Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কে তুমি? কে তুমি? || Sunil Gangopadhyay

কে তুমি? কে তুমি? || Sunil Gangopadhyay

সুপর্ণ বেরিয়ে যায় কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে ন’টায়
সুপর্ণটা কে?
বাঃ সে একজন বহুরূপী নয়?
নারী সেবা সমিতিতে সকলেই তাকে জানে
মিসেস অলকা বিশ্বাসের হাজব্যান্ড
অগ্রণী তরুণ সঙ্ঘে সম্বিতের বাবা
নন্দিতারও বাপি, তবে সেটা বলে রাস্তার ওপারে
হলদে বাড়ির মাসিরা
অফিসে, পার্টিতে তার ডাকনাম এস বি, কিংবা
‘এস ও বি’-ও বলে কেউ কেউ
গাড়ি আসে সাড়ে নটায়, সদ্যস্নাত সুপর্ণ বিশ্বাস ঠোঁটে
সিগারেট ঝুলিয়ে দরজা খোলে।
তার ফিরতে রাত হবে, দিল্লি থেকে হেড অফিস
উড়ে আসছে সন্ধের বিমানে
এটা আজ ছুতো নয়, অন্যদিন ক্লাব গমনের মতো নয়
অবশ্য সে ভুলে যায় না ছেলে মেয়েদের জন্মদিন।

সম্বিৎ থার্ড ইয়ার, তার আছে কলেজে যাবার
কিংবা না-যাবার পূর্ণ স্বাধীনতা
কোনো কোনোদিন খুব ভোর থেকে সে নিশ্চপ, একাচোরা
বিশ্বসংসারের সঙ্গে কোনো যোগ নেই
আবার কখনও তীব্র নাদে সে বাজায় বহুক্ষণ
বিদ্যুৎ-গিটার
সেদ্ধ ডিম খাবে বলেছিল, পড়ে রইল, সে খেল না
দুই বন্ধু এসে
ডেকে নিয়ে গেল নিরুদ্দেশে।
ছোট মেয়ে নন্দিতাকে সাজিয়ে গুছিয়ে ঠিক তুলে দিতে হয়
পৌনে দশটার স্কুলবাসে
ইদানীং সাজগোজ নিজেই সে করে নেয় বেশ
সদ্য সে চোদ্দোয় পা, তার বালিকাত্ব খসে যাচ্ছে হুড়মুড়িয়ে
বিরলে মায়ের সঙ্গে গোপন কথার দিন শেষ
বাথরুমে ভেজা ফ্রক ও ব্রা ফেলে রাখে
বকুনিতে গ্রাহ্য করে না
অন্যদিকে চেয়ে থাকে, মনে মনে ফুরফুরিয়ে হাসে
স্কুল থেকে ফিরেই সে হলদে বাড়িটায় কেন যায়
মার চেয়ে মাসিদের দরদের এতখানি টান
ও বাড়িতে কারা যেন মড়াকান্নার মতো গান গায়
প্রত্যেক সন্ধ্যায়
এখন নন্দিতা আর মা’ যাচ্ছি’ বলে না।

তারপর, অলকা বিশ্বাস, তুমি কার?
সুদীর্ঘ দুপুর, সল্ট লেকে ধু-ধু বেলা
কাক-শালিকেরও ছুটি, চিলেরাও ক্রমে ঊর্ধ্বাকাশে
উঠে যায়
রাস্তায় কুকুরগুলো ঘুমের আশ্রয় খোঁজে
সাইকেল রিক্সার নীচে পাতলা ছায়ায়
এ অঞ্চলে ফেরিওয়ালা বিশেষ আসে না
ক্বচিৎ গাড়ির শব্দ স্তব্ধতার তালভঙ্গ করে যায়
বেরসিকভাবে
অলকা বিশ্বাস দরজা বন্ধ করে সিঁড়ি দিয়ে
উঠতে উঠতে থেমে গেল কেন যে সহসা
আঁচল স্খলিত, দুই বুকে তার সমুদ্রের আঁটোসাঁটো ঢেউ
নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ, এ মুহূর্তে
কে তুমি কামিনী?

দুপুরের ফাঁকতালে চুপি চুপি আসবে কোনো গোপন প্রেমিক
এ তেমন ছেঁদো গল্প নয়
দু’-তিন ঘণ্টার জন্য শাড়ি ছেড়ে, সালোয়ার কামিজে সেজে
বাড়ি থেকে যাবে না সে
কোনোরূপ গোলকধাঁধায়
কৈশোরের গানের মাস্টারটির স্মৃতি আজ তুচ্ছ হয়ে গেছে
মাসতুতো দাদার বন্ধু, সবজান্তা, কর্পের মতো কান্তি
সন্দীপের মুখ মনে পড়লে হাসি পায়
উড়ো টেলিফোনও বন্ধ হয়ে গেছে চার বছর আগে
পোষা কোনো দুঃখ নেই, অলীক, শৌখিন
বুক ব্যথা কিছু নেই
এ জীবন স্বেচ্ছাকৃত, স্বামী ও সন্তানে সমর্পিত
সংসারের সব কিছু নিজে গড়া, নীল পর্দা, বাঁকুড়ার ঘোড়া
হুইস্কির বোতলে মানি প্ল্যান্ট, টবে লঙ্কা গাছে সাদা সাদা ফুল
একখানা যামিনী রায়, (আসল না কপি?) ভ্যান গঘের প্রিন্ট
সামনের আলমারিতে শুধু সুদৃশ্য ইংরিজি বই
কিছু বাংলা অত্যন্ত অন্দরে
সবই ঠিকঠাক আছে, তাই নয় কি অলকা বিশ্বাস?

তুমি কে? তুমি কে?
এমন দুপুরে মায়া হরিণীরা বিচরণে আসে
এমন দুপুরে রোদে ভোজবাজি ঝলসে ঝলসে ওঠে
এমন দুপুরে আধ-খোলা উপন্যাস কিংবা
কুরুশ কাঠির ভুল বোনা সোয়েটার
কিছুই পড়ে না মনে
পাহাড়ি নদীতে ভেসে আসে কাঠকুটো, ছিন্ন মালা
সিঁড়িতে কোথেকে এল এত জল, বৃষ্টি না
বন্যার মতো ঢল
দরজা বন্ধ, কেউ নেই, তুমি একা
একাকিত্বেরও চেয়ে একা
নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধু, তন্বী-শ্যামা উত্তর চল্লিশ
মেঘ ডাকছে বজ্ৰ নাদে, কে তুমি, কে তুমি?
অলকা বিশ্বাস, সাড়ে তিনটেয় আছে নারী-সেবার মিটিং,
মনে নেই?
খিদে মনে নেই, ঘুম মনে নেই, ঘুগনি বানাবার কথা।
মনে নেই?

শরীরের মধ্যে মৃদু জ্বালা, বুকে কস্তুরীর ঘ্রাণ
শাড়ি ও সায়ার মধ্যে অস্তিত্বের তমসায় বাতাসের
মৃদু ফিসফিসানি
কে তুমি? কে তুমি?
ঝনঝন শব্দে একটা ছবি খসে পড়ল, এই তো
ফিরে পেলে হারানো তোমাকে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress