছে উত্তর বায়ু, সঙ্গীহীন এ বন্দীশালায়
কে নিষ্ঠুর ফেলেছিল টানি অসহায় শিশুটিরে টানি
কিসের লাগিয়া ? ধরণী ধূলিতলে শির হানি
শুধাই উত্তর তার | কেহ কিছু কহেনা ক আসি,
কঠিন পাষাণে লাগি ফিরে আসে তিক্ত অশ্রুরাশি,
না বুঝিয়া ব্যথা-ভরে কেঁদে ওঠে সারা দেহমন |
জীবনে আঁধার নামে, নিভে যায় আকাশ-তপন |
কেন জন্ম লভেছিনু নাহি জানি, শুধু জানি মনে
ডন্মিতে চাহিনি কভু | কেন অনাদরে অকারণে
ধরাতলে বিকশিল জীবন আমার ? অর্থ খুঁজি
চিত্ত মম পরিশ্রান্ত | তবু জানি, বুঝি নাহি বুঝি,
আমারে চলিতে হবে দিবানিশি সমুখের পানে |
অনন্ত আঁধার ভেদি কোথা কোন আলোর সন্ধানে |
আলো কি কোথাও আছে ? তাহা নাহি জানে হিয়া মোর |
শুধু জানি চারিদিকে অন্ধকারে বহে অশ্রুলোর,—
দারিদ্র্য যাতনা রাশি, ক্ষুধিতের ক্ষুধার বেদনা,
বঞ্চিতের ক্ষুব্ ধ রোষ, অন্যায়ের পুঞ্জ-আবর্জনা
জমিয়াছে যুগে-যুগে | এই মৃত্যু নরকের মাঝে
স্বরগ আনিতে হবে, যে স্বপন-স্বরগ বিরাজে
সকল জাগ্রত্-স্বপ্ন | সেই স্বর্গ কভু কি আসিবে
তিমির-রজনী-শেষে পূর্বাচলে অরুণ হাসিবে ?