Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চক্রব্যূহে || Sabitri Das

চক্রব্যূহে || Sabitri Das

তাড়া খাওয়া জন্তুর মতো দৌড়াছিল, একটা ইটে হোঁচট খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে বেঁচে গেল।সামনের পরিত্যক্ত ভাঙা গ্যারেজটা দেখতে পেয়ে কোনদিকে না তাকিয়ে উদভ্রান্তের মতো ঢুকে পড়লো অভি , হাঁফাচ্ছে। আবছা অন্ধকারের মধ্যেই ওরা সাতজন ঘিরে নিয়েছে গ্যারেজটা।
চমকে ওঠার অবকাশ টুকুও পেলনা।

অভির স্কুল মাস্টার বাবা আদর্শ নিয়ে চললেও, রাজনৈতিক ক্ষমতার বলে বলীয়ান কাকা অন্যায় ভাবে জায়গা জমি আত্মসাৎ করে নিলেন।বসত বাড়িটুকু ছাড়া কিছুই রইলো না। মা ,বাবা আর রাণুকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছে তখনই সংসারে ঘোষিত হলো নূতন অতিথির আগমণ বার্তা।
এত বড়ো আনন্দের খবরেও খুশি হতে পারছে না কেন! মাথাটা অসম্ভব ভার লাগছে, এমনিতেই চারজনের খরচ চালাতে হিমসিম খাচ্ছে তার উপর আবার…..
সংসার আর অসুস্থ বাবার চিকিৎসা সবকিছু সামলে রাণুর মুখে দুটো ভালো মন্দ যাহোক তুলে দেওয়া দরকার।
রবিবারটায় খুঁজে পেতে বাজার করে। সুশান্তের সঙ্গে বাজারেই দেখা হলো,আগের মতো আডডা দেওয়া হয়ে ওঠে না সত্যি কিন্তু যখনই দেখা হয় ভালো মন্দ দু চারটা কথা হয়েই থাকে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
চিন্তাগ্রস্ত দেখে জিজ্ঞেস করল -কী হয়েছে বল দেখি! বাড়ীতে সব ঠিকঠাক আছে তো?
-জানিস তো সবই! বাবা অসুস্থ ,এখন আবার রাণু…..
এই রোজগারে কী করে কী করবো ভাবতেই সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।
একটু ভেবে সুশান্ত বলে -দেখ কাজ একটা আছে , কিন্তু সেকি তুই পারবি?
-না পারার কী আছে! যে করেই হোক আয় না বাড়িয়ে উপায় নেই রে! সব শেষ হয়ে যাবে আর পুরুষ হয়ে শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো! তুইই বল,সেটা কী ঠিক?
কাজটা কী?
-এমন কিছু না, এখানকার কারখানা থেকে বেবীফুড গাড়ীতে করে পৌঁছে দিতে হবে।পারবি!
-এ আর এমন কী, পারবো না কেন?
-না রে,মানে বাচ্চাদের খাবার তো! সাবধানে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার তো আছেই।
প্রথম দিন কাজে নেমেই হাতে তিনহাজার টাকা পেয়ে একটু অবাক হয়েছিল বৈকি! কিন্তু বাবার ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ঘরে দুটো ফল- মিষ্টি, মায়ের শাড়ি, রানুর নাইটি কেনাকাটার আনন্দে সে বিস্ময় উবে গিয়েছিল কর্পূরের মতো।

… ….বাড়তি রোজগারের আশায় উদভ্রান্ত হয়ে উঠেছিল তখন। গ্যারেজের কাজটায় দিন গেলে তিনশোটা টাকা পেত, খুব কম নয় হয়তো তবুও প্রয়োজনটা এত বড়ো হয়ে দেখা দিতেই মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। দুর্জয় সিং এর যথেষ্ট বদনাম ছিল লোকে বলতো দুর্জন সিং। কোনকিছু না জেনেই ঘটনাচক্রে বাড়তি কামাইয়ের জন্য সেই দুর্জয় সিংয়ের হয়েই কাজ করতে লাগলো। যেদিন জানতে পারলো যে ভেজাল বেবীফুড সাপ্লাই করা হয় এখানকার কারখানা থেকে, তখনই তার মন বিদ্রোহী হয়ে উঠলো। কিছুতেই এই কাজে মন সায় দিল না ,যদিও টাকার প্রয়োজন যথেষ্ট। বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, রাণুর মুখে দুটো ভালো মন্দ খাবার তুলে দেওয়া , তবুও বারবার মনে পড়ছে বাবার আদর্শের কথা। জীবনের চরমতম দিনেও আদর্শচ্যুত না হওয়া বাবার দুর্ভোগের কথা।
এভাবে টাকা উপার্জন করে বাবার চিকিৎসা করাবে না সে, যতটুকু কাজ করেছে তাতেই মন পীড়িত হয়ে উঠেছে। মনের টানাপোড়েনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেলল।

