Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জনমদুখী || Suchandra Basu

জনমদুখী || Suchandra Basu

ছোট পেটে সন্তানের জায়গা হয় কিন্তু বিরাট ফ্ল্যাটে মায়ের জায়গা হয় না দশ মাস ১০ দিন গর্ভে ধারণ, কষ্টের তীব্রতা সহ্য করে যে মানুষটি সন্তানের জন্ম দেন, তিনিই মা। বাবাও যে কোন ত্যাগ স্বীকার করেন না, এমন নয়! জীবনের সবটুকু দিয়ে সন্তানকে মানুষ করেন। কিন্তু সেই সন্তানরা কি বাবা-মাকে মনে রাখে?
সন্তানের কাছে মা-বাবার বেশি কিছু চাওয়ার থাকে না। থাকে শেষ বয়সে আদরের সন্তানের পাশে থেকে সুখ-দুঃখ ভাগ করার ইচ্ছা। আর এ ইচ্ছা নিয়েই প্রত্যেক মা-বাবা প্রহর গুণতে থাকেন দিবা-রজনী। কিন্তু অনেকেরই সেই সন্তানের কাছে আশ্রয় না হয়ে আশ্রয় হয় আপনজনহীন বৃদ্ধাশ্রমে। শেষ বয়সে মস্ত ফ্ল্যাটের ঘরের কোণেও জনমদুখী মা-বাবার এতটুকুও জায়গা মিলে না। ওদের ছুঁড়ে দেওয়া হয় প্রবীণ নিবাস নামক নরকে। তবুও প্রতিবাদ দানা বাঁধে না; মন অভিশাপ দেয় না।

আজ যারা বৃদ্ধ তারা নিজেদের জীবনের সব সময় এবং ধন সম্পদ বিনিয়োগ করেছেন সন্তানের জন্য, নিজের জন্য রাখে না কিছুই। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের কাছ থেকে এর একটি ক্ষুদ্র অংশও তারা পায় না। কখনো দেখা যায় সন্তান তার নিজের পরিবারের খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে, তাই পিতা-মাতাকে মনে করে বোঝা। নিজে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য বাবা-মার ঠাঁই করে বৃদ্ধাশ্রমে। আবার এমনও দেখা যায় যে সন্তানের টাকা পয়সার অভাব নেই, কিন্তু পিতা-মাতাকে নিজের কাছে রাখার প্রয়োজন বোধ করে না, বা বোঝা মনে করে। হয় নিজেই পাঠায় বৃদ্ধাশ্রমে, নয়ত অবহেলা দুর্ব্যবহার করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে, তখন পিতা-মাতা নিজেরাই সরে যান তার সাধের পরিবার থেকে। তবে এমন সন্তান অসংখ্য নয়।

একবার বৃদ্ধনিবাসে পাঠাতে পারলেই যেন সব দায়মুক্তি। এভাবে নানা অজুহাতে পিতা-মাতাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক নামি-দামি বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, চাকরিজীবী যারা এক সময় খুব বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে এসে নিজের সন্তানের দ্বারাই অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়ে বৃদ্ধাশ্রমের স্থায়ী বাসিন্দা হতে বাধ্য হচ্ছেন। অনেক সন্তান বা আত্মীয়-স্বজন আর তাদের কোনো খবরও নেয় না। তাদের দেখতেও আসেন না কেউ। এমনকি প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা বা জিনিসপত্রও পাঠায় না। বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে বা ঈদের আনন্দের সময়ও পিতা-মাতাকে বাড়িতে আনে না।

এমনও শোনা যায়, অনেকে পিতা বা মাতার মৃত্যুশয্যায় বা মারা যাওয়ার পরও শেষবার দেখতে যায় না। বৃদ্ধাশ্রম অবহেলিত বৃদ্ধদের জন্য শেষ আশ্রয়। তাদের সারাজীবনের অবদানের যথার্থ স্বীকৃতী, শেষ সময়ের সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়া হয় এসব বৃদ্ধাশ্রমে। এখানে তারা নির্ভাবনায়, সম্মানের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে পারেন। প্রয়োজনে অনেক বৃদ্ধাশ্রমে চিকিৎসারও সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে। কিন্তু সব প্রাপ্তির মাঝেও এখানে যা পাওয়া যায় না তা হলো নিজের পরিবারের সান্নিধ্য।

এই নিয়ে সমাজ সচেতন মানুষের অবিলম্বে প্রতিবাদী হওয়া আবশ্যক। নতুবা এই বিষবৃক্ষের চাষ ক্রমশই বেড়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *