Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চাতরার মা || Suchandra Basu

চাতরার মা || Suchandra Basu

অমাবস্যায় শিবচতুর্দশী ব্রত উদযাপনের পর ষষ্ঠীর দিনে হুগলীর শ্রীরামপুর চাতরাবাসী মা শীতলার পুজোয় মেতে ওঠে। ওই দিন থেকেই মা-শীতলার পুজোর সূচনা। চাতরার এই পুজো বাংলার দুর্গা পুজোর সমান।দেবী দুর্গার আদলে শীতলা মায়ের মুখের গড়ন।টানা চোখ।গায়ের রং হলুদ বর্ণ।মায়ের পাশে থাকে সখীরা দাঁড়িয়ে। বাজনা বাজিয়ে এই বিগ্রহ ষষ্ঠীতেই আনা হয়। সোনার গয়নায় মাকে সাজানো হয়। প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিরাট মেলা বসে। বাদাম ভাজা,জিলিপ,খাজাগজা, ঘরগেরস্থালীর টুকিটাকি থেকে সাজপোষাক হরেক পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা।সাতদিনের মেলায় জম জমাট বিকিকিনি। হাজার হাজার মানুষের ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খায় পুলিশ। মন্দিরের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পুজোর পাঁচদিন মন্দিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মেলা প্রাঙ্গনে পুলিশ ও সিভিক মহিলা ভলান্টিয়ারও মোতায়েন করা হয়। এমনকি মন্দির ও মেলা চত্বরে সিসিটিভির ব্যবস্থাও করা থাকে। ভিড়ের কথা মাথায় রেখেই রাস্তা জুড়ে অতিরিক্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়।পানীয় জলের ট্যাঙ্কও সেখানে রাখা থাকে। ঘুড়নি নাগোরদোলা,টয়ট্রেন চাপার আনন্দে ছোটোরাও এই মেলায় ভিড় জমায়। কথিত আছে চাতরায় বসন্তরোগ একবার মহামারীর আকার ধারণ করে। মহামারী ঠেকাতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে শীতলা পুজোর প্রচলন হয়।শোনা যায়,কালীবাবুর শ্মশানঘাটের পাশের ঘাট থেকে মা উঠে এই চাতরায় আসেন।সেখানেই মন্দিরে তাকে প্রতিষ্ঠা করলে এই মহামারীর কবল থেকে মানুষ রেহাই পাবে।তাই তখন থেকেই তার পুজো করা হয়।সকলের বিশ্বাস মা খুবই জাগ্রত। তিনি সকলের মনের কামনা বাসনা পূরণ করেন।তাই শুধু শ্রীরামপুর নয়,বালি বেলুড়,ব্যারাকপুর নদীয়া বর্ধমান থেকেও কাতারে কাতারে মানুষ এ’সময় চাতরায় পুজো দিতে আসেন। বাংলায় অন্যত্র কেবল অষ্টমীর দিনই শীতলা পুজো হয়। আর তারা পান্তাভাত খায়।কিন্তু চাতরায় পান্তা নয়।সবাই নিরামিষ সব্জিভাত খায়।অবশ্যই পুজোর কয়দিন উচ্ছে ডাঁটা পোস্ত বিউলির ডাল মটর, এসব খাবার থেকে দূরে থাকে শ্রীরামপুরবাসী সবাই। সপ্তমীতে রাত জেগে অষ্টমী তিথিতে বিগ্রহে জল ঢালেন হাজার হাজার মানুষ। কেউ কেউ ওই মায়ের ঘাটে স্নান সেরে পুজোর ডালি হাতে ভিজে কাপড়েই লাইনে দাঁড়ায়। স্ত্রী পুরুষ পৃথক লাইন থাকে বলে পুজো দিতে অসুবিধা হয় না। আবার একটি বিশেষ লাইন থাকে। এখানেও স্ত্রী পুরুষ মায়ের ঘাটে ডুব দিয়ে জলে পা ডুবে থাকবে এমন ভাবেই দন্ডি দিতে দিতে মায়ের মন্দিরে এসে উপস্থিত হয়।সেই সময় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ থাকে। দূরে দূরে পুলিশ পাহারায় থাকে। ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু হলেও মূল পুজো হয় অষ্টমীর দিন। দুর্গাঅষ্টমীতে যেমন ধূনো পোড়ানোর রীতি থাকে এই শীতলা অষ্টমীতেও অনেকেই মায়ের সামনে বসে দুই হাতে ও মাথায় সরা বসিয়ে ধুনো পোড়ায়। সন্ধ্যায় মায়ের সন্ধ্যারতি দেখতে মন্দির চত্বরে ভিড় উপছে পড়ে।চরণামৃত সংগ্রহের জন্য সেখানে সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়।সারিবদ্ধভাবে অস্থায়ী কলের মাধ্যমে মায়ের চরণামৃত লাইন দিয়েই সংগ্রহ করে। পান করে তারা তৃপ্তিতে মন ভরায়।প্রণামীর জন্যও একটি বাক্স রাখা থাকে সেখানে।দশমীতে মায়ের বিসর্জন।সিঁদুরখেলা ও ভাঙা মেলা।মন খারাপের পালা। পথশিশু কত বৃদ্ধ বৃদ্ধা এই সুযোগে লাইনে দাঁড়ানো পুজার্থীদের পাশে এসে দাঁড়ায়। মা বলে ডেকে তাদের দিকে ভিক্ষার আশায় থালা ধরে। ভক্তিতে গদগদ হয়ে পাছে ভিখারী ছুঁয়ে ফেলে এই ভয়ে জড়সড় হয়ে ভিখারী থেকে তফাতে দাঁড়ায়। দয়ায় হোক বা ভক্তিতেই হোক তার থালায় অনিচ্ছার দান ছুঁড়ে দেয়।এই তাদের ভালবাসার দান।ঈশ্বরের প্রতি তাদের ভক্তি প্রেম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *