প্রথম দেখার কথা আজো মনে পড়ে।
এসে ঢুকলে ঘরে, আর মহাজাগতিক সৌন্দর্যের ঝড়ে
কেঁপে উঠলো নীলগ্রহ চোখের পল্লব, লাল টোল থেকে
ছড়িয়ে পড়লো জ্যোৎস্না, দুই ঠোঁট দেখে
মনে হলো সূর্যোদয় দেখছি বঙ্গোপসাগরে;
লাল আভা উপচে পড়ছে দিগন্তের ছোট্ট কুঁড়েঘরে।
দু-একজন, কখনো কখনো, মাঝেমাঝে আসে;
স্তব করে কেঁপেকেঁপে, লঘু হয়ে ভাসে
আশ্বিনের কুয়াশার মতো। তুমিও তেমনি স্তবে
কাঁপবে, ভেবেছিলাম নিজেকে মনে হবে
সার্থক; কিন্তু দেখি আমার ষাটটি সুপ্রসিদ্ধ বই
ছিঁড়েফেড়ে ফেলছো প্রখর যুক্তিতে; আমি ডুবছি অথৈ
অন্ধকারে; কোন চিত্রকল্পে আছে ঢুকে
প্রাগৈতিহাসিক ভ্রান্তি, দেখিয়ে দিচ্ছো, আমি একটু অসুখে
কাঁপতে থাকি, বই খুলে দেখাচ্ছো কোন কথাগুলো
ঝকঝকে, কিন্তু অসার, আমি শিমুলের তুলো
হয়ে দিগ্বিদিক ছিঁড়ে ফেড়ে উড়ে যাচ্ছি আপাদমস্তক;
আক্রমণে লণ্ডভণ্ড আমার ষাটটি মোটামুটি প্রসিদ্ধ পুস্তক।
বাকশক্তিহীন, পর্যুদস্ত, আমি ভাবি, অমন ফাল্গুন
ঠোঁটে, লাল টোলে, কী ক’রে থাকতে পারে এমন আগুন?
দু-ঘন্টায় বাতিল হয়ে যাই, মূর্খ, বহু কিছু শিখি,
ইচ্ছে হয় তিরিশ বছর ধ’রে আবার নতুন ক’রে বইগুলো লিখি।
তবুও স্বপ্নের মধ্যে আশ্চর্য বিকেল কেটে যায়;
এক সময় দেখি জুলাইয়ের নিবিড় সন্ধ্যায়
আবছা অন্ধকারে পুব দিকে একটি স্থির শাদা চাঁদ ওঠে,
এবং আমরা বদ্ধ আলিঙ্গনে দুই জোড়া ঠোঁটে।