অভি কাজ ছেড়ে চলে যেতে চায় বলাতে দুর্জয়ের মুখচোখ কঠিন হয়ে উঠলেও কিছু বললো না। অভি বেরিয়ে যেতেই দুর্জয়ের ইঙ্গিতে শাগরেদরাও পিছু নিল তার।
অভি বুঝতে পেরেছে মুক্তি নেই ,পঙ্কিল জগতের অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের পথ থাকে না, এখানে আসা যায় কিন্তু বেরোনো যায়না। মহাভারতের গল্পের চক্রব্যূহের মতো। অভিমণ্যু বেরোতেই পারলো না শেষ পর্যন্ত…….
মনে পড়ছে বাবা গল্প বলছেন, মহাভারতের গল্প!
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ত্রয়োদশ তম দিন,গত বারো দিনে দুপক্ষ মিলিয়ে হতাহতের সংখ্যা বড়ো কম নয়!
আত্মনাশা এই যুদ্ধের শেষ হবে কবে কে জানে! কে দেবে এর উত্তর!
কৌরবপক্ষ সুকৌশলে রচনা করেছে চক্রব্যূহ! এই ব্যূহে ঢুকে যুদ্ধ করার কৌশল সহজ নয়। যুদ্ধ করার কথাতো পরে ব্যূহে প্রবেশ করার কৌশল জানে একমাত্র অভিমণ্যু, অর্জুন আর সুভদ্রার বীরপুত্র সে।
অভিমণ্যু তখন মাতৃগর্ভে, বীর শ্রেষ্ঠ অর্জুন সুযোগ্যা সহধর্মিনী সুভদ্রাকে বর্ণনা করে যাচ্ছেন চক্রব্যূহে প্রবেশ করে যুদ্ধের কৌশল, বলতে বলতেই দেখলেন সুভদ্রা ঘুমিয়ে পড়েছেন। চক্রব্যূহ থেকে বেরোবার কৌশলের কথা শোনানো হলোনা। মাতৃগর্ভের অন্ধকারে বসে শিশুর মস্তিষ্কের কোষে কোষে সহজাতভাবেই সঞ্চারিত হয়ে গেল চক্রব্যূহের কথা।
……. আবছা অন্ধকারেও ওরা দেখতে পেয়েছে, শ্বাপদের চোখ কিনা। একটা গুলি ছুটে এল অভির দিকে সঙ্গে অশ্রাব্য গাল। অন্ধকারে হাতড়াতে হাতড়াতে রেঞ্জটা পেয়ে গেল, ছুঁড়ে মারল ওদের দিকে। কিছুতেই হারবে না তাতে প্রাণ যায় যাক। এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়ছে ওরা। ভাঙা টায়ার,গাড়ীর মাড গার্ড এসব দিয়ে আটকাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে, হাতে , কাঁধে গুলি লেগে রক্ত ক্ষরণ হয়েই যাচ্ছে, তবুও শেষ চেষ্টা করতেই হবে। ওহ সব ঝাপসা হয়ে আসছে যে…..

……..বাবা বলে যাচ্ছেন অপ্রতিরোধ্য অভিমণ্যুকে প্রতিহত করতে কর্ণ দ্রোণের নির্দেশে একযোগে দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, দুর্যোধন ও শকুনি অন্যায় ভাবে আক্রমণ করছে
আঘাত থেকে বাঁচবার জন্য অভিমণ্যু প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে , রথের চাকা তুলে ধরে আক্রমণ ঠেকাতে চাইছে সে। উঃ একটার পর একটা আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আহ্, রক্ত এত রক্ত !
মা কেঁদো না মা,
ওকি,রাণু কাঁদছে! ওর মুখটা উত্তরার মতো হয়ে যাচ্ছে কেন?
কেঁদোনা সুভদ্রা মা, তোমার কী দোষ ! গর্ভ ভারে অবসন্ন শরীর ঘুম পেতেই পারে।

বাবা বলে যাচ্ছেন…….
বেজে উঠলো পাঞ্চজন্য, আজকের যুদ্ধ শেষ! ত্রয়োদশতম দিনের যুদ্ধ শেষে পড়ে রইলো অভিমণ্যুর রক্তাক্ত দেহটা!

….. ‌ শঙ্খের শব্দ শুনতে পাচ্ছি! আহ, যুদ্ধ শেষ…..
মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না মা,বড়ো ঘুম পাচ্ছে। আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবা, তোমার ছেলে অধর্মের পথে হাঁটতে চায়নি, ক্ষমা……
আহ, উঠতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে লুটিয়ে পড়লো অভির রক্তাক্ত শরীরটা
…………বাবার কথাগুলো অস্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে, বীর অভিমণ্যুরা মরেও মরে না। বারবার ফিরে ফিরে আসে ফিনিক্স পাখির মতো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *