আমার রবীন্দ্রনাথ
“আছে দুঃখ আছে মৃত্যু
বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি তবুও আনন্দ
তবুও অনন্ত জাগে।”
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম বাঙালির মনে প্রাণে। নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করে বাঙালির হৃদয়ে এতটাই জুড়ে আছে যে কবিতা গান মানেই কবিগুরু। তাঁকে বাদ দিয়ে আমাদের জীবনে বোধহয় একটা মুহূর্তও চলে না। তিনি লিখে গিয়েছেন সর্বকালের কথা।তিনি লিখেছেন আজকের কথা। তিনি বলেছেন হাজার মানুষের মনের সবচেয়ে বেদনার কথাগুলি।তিনি বলেছেন ‘প্রেমের আনন্দ থাকে স্বল্পক্ষণ কিন্তু বেদনা থাকে সারাটি জীবন’। মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন “শান্তিপূর্ণ মৃত্যুকে বিন্দুমাত্র ভয় করিনি। ভয় করি অপঘাত মৃত্যুকে।” রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছোট মেয়ে মীরার বিয়ে দিয়েছিলেন নিজের পছন্দের পাত্র নগেন্দ্রনাথের সঙ্গে। কিন্তু এই বিয়েতে সম্মতি ছিল না মীরার। তবে সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় এই বিয়ে দিয়েছিলেন রবি ঠাকুর। তবে তাঁর আশা পূর্ণ হয়নি। নগেন ছিলেন স্বেচ্ছাচারী।
এ কথা জানতেন না রবীন্দ্রনাথ । আর এই স্বামীকে কোনও দিনও ভালবাসতে পারেননি মীরা। বাবা হিসেবে মেয়ের এই জীবন দেখে অপরাধে ভুগতেন । রবীন্দ্রনাথ সারা জীবন ভেবে গিয়েছেন তাঁর চাপিয়ে দেওয়া বিয়ের জন্যই তাঁর মেয়ের জীবন নষ্ট হয়েছে। আর এই উপলব্ধি থেকেই লিখেছেন,”বিয়ের রাত্রে মীরা যখন শোবার ঘরে ঢুকছিল তখন একটা গোখরো সাপ ফস করে ফণা ধরে উঠেছিল— আজ আমার মনে হয় সে সাপ যদি তখনই ওকে কাটত তাহলে ও পরিত্রাণ পেত।” মেয়ের মৃত্যু কামনা করেছিলেন তিনি। আসলে তিনি চাইতেন মীরা মুক্তি পাক কষ্টের জীবন থেকে। তাই কখনো নিজের ইচ্ছেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
উনিশ শতকের গোড়ায় কলকাতা প্লেগের আতঙ্কে দিশাহারা । সংক্রমণের ভয়ে শহরবাসীরা ছুটেছে অন্যত্র। দোকানপাট বন্ধ এবং পথ গাড়ি-ঘোড়া হীন। সব মিলিয়ে কলকাতা পরিত্যক্ত নগরীর চেহারা ধরেছিল। সে সময় ব্রিটিশ সরকার, সামান্য জ্বর সর্দির খবর জানতে পারলেই, তাকে হাসপাতালে চালান করে দিচ্ছিল। এতে আতঙ্ক বাড়ে দ্বিগুন। শতবর্ষ আগে কলেরা, প্লেগ, ম্যালেরিয়াসহ নানা রকম মহামারিতে বাংলা যখন বিপর্যস্ত, কলকাতার নাগরিকদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে রবীন্দ্রনাথ ও ঠাকুরবাড়ির প্রায় সব সদস্যই উদ্যোগী হন।সে সময়েই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিশুকন্যা প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
শুধু প্লেগ নয়, কলেরা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো মহামারিতেও রবীন্দ্রনাথ সক্রিয় ভূমিকা নেন কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রকে কলেরায় হারিয়ে। রবি ঠাকুরের জীবন তাই মোটেই ছিল না বিলাসবহুল। প্রতি মুহূর্তে তাঁর মনে এসে দানা বাঁধত বেদনা, যন্ত্রণা। ১৯১৫ সালে বাংলায় কলেরা মারাত্মক আকার নেয়। এর কয়েক বছর পরে যখন ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারির আকার নেয়, তখন রবীন্দ্রনাথ কবিরাজের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। শান্তিনিকেতনে এই ফ্লু যাতে না ছড়াতে পারে, সে জন্য তিনি ‘পঞ্চতিক্ত’ পাচন খাইয়েছিলে প্রত্যেককে তাই ছেলেদের মধ্যে একটিরও ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়নি। তাঁর বিশ্বাস এটা নিশ্চয়ই পাঁচনের গুণে হয়েছে।’ এই পাচন ছিল নিম, গুলঞ্চ, বাসক, পলতা ও কন্টিকারির মিশ্রণ। সাম্প্রতিক দুর্যোগে লড়াইয়ের প্রেরণা হতে পারেন জনদরদী স্বেচ্ছাসেবক রবীন্দ্রনাথ।একটাই প্রার্থনা আজ তোমার ভাষায়
“জীবন যখন শুকায়ে যায়
করুণা ধারায় এসো